সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য -১৬৩ by ড. একেএম শাহনাওয়াজ
ইংরেজ
শাসকরা কেন বঙ্গভঙ্গ পরিকল্পনা করেছিল, তা নিয়ে নানা ধরনের ব্যাখ্যা পাওয়া
যায়। সরকারি সরল বক্তব্যে বলা হয়, বাংলা, বিহার উড়িষ্যা ও আসাম নিয়ে গঠিত
বিরাট বাংলা প্রেসিডেন্সিকে একটি কেন্দ্র হতে একজন প্রশাসকের দ্বারা
সুষ্ঠুভাবে শাসন করা কঠিন কাজ ছিল। এ অসুবিধার কথা চিন্তা করে লর্ড কার্জন
বঙ্গভঙ্গের সিদ্ধান্ত নেন।
একটি অর্থনৈতিক কারণের প্রতিও ইঙ্গিত রয়েছে। ইংরেজ শাসনের শুরু থেকে কলকাতা বাংলাদেশের রাজধানী থাকায় পূর্ব বাংলা বরাবরই অবহেলিত থেকেছে। ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্প, যোগাযোগ ব্যবস্থা, শিক্ষা- প্রতিটি ক্ষেত্রেই এ অঞ্চলের মানুষ পিছিয়ে পড়েছিল। বিশ্ববিদ্যালয়, মহাবিদ্যালয়সহ বেশিরভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কলকাতাকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠতে থাকে। ফলে শিক্ষা ক্ষেত্রে পূর্ববঙ্গ অবহেলিত থেকে যায়। কৃষিপ্রধান অঞ্চল হলেও প্রশাসন কেন্দ্র থেকে দূরে থাকায় পূর্ব বাংলার কৃষির উন্নতিও তেমন হয়নি। ফলে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে পূর্ব বাংলা পিছিয়ে পড়ে।
বঙ্গভঙ্গ প্রস্তাবের পেছনে সরকারের একটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যও ছিল। প্রায় ১০০ বছর ধরে সামাজিক, শিক্ষা ও ধর্মীয় সংস্কার আন্দোলন এদেশের মানুষকে অধিকার সচেতন করে তুলেছিল। বাংলা তথা ভারতের নেতৃবর্গের রাজনীতি চর্চা এর সঙ্গে যুক্ত হয়। ফলে ভারতীয় জাতীয়তাবাদ অর্থাৎ ভারতীয়রাও যে একটি ভিন্ন জাতি সে প্রশ্নে তারা সচেতন হয়ে ওঠে। লর্ড কার্জন বিষয়টির প্রতি নজর রেখেছিলেন। কারণ ইতিমধ্যে ভারতীয়দের রাজনৈতিক সংগঠন কংগ্রেস বিভিন্ন আন্দোলন পরিচালনা করছিল। লর্ড কার্জন ভারতীয়দের ঐক্য ভেঙে দিয়ে তাদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করতে চাইলেন। তিনি বুঝেছিলেন, এদেশের হিন্দু ও মুসলমান এ দুই সম্প্রদায়ের জনগণকে যারা পরস্পরের শত্র“তে পরিণত করতে পারবে, তাদের পক্ষে শাসন করা সহজ হবে। এ ধরনের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য বঙ্গভঙ্গ চিন্তার পেছনে কাজ করেছে।
ব্রিটিশ শাসক চক্রের প্ররোচনায় হিন্দু-মুসলমানের মধ্যে পারস্পরিক ঘৃণা ও বিদ্বেষ তীব্র আকার ধারণ করে। এর প্রতিক্রিয়ায় শুরু হয় সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা। পূর্ববঙ্গের উন্নয়নের প্রশ্ন এবং সাম্প্রদায়িক মনোভাবের কারণেই মুসলমানরা বঙ্গভঙ্গের পক্ষে সোচ্চার হয়।
১৯০৫ সালে লর্ড কার্জন এক ঘোষণার মধ্য দিয়ে বঙ্গভঙ্গ কার্যকর করেন। মুসলমানদের জন্য এ সিদ্ধান্ত খুব দ্রুতই ইতিবাচক ফল বয়ে এনেছিল। ঢাকা নতুন প্রদেশের রাজধানী হওয়ায় নানা দিক থেকে পূর্ববঙ্গের উন্নয়ন ঘটতে থাকে। ঢাকায় একে একে স্থাপিত হয় স্কুল-কলেজ, অফিস-আদালত। ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য কলকাতার মুখাপেক্ষী হওয়ার প্রয়োজন কমে যায়। বঙ্গভঙ্গের সুফল হিসেবে রাজধানী শহর ঢাকায় বড় বড় ইমারত নির্মিত হতে থাকে। হাইকোর্ট, সেক্রেটারিয়েট, কার্জন হল ইত্যাদি নির্মাণের প্রক্রিয়া শুরু হয়। এভাবেই পূর্ব বাংলার মানুষ নতুনভাবে আশাবাদী হয়ে ওঠে।
বঙ্গভঙ্গের প্রস্তাব ঘোষিত হলে বাংলার মানুষের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। একটি অংশ মনে করে, ইংরেজরা নিশ্চিন্তে দেশ শাসন করার জন্য এ অঞ্চলের অধিবাসীদের দুর্বল করে ফেলতে চাইছে। এ কারণে বঙ্গভঙ্গ ঘোষণার দিন কংগ্রেস দেশব্যাপী শোক দিবস পালন করে। ১৯০৫ সালের ১৬ অক্টোবর বঙ্গভঙ্গের প্রতিবাদে হরতাল পালিত হয়। প্রথম দিকে মুসলমানরা বঙ্গভঙ্গের পক্ষে সমর্থন জানায়নি। মৌলভী আবদুল রসুলের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত কলকাতার রাজাবাজারের জনসভায় মুসলিম নেতৃবৃন্দ বঙ্গভঙ্গের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানায়। অবশ্য পরে মুসলমানরা বঙ্গভঙ্গকে স্বাগত জানাতে থাকে। কংগ্রেস সমর্থক ও উচ্চবিত্তের হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতারা তাদের বক্তব্যে বলেন, এ বিভক্তি বাঙালির ঐক্যকে নষ্ট করে দেবে। বাঙালি জাতীয়তাবাদের ওপর হানবে চরম আঘাত। পশ্চিমবঙ্গের বড় বড় পত্রিকায় বঙ্গভঙ্গবিরোধী নিবন্ধ প্রকাশিত হতে থাকে। পত্রিকাগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল ইংরেজি পত্রিকা স্টেটসম্যান ও পাইওনিয়ার এবং বাংলা পত্রিকা যুগান্তর, সন্ধ্যা, হিতবাদী, সঞ্জীবনী, নবশক্তি ইত্যাদি।
একটি অর্থনৈতিক কারণের প্রতিও ইঙ্গিত রয়েছে। ইংরেজ শাসনের শুরু থেকে কলকাতা বাংলাদেশের রাজধানী থাকায় পূর্ব বাংলা বরাবরই অবহেলিত থেকেছে। ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্প, যোগাযোগ ব্যবস্থা, শিক্ষা- প্রতিটি ক্ষেত্রেই এ অঞ্চলের মানুষ পিছিয়ে পড়েছিল। বিশ্ববিদ্যালয়, মহাবিদ্যালয়সহ বেশিরভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কলকাতাকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠতে থাকে। ফলে শিক্ষা ক্ষেত্রে পূর্ববঙ্গ অবহেলিত থেকে যায়। কৃষিপ্রধান অঞ্চল হলেও প্রশাসন কেন্দ্র থেকে দূরে থাকায় পূর্ব বাংলার কৃষির উন্নতিও তেমন হয়নি। ফলে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে পূর্ব বাংলা পিছিয়ে পড়ে।
বঙ্গভঙ্গ প্রস্তাবের পেছনে সরকারের একটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যও ছিল। প্রায় ১০০ বছর ধরে সামাজিক, শিক্ষা ও ধর্মীয় সংস্কার আন্দোলন এদেশের মানুষকে অধিকার সচেতন করে তুলেছিল। বাংলা তথা ভারতের নেতৃবর্গের রাজনীতি চর্চা এর সঙ্গে যুক্ত হয়। ফলে ভারতীয় জাতীয়তাবাদ অর্থাৎ ভারতীয়রাও যে একটি ভিন্ন জাতি সে প্রশ্নে তারা সচেতন হয়ে ওঠে। লর্ড কার্জন বিষয়টির প্রতি নজর রেখেছিলেন। কারণ ইতিমধ্যে ভারতীয়দের রাজনৈতিক সংগঠন কংগ্রেস বিভিন্ন আন্দোলন পরিচালনা করছিল। লর্ড কার্জন ভারতীয়দের ঐক্য ভেঙে দিয়ে তাদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করতে চাইলেন। তিনি বুঝেছিলেন, এদেশের হিন্দু ও মুসলমান এ দুই সম্প্রদায়ের জনগণকে যারা পরস্পরের শত্র“তে পরিণত করতে পারবে, তাদের পক্ষে শাসন করা সহজ হবে। এ ধরনের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য বঙ্গভঙ্গ চিন্তার পেছনে কাজ করেছে।
ব্রিটিশ শাসক চক্রের প্ররোচনায় হিন্দু-মুসলমানের মধ্যে পারস্পরিক ঘৃণা ও বিদ্বেষ তীব্র আকার ধারণ করে। এর প্রতিক্রিয়ায় শুরু হয় সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা। পূর্ববঙ্গের উন্নয়নের প্রশ্ন এবং সাম্প্রদায়িক মনোভাবের কারণেই মুসলমানরা বঙ্গভঙ্গের পক্ষে সোচ্চার হয়।
১৯০৫ সালে লর্ড কার্জন এক ঘোষণার মধ্য দিয়ে বঙ্গভঙ্গ কার্যকর করেন। মুসলমানদের জন্য এ সিদ্ধান্ত খুব দ্রুতই ইতিবাচক ফল বয়ে এনেছিল। ঢাকা নতুন প্রদেশের রাজধানী হওয়ায় নানা দিক থেকে পূর্ববঙ্গের উন্নয়ন ঘটতে থাকে। ঢাকায় একে একে স্থাপিত হয় স্কুল-কলেজ, অফিস-আদালত। ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য কলকাতার মুখাপেক্ষী হওয়ার প্রয়োজন কমে যায়। বঙ্গভঙ্গের সুফল হিসেবে রাজধানী শহর ঢাকায় বড় বড় ইমারত নির্মিত হতে থাকে। হাইকোর্ট, সেক্রেটারিয়েট, কার্জন হল ইত্যাদি নির্মাণের প্রক্রিয়া শুরু হয়। এভাবেই পূর্ব বাংলার মানুষ নতুনভাবে আশাবাদী হয়ে ওঠে।
বঙ্গভঙ্গের প্রস্তাব ঘোষিত হলে বাংলার মানুষের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। একটি অংশ মনে করে, ইংরেজরা নিশ্চিন্তে দেশ শাসন করার জন্য এ অঞ্চলের অধিবাসীদের দুর্বল করে ফেলতে চাইছে। এ কারণে বঙ্গভঙ্গ ঘোষণার দিন কংগ্রেস দেশব্যাপী শোক দিবস পালন করে। ১৯০৫ সালের ১৬ অক্টোবর বঙ্গভঙ্গের প্রতিবাদে হরতাল পালিত হয়। প্রথম দিকে মুসলমানরা বঙ্গভঙ্গের পক্ষে সমর্থন জানায়নি। মৌলভী আবদুল রসুলের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত কলকাতার রাজাবাজারের জনসভায় মুসলিম নেতৃবৃন্দ বঙ্গভঙ্গের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানায়। অবশ্য পরে মুসলমানরা বঙ্গভঙ্গকে স্বাগত জানাতে থাকে। কংগ্রেস সমর্থক ও উচ্চবিত্তের হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতারা তাদের বক্তব্যে বলেন, এ বিভক্তি বাঙালির ঐক্যকে নষ্ট করে দেবে। বাঙালি জাতীয়তাবাদের ওপর হানবে চরম আঘাত। পশ্চিমবঙ্গের বড় বড় পত্রিকায় বঙ্গভঙ্গবিরোধী নিবন্ধ প্রকাশিত হতে থাকে। পত্রিকাগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল ইংরেজি পত্রিকা স্টেটসম্যান ও পাইওনিয়ার এবং বাংলা পত্রিকা যুগান্তর, সন্ধ্যা, হিতবাদী, সঞ্জীবনী, নবশক্তি ইত্যাদি।
No comments