নিষ্ঠুর নির্লিপ্ততা! অভিজিৎকে বাঁচাতে এগিয়ে যান একমাত্র ফটোসাংবাদিক জীবন by জুলফিকার আলি মাণিক
ঘটনাস্থলের
চারপাশে একুশে বইমেলাফেরত শত শত মানুষ ছিল সেই রাতে, যখন লেখক অভিজিৎ
রায়কে ধারালো চাপাতি দিয়ে আঘাত করে হত্যা করছিল বর্বর সন্ত্রাসীরা।
বৃহস্পতিবার রাত তখন প্রায় সাড়ে ৯টা। শাহবাগ থানার অফিসার ইনচার্জ সিরাজুল
ইসলামের ভাষ্য অনুযায়ী, চাপাতি দিয়ে যখন সন্ত্রাসীরা কোপাচ্ছিল অভিজিৎ আর
তার স্ত্রীকে, তখন চারপাশে ভিড় করে থাকা অগণিত মানুষের মধ্যে একজন মাত্র
সাহস করে এগিয়ে গিয়েছিলেন অভিজিৎকে বাঁচাতে। কিন্তু চাপাতি নিয়ে
সন্ত্রাসীরা তাকে তাড়া করলে সেই ব্যক্তিও সরে যেতে বাধ্য হন। তবে রক্তাক্ত
অভিজিৎ আর তার স্ত্রী রাফিদা আহমেদ বন্যাকে রাস্তার ধারে ফেলে যখন
সন্ত্রাসীরা চলে গিয়েছিল, তার পরও আশপাশের একজন মানুষও তাদের জীবন বাঁচানোর
জন্য হাসপাতালে নিয়ে যেতে এগিয়ে আসেনি। এমনকি সেখানে থাকা কয়েকজন পুলিশ
সদস্যের কেউই নয়। কিছু সময় পর এগিয়ে এসেছিলেন একজন মাত্র ব্যক্তি। তিনি
তরুণ ফটোসাংবাদিক, মাত্র মাস ছ'য়েক হলো সাংবাদিকতা পেশায় আসা জীবন আহমেদ।
জীবন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি চত্বরের কাছে রাস্তার ধারে বসে চা খাচ্ছিলেন তার আরেক ফটোসাংবাদিক বন্ধু এস এম রহমানের সঙ্গে। দু'জনের সঙ্গে দীর্ঘ সময় কথা বলে জানা গেল, মাটিতে লুটিয়ে পড়া অভিজিৎ ও তার স্ত্রীকে উদ্ধারে শত শত মানুষের বিস্ময়কর নির্লিপ্ততা সম্পর্কে। তাদের অনেকেই নির্মম হামলার ঘটনা দেখেছেন। মাটিতে লুটিয়ে পড়ার পর তারা গোল হয়ে ঘিরেছিলেন রক্তাক্ত অভিজিৎ আর তার স্ত্রীকে। অস্ত্র হাতে দাঁড়িয়ে ছিল একাধিক পুলিশ সদস্যও। কিন্তু সবাই নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করেছে।
ঘটনাস্থল থেকে অল্প কিছুদূরে জীবন ও রহমান যখন চা খাচ্ছিলেন, কাজের অবসরে এমন সময় একজন নারীর চিৎকার শোনেন। প্রথমে বুঝে উঠতে পারেননি, কিসের জন্য কে চিৎকার দিচ্ছে। কয়েক মিনিট বোঝার চেষ্টা করে মনের সন্দেহ থেকে তারা এগিয়ে যান। গিয়ে দেখেন, রক্তাক্ত অবস্থায় ফুটপাতের ওপর পড়ে আছেন অভিজিৎ আর তার কয় হাত দূরেই ফুটপাতের নিচে রাস্তার ধারে পড়ে আছেন তার স্ত্রী বন্যা।
'গিয়ে দেখি, পড়ে থাকা লোকটার (অভিজিৎ) রক্তাক্ত দেহ ছটফট করছে'- বললেন জীবন। তিনি আরও বলেন, 'আমার ছবি তোলার দরকার ছিল। আমি প্রথমেই দু'জনের দুটো ছবি তুললাম। মহিলা (বন্যা) চিৎকার করে ডাকছিলেন লোকজনকে, তাদের সাহায্য করার জন্য। কিন্তু কেউ তাদের দিকে এগিয়ে আসছিলেন না।'
জীবন বলেন, "রক্তাক্ত বন্যা যেন 'হতভম্ব' হয়ে গিয়েছিলেন।" বন্যা ফুটপাতে লুটিয়ে পড়া তার স্বামীর রক্তাক্ত দেহ দেখে তার দিকে এগিয়ে যান। 'তিনি (বন্যা) তখন ভীষণ আকুতি-মিনতি করতে থাকেন তার স্বামীকে বাঁচানোর জন্য'- বললেন জীবন।
মাত্র মাস ছয়েক হলো ফটোসাংবাদিকতায় যুক্ত হয়েছেন জীবন। কাজ করেন বাংলার চোখ নামে একটি ফটো এজেন্সিতে। তিনি লক্ষ্য করেন, বন্যার মাথা থেকেও রক্ত ঝরছিল। 'তিনি (বন্যা) আমাকে বলেন, আমার হাজব্যান্ডকে বাঁচান। ওকে হেল্প করেন। আমি লোকটির (অভিজিৎ) দিকে এগিয়ে গেলাম। তার মাথায় হাত দিতেই লক্ষ্য করলাম, ভেতর থেকে মগজ বের হয়ে গেছে। আমি হাত দিয়ে বেরিয়ে যাওয়া মগজ ভেতরের দিকে ঠেলে দিই। অঝোরে রক্ত ঝরছিল উনার মাথা থেকে'- বলেন জীবন।
ফটোসাংবাদিক জীবনও আশপাশে ভিড় করে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষকে আবেদন জানিয়েছিলেন, অভিজিৎকে তুলে হাসপাতালে নেওয়ার জন্য তাকে সাহায্য করতে। সেখানে দাঁড়ানো পুলিশকেও অনুরোধ করেছিলেন, একটা সিএনজি ঠিক করে দিতে। কিন্তু কেউ তার অনুরোধে সাড়া দেয়নি। অগত্যা জীবন নিজেই যখন অভিজিৎকে ফুটপাত থেকে টেনে তুলতে চেষ্টা করেন, তখন ভীষণভাবে আহত-রক্তাক্ত বন্যাও তাতে হাত লাগান। তার পর মাত্র কয়েকজন মানুষ এসে হাত লাগায় অভিজিৎকে তোলার জন্য। কিন্তু কীভাবে তাকে নেওয়া হবে হাসপাতালে?
জীবন বললেন, 'কোনো সহযোগিতা না পেয়ে আমি নিজেই টিএসসি মোড়ে একটা চলন্ত সিএনজির সামনে দাঁড়িয়ে যাই। সিএনজিটাকে থামাই। ভেতরে যাত্রী ছিল। উনাকে বলি, খুব অসুস্থ একজন লোক আছে এখানে। ইমার্জেন্সি হাসপাতালে না নিলে বাঁচবে না, তাই সিএনজিটি ছেড়ে দিতে অনুরোধ করি। যাত্রীটি নেমে যায় সিএনজি থেকে। কেবল তখনই একজন পুলিশ এগিয়ে আসে সিএনজির দিকে। আমি দ্রুত অভিজিৎকে সিএনজিতে তুলি। তার স্ত্রীও ওঠেন।'
জীবনের সঙ্গে থাকা আরেক ফটোসাংবাদিক এস এম রহমান মাত্র সাড়ে তিন মাস হলো ফটোসাংবাদিকতায় এসেছেন। কাজ করেন ফোকাস বাংলায়। রহমান বললেন, 'আমি এ রকম পরিস্থিতি আগে কখনও কভার করিনি। আমার হাত কাঁপছিল। খুব ঘাবড়ে গিয়েছিলাম। তাই ক'টা ছবি তুলেই ঘটনাস্থলে থেকে চলে যাই।'
'জীবন ভাই সাহস করে তাদেরকে (অভিজিৎ ও তার স্ত্রী) নিয়ে গেছেন হাসপাতালে। সেখানে থাকা সাধারণ মানুষ, পুলিশ কেউ এগিয়ে আসছিল না। পুলিশ আহতদের নিয়ে যেতে কোনো হেল্প করে নাই'- বলেন রহমান।
'পুলিশ ছিল ঘটনাস্থলে। তারা চাইলে আরও আগে হাসপাতালে নিয়ে যেতে পারত তাদের'- বললেন জীবন। সিএনজি করে যখন জীবন রওনা দিলেন অভিজিৎ আর স্ত্রীকে নিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উদ্দেশে, তখন আরেক বিপদ ঘটল। ভীষণভাবে আতঙ্কিত হয়ে পড়া বন্যা চিৎকার শুরু করেন।
জীবন বলেন, 'উনি (বন্যা) আমাকে বলতে থাকেন, আপনারা কারা? কই নিয়ে যাচ্ছেন আমাকে? আমি বলি, হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু তিনি বিশ্বাস করলেন না। আমাকে বলতে থাকেন, আপনি আমাকে মেরে ফেলবেন। আপনি আমাকে ছেড়ে দেন।'
নির্মম হামলার শিকার হয়ে হতবিহ্বল বন্যা বিশ্বাস করতে পারছিলেন না জীবনকে। জীবন বলেন, 'উনি একপর্যায়ে আমার পা জড়িয়ে ধরেন। বলতে থাকেন, আপনি আমাকে মাইরেন না। আপনি আমাকে ছেড়ে দেন, ওকে (অভিজিৎকে) ছেড়ে দেন। আপনি যা চান, তাই দেব।'
বন্যা সিএনজি ড্রাইভারকে বলেন, 'আপনি নিয়েন না, আমাকে মেরে ফেলবে ওরা।' হাসপাতালে যাওয়ার সময় পুরো পথটায় অভিজিতের দেহ পড়ে ছিল জীবনের শরীরের ওপর। 'উনার (অভিজিৎ) শরীর থেকে অঝোরে রক্ত পড়ছিল আমার শরীরেও। উনার মাথার খুলির হাড় লাগছিল আমার শরীরে'- বললেন জীবন, যিনি ভয়কে জয় করে অভিজিৎ আর তার স্ত্রীর জীবন বাঁচাতে একাই ছুটেছিলেন।
'ঘটনাস্থলের সাধারণ মানুষ আসলে ভয় পেয়ে গিয়েছিল। ওরা হয়তো ভেবেছিল, আহতদের ধরে কী বিপদে না পড়ে'- জীবন তার ধারণার কথা বললেন।
জীবন বলেন, 'আমার পরিচিত অনেকেই ওই ঘটনার পরে আমাকে বলেছে, আমাকে বোঝানোর চেষ্টা করেছে- আমি কাজটা ঠিক করিনি। আমার কাজ শুধু ছবি তোলা, ছবি তুলে চলে আসা।' তিনি বলেন, 'কিন্তু তা আমি বিশ্বাস করি না। আমি মনে করি, অবশ্যই আমি ছবি তুলব, তার পর সুযোগ থাকলে মানুষের বিপদে সহযোগিতা করব।'
জীবন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি চত্বরের কাছে রাস্তার ধারে বসে চা খাচ্ছিলেন তার আরেক ফটোসাংবাদিক বন্ধু এস এম রহমানের সঙ্গে। দু'জনের সঙ্গে দীর্ঘ সময় কথা বলে জানা গেল, মাটিতে লুটিয়ে পড়া অভিজিৎ ও তার স্ত্রীকে উদ্ধারে শত শত মানুষের বিস্ময়কর নির্লিপ্ততা সম্পর্কে। তাদের অনেকেই নির্মম হামলার ঘটনা দেখেছেন। মাটিতে লুটিয়ে পড়ার পর তারা গোল হয়ে ঘিরেছিলেন রক্তাক্ত অভিজিৎ আর তার স্ত্রীকে। অস্ত্র হাতে দাঁড়িয়ে ছিল একাধিক পুলিশ সদস্যও। কিন্তু সবাই নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করেছে।
ঘটনাস্থল থেকে অল্প কিছুদূরে জীবন ও রহমান যখন চা খাচ্ছিলেন, কাজের অবসরে এমন সময় একজন নারীর চিৎকার শোনেন। প্রথমে বুঝে উঠতে পারেননি, কিসের জন্য কে চিৎকার দিচ্ছে। কয়েক মিনিট বোঝার চেষ্টা করে মনের সন্দেহ থেকে তারা এগিয়ে যান। গিয়ে দেখেন, রক্তাক্ত অবস্থায় ফুটপাতের ওপর পড়ে আছেন অভিজিৎ আর তার কয় হাত দূরেই ফুটপাতের নিচে রাস্তার ধারে পড়ে আছেন তার স্ত্রী বন্যা।
'গিয়ে দেখি, পড়ে থাকা লোকটার (অভিজিৎ) রক্তাক্ত দেহ ছটফট করছে'- বললেন জীবন। তিনি আরও বলেন, 'আমার ছবি তোলার দরকার ছিল। আমি প্রথমেই দু'জনের দুটো ছবি তুললাম। মহিলা (বন্যা) চিৎকার করে ডাকছিলেন লোকজনকে, তাদের সাহায্য করার জন্য। কিন্তু কেউ তাদের দিকে এগিয়ে আসছিলেন না।'
জীবন বলেন, "রক্তাক্ত বন্যা যেন 'হতভম্ব' হয়ে গিয়েছিলেন।" বন্যা ফুটপাতে লুটিয়ে পড়া তার স্বামীর রক্তাক্ত দেহ দেখে তার দিকে এগিয়ে যান। 'তিনি (বন্যা) তখন ভীষণ আকুতি-মিনতি করতে থাকেন তার স্বামীকে বাঁচানোর জন্য'- বললেন জীবন।
মাত্র মাস ছয়েক হলো ফটোসাংবাদিকতায় যুক্ত হয়েছেন জীবন। কাজ করেন বাংলার চোখ নামে একটি ফটো এজেন্সিতে। তিনি লক্ষ্য করেন, বন্যার মাথা থেকেও রক্ত ঝরছিল। 'তিনি (বন্যা) আমাকে বলেন, আমার হাজব্যান্ডকে বাঁচান। ওকে হেল্প করেন। আমি লোকটির (অভিজিৎ) দিকে এগিয়ে গেলাম। তার মাথায় হাত দিতেই লক্ষ্য করলাম, ভেতর থেকে মগজ বের হয়ে গেছে। আমি হাত দিয়ে বেরিয়ে যাওয়া মগজ ভেতরের দিকে ঠেলে দিই। অঝোরে রক্ত ঝরছিল উনার মাথা থেকে'- বলেন জীবন।
ফটোসাংবাদিক জীবনও আশপাশে ভিড় করে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষকে আবেদন জানিয়েছিলেন, অভিজিৎকে তুলে হাসপাতালে নেওয়ার জন্য তাকে সাহায্য করতে। সেখানে দাঁড়ানো পুলিশকেও অনুরোধ করেছিলেন, একটা সিএনজি ঠিক করে দিতে। কিন্তু কেউ তার অনুরোধে সাড়া দেয়নি। অগত্যা জীবন নিজেই যখন অভিজিৎকে ফুটপাত থেকে টেনে তুলতে চেষ্টা করেন, তখন ভীষণভাবে আহত-রক্তাক্ত বন্যাও তাতে হাত লাগান। তার পর মাত্র কয়েকজন মানুষ এসে হাত লাগায় অভিজিৎকে তোলার জন্য। কিন্তু কীভাবে তাকে নেওয়া হবে হাসপাতালে?
জীবন বললেন, 'কোনো সহযোগিতা না পেয়ে আমি নিজেই টিএসসি মোড়ে একটা চলন্ত সিএনজির সামনে দাঁড়িয়ে যাই। সিএনজিটাকে থামাই। ভেতরে যাত্রী ছিল। উনাকে বলি, খুব অসুস্থ একজন লোক আছে এখানে। ইমার্জেন্সি হাসপাতালে না নিলে বাঁচবে না, তাই সিএনজিটি ছেড়ে দিতে অনুরোধ করি। যাত্রীটি নেমে যায় সিএনজি থেকে। কেবল তখনই একজন পুলিশ এগিয়ে আসে সিএনজির দিকে। আমি দ্রুত অভিজিৎকে সিএনজিতে তুলি। তার স্ত্রীও ওঠেন।'
জীবনের সঙ্গে থাকা আরেক ফটোসাংবাদিক এস এম রহমান মাত্র সাড়ে তিন মাস হলো ফটোসাংবাদিকতায় এসেছেন। কাজ করেন ফোকাস বাংলায়। রহমান বললেন, 'আমি এ রকম পরিস্থিতি আগে কখনও কভার করিনি। আমার হাত কাঁপছিল। খুব ঘাবড়ে গিয়েছিলাম। তাই ক'টা ছবি তুলেই ঘটনাস্থলে থেকে চলে যাই।'
'জীবন ভাই সাহস করে তাদেরকে (অভিজিৎ ও তার স্ত্রী) নিয়ে গেছেন হাসপাতালে। সেখানে থাকা সাধারণ মানুষ, পুলিশ কেউ এগিয়ে আসছিল না। পুলিশ আহতদের নিয়ে যেতে কোনো হেল্প করে নাই'- বলেন রহমান।
'পুলিশ ছিল ঘটনাস্থলে। তারা চাইলে আরও আগে হাসপাতালে নিয়ে যেতে পারত তাদের'- বললেন জীবন। সিএনজি করে যখন জীবন রওনা দিলেন অভিজিৎ আর স্ত্রীকে নিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উদ্দেশে, তখন আরেক বিপদ ঘটল। ভীষণভাবে আতঙ্কিত হয়ে পড়া বন্যা চিৎকার শুরু করেন।
জীবন বলেন, 'উনি (বন্যা) আমাকে বলতে থাকেন, আপনারা কারা? কই নিয়ে যাচ্ছেন আমাকে? আমি বলি, হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু তিনি বিশ্বাস করলেন না। আমাকে বলতে থাকেন, আপনি আমাকে মেরে ফেলবেন। আপনি আমাকে ছেড়ে দেন।'
নির্মম হামলার শিকার হয়ে হতবিহ্বল বন্যা বিশ্বাস করতে পারছিলেন না জীবনকে। জীবন বলেন, 'উনি একপর্যায়ে আমার পা জড়িয়ে ধরেন। বলতে থাকেন, আপনি আমাকে মাইরেন না। আপনি আমাকে ছেড়ে দেন, ওকে (অভিজিৎকে) ছেড়ে দেন। আপনি যা চান, তাই দেব।'
বন্যা সিএনজি ড্রাইভারকে বলেন, 'আপনি নিয়েন না, আমাকে মেরে ফেলবে ওরা।' হাসপাতালে যাওয়ার সময় পুরো পথটায় অভিজিতের দেহ পড়ে ছিল জীবনের শরীরের ওপর। 'উনার (অভিজিৎ) শরীর থেকে অঝোরে রক্ত পড়ছিল আমার শরীরেও। উনার মাথার খুলির হাড় লাগছিল আমার শরীরে'- বললেন জীবন, যিনি ভয়কে জয় করে অভিজিৎ আর তার স্ত্রীর জীবন বাঁচাতে একাই ছুটেছিলেন।
'ঘটনাস্থলের সাধারণ মানুষ আসলে ভয় পেয়ে গিয়েছিল। ওরা হয়তো ভেবেছিল, আহতদের ধরে কী বিপদে না পড়ে'- জীবন তার ধারণার কথা বললেন।
জীবন বলেন, 'আমার পরিচিত অনেকেই ওই ঘটনার পরে আমাকে বলেছে, আমাকে বোঝানোর চেষ্টা করেছে- আমি কাজটা ঠিক করিনি। আমার কাজ শুধু ছবি তোলা, ছবি তুলে চলে আসা।' তিনি বলেন, 'কিন্তু তা আমি বিশ্বাস করি না। আমি মনে করি, অবশ্যই আমি ছবি তুলব, তার পর সুযোগ থাকলে মানুষের বিপদে সহযোগিতা করব।'
No comments