কেন সাঁওতাল গ্রামে হামলা? by মানিক সরেন
দিনাজপুরের পার্বতীপুর উপজেলার হাবিবপুর সাঁওতালপল্লীতে ২৪ জানুয়ারি ভূমিদস্যুরা হামলা চালিয়ে ৬০টির বেশি ঘরবাড়িতে হামলা, ভাংচুর, লুটপাট ও অগি্নসংযোগ করেছে। আমরা সংবাদপত্রের মাধ্যমে ঘটনার ভয়াবহতা সম্পর্কে জেনেছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত এই ঘটনায় কাউকে গ্রেফতার হতে শুনিনি। সাঁওতালদের লুট হয়ে যাওয়া কিছু গরু, ছাগলসহ বেশ কিছু জিনিসপত্র পুলিশ উদ্ধার করলেও কারা লুট করল, তাদের একজনকেও ধরতে পারেনি। পুলিশ প্রশাসন খুব সহজেই বলছে, যেহেতু লুটপাটের ঘটনায় মামলা হয়নি তাই কাউকে ধরা যাচ্ছে না। মামলা করার পর প্রশাসন হয়তো আইনের নতুন কোনো ফাঁক খুঁজে বের করবে! কী ঘটেছিল সেদিন? আনুমানিক সকাল ৭টার পরে একই গ্রামের জহিরুল ইসলাম ও তার ভাই জিয়ারুল মণ্ডল তার দলবল নিয়ে গ্রামের মৃত রঘুনাথ টুডুর ছেলে যোশেফ টুডু ও তার পরিবারের দখলে থাকা ১৯ একর জমিতে (পত্তনি দলিলের মাধ্যমে প্রাপ্ত জমি) জোরপূর্বক ধানের জমি তৈরি করার চেষ্টা করে। এরই এক পর্যায়ে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হলে ঘটনাস্থলেই তীরবিদ্ধ হয়ে জহিরুল ইসলামের ছেলে সোহাগ মারা যায়। সঙ্গে সঙ্গে আশপাশের কয়েকশ' বাঙালি লাঠি, হাঁসুয়া ও বিভিন্ন দেশি অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে সাঁওতাল গ্রামে হামলা, লুটপাট ও আগুন জ্বালিয়ে দেয়। ঘটনার পরে জাতীয় আদিবাসী পরিষদের সরেজমিন রিপোর্ট দেখে জানা যায়, ঘটনার সময় হামলাকারীরা শুধু লটতরাজ করেই ক্ষান্ত হয়নি। এ সময় নারীদেরও তারা লাঞ্ছিত করে এবং গর্ভবতী একজন সাঁওতাল গৃহবধূ মিখেলিনা মুরমুকে হামলাকারীরা পেটে লাথি মারলে তিনি গুরুতর আহত হন। তিনি দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। প্রশ্ন হলো, একটি পরিবারের সঙ্গে জমিজমার গণ্ডগোলের জের ধরে পুরো সাঁওতাল গ্রামকে কেন জ্বালিয়ে দেওয়া হলো? যেখানে আইন-আদালত আছে সেখানে যদি কেউ অন্যায় করে, তাহলে তার জন্য রাষ্ট্রীয়ভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কিন্তু তাই বলে পুরো গ্রাম জ্বালিয়ে দেবে_ এটা হতে পারে না। পুরো গ্রামের আদিবাসীদের সঙ্গে নিশ্চয় জমি নিয়ে বিবাদ ছিল না। ঘটনাচক্রে যে যুবকটি নিহত হয়েছে সেখানে যদি একজন সাঁওতাল যুবক নিহত হতো, তাহলে কি সাঁওতালরা বাঙালিদের গ্রামে হামলা চালাত? কখনোই না। এই ঘটনা প্রমাণ করে হামলাকারীরা আইন নিজের হাতে তুলে নিয়েছে এবং এজন্য পুলিশ প্রশাসনের গাফিলতির বিষয়টিও আদিবাসী পরিষদের রিপোর্টে পাওয়া গেছে। সাঁওতালরা আইনের মধ্য দিয়ে অপরাধীদের বিচার চেয়েছে। কিন্তু তারা যতই এ রাষ্ট্রকে নিজের বলে বুকে টেনে নেয়, রাষ্ট্র ততই দূরে সরে যায়। অবিলম্বে ওই গ্রামের অসহায় পরিবারগুলোকে পর্যাপ্ত সরকারি সহযোগিতা প্রদানের আবেদন জানাই। সঙ্গে সঙ্গে হামলাকারী, অগি্নসংযোগকারী ও লুটপাটকারীদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় নিয়ে শাস্তি দেওয়ার দাবি জানাই।
আদিবাসী সংগঠক ও মানবাধিকার কর্মী
আদিবাসী সংগঠক ও মানবাধিকার কর্মী
No comments