পরীক্ষা দিতে পারল না হৃদয়
(ফেনীতে ককটেল হামলায় আহত এসএসসি পরীক্ষার্থী হৃদয়ের চিকিৎসা চলছে আগারগাঁওয়ের জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে। পাশে তার মা। গতকাল তোলা ছবি l প্রথম আলো ) হাসপাতালের
বিছানায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে বিভিন্ন সনদ। বিজ্ঞান মেলায় প্রথম পুরস্কার
পাওয়া থেকে শুরু করে আলোকচিত্র প্রশিক্ষণে অংশ নেওয়া, কী নেই তাতে! সবই
শাহরিয়ার হৃদয়ের। বিছানার এক পাশে আধশোয়া অবস্থায় স্মার্টফোনে নিজের
জীবনের ভিডিও ডকুমেন্টারি তৈরি করছে হৃদয়। তার ডান চোখ থেকে পানি ঝরছে।
কিছুক্ষণ পর পর চোখ মুছতে হচ্ছে তাকে। এখন আর সে ডান চোখে কিছু দেখতে পায়
না।
আগারগাঁওয়ের জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের শয্যায় গতকাল শুক্রবার রাত নয়টায় হৃদয় যখন ভিডিও ডকুমেন্টারি তৈরি করছিল তখন তার বন্ধুদের ব্যস্ততা ছিল এসএসসি পরীক্ষার প্রস্তুতি নিয়ে। এর আগে সকালে বাংলা প্রথম পত্রের পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে তারা। ফেনী সরকারি পাইলট উচ্চবিদ্যালয়ের ছাত্র হৃদয়েরও তাদের মতোই বাসায় বসে পরীক্ষার প্রস্তুতি নেওয়ার কথা ছিল।
গত ৫ জানুয়ারি বিকেলে প্রাইভেট পড়া শেষে রিকশায় করে বাসায় ফেরার পথে ফেনী শহরের ট্রাংক রোডের খেজুর চত্বর এলাকায় ককটেল হামলায় গুরুতর আহত হয় দুই বন্ধু হৃদয় ও অনীক। হৃদয়ের ডান চোখ আর অনীকের বাঁ চোখ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুজনের চিকিৎসার দায়িত্ব নিয়েছেন। অনীককে উন্নত চিকিৎসার জন্য ভারতে পাঠানো হয়েছে। হৃদয়কেও শিগগিরই পাঠানো হবে ভারতে।
ফেনী সরকারি পাইলট উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হোসনে আরা বেগম বলেন, বিদ্যালয়ের দুজন মেধাবী শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিতে না পারায় তাদেরও খারাপ লাগছে।
গতকাল সন্ধ্যায় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে কথা হয় হৃদয় ও তাঁর মা রোজি রওশন আক্তারের সঙ্গে। হৃদয়ের মা জানান, এসএসসি পরীক্ষা দিতে যাওয়ার আগে গতকাল সকালে হৃদয়ের বন্ধুরা তাঁকে ফোন করেছিল। কেউই হৃদয়ের সঙ্গে কথা বলেনি কেঁদে ফেলবে এই ভয়ে। শিক্ষকেরা ফোন করেছেন। কথা বলতে বলতেই বিছানায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা সনদগুলো দেখাতে থাকেন তিনি। ‘এই যে দ্যাখেন ও আরও দুই বন্ধুর সঙ্গে রোবট বানাইছে। ট্রেনের ইঞ্জিন বানাইছে। ড্রোন বানানোর কাজ করতাছে।’
মায়ের কথা শেষ না হতেই হৃদয় বলে ওঠে, ‘দ্যাখেন এই রোবটটা মাটির তলায় কোনো দুর্ঘটনা হইলে উদ্ধারকাজে সাহায্য করতে পারবে...ওইটা রেডিও সিগন্যাল দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করা যায়।’
বিছানায় তখন প্রথম আলো গণিত অলিম্পিয়াড, চাইল্ড পার্লামেন্ট, স্পেস ক্যাম্প, জাতীয় পর্যায়ের বিজ্ঞান মেলাসহ স্কুল ও জেলা পর্যায়ের বিভিন্ন অর্জনের সনদ।
হৃদয়ের মা জানালেন, গত বছর শিশু একাডেমী আয়োজিত ১২তম চাইল্ড পার্লামেন্টে যোগ দিতে ফেনী থেকে ঢাকা এসেছিল হৃদয়। চাইল্ড পার্লামেন্টের ডেপুটি স্পিকারও নির্বাচিত হয়েছে। মায়ের কথা শেষ না হতেই হৃদয় জানায়, গত বছরই জাতীয় পর্যায়ের বিজ্ঞান মেলায় দুটি রোবট আর ট্রেন ইঞ্জিন নিয়ে অংশ নিয়েছিল তারা তিনজন। রাশিয়ান দূতাবাস আয়োজিত স্পেস ক্যাম্পেও অংশ নেয় তারা।
বিছানায় থাকা হৃদয়ের একটি খাতার পাতা উল্টাতেই দেখা গেল পাতায় পাতায় সার্কিটের ডায়াগ্রাম, ড্রোনের কাঠামোর নকশা। হৃদয় জানাল, এসএসসি পরীক্ষার পরই তারা ড্রোন তৈরির পরিকল্পনা নিয়েছিল। নকশাও চূড়ান্ত করেছে। খসড়া কাঠামোও দাঁড় করানো হয়ে গেছে। হৃদয় বলে ওঠে, ‘কিন্তু দেখেন, পরীক্ষাটাই দিতে পারলাম না। সবাই পরীক্ষা দিয়ে কলেজে চলে যাবে। আর আমাকে স্কুলের ছোট ভাইদের সঙ্গে পরীক্ষা দিতে হবে।’
ছেলের কথা শুনে কেঁদে ফেলেন মা। তিনি বলেন, ‘ছেলেটা আমার এক মিনিটও স্থির থাকে না। এখন সারা দিন বিছানায় শুয়ে থাকে। দ্যাখেন ওর মামা একটা ফোন আইনা দিছে। তাই নিয়া কত কী যে করা শুরু করছে বিছানায় শুইয়া শুইয়াই।’
ছেলের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কিত মা। তবে প্রধানমন্ত্রী তাঁর দায়িত্ব নেওয়ায় আশা জেগেছে পরিবারটির মধ্যে। রোজি রওশন আক্তার বলেন, হৃদয়ের বাবা আবুল খায়ের চার বছর আগে কুয়েত থেকে নিঃস্ব অবস্থায় দেশে ফেরেন। কোনোরকমে তিন সন্তান নিয়ে সংসার চলছে। হৃদয় পঞ্চম, অষ্টম শ্রেণিতে বৃত্তি পেয়েছে। নিজের পড়াশোনার খরচ নানা বৃত্তি আর পুরস্কারের টাকা দিয়ে চালাচ্ছিল হৃদয়।
আগারগাঁওয়ের জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের শয্যায় গতকাল শুক্রবার রাত নয়টায় হৃদয় যখন ভিডিও ডকুমেন্টারি তৈরি করছিল তখন তার বন্ধুদের ব্যস্ততা ছিল এসএসসি পরীক্ষার প্রস্তুতি নিয়ে। এর আগে সকালে বাংলা প্রথম পত্রের পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে তারা। ফেনী সরকারি পাইলট উচ্চবিদ্যালয়ের ছাত্র হৃদয়েরও তাদের মতোই বাসায় বসে পরীক্ষার প্রস্তুতি নেওয়ার কথা ছিল।
গত ৫ জানুয়ারি বিকেলে প্রাইভেট পড়া শেষে রিকশায় করে বাসায় ফেরার পথে ফেনী শহরের ট্রাংক রোডের খেজুর চত্বর এলাকায় ককটেল হামলায় গুরুতর আহত হয় দুই বন্ধু হৃদয় ও অনীক। হৃদয়ের ডান চোখ আর অনীকের বাঁ চোখ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুজনের চিকিৎসার দায়িত্ব নিয়েছেন। অনীককে উন্নত চিকিৎসার জন্য ভারতে পাঠানো হয়েছে। হৃদয়কেও শিগগিরই পাঠানো হবে ভারতে।
ফেনী সরকারি পাইলট উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হোসনে আরা বেগম বলেন, বিদ্যালয়ের দুজন মেধাবী শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিতে না পারায় তাদেরও খারাপ লাগছে।
গতকাল সন্ধ্যায় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে কথা হয় হৃদয় ও তাঁর মা রোজি রওশন আক্তারের সঙ্গে। হৃদয়ের মা জানান, এসএসসি পরীক্ষা দিতে যাওয়ার আগে গতকাল সকালে হৃদয়ের বন্ধুরা তাঁকে ফোন করেছিল। কেউই হৃদয়ের সঙ্গে কথা বলেনি কেঁদে ফেলবে এই ভয়ে। শিক্ষকেরা ফোন করেছেন। কথা বলতে বলতেই বিছানায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা সনদগুলো দেখাতে থাকেন তিনি। ‘এই যে দ্যাখেন ও আরও দুই বন্ধুর সঙ্গে রোবট বানাইছে। ট্রেনের ইঞ্জিন বানাইছে। ড্রোন বানানোর কাজ করতাছে।’
মায়ের কথা শেষ না হতেই হৃদয় বলে ওঠে, ‘দ্যাখেন এই রোবটটা মাটির তলায় কোনো দুর্ঘটনা হইলে উদ্ধারকাজে সাহায্য করতে পারবে...ওইটা রেডিও সিগন্যাল দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করা যায়।’
বিছানায় তখন প্রথম আলো গণিত অলিম্পিয়াড, চাইল্ড পার্লামেন্ট, স্পেস ক্যাম্প, জাতীয় পর্যায়ের বিজ্ঞান মেলাসহ স্কুল ও জেলা পর্যায়ের বিভিন্ন অর্জনের সনদ।
হৃদয়ের মা জানালেন, গত বছর শিশু একাডেমী আয়োজিত ১২তম চাইল্ড পার্লামেন্টে যোগ দিতে ফেনী থেকে ঢাকা এসেছিল হৃদয়। চাইল্ড পার্লামেন্টের ডেপুটি স্পিকারও নির্বাচিত হয়েছে। মায়ের কথা শেষ না হতেই হৃদয় জানায়, গত বছরই জাতীয় পর্যায়ের বিজ্ঞান মেলায় দুটি রোবট আর ট্রেন ইঞ্জিন নিয়ে অংশ নিয়েছিল তারা তিনজন। রাশিয়ান দূতাবাস আয়োজিত স্পেস ক্যাম্পেও অংশ নেয় তারা।
বিছানায় থাকা হৃদয়ের একটি খাতার পাতা উল্টাতেই দেখা গেল পাতায় পাতায় সার্কিটের ডায়াগ্রাম, ড্রোনের কাঠামোর নকশা। হৃদয় জানাল, এসএসসি পরীক্ষার পরই তারা ড্রোন তৈরির পরিকল্পনা নিয়েছিল। নকশাও চূড়ান্ত করেছে। খসড়া কাঠামোও দাঁড় করানো হয়ে গেছে। হৃদয় বলে ওঠে, ‘কিন্তু দেখেন, পরীক্ষাটাই দিতে পারলাম না। সবাই পরীক্ষা দিয়ে কলেজে চলে যাবে। আর আমাকে স্কুলের ছোট ভাইদের সঙ্গে পরীক্ষা দিতে হবে।’
ছেলের কথা শুনে কেঁদে ফেলেন মা। তিনি বলেন, ‘ছেলেটা আমার এক মিনিটও স্থির থাকে না। এখন সারা দিন বিছানায় শুয়ে থাকে। দ্যাখেন ওর মামা একটা ফোন আইনা দিছে। তাই নিয়া কত কী যে করা শুরু করছে বিছানায় শুইয়া শুইয়াই।’
ছেলের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কিত মা। তবে প্রধানমন্ত্রী তাঁর দায়িত্ব নেওয়ায় আশা জেগেছে পরিবারটির মধ্যে। রোজি রওশন আক্তার বলেন, হৃদয়ের বাবা আবুল খায়ের চার বছর আগে কুয়েত থেকে নিঃস্ব অবস্থায় দেশে ফেরেন। কোনোরকমে তিন সন্তান নিয়ে সংসার চলছে। হৃদয় পঞ্চম, অষ্টম শ্রেণিতে বৃত্তি পেয়েছে। নিজের পড়াশোনার খরচ নানা বৃত্তি আর পুরস্কারের টাকা দিয়ে চালাচ্ছিল হৃদয়।
No comments