সন্তান যেন পানির অপচয় না শেখে by উপমা মাহবুব

শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্বব্যাপীই খাবার পানি হিসেবে নিরাপদ পানির ব্যবহার অগ্রাধিকার হিসেবে স্বীকৃত। নিরাপদ খাবার পানি জাতিসংঘ ঘোষিত একটি মানবাধিকারও বটে। কিন্তু বাংলাদেশে এখনও সব মানুষের এই অধিকারটি নিশ্চিত হয়নি। বাংলাদেশ সরকার খাবার পানির অধিকারকে মৌলিক অধিকার হিসেবে সাংবিধানিক স্বীকৃতিও দেয়নি। আবার পানি সরবরাহ ব্যবস্থার মধ্যেও রয়েছে বৈষম্য।
শহরবাসী ২৪ ঘণ্টা ওয়াসার পানি সরবরাহ ব্যবস্থার আওতার রয়েছে। গৃহস্থালির জন্য লিটারপ্রতি পানির মূল্যও খুব কম, মাত্র ৭ টাকা ৩৩ পয়সা। এখানে প্রতিদিন বিপুল পরিমাণ ব্যবহারযোগ্য পানির অপচয় হচ্ছে। অথচ দেশে এমন অনেক জায়গা আছে যেখানকার অধিবাসীরা এখনও নদী বা কুয়ার পানি খাবার পানি হিসেবে ব্যবহার করছেন। ঢাকা ওয়াসার দৈনিক উত্তোলিত পানির একটি বড় অংশ অপচয় হয়। বাসন মাজা ও কাপড় ধোয়ার জন্য অকারণে কল ছেড়ে রাখা, গাড়ি ধোয়া, বাগানে পানি দেওয়া, অতিরিক্ত সময় ধরে গোসল করা, পানির ট্যাঙ্কি উপচেপড়াসহ নানাভাবে প্রতিনিয়ত ব্যবহারযোগ্য পানির অপচয় হচ্ছে। এ শহরের খুব নগণ্য সংখ্যক মানুষ হাতে সাবান ঘষার সময় কলের মুখ বন্ধ রাখেন।
অথচ এ দেশেরই উপকূলীয় অঞ্চলের অনেক এলাকায় লবণাক্ততা বেড়ে গিয়ে পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পেঁৗছেছে যে, মানুষ ঢাকার তুলনায় প্রায় ৩০০ গুণ দাম দিয়ে, দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে, ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে পানি কিনতে বাধ্য হচ্ছে। একদিকে মানুষ বোতলজাত পানি পয়সা দিয়ে কিনে তার অর্ধেকটাই না খেয়ে ফেলে দিচ্ছে; অন্যদিকে একজন চরবাসী শিশু অস্বাস্থ্যকর নলকূপ অথবা নদীর পানি পান করার কারণে বছরব্যাপী ডায়রিয়াসহ নানাবিধ রোগব্যাধিতে ভুগছে। দেশজুড়ে ছড়িয়ে থাকা ভাসমান জনগোষ্ঠী, দলিত, চা শ্রমিক, বস্তিবাসীসহ সামাজিকভাবে বিচ্ছিন্ন জনগোষ্ঠী প্রতিনিয়ত সুপেয় পানির সংকটে ভোগে। শহরের একটি শিশু স্কুল শেষে বাসায় ফিরে যখন দীর্ঘ সময় ধরে গোসল করে, ঠিক সেই সময় হয়তো পার্বত্য চট্টগ্রামের দুর্গম পাহাড়ে বসবাসকারী একটি শিশু ঘণ্টার পর ঘণ্টা পাহাড় বেয়ে বহুদূরের ছড়া থেকে মাথায় করে অল্প পরিমাণ পানি বাড়িতে বহন করে আনে। ঢাকা শহরের ওয়াসার পানির লাইনে দাঁড়ানো বা অন্য কোনো উপায়ে পানি সংগ্রহ করতে গিয়ে একজন বস্তিবাসী তার কর্মঘণ্টা থেকে মূল্যবান সময় হারান। রাস্তার পাশে ওয়াসার পানির কল দিয়ে অথবা পানির লাইনের ফুটো দিয়ে অনবরত পানি পড়ে যাচ্ছে_ এই দৃশ্য সব শহরবাসীরই কমবেশি দেখা। শহরে অধিকাংশ বাড়িতে টয়লেটের ফ্লাশ টানলেই বিপুল পরিমাণ ব্যবহারযোগ্য পানি পয়ঃনিষ্কাশন লাইন দিয়ে নালায় চলে যায়। অন্যদিকে মানুষ আর্সেনিকযুক্ত, লবণাক্ত বা অন্যান্য দূষণের শিকার অনিরাপদ পানি পান করতে বাধ্য হচ্ছে। সবার জন্য খাবার পানি নিশ্চিত করার দায়িত্ব শুধু সরকারের একার নয়। পানির অপচয় রোধ করার মাধ্যমে প্রতিটি মানুষকেই এই কার্যক্রমে অংশ নিতে হবে। তাই আসুন, হাতে সাবান ঘষার সময় অথবা দাঁত মাজার সময় পানির কল বন্ধ রাখি। নিজেদের সন্তানদের পানির পরিমিত ব্যবহার করতে শেখাই।
উন্নয়নকর্মী
m_upoma@yahoo.com

No comments

Powered by Blogger.