ইসলামে আর্থিক সুবিধা পুত্রের চেয়ে কন্যার বেশি by শাহ্ আব্দুল হান্নান
সদ্য
প্রস্তাবিত নারী উন্নয়ন নীতিতে সরকার উত্তরাধিকারের ক্ষেত্রে নারী ও
পুরুষকে সমান করতে চাচ্ছে। তা করা হলে সূরা নিসার ১১ নম্বর আয়াতে নির্দেশিত
বিধানের সরাসরি লঙ্ঘন করা হবে। অথচ এটি একেবারেই অপ্রয়োজনীয়। আয়াতটিতে বলা
হয়েছেÑ ‘আল্লাহ তোমাদের সন্তানদের ব্যাপারে নির্দেশ দিচ্ছেন : পুরুষের অংশ
দু’জন মেয়ের সমান। যদি (মৃতের ওয়ারিশ) দু’য়ের বেশি মেয়ে হয়, তাহলে
পরিত্যক্ত সম্পত্তির তিন ভাগের দুই ভাগ তাদের দাও। আর যদি একটি মেয়ে ওয়ারিশ
হয় তাহলে পরিত্যক্ত সম্পত্তির অর্ধেক তার। যদি মৃত ব্যক্তির সন্তান থাকে
তাহলে তার বাপ-মা প্রত্যেকে সম্পত্তির ছয় ভাগের এক ভাগ পাবে। আর যদি তার
সন্তান না থাকে এবং বাপ-মা তার ওয়ারিশ হয়, তাহলে মাকে তিন ভাগের এক ভাগ
দিতে হবে। যদি মৃতের ভাই-বোন থাকে, তাহলে মা ছয় ভাগের এক ভাগ পাবে। এ সব
অংশ বের করতে হবে মৃত ব্যক্তি যে অছিয়ত করে গেছে তা পূর্ণ করার এবং সে যে
ঋণ রেখে গেছে তা আদায় করার পর। তোমরা জানো না, তোমাদের বাপ-মা ও তোমাদের
সন্তানদের মধ্যে উপকারের দিক দিয়ে কে তোমাদের বেশি নিকটবর্তী। এসব অংশ
আল্লাহ নির্ধারণ করে দিয়েছেন। আর আল্লাহ অবশ্যই সব সত্য জানেন এবং সব
কল্যাণসহ ব্যবস্থা সম্পর্কে অবগত আছেন।’
প্রকৃতপক্ষে ইসলামে ছেলের চেয়ে মেয়ের আর্থিক অধিকার এবং সুবিধা বেশি। নিন্মের বিশ্লেষণেই তা প্রমাণ করবে। আমরা নিজের কথাই বলি। আমরা অনেক ভাই-বোন ছিলাম। আমার মরহুম আব্বার সমগ্র সম্পত্তির মূল্য আজকের বাজারদরে প্রায় ৯০ লাখ টাকা হবে। আমরা প্রত্যেক ভাই ১৫ লাখ টাকার উত্তরাধিকারী হয়েছিলাম এবং প্রত্যেক বোন সাড়ে সাত লাখ টাকার উত্তরাধিকারী হয়েছিল। অর্থাৎ আমার সুবিধা বোনের তুলনায় সাড়ে সাত লাখ টাকা বেশি ছিল। অন্যদিকে ইসলামি বিধান মোতাবেক (দ্রষ্টব্য : সূরা বাকারা, সূরা নিসা ও সূরা তালাক) আমাকে আমার স্ত্রী, ছেলে ও মেয়ের ভরণপোষণ ব্যয় বহন করতে হয়েছে। আজকের মূল্যে তা অন্তত ৩০ হাজার টাকা মাসিক খরচ হবে। আমার স্ত্রী ৩০ বছর বিবাহিত জীবনের পর মারা যান। এ সময় আমাকে প্রতি মাসে ৩০ হাজার টাকা করে ৩০ বছর ধরে ব্যয় করতে হয়েছিল, যার পরিমাণ =১ কোটি আট লাখ টাকা। এরপরও বাবা হিসেবে আমার মেয়ের জন্য আমাকে অনেক খরচ করতে হয়েছে।
অন্য দিকে আমার বোনের কোনো অর্থ ব্যয় করতে হয়নি বোনের স্বামী, ছেলে বা মেয়ের ভরণপোষণের জন্য। কেননা কুরআন ও সুন্নাহ মোতাবেক তারা এর জন্য দায়িত্বশীল নয়। অর্থাৎ ভরণপোষণের ক্ষেত্রে যেখানে আমাকে এক কোটি আট লাখ টাকা ব্যয় করতে হয়েছে, সেখানে এ পরিমাণ অর্থ আমার বোনকে ব্যয় করতে হয়নি। এ ক্ষেত্রে বোনের সুবিধা এক কোটি আট লক্ষ টাকা। যদি আমার সাড়ে সাত লাখ টাকা উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া অধিক সুবিধা বাদ দেয়া হয়, তাহলে বোনের নিট সুবিধা হয় (১,০৮,০০,০০০-৭,৫০,০০০=১,০০,৫০,০০০) ১ কোটি ৫০ হাজার টাকা। এ হিসেবে আমি মোহরানা ধরিনি। অসংখ্য ক্ষেত্রে হিসাব করে দেখেছি, সার্বিক আর্থিক সুবিধা ইসলামী বিধানে ছেলের চেয়ে মেয়ের বেশি।
পিতা-মাতার উত্তরাধিকার বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সমান। ভাইবোনেরা, যে ক্ষেত্রে তারা উত্তরাধিকারী হয়ে থাকেন, বেশ কিছু ক্ষেত্রে সমান পান। এসব ক্ষেত্রেও সব শ্রেণীর পুরুষের আর্থিক দায়িত্ব নারীর চেয়ে একইভাবে বেশি।
হিসাব করে দেখেছি, আমেরিকান জনগণ যদি ইসলামি আইন অনুসরণ করে, তাহলে নারীরাই অধিক সুবিধা পাবে। সেখানে উত্তরাধিকার খুব সামান্যই পাওয়া যায়। কেননা বেশির ভাগ মানুষ ক্রেডিট কার্ডে চলে, তাদের সঞ্চয় নেই বা থাকলেও ৯৯ শতাংশ ক্ষেত্রে তা খুবই সামান্য। সে দেশে মাসিক খরচ যদি মাত্র দুই হাজার ডলারও ধরি, তাহলে ৩০ বছরে বিবাহিত জীবনে ইসলামি আইন মোতাবেক নারীর সুবিধা হবে =৭,২০,০০০ ডলার (বাংলাদেশী টাকায় প্রায় পাঁচ কোটি ৭৬ লাখ টাকা)। সুতরাং এটা স্পষ্ট যে, পুরুষ ও নারীর আর্থিক সুবিধা দেয়ার ক্ষেত্রে ইসলাম মূলত নারীদের অধিক সুবিধা দিয়েছে। তাই উত্তরাধিকার আইন বদলের যেকোনো প্রচেষ্টা অপ্রয়োজনীয়। তদুপরি ৯০ ভাগ মুসলিম অধিবাসীর বাংলাদেশে এ ধরনের সরাসরি কুরআনবিরোধী বিধান প্রবর্তন জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না। দেশে উত্তেজনা সৃষ্টি হবে। আমি সরকারকে অনুরোধ করি, যেন তারা এ উদ্যোগ থেকে সরে আসেন। নারীদের সব ধরনের অধিকার দেয়া হোক, তাদের অধিকার যাতে তারা সত্যিকার অর্থেই পায় এবং কেবল কথায় যাতে তা সীমাবদ্ধ না থাকে, সেজন্য ব্যবস্থা নিন। কিন্তু সরাসরি কুরআন ও ধর্মের সাথে সাংঘর্ষিক ব্যবস্থা নেবেন না। এসব বিধান ভালো করে কার্যকরও হয় না। যেসব আইনের পেছনে নৈতিকতার সমর্থন রয়েছে, ধর্মের সমর্থন রয়েছে, সেগুলো বেশি কার্যকর হয়। ধর্মবিরোধী আইন কখনোই সত্যিকার অর্থে কার্যকর হয় না। কেননা আইনের পেছনে দরকার নৈতিক ভিত্তি।
লেখক : বিশিষ্ট সমাজসেবক ও সাবেক সচিব
প্রকৃতপক্ষে ইসলামে ছেলের চেয়ে মেয়ের আর্থিক অধিকার এবং সুবিধা বেশি। নিন্মের বিশ্লেষণেই তা প্রমাণ করবে। আমরা নিজের কথাই বলি। আমরা অনেক ভাই-বোন ছিলাম। আমার মরহুম আব্বার সমগ্র সম্পত্তির মূল্য আজকের বাজারদরে প্রায় ৯০ লাখ টাকা হবে। আমরা প্রত্যেক ভাই ১৫ লাখ টাকার উত্তরাধিকারী হয়েছিলাম এবং প্রত্যেক বোন সাড়ে সাত লাখ টাকার উত্তরাধিকারী হয়েছিল। অর্থাৎ আমার সুবিধা বোনের তুলনায় সাড়ে সাত লাখ টাকা বেশি ছিল। অন্যদিকে ইসলামি বিধান মোতাবেক (দ্রষ্টব্য : সূরা বাকারা, সূরা নিসা ও সূরা তালাক) আমাকে আমার স্ত্রী, ছেলে ও মেয়ের ভরণপোষণ ব্যয় বহন করতে হয়েছে। আজকের মূল্যে তা অন্তত ৩০ হাজার টাকা মাসিক খরচ হবে। আমার স্ত্রী ৩০ বছর বিবাহিত জীবনের পর মারা যান। এ সময় আমাকে প্রতি মাসে ৩০ হাজার টাকা করে ৩০ বছর ধরে ব্যয় করতে হয়েছিল, যার পরিমাণ =১ কোটি আট লাখ টাকা। এরপরও বাবা হিসেবে আমার মেয়ের জন্য আমাকে অনেক খরচ করতে হয়েছে।
অন্য দিকে আমার বোনের কোনো অর্থ ব্যয় করতে হয়নি বোনের স্বামী, ছেলে বা মেয়ের ভরণপোষণের জন্য। কেননা কুরআন ও সুন্নাহ মোতাবেক তারা এর জন্য দায়িত্বশীল নয়। অর্থাৎ ভরণপোষণের ক্ষেত্রে যেখানে আমাকে এক কোটি আট লাখ টাকা ব্যয় করতে হয়েছে, সেখানে এ পরিমাণ অর্থ আমার বোনকে ব্যয় করতে হয়নি। এ ক্ষেত্রে বোনের সুবিধা এক কোটি আট লক্ষ টাকা। যদি আমার সাড়ে সাত লাখ টাকা উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া অধিক সুবিধা বাদ দেয়া হয়, তাহলে বোনের নিট সুবিধা হয় (১,০৮,০০,০০০-৭,৫০,০০০=১,০০,৫০,০০০) ১ কোটি ৫০ হাজার টাকা। এ হিসেবে আমি মোহরানা ধরিনি। অসংখ্য ক্ষেত্রে হিসাব করে দেখেছি, সার্বিক আর্থিক সুবিধা ইসলামী বিধানে ছেলের চেয়ে মেয়ের বেশি।
পিতা-মাতার উত্তরাধিকার বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সমান। ভাইবোনেরা, যে ক্ষেত্রে তারা উত্তরাধিকারী হয়ে থাকেন, বেশ কিছু ক্ষেত্রে সমান পান। এসব ক্ষেত্রেও সব শ্রেণীর পুরুষের আর্থিক দায়িত্ব নারীর চেয়ে একইভাবে বেশি।
হিসাব করে দেখেছি, আমেরিকান জনগণ যদি ইসলামি আইন অনুসরণ করে, তাহলে নারীরাই অধিক সুবিধা পাবে। সেখানে উত্তরাধিকার খুব সামান্যই পাওয়া যায়। কেননা বেশির ভাগ মানুষ ক্রেডিট কার্ডে চলে, তাদের সঞ্চয় নেই বা থাকলেও ৯৯ শতাংশ ক্ষেত্রে তা খুবই সামান্য। সে দেশে মাসিক খরচ যদি মাত্র দুই হাজার ডলারও ধরি, তাহলে ৩০ বছরে বিবাহিত জীবনে ইসলামি আইন মোতাবেক নারীর সুবিধা হবে =৭,২০,০০০ ডলার (বাংলাদেশী টাকায় প্রায় পাঁচ কোটি ৭৬ লাখ টাকা)। সুতরাং এটা স্পষ্ট যে, পুরুষ ও নারীর আর্থিক সুবিধা দেয়ার ক্ষেত্রে ইসলাম মূলত নারীদের অধিক সুবিধা দিয়েছে। তাই উত্তরাধিকার আইন বদলের যেকোনো প্রচেষ্টা অপ্রয়োজনীয়। তদুপরি ৯০ ভাগ মুসলিম অধিবাসীর বাংলাদেশে এ ধরনের সরাসরি কুরআনবিরোধী বিধান প্রবর্তন জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না। দেশে উত্তেজনা সৃষ্টি হবে। আমি সরকারকে অনুরোধ করি, যেন তারা এ উদ্যোগ থেকে সরে আসেন। নারীদের সব ধরনের অধিকার দেয়া হোক, তাদের অধিকার যাতে তারা সত্যিকার অর্থেই পায় এবং কেবল কথায় যাতে তা সীমাবদ্ধ না থাকে, সেজন্য ব্যবস্থা নিন। কিন্তু সরাসরি কুরআন ও ধর্মের সাথে সাংঘর্ষিক ব্যবস্থা নেবেন না। এসব বিধান ভালো করে কার্যকরও হয় না। যেসব আইনের পেছনে নৈতিকতার সমর্থন রয়েছে, ধর্মের সমর্থন রয়েছে, সেগুলো বেশি কার্যকর হয়। ধর্মবিরোধী আইন কখনোই সত্যিকার অর্থে কার্যকর হয় না। কেননা আইনের পেছনে দরকার নৈতিক ভিত্তি।
লেখক : বিশিষ্ট সমাজসেবক ও সাবেক সচিব
No comments