সকালে ছোটরা, বিকেলে বড়রা by মাসুম আলী
(বাংলা
একাডেমিতে একুশে গ্রন্থমেলা গতকাল সকাল থেকে বেলা দুইটা পর্যন্ত ছিল
শিশুদের জন্য। খুদে পড়ুয়াদের ভিড় ছিল লক্ষণীয় l ছবি: প্রথম আলো) অমর
একুশের গ্রন্থমেলায় গতকাল শুক্রবার ছুটির দিনের শুরুটা ছিল ছোটদের জন্য।
আনুষ্ঠানিকভাবে মেলা কমিটি এ সময়টিকে ঘোষণা করেছে ‘শিশু প্রহর’ হিসেবে।
নামটা হয়েছে ষোলোআনা সার্থক। দিনের শুরুতে মেলা সত্যিই অন্য রকম ছিল খুদে
পাঠকদের কারণে। বড়দের ভিড় ও ধাক্কাধাক্কি নেই। মা-বাবার হাত ধরে মনের
খুশিতে শিশুদের ঘুরে বেড়ানো। বায়না ধরে দুই হাত ভর্তি করে বই কেনা। গতকাল
ছিল শিশুদের জন্য বিশেষ দিনের প্রথম পর্ব। বেলা ১১টা থেকে দুইটা পর্যন্ত
শিশুদের জন্য ছিল মেলায় প্রবেশের সুবন্দোবস্ত। অভিভাবকদের হাত ধরে
নিশ্চিন্তে-নির্বিঘ্নে তারা মেলায় ঢুকেছে।
বিকেলে ঠিক উল্টো চিত্র। অবশ্য গ্রন্থমেলার ছুটির দিনগুলোতে যেমন বরাবর হয়, যা প্রত্যাশা থাকে, তার ব্যতিক্রম হয়নি। শাহবাগ থেকে দোয়েল চত্বর যান-জনতায় আকীর্ণ। বিকেল থেকে বাংলা একাডেমি এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের উভয় প্রান্তের দুটি করে আর্চওয়ের সামনে চারটি করে সারি। উদ্যানে কিংবা বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে আক্ষরিক অর্থেই ‘তিল ঠাঁই আর নাহিরে’ অবস্থা। সকালে ‘শিশু’, বিকেলে ‘ভিড়’ আর সন্ধ্যায় মেলা মঞ্চে ‘নাচ-গানে’র আয়োজন দিয়ে দারুণ একটি দিন কাটল গতকাল।
‘বড়দের ভিড়ের চাপে শিশুরা অনেক সময় মেলায় ঢুকতে পারে না। ঢুকলেও নিজেদের মতো করেঘুরে বেড়ানোর সুযোগ পায় না। মূলত শিশুদের মেলায় প্রবেশ সহজ করার জন্যই এই বিশেষ ব্যবস্থা’—বলছিলেন বাংলা একাডেমির জনসংযোগ বিভাগের উপপরিচালক মুর্শিদুদ্দিন আহম্মদ। তিনি জানান, আজ শনিবার এবং ১৩ ও ১৪ ফেব্রুয়ারি শিশু প্রহর ঘোষণা করা হয়েছে। শিশু প্রহরের সময়কাল বেলা ১১টা থেকে বেলা দুইটা।
গতকাল প্রথম প্রহরে বই দেখা, কেনার পাশাপাশি ছিল নানা আয়োজন। সকাল সাড়ে আটটায় অমর একুশে উদ্যাপন উপলক্ষে বাংলা একাডেমি আয়োজন করে শিশু-কিশোর চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা। প্রতিযোগিতায় ‘ইচ্ছেমতো আঁকা’ শীর্ষক ক বিভাগে ২৮৫ জন, ‘শহিদ মিনার’ শীর্ষক খ বিভাগে ২০৪ জন এবং ‘বাংলা একাডেমি’ শীর্ষক গ বিভাগে ১৭৪ জন প্রতিযোগী অংশ নেয়। প্রতিযোগিতার উদ্বোধন করেন শিল্পী হাশেম খান।
গতকাল বই বিক্রি হয়েছে দেদার। শিশু একাডেমী ছাড়াও পাঞ্জেরি, ঝিঙেফুল, সেবা প্রকাশনী, বিশ্বসাহিত্য ভবন, ওয়ার্ল্ড অব চিলড্রেনস বুক, টোনাটুনি প্রভৃতি প্রতিষ্ঠানে ছোটদের ভিড় বেশি দেখা গেছে। ছুটির দিনেও বেশ কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা থাকায় অনেক শিশুকে স্কুলের পোশাক গায়ে মেলায় দেখা গেছে। শিশু একাডেমীতে সকালে গান, নাচ, আঁকাজোকার ক্লাস করে লাল-সবুজ পোশাক গায়ে অনেক অগ্রসর খুদে পাঠকের দেখা মিলেছে।
নতুন বই এবং বইয়ের মোড়ক উন্মোচন: শৈশব পেরিয়ে মেলা তারুণ্যে পড়বে কয়দিন বাদেই। এই সময়টাকে নতুন বই নিয়ে আসার জন্য যথার্থ মনে করছেন প্রকাশকেরা। তাই গতকাল মেলায় অন্তত ৪০০টি নতুন বই প্রকাশ পেয়েছে। যদিও একাডেমির তথ্যকেন্দ্র এবং সমন্বয় ও জনসংযোগ উপবিভাগ থেকে প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, গত বৃহস্পতিবার মেলার ষষ্ঠ দিনে নতুন বই আসার সংখ্যা ২৯০। এর মধ্যে গল্প ৫৩, উপন্যাস ৫৯, প্রবন্ধ ২২, কবিতা ৫৮, গবেষণা ৬, ছড়া ১০, শিশুসাহিত্য ১৩, জীবনী ৮, নাটক ১, বিজ্ঞান ১৩, ভ্রমণ ২, ইতিহাস ৩, ধর্মীয় ১, বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনি ২, রম্য ৪, চিকিৎসা ৪, অভিধান ১ এবং অন্যান্য বিষয়ের ওপর ২৮টি নতুন বই প্রকাশিত হয়েছে। এ হিসাবটা শুধু প্রকাশকদের তথ্যকেন্দ্রে সরবরাহ করা বইয়ের ওপর ভিত্তি করে করা হয়েছে। নতুন আসা সব বই প্রকাশকেরা তথ্যকেন্দ্রে দেন না।
তবে নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচনের সঠিক সংখ্যা মিলেছে সমন্বয় ও জনসংযোগ উপবিভাগ থেকে। গতকাল নজরুল মঞ্চে ৩১টি নতুন বইয়ের মোড়ক খোলা হয়। এর মধ্যে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ উন্মোচন করেন পাশা মোস্তফা কামালের রংধনু, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক উন্মোচন করেন সাদিয়া আফরিনের ভ্রমণ, হাফিজুল ইসলামের মহাকালের প্রথম প্রহর ও খায়রুল ইসলামের স্বপ্ন।
নজরুল মঞ্চে মোড়ক উন্মোচনের এতটাই ভিড় ছিল যে বাধ্য হয়ে নীতিমালা লঙ্ঘন করে স্টলের সামনে নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করতে দেখা গেছে। বিকেলে অন্বেষা প্রকাশনের স্টলের সামনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ সহকারী মাহবুবুল হক শাকিলের খেরোখাতার পাতা থেকে বইটির মোড়ক উন্মোচন করেন সাংবাদিক গোলাম সারওয়ার, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি, নাট্যজন পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায়, তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ, কবি রফিক আজাদ, হাবিবুল্লাহ সিরাজী, গীতিকার আসিফ ইকবাল প্রমুখ।
আলোচনা ও নাচ-গান
সন্ধ্যার নাচ-গানে মুখরিত ছিল মেলা মঞ্চ। উল্লেখ করার মতো দর্শকও দেখা গেছে বর্ধমান হাউসের সামনে সবুজ চত্বরে। এতে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অনীক বোসের পরিচালনায় নৃত্য পরিবেশন করে ‘স্পন্দন’। গান শোনান শিল্পী শাহীন সামাদ, ফেরদৌস আরা, সালাউদ্দিন আহমেদ, সুজিত মোস্তফা, শহীদ কবির, মফিজুর রহমান, ফারহানা ফেরদৌসী ও প্রিয়াংকা গোপ। এর আগে বিকেলে অনুষ্ঠিত হয় ‘রজনীকান্ত সার্ধশতজন্মবর্ষ’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। এতে প্রবন্ধ পাঠ করেন নূরুল আনোয়ার। জামিল চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আলোচনা করেন অধ্যাপক আজিজুর রহমান ও শিখা আরেফিন।
বিকেলে ঠিক উল্টো চিত্র। অবশ্য গ্রন্থমেলার ছুটির দিনগুলোতে যেমন বরাবর হয়, যা প্রত্যাশা থাকে, তার ব্যতিক্রম হয়নি। শাহবাগ থেকে দোয়েল চত্বর যান-জনতায় আকীর্ণ। বিকেল থেকে বাংলা একাডেমি এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের উভয় প্রান্তের দুটি করে আর্চওয়ের সামনে চারটি করে সারি। উদ্যানে কিংবা বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে আক্ষরিক অর্থেই ‘তিল ঠাঁই আর নাহিরে’ অবস্থা। সকালে ‘শিশু’, বিকেলে ‘ভিড়’ আর সন্ধ্যায় মেলা মঞ্চে ‘নাচ-গানে’র আয়োজন দিয়ে দারুণ একটি দিন কাটল গতকাল।
‘বড়দের ভিড়ের চাপে শিশুরা অনেক সময় মেলায় ঢুকতে পারে না। ঢুকলেও নিজেদের মতো করেঘুরে বেড়ানোর সুযোগ পায় না। মূলত শিশুদের মেলায় প্রবেশ সহজ করার জন্যই এই বিশেষ ব্যবস্থা’—বলছিলেন বাংলা একাডেমির জনসংযোগ বিভাগের উপপরিচালক মুর্শিদুদ্দিন আহম্মদ। তিনি জানান, আজ শনিবার এবং ১৩ ও ১৪ ফেব্রুয়ারি শিশু প্রহর ঘোষণা করা হয়েছে। শিশু প্রহরের সময়কাল বেলা ১১টা থেকে বেলা দুইটা।
গতকাল প্রথম প্রহরে বই দেখা, কেনার পাশাপাশি ছিল নানা আয়োজন। সকাল সাড়ে আটটায় অমর একুশে উদ্যাপন উপলক্ষে বাংলা একাডেমি আয়োজন করে শিশু-কিশোর চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা। প্রতিযোগিতায় ‘ইচ্ছেমতো আঁকা’ শীর্ষক ক বিভাগে ২৮৫ জন, ‘শহিদ মিনার’ শীর্ষক খ বিভাগে ২০৪ জন এবং ‘বাংলা একাডেমি’ শীর্ষক গ বিভাগে ১৭৪ জন প্রতিযোগী অংশ নেয়। প্রতিযোগিতার উদ্বোধন করেন শিল্পী হাশেম খান।
গতকাল বই বিক্রি হয়েছে দেদার। শিশু একাডেমী ছাড়াও পাঞ্জেরি, ঝিঙেফুল, সেবা প্রকাশনী, বিশ্বসাহিত্য ভবন, ওয়ার্ল্ড অব চিলড্রেনস বুক, টোনাটুনি প্রভৃতি প্রতিষ্ঠানে ছোটদের ভিড় বেশি দেখা গেছে। ছুটির দিনেও বেশ কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা থাকায় অনেক শিশুকে স্কুলের পোশাক গায়ে মেলায় দেখা গেছে। শিশু একাডেমীতে সকালে গান, নাচ, আঁকাজোকার ক্লাস করে লাল-সবুজ পোশাক গায়ে অনেক অগ্রসর খুদে পাঠকের দেখা মিলেছে।
নতুন বই এবং বইয়ের মোড়ক উন্মোচন: শৈশব পেরিয়ে মেলা তারুণ্যে পড়বে কয়দিন বাদেই। এই সময়টাকে নতুন বই নিয়ে আসার জন্য যথার্থ মনে করছেন প্রকাশকেরা। তাই গতকাল মেলায় অন্তত ৪০০টি নতুন বই প্রকাশ পেয়েছে। যদিও একাডেমির তথ্যকেন্দ্র এবং সমন্বয় ও জনসংযোগ উপবিভাগ থেকে প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, গত বৃহস্পতিবার মেলার ষষ্ঠ দিনে নতুন বই আসার সংখ্যা ২৯০। এর মধ্যে গল্প ৫৩, উপন্যাস ৫৯, প্রবন্ধ ২২, কবিতা ৫৮, গবেষণা ৬, ছড়া ১০, শিশুসাহিত্য ১৩, জীবনী ৮, নাটক ১, বিজ্ঞান ১৩, ভ্রমণ ২, ইতিহাস ৩, ধর্মীয় ১, বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনি ২, রম্য ৪, চিকিৎসা ৪, অভিধান ১ এবং অন্যান্য বিষয়ের ওপর ২৮টি নতুন বই প্রকাশিত হয়েছে। এ হিসাবটা শুধু প্রকাশকদের তথ্যকেন্দ্রে সরবরাহ করা বইয়ের ওপর ভিত্তি করে করা হয়েছে। নতুন আসা সব বই প্রকাশকেরা তথ্যকেন্দ্রে দেন না।
তবে নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচনের সঠিক সংখ্যা মিলেছে সমন্বয় ও জনসংযোগ উপবিভাগ থেকে। গতকাল নজরুল মঞ্চে ৩১টি নতুন বইয়ের মোড়ক খোলা হয়। এর মধ্যে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ উন্মোচন করেন পাশা মোস্তফা কামালের রংধনু, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক উন্মোচন করেন সাদিয়া আফরিনের ভ্রমণ, হাফিজুল ইসলামের মহাকালের প্রথম প্রহর ও খায়রুল ইসলামের স্বপ্ন।
নজরুল মঞ্চে মোড়ক উন্মোচনের এতটাই ভিড় ছিল যে বাধ্য হয়ে নীতিমালা লঙ্ঘন করে স্টলের সামনে নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করতে দেখা গেছে। বিকেলে অন্বেষা প্রকাশনের স্টলের সামনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ সহকারী মাহবুবুল হক শাকিলের খেরোখাতার পাতা থেকে বইটির মোড়ক উন্মোচন করেন সাংবাদিক গোলাম সারওয়ার, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি, নাট্যজন পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায়, তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ, কবি রফিক আজাদ, হাবিবুল্লাহ সিরাজী, গীতিকার আসিফ ইকবাল প্রমুখ।
আলোচনা ও নাচ-গান
সন্ধ্যার নাচ-গানে মুখরিত ছিল মেলা মঞ্চ। উল্লেখ করার মতো দর্শকও দেখা গেছে বর্ধমান হাউসের সামনে সবুজ চত্বরে। এতে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অনীক বোসের পরিচালনায় নৃত্য পরিবেশন করে ‘স্পন্দন’। গান শোনান শিল্পী শাহীন সামাদ, ফেরদৌস আরা, সালাউদ্দিন আহমেদ, সুজিত মোস্তফা, শহীদ কবির, মফিজুর রহমান, ফারহানা ফেরদৌসী ও প্রিয়াংকা গোপ। এর আগে বিকেলে অনুষ্ঠিত হয় ‘রজনীকান্ত সার্ধশতজন্মবর্ষ’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। এতে প্রবন্ধ পাঠ করেন নূরুল আনোয়ার। জামিল চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আলোচনা করেন অধ্যাপক আজিজুর রহমান ও শিখা আরেফিন।
No comments