লাশ ফেলার কথা ডাঁহা মিথ্যা -সাদেক হোসেন খোকা by মনির হায়দার
চিকিৎসার
জন্য যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকা
বলেছেন, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্নার সঙ্গে তার কথোপকথনের
যে অডিও ক্লিপ প্রকাশিত হয়েছে, তা সত্য। তবে তাতে কোথাও লাশ ফেলা নিয়ে কোন
কথা হয়নি, অডিও ক্লিপসেও সে রকম কোন কথাই নেই। কিন্তু সরকারি দলের এক
শ্রেণীর মিথ্যাবাদী নেতা ও প্রচার-সন্ত্রাসী নিজেরাই এ রকম একটি কথা বানিয়ে
এখন গোয়েবলসীয় কায়দায় সেটির প্রপাগান্ডা শুরু করেছেন, যা ডাহা মিথ্যা।
মানবজমিনকে দেয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে ঢাকার সাবেক এই মেয়র বলেন, বিদেশে অবস্থান করলেও নিজ দল বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ, সিভিল সোসাইটির উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিবর্গ এবং সিনিয়র সাংবাদিকদের সঙ্গে আমার নিয়মিতই রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে কথাবার্তা হয়। মান্নার সঙ্গে আলোচনাও সে রকমই নিতান্তই দু’জন রাজনীতিকের অতি সাধারণ আলোচনা। কিন্তু বর্তমান অবৈধ সরকার আমাদের স্বাভাবিক নাগরিক অধিকার লঙ্ঘনের মাধ্যমে সেই কথোপকথন রেকর্ড করে শতভাগ মিথ্যা প্রপাগান্ডা ছড়ানোর মাধ্যমে জনগণকে বিভ্রান্ত করার অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়েছে।
সাদেক হোসেন খোকা বলেন, মাহমুদুর রহমান মান্না এদেশে উড়ে এসে জুড়ে বসা কোন রাজনীতিক নন। তিনিই বাংলাদেশের একমাত্র রাজনীতিক, যিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদের জিএস এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদের ভিপি ছিলেন। তিনি একাধারে ব্যক্তিত্বসম্পন্ন রাজনীতিক, জনপ্রিয় সুবক্তা, খ্যাতিমান লেখক এবং জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট সকল জাতীয় ইস্যুতে একজন সোচ্চার নাগরিক। আওয়ামী লীগের জনবিচ্ছিন্ন ও সুবিধাবাদী রাজনীতির সঙ্গে একাত্ম হতে না পেরে তিনি সম্পূর্ণ নিজের উজ্জ্বল ব্যক্তিত্বের যোগ্যতা বলে একটি কার্যকর নাগরিক উদ্যোগ গড়ে তুলতে সক্ষম হন। দেশে চলমান গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার সংগ্রামের একজন অগ্রসৈনিক হিসেবে আমরা যার যার স্বতন্ত্র অবস্থান থেকে যুগপৎ লড়াইয়ে রয়েছি। সুতরাং তার সঙ্গে আমার টেলিফোনে আলাপ-আলোচনা মোটেই কোন অস্বাভাবিক বিষয় নয়। এই আলোচনা নিয়ে মিথ্যা প্রপাগান্ডা সৃষ্টিকারীরা নিছক অসুস্থ মানসিকতার অধিকারী গণদুশমন ব্যতীত কিছুই নয়।
বিএনপির এই প্রভাবশালী নেতা মানবজমিনকে আরও বলেন, মান্নার সঙ্গে আমার আলোচনায় মূলত অবৈধ সরকারের বিরুদ্ধে চলমান আন্দোলন-লড়াইয়ের বিভিন্ন কর্মকৌশল ও গতি-প্রকৃতি নিয়ে কথাবার্তা হয়েছে। সেখানে আন্দোলনকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আঙ্গিনায় সমপ্রসারিত করার যৌক্তিক প্রসঙ্গটিই তিনি উত্থাপন করেছেন এবং আমরা উভয়ে সে ব্যাপারে বাস্তব পরিস্থিতির চিত্রটি নিয়ে আলোচনা করেছি। এ কথা কে না জানে যে, বায়ান্ন সালের মহান ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে পরবর্তীকালে আমাদের স্বাধিকার ও স্বাধীনতার সংগ্রাম এবং এ জাতির সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলন-সংগ্রামের মূল প্রাণকেন্দ্র ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত এই প্রতিষ্ঠানকে বলা হয় মুক্তবুদ্ধি চর্চার পীঠস্থান। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে গণতান্ত্রিক আন্দোলন-সংগ্রাম ও মুক্তবুদ্ধি চর্চার প্রাণকেন্দ্র হিসেবে পরিচিত এই বিশ্ববিদ্যালয় এবারই প্রথম তার দীর্ঘকালের ঐতিহ্য হারিয়ে সম্পূর্ণরূপে একটি দলীয় প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। ২০০৯ সালে শেখ হাসিনার সরকার ক্ষমতায় বসার পর থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আঙ্গিনা থেকে সব রকম ভিন্নমতের চর্চাকে জোরপূর্বক নির্বাসনে পাঠানো হয়েছে। এটি এখন নিতান্তই আওয়ামী লীগ দলীয় শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের দলবাজির এক অভয়ারণ্য। এখানে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রত্যক্ষ মদতে সরকার সমর্থকরা ঐতিহ্যবাহী এই ক্যাম্পাস ও হলগুলো জবরদখল করে রেখেছে। ভিন্নমতের কোন শিক্ষার্থীর উপস্থিতি সেখানে সহ্য করা হচ্ছে না। কেবলমাত্র ভিন্নমতের সমর্থক হওয়ার কারণে সেখানে অনেকের ছাত্রত্ব বাতিলের নজিরবিহীন ঘটনাও ঘটেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের দলবাজ উপাচার্য বিদ্যমান আইনকানুন ও সকল রীতি-রেওয়াজ উপেক্ষা করে তার প্রতিটি পদক্ষেপ ও বক্তব্যের মাধ্যমে দীর্ঘকালের সুনামধারী প্রতিষ্ঠানটিকে কার্যত আওয়ামী লীগের একটি শাখা প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেছেন। এই পরিস্থিতিতে জনগণের চলমান স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলন-লড়াইকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আঙ্গিনায় সমপ্রসারিত করার প্রসঙ্গটিই মান্না ও আমার আলোচনায় উঠে আসে।
সাদেক হোসেন খোকা বলেন, বর্তমান সময়ের নির্মম ও নিষ্ঠুর বাস্তবতা হলো, বর্তমান অবৈধ সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে গিয়ে প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন স্থানে সরকারের নিয়োজিত ঘাতকদের পেট্রলবোমা ও গুলিতে নিরীহ-নিরপরাধ মানুষ, এমনকি শিশু-কিশোররাও অকাতরে প্রাণ হারাচ্ছে। এই পটভূমিতে সামপ্রতিক সময়ে ক্ষমতাসীনদের সশস্ত্র ক্যাডারদের একচ্ছত্র আখড়ায় পরিণত হওয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আন্দোলন বিস্তৃত করতে গেলে সে জন্য কি ধরনের মূল্য দিতে হতে পারে, আমাদের আলোচনায় মান্না কেবলমাত্র সেই কথাটিই স্মরণ করিয়ে দিয়েছিলেন। খুনের নেশায় উন্মত্ত এই জালিম সরকার জনগণের আন্দোলনকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আঙ্গিনায় সমপ্রসারিত হওয়ার চেষ্টা প্রতিরোধে যে কোন ধরনের মানবতাবিরোধী হিংস্রতার পথ বেছে নিতে পারেন বলেই আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন মান্না।
তিনি বলেন, আমাদের সকলেরই পরিষ্কার মনে আছে যে, আওয়ামী জোটের নেত্রী শেখ হাসিনা বিরোধী দলে থাকার সময় এক প্রকাশ্য জনসভায় ঘোষণা দিয়েছিলেন যে, ‘একটা লাশের বদলে দশটা লাশ চাই’। তাঁর এই ভয়ঙ্কর ঘোষণাকে সেদিন যারা সামান্যতম অপরাধ হিসেবেও বিবেচনা করেনি, সেসব প্রচার-সন্ত্রাসীরাই আজ একটি বানোয়াট অভিযোগের ধুয়া তুলে মাহমুদুর রহমান মান্নার মতো স্বনামখ্যাত ও পরিচ্ছন্ন রাজনীতিকের চরিত্র হননের ভয়ঙ্কর খেলায় মেতেছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তথা সরকারের প্রত্যক্ষ উসকানিতে তাদের দলীয় সন্ত্রাসীরা ঐতিহ্যবাহী ডাকসু ভবন থেকে মাহমুদুর রহমান মান্নার মতো প্রতিষ্ঠানতুল্য ছাত্রনেতার নাম মুছে ফেলা ও কতিপয় দলান্ধ শিক্ষক মান্নার সনদ বাতিলের জিগির তুলেছে। এসবের মধ্য দিয়ে তারা প্রকৃতপক্ষে শান্তিপ্রিয় জনগণের এই দেশে প্রতিহিংসা ও অসহিষ্ণুতার এক চরম দৃষ্টান্ত স্থাপনের আত্মঘাতী পথই বেছে নিয়েছে। সাদেক হোসেন খোকা তাঁর সঙ্গে কথোপকথনকে ঘিরে সব রকম বিকৃত ও মিথ্যা প্রপাগান্ডা থামিয়ে অবিলম্বে মাহমুদুর রহমান মান্নাকে সুস্থ ও স্বাভাবিকভাবে তার পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেয়ার দাবি জানান।
সরকার ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের অপচেষ্টায় লিপ্ত
মাহমুদুর রহমান মান্নার সঙ্গে কথোপকথনকে স্বাভাবিক রাজনৈতিক আলাপ দাবি করে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকা বলেছেন, এই আলাপকে ঘিরে পলায়নপর অবৈধ সরকারের মন্ত্রী ও এমপিরা ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের নির্লজ্জ অপচেষ্টায় লিপ্ত। সেই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবেই মিথ্যা অভিযোগের ধুয়া তুলে মাহমুদুর রহমান মান্নাকে সন্ত্রাসী কায়দায় তুলে নিয়ে অজ্ঞাত স্থানে বন্দি করে রাখা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র থেকে পাঠানো এক বিবৃতিতে খোকা বলেন, তীব্র জনরোষের ভয়ে আতঙ্কিত সরকার স্বউদ্যোগে নানারকম বায়বীয় অভিযোগ সৃষ্টি করে চলমান আন্দোলন-লড়াইকে দমনের নীল নকশা বাস্তবায়নের পথ বেছে নিয়েছে। আমি স্পষ্ট ভাষায় জানাতে চাই যে, মাহমুদুর রহমান মান্না একজন খ্যাতিমান ব্যক্তিত্ব এবং সুপরিচিত রাজনীতিবিদ। তার সঙ্গে আমার সাম্প্রতিক টেলিফোন কথোপকথনের বিষয়টি চলমান আন্দোলনের গতি-প্রকৃতি ও কর্মকৌশল নিয়ে অতি স্বাভাবিক আলোচনা। এখানে সরকারের প্রচার সন্ত্রাসীদের ভাষায় ‘লাশ ফেলে দেয়ার’ কোন কথা হয়নি। সাদেক হোসেন খোকা বলেন, দেশবাসীর খুব ভাল করেই জানা আছে যে, আজকের বিনা ভোটের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিরোধী দলের নেত্রী থাকাকালে প্রকাশ্য জনসভায় ঘোষণা দিয়েছিলেন, একটা লাশের বদলে দশটা লাশ চাই। আজকে তার দলের লোকেরাই একটি বানোয়াট অভিযোগ তুলে মাহমুদুর রহমান মান্নার মতো একজন পরিচ্ছন্ন ও সজ্জন রাজনীতিককে নির্যাতন-নিপীড়নের শিকারে পরিণত করতে উদ্যত হয়েছে। সাদেক হোসেন খোকা বলেন, আমাদের আলোচনায় খুব পরিষ্কারভাবেই যে বিষয়টি এসেছে, তা হলো বায়ান্নর মহান ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু পরবর্তীকালের স্বাধিকার ও স্বাধীনতার সংগ্রাম এবং এই জাতির সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলন-সংগ্রামের প্রাণকেন্দ্র ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। এছাড়া প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত এই প্রতিষ্ঠানকে বলা হয় মুক্তবুদ্ধি চর্চার পীঠস্থান। কিন্তু ২০০৯ সালে শেখ হাসিনার সরকার ক্ষমতাসীন হওয়ার পর থেকে বিগত কয়েক বছরে ঐতিহ্যবাহী এই বিশ্ববিদ্যালয়কে সম্পূর্ণ একটি দলীয় প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা হয়েছে। এখানে ভিন্নমতের চর্চাকে আজকাল রীতিমত অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রত্যক্ষ সহায়তায় সরকার সমর্থিতরা বিরোধী দল সমর্থিত ছাত্র সংগঠনের কোন সদস্যকেই সেখানে দাঁড়াতে দিচ্ছে না। শুধুমাত্র ভিন্নমতের সমর্থক হওয়ার কারণে অনেকের ছাত্রত্ব বাতিলের ঘটনা ঘটেছে। এমন পরিস্থিতিতে চলমান গণআন্দোলনকে বিশ্ববিদ্যালয় আঙিনায় সম্প্রসারিত করার যৌক্তিক প্রসঙ্গটিই আমার সঙ্গে আলোচনায় উত্থাপন করেন মান্না। বিবৃতিতে খোকা বলেন, একথা কে না জানে যে, বর্তমান অবৈধ সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে গিয়ে দেশে প্রতিদিন কত নিরীহ মানুষ প্রাণ হারাচ্ছে? সেখানে সাম্প্রতিককালে ক্ষমতাসীনদের সুরক্ষিত দুর্গে পরিণত হওয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলন করতে গেলে কি ধরনের মূল্য দিতে হতে পারে, আমার সঙ্গে আলোচনায় মান্না কেবলমাত্র সেই কথাটিই স্মরণ করিয়ে দিয়েছিলেন। কারণ বর্তমান সরকারের খুনের নেশা তার অজানা নয়। বিবৃতিতে খোকা বলেন, রাজনৈতিক প্রয়োজনে শুধু মাহমুদুর রহমান মান্না নয়, নিজ দলের নেতাকর্মীসহ বিভিন্ন দলের অনেক নেতা, নাগরিক সমাজের বিশিষ্ট ব্যক্তি ও সিনিয়র সাংবাদিকদের অনেকের সঙ্গেই রাজনৈতিক বিষয়ে আমার নিয়মিত আলোচনা হয়। তাদের সঙ্গে রাজনৈতিক বিষয়াদি নিয়ে আলোচনা ছাড়াও ব্যক্তিগত কিছু শেখা বা জানার আকাঙ্ক্ষা থেকেও কথা বলি। কিন্তু মান্নার সঙ্গে এই অতি সাধারণ আলোচনায় সরকারের মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়েছে। বিবৃতিতে খোকা মাহমুদুর রহমান মান্নাসহ সব রাজবন্দির মুক্তি ও জবরদখল ভূমিকা থেকে সরকারকে সরে আসার আহ্বান জানান।
মানবজমিনকে দেয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে ঢাকার সাবেক এই মেয়র বলেন, বিদেশে অবস্থান করলেও নিজ দল বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ, সিভিল সোসাইটির উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিবর্গ এবং সিনিয়র সাংবাদিকদের সঙ্গে আমার নিয়মিতই রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে কথাবার্তা হয়। মান্নার সঙ্গে আলোচনাও সে রকমই নিতান্তই দু’জন রাজনীতিকের অতি সাধারণ আলোচনা। কিন্তু বর্তমান অবৈধ সরকার আমাদের স্বাভাবিক নাগরিক অধিকার লঙ্ঘনের মাধ্যমে সেই কথোপকথন রেকর্ড করে শতভাগ মিথ্যা প্রপাগান্ডা ছড়ানোর মাধ্যমে জনগণকে বিভ্রান্ত করার অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়েছে।
সাদেক হোসেন খোকা বলেন, মাহমুদুর রহমান মান্না এদেশে উড়ে এসে জুড়ে বসা কোন রাজনীতিক নন। তিনিই বাংলাদেশের একমাত্র রাজনীতিক, যিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদের জিএস এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদের ভিপি ছিলেন। তিনি একাধারে ব্যক্তিত্বসম্পন্ন রাজনীতিক, জনপ্রিয় সুবক্তা, খ্যাতিমান লেখক এবং জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট সকল জাতীয় ইস্যুতে একজন সোচ্চার নাগরিক। আওয়ামী লীগের জনবিচ্ছিন্ন ও সুবিধাবাদী রাজনীতির সঙ্গে একাত্ম হতে না পেরে তিনি সম্পূর্ণ নিজের উজ্জ্বল ব্যক্তিত্বের যোগ্যতা বলে একটি কার্যকর নাগরিক উদ্যোগ গড়ে তুলতে সক্ষম হন। দেশে চলমান গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার সংগ্রামের একজন অগ্রসৈনিক হিসেবে আমরা যার যার স্বতন্ত্র অবস্থান থেকে যুগপৎ লড়াইয়ে রয়েছি। সুতরাং তার সঙ্গে আমার টেলিফোনে আলাপ-আলোচনা মোটেই কোন অস্বাভাবিক বিষয় নয়। এই আলোচনা নিয়ে মিথ্যা প্রপাগান্ডা সৃষ্টিকারীরা নিছক অসুস্থ মানসিকতার অধিকারী গণদুশমন ব্যতীত কিছুই নয়।
বিএনপির এই প্রভাবশালী নেতা মানবজমিনকে আরও বলেন, মান্নার সঙ্গে আমার আলোচনায় মূলত অবৈধ সরকারের বিরুদ্ধে চলমান আন্দোলন-লড়াইয়ের বিভিন্ন কর্মকৌশল ও গতি-প্রকৃতি নিয়ে কথাবার্তা হয়েছে। সেখানে আন্দোলনকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আঙ্গিনায় সমপ্রসারিত করার যৌক্তিক প্রসঙ্গটিই তিনি উত্থাপন করেছেন এবং আমরা উভয়ে সে ব্যাপারে বাস্তব পরিস্থিতির চিত্রটি নিয়ে আলোচনা করেছি। এ কথা কে না জানে যে, বায়ান্ন সালের মহান ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে পরবর্তীকালে আমাদের স্বাধিকার ও স্বাধীনতার সংগ্রাম এবং এ জাতির সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলন-সংগ্রামের মূল প্রাণকেন্দ্র ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত এই প্রতিষ্ঠানকে বলা হয় মুক্তবুদ্ধি চর্চার পীঠস্থান। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে গণতান্ত্রিক আন্দোলন-সংগ্রাম ও মুক্তবুদ্ধি চর্চার প্রাণকেন্দ্র হিসেবে পরিচিত এই বিশ্ববিদ্যালয় এবারই প্রথম তার দীর্ঘকালের ঐতিহ্য হারিয়ে সম্পূর্ণরূপে একটি দলীয় প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। ২০০৯ সালে শেখ হাসিনার সরকার ক্ষমতায় বসার পর থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আঙ্গিনা থেকে সব রকম ভিন্নমতের চর্চাকে জোরপূর্বক নির্বাসনে পাঠানো হয়েছে। এটি এখন নিতান্তই আওয়ামী লীগ দলীয় শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের দলবাজির এক অভয়ারণ্য। এখানে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রত্যক্ষ মদতে সরকার সমর্থকরা ঐতিহ্যবাহী এই ক্যাম্পাস ও হলগুলো জবরদখল করে রেখেছে। ভিন্নমতের কোন শিক্ষার্থীর উপস্থিতি সেখানে সহ্য করা হচ্ছে না। কেবলমাত্র ভিন্নমতের সমর্থক হওয়ার কারণে সেখানে অনেকের ছাত্রত্ব বাতিলের নজিরবিহীন ঘটনাও ঘটেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের দলবাজ উপাচার্য বিদ্যমান আইনকানুন ও সকল রীতি-রেওয়াজ উপেক্ষা করে তার প্রতিটি পদক্ষেপ ও বক্তব্যের মাধ্যমে দীর্ঘকালের সুনামধারী প্রতিষ্ঠানটিকে কার্যত আওয়ামী লীগের একটি শাখা প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেছেন। এই পরিস্থিতিতে জনগণের চলমান স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলন-লড়াইকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আঙ্গিনায় সমপ্রসারিত করার প্রসঙ্গটিই মান্না ও আমার আলোচনায় উঠে আসে।
সাদেক হোসেন খোকা বলেন, বর্তমান সময়ের নির্মম ও নিষ্ঠুর বাস্তবতা হলো, বর্তমান অবৈধ সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে গিয়ে প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন স্থানে সরকারের নিয়োজিত ঘাতকদের পেট্রলবোমা ও গুলিতে নিরীহ-নিরপরাধ মানুষ, এমনকি শিশু-কিশোররাও অকাতরে প্রাণ হারাচ্ছে। এই পটভূমিতে সামপ্রতিক সময়ে ক্ষমতাসীনদের সশস্ত্র ক্যাডারদের একচ্ছত্র আখড়ায় পরিণত হওয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আন্দোলন বিস্তৃত করতে গেলে সে জন্য কি ধরনের মূল্য দিতে হতে পারে, আমাদের আলোচনায় মান্না কেবলমাত্র সেই কথাটিই স্মরণ করিয়ে দিয়েছিলেন। খুনের নেশায় উন্মত্ত এই জালিম সরকার জনগণের আন্দোলনকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আঙ্গিনায় সমপ্রসারিত হওয়ার চেষ্টা প্রতিরোধে যে কোন ধরনের মানবতাবিরোধী হিংস্রতার পথ বেছে নিতে পারেন বলেই আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন মান্না।
তিনি বলেন, আমাদের সকলেরই পরিষ্কার মনে আছে যে, আওয়ামী জোটের নেত্রী শেখ হাসিনা বিরোধী দলে থাকার সময় এক প্রকাশ্য জনসভায় ঘোষণা দিয়েছিলেন যে, ‘একটা লাশের বদলে দশটা লাশ চাই’। তাঁর এই ভয়ঙ্কর ঘোষণাকে সেদিন যারা সামান্যতম অপরাধ হিসেবেও বিবেচনা করেনি, সেসব প্রচার-সন্ত্রাসীরাই আজ একটি বানোয়াট অভিযোগের ধুয়া তুলে মাহমুদুর রহমান মান্নার মতো স্বনামখ্যাত ও পরিচ্ছন্ন রাজনীতিকের চরিত্র হননের ভয়ঙ্কর খেলায় মেতেছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তথা সরকারের প্রত্যক্ষ উসকানিতে তাদের দলীয় সন্ত্রাসীরা ঐতিহ্যবাহী ডাকসু ভবন থেকে মাহমুদুর রহমান মান্নার মতো প্রতিষ্ঠানতুল্য ছাত্রনেতার নাম মুছে ফেলা ও কতিপয় দলান্ধ শিক্ষক মান্নার সনদ বাতিলের জিগির তুলেছে। এসবের মধ্য দিয়ে তারা প্রকৃতপক্ষে শান্তিপ্রিয় জনগণের এই দেশে প্রতিহিংসা ও অসহিষ্ণুতার এক চরম দৃষ্টান্ত স্থাপনের আত্মঘাতী পথই বেছে নিয়েছে। সাদেক হোসেন খোকা তাঁর সঙ্গে কথোপকথনকে ঘিরে সব রকম বিকৃত ও মিথ্যা প্রপাগান্ডা থামিয়ে অবিলম্বে মাহমুদুর রহমান মান্নাকে সুস্থ ও স্বাভাবিকভাবে তার পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেয়ার দাবি জানান।
সরকার ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের অপচেষ্টায় লিপ্ত
মাহমুদুর রহমান মান্নার সঙ্গে কথোপকথনকে স্বাভাবিক রাজনৈতিক আলাপ দাবি করে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকা বলেছেন, এই আলাপকে ঘিরে পলায়নপর অবৈধ সরকারের মন্ত্রী ও এমপিরা ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের নির্লজ্জ অপচেষ্টায় লিপ্ত। সেই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবেই মিথ্যা অভিযোগের ধুয়া তুলে মাহমুদুর রহমান মান্নাকে সন্ত্রাসী কায়দায় তুলে নিয়ে অজ্ঞাত স্থানে বন্দি করে রাখা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র থেকে পাঠানো এক বিবৃতিতে খোকা বলেন, তীব্র জনরোষের ভয়ে আতঙ্কিত সরকার স্বউদ্যোগে নানারকম বায়বীয় অভিযোগ সৃষ্টি করে চলমান আন্দোলন-লড়াইকে দমনের নীল নকশা বাস্তবায়নের পথ বেছে নিয়েছে। আমি স্পষ্ট ভাষায় জানাতে চাই যে, মাহমুদুর রহমান মান্না একজন খ্যাতিমান ব্যক্তিত্ব এবং সুপরিচিত রাজনীতিবিদ। তার সঙ্গে আমার সাম্প্রতিক টেলিফোন কথোপকথনের বিষয়টি চলমান আন্দোলনের গতি-প্রকৃতি ও কর্মকৌশল নিয়ে অতি স্বাভাবিক আলোচনা। এখানে সরকারের প্রচার সন্ত্রাসীদের ভাষায় ‘লাশ ফেলে দেয়ার’ কোন কথা হয়নি। সাদেক হোসেন খোকা বলেন, দেশবাসীর খুব ভাল করেই জানা আছে যে, আজকের বিনা ভোটের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিরোধী দলের নেত্রী থাকাকালে প্রকাশ্য জনসভায় ঘোষণা দিয়েছিলেন, একটা লাশের বদলে দশটা লাশ চাই। আজকে তার দলের লোকেরাই একটি বানোয়াট অভিযোগ তুলে মাহমুদুর রহমান মান্নার মতো একজন পরিচ্ছন্ন ও সজ্জন রাজনীতিককে নির্যাতন-নিপীড়নের শিকারে পরিণত করতে উদ্যত হয়েছে। সাদেক হোসেন খোকা বলেন, আমাদের আলোচনায় খুব পরিষ্কারভাবেই যে বিষয়টি এসেছে, তা হলো বায়ান্নর মহান ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু পরবর্তীকালের স্বাধিকার ও স্বাধীনতার সংগ্রাম এবং এই জাতির সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলন-সংগ্রামের প্রাণকেন্দ্র ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। এছাড়া প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত এই প্রতিষ্ঠানকে বলা হয় মুক্তবুদ্ধি চর্চার পীঠস্থান। কিন্তু ২০০৯ সালে শেখ হাসিনার সরকার ক্ষমতাসীন হওয়ার পর থেকে বিগত কয়েক বছরে ঐতিহ্যবাহী এই বিশ্ববিদ্যালয়কে সম্পূর্ণ একটি দলীয় প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা হয়েছে। এখানে ভিন্নমতের চর্চাকে আজকাল রীতিমত অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রত্যক্ষ সহায়তায় সরকার সমর্থিতরা বিরোধী দল সমর্থিত ছাত্র সংগঠনের কোন সদস্যকেই সেখানে দাঁড়াতে দিচ্ছে না। শুধুমাত্র ভিন্নমতের সমর্থক হওয়ার কারণে অনেকের ছাত্রত্ব বাতিলের ঘটনা ঘটেছে। এমন পরিস্থিতিতে চলমান গণআন্দোলনকে বিশ্ববিদ্যালয় আঙিনায় সম্প্রসারিত করার যৌক্তিক প্রসঙ্গটিই আমার সঙ্গে আলোচনায় উত্থাপন করেন মান্না। বিবৃতিতে খোকা বলেন, একথা কে না জানে যে, বর্তমান অবৈধ সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে গিয়ে দেশে প্রতিদিন কত নিরীহ মানুষ প্রাণ হারাচ্ছে? সেখানে সাম্প্রতিককালে ক্ষমতাসীনদের সুরক্ষিত দুর্গে পরিণত হওয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলন করতে গেলে কি ধরনের মূল্য দিতে হতে পারে, আমার সঙ্গে আলোচনায় মান্না কেবলমাত্র সেই কথাটিই স্মরণ করিয়ে দিয়েছিলেন। কারণ বর্তমান সরকারের খুনের নেশা তার অজানা নয়। বিবৃতিতে খোকা বলেন, রাজনৈতিক প্রয়োজনে শুধু মাহমুদুর রহমান মান্না নয়, নিজ দলের নেতাকর্মীসহ বিভিন্ন দলের অনেক নেতা, নাগরিক সমাজের বিশিষ্ট ব্যক্তি ও সিনিয়র সাংবাদিকদের অনেকের সঙ্গেই রাজনৈতিক বিষয়ে আমার নিয়মিত আলোচনা হয়। তাদের সঙ্গে রাজনৈতিক বিষয়াদি নিয়ে আলোচনা ছাড়াও ব্যক্তিগত কিছু শেখা বা জানার আকাঙ্ক্ষা থেকেও কথা বলি। কিন্তু মান্নার সঙ্গে এই অতি সাধারণ আলোচনায় সরকারের মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়েছে। বিবৃতিতে খোকা মাহমুদুর রহমান মান্নাসহ সব রাজবন্দির মুক্তি ও জবরদখল ভূমিকা থেকে সরকারকে সরে আসার আহ্বান জানান।
No comments