লঞ্চডুবি: মৃত্যু ৮১, নিখোঁজ ১১ ‘লাশ পেলাম না’ by রিপন আনসারী
লাশ
তো পেলাম না। বাড়ি ফিরে ৬ বছরের শিশু সাদমানকে কি জবাব দেবো? তাই তিন দিন
ধরে পদ্মার পাড়ে অধীর অপেক্ষায় আছি লঞ্চ দুর্ঘটনায় নিখোঁজ ব্র্যাকের অডিট
অফিসার মোস্তফা মেহফুজের লাশের জন্য। অন্তত মৃতদেহটি নিয়ে যেতে পারলেও
পরিবারকে সান্ত্বনা দিতে পারতাম। বাড়ি গিয়ে এখন ওদের কি বলবো জানি না।
গতকাল দুপুরে পাটুরিয়া লঞ্চঘাটের পদ্মার পাড়ে দাঁড়িয়ে কথাগুলো বললেন নিখোঁজ
মেহফুজের খালাতো ভাই তানভীর আহমেদ। রোববার অফিসের কাজে ঢাকা থেকে
কুষ্টিয়ার উদ্দেশে যাচ্ছিলেন ব্র্যাকের অডিট অফিসার মোস্তফা মেহফুজ ও দুই
সহকর্মী মো. রফিক মিয়া এবং আবুল কালাম। বাসযোগে পাটুরিয়া ঘাটে এসে লঞ্চে
পার হয়ে দৌলতদিয়া থেকে কুষ্টিয়া যাবেন। কিন্তু লঞ্চটি যথারীতি পাটুরিয়া ঘাট
ছেড়ে যাওয়ার পাঁচ থেকে সাত মিনিটের মাথায় দ্রুতগামী একটি কার্গো জাহাজের
সঙ্গে সংঘর্ষে ওই তিনজনসহ দেড়শ’র বেশি যাত্রী নিয়ে লঞ্চটি ডুবে যায়। দুই
সহকর্মী প্রাণে বেঁচে গেলেও মেহফুজ নিখোঁজ রয়েছেন।
মেহফুজের পরিবারের সদস্য ও ব্র্যাকের মানিকগঞ্জের কয়েক কর্মকর্তা-কর্মচারী তিনদিন ধরে পাটুরিয়া ঘাটে অপেক্ষায় রয়েছেন তার সন্ধানে। তবে মেহফুজ উদ্ধার না হলেও তার সঙ্গে থাকা একটি ব্যাগ উদ্ধার করতে পেরেছে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরিরা। ওই ব্যাগে অফিসিয়াল কাগজপত্র ও একটি আইডি কার্ড পাওয়া গেছে। মেহফুজের গ্রামের বাড়ি বগুড়া জেলার গাবতলী উপজেলায়। স্ত্রী পারুল বেগম, ৬ বছরের ছেলে সাদমান ও দেড় বছরের আরেক শিশুকে নিয়ে থাকতেন ঢাকার বাসাবো কদমতলি এলাকায়। ব্র্যাকের অডিট অফিসার হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
দৌলতদিয়া লঞ্চঘাটের ম্যানেজার আবুল হাসেম প্রতিদিন যথারীতি লঞ্চে আসা-যাওয়া করতেন। ঘটনার দিন সকালে গ্রামের বাড়ি শিবালয় উপজেলার তেওতা থেকে পাটুরিয়া ঘাটে আসেন। কর্মস্থলে যোগ দিতে এমভি মোস্তফা লঞ্চে উঠে দৌলতদিয়া যাওয়ার পথে দুর্ঘটনার শিকার হন। নিখোঁজ আবুল হাসেমের সন্ধানে পরিবারের সদস্যরা তিনদিন ধরে নাওয়া-খাওয়া বন্ধ করে পড়ে আছেন পাটুরিয়া ঘাটে। লাশ কোথাও ভেসে গেছে কিনা সেজন্য নৌকা ও ট্রলার নিয়ে নদীর একূল-ওকূল খুঁজে বেড়ালেও কোন সন্ধান মিলেনি আবুল হাসেমের। মেয়ের জামাই হাবিবুর রহমান কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ৬৯টি লাশ তাদের স্বজনরা ফিরে পেয়েছে। ওই পরিবারগুলোতো এইটুকু সান্ত্বনা নিয়ে বেঁচে থাকতে পারবে। কিন্তু আমরা কি নিয়ে বেঁচে থাকবো। লাশ পেলেও মনকে বুঝাতে পারতাম।
কুষ্টিয়ার কুমারখালীর যাদবপুর গ্রামের মিলন শেখের স্ত্রী লিপি আক্তার (৪২)। নিখোঁজ রয়েছেন তিনদিন হলো। লিপির খালাতো ভাই হাফিজুর জানান, লাশটা পেলেও মনটাকে সান্ত্বনা দিতে পারতাম। এখন কোন সান্ত্বনা নিয়ে বাড়ি ফিরবো। দুর্ঘটনাকবলিত এমভি মোস্তফা লঞ্চের মাস্টার আফজাল হোসেন পলাতক থাকলেও লঞ্চের চালক আবুল কাসেম মারা গেছেন। তার লাশ উদ্ধার করে শিবালয়ের শিমুলিয়া এলাকায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
এরকম মানিকগঞ্জের শিবালয় এলাচিপুর গ্রামের শেখ আফাজ উদ্দিনের ছেলে সোহরাব হোসেন, চরকুশণ্ড গ্রামের হাবিব মোল্লার ছেলে মান্নু পাগলা (৬৫), ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার দলিলপুর গ্রামের নাজমুল হোসেনের মেয়ে মারুফা খাতুন (৫), রাজবাড়ীর পাংশা উপজেলার মুরাদনগর গ্রামের সেকেন আলীর স্ত্রী অজিরুননেসা ((৩৮), নড়াইলের লোহাগড়া এলাকার হাসেম আলীর স্ত্রী সাহেদা বেগম ও ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার নুর ইসলামের ছেলে জুয়েল রানা (২৭)সহ নিখোঁজ পরিবারের সদস্যরা কোন সান্ত্বনাই খুঁজে পাচ্ছে না। মৃতদেহটি যদি বাড়ি নিয়ে যেতে পারতেন তাহলেও সান্ত্বনা খুঁজে পেতেন তারা।
এদিকে রোববার মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া ঘাটের অদূরে পদ্মায় লঞ্চডুবির ঘটনায় গত সোমবার পর্যন্ত ৭০টি মৃতদেহ উদ্ধার হলেও এখন পর্যন্ত নিখোঁজ রয়েছে আরো ১১ লঞ্চযাত্রী। এরই মধ্যে ৬৯টি মরদেহ তাদের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। বাকি অজ্ঞাত এক মধ্যবয়সী নারীর মরদেহ দুইদিন বিআইডব্লিউটিসির যাত্রী ছাউনিতে পড়ে ছিল। কোন পরিচয় না পাওয়ায় গতকাল দুপুরে আঞ্জুমানে মুফিদুল ইসলামের মাধ্যমে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। আঞ্জুমানে মুফিদুলের প্রতিনিধি কামরুল হাসানের নিকট ওই মরদেহটি হস্তান্তর করা হয়। আরিচা বন্দর কর্মকর্তা এনামুল হক জানান, লঞ্চ দুর্ঘটনার কারণ সম্পর্কে তিনটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্তের পরিপূর্ণ তথ্য না পাওয়া পর্যন্ত দুর্ঘটনার সঠিক কারণ আমরা বলতে পারবো না। কার্গো জাহাজ অনেক শক্তিশালী। দুই চালকের ভুল বুঝাবুঝিতেই এই দুর্ঘটনাটি ঘটেছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।
শিবালয় থানার ওসি রকিবুজ্জামান জানান, লঞ্চ দুর্ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। কার্গোর মাস্টার ইকবাল হোসেনসহ আটককৃত চারজনকে আদালতে পাঠানো হয়েছে। এছাড়া, লঞ্চের মালিক ও মাস্টারকে খোঁজা হচ্ছে। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের পর লঞ্চ ও কার্গো জাহাজের কর্মকর্তা ও কর্মচারীর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
মানিকগঞ্জের জেলা প্রশাসক রাশিদা ফেরদৌস জানান, লঞ্চডুবির ঘটনায় এখনও যারা নিখোঁজ রয়েছেন তাদের সন্ধানে ফায়ার সার্ভিস ও প্রশাসনের লোকজন কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। এই উদ্ধার তৎপরতা আরো কয়েকদিন অব্যাহত থাকবে।
এদিকে উদ্ধার অভিযান শেষে সোমবার রাতে উদ্ধারকারী জাহাজ রুস্তম পাটুরিয়া এলাকা ত্যাগ করেছে। এছাড়া, উদ্ধারকৃত লঞ্চটি পড়ে আছে পাটুরিয়া ৫নং ফেরিঘাটের এক কিলোমিটার অদূরে পদ্মার তীরে।
মেহফুজের পরিবারের সদস্য ও ব্র্যাকের মানিকগঞ্জের কয়েক কর্মকর্তা-কর্মচারী তিনদিন ধরে পাটুরিয়া ঘাটে অপেক্ষায় রয়েছেন তার সন্ধানে। তবে মেহফুজ উদ্ধার না হলেও তার সঙ্গে থাকা একটি ব্যাগ উদ্ধার করতে পেরেছে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরিরা। ওই ব্যাগে অফিসিয়াল কাগজপত্র ও একটি আইডি কার্ড পাওয়া গেছে। মেহফুজের গ্রামের বাড়ি বগুড়া জেলার গাবতলী উপজেলায়। স্ত্রী পারুল বেগম, ৬ বছরের ছেলে সাদমান ও দেড় বছরের আরেক শিশুকে নিয়ে থাকতেন ঢাকার বাসাবো কদমতলি এলাকায়। ব্র্যাকের অডিট অফিসার হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
দৌলতদিয়া লঞ্চঘাটের ম্যানেজার আবুল হাসেম প্রতিদিন যথারীতি লঞ্চে আসা-যাওয়া করতেন। ঘটনার দিন সকালে গ্রামের বাড়ি শিবালয় উপজেলার তেওতা থেকে পাটুরিয়া ঘাটে আসেন। কর্মস্থলে যোগ দিতে এমভি মোস্তফা লঞ্চে উঠে দৌলতদিয়া যাওয়ার পথে দুর্ঘটনার শিকার হন। নিখোঁজ আবুল হাসেমের সন্ধানে পরিবারের সদস্যরা তিনদিন ধরে নাওয়া-খাওয়া বন্ধ করে পড়ে আছেন পাটুরিয়া ঘাটে। লাশ কোথাও ভেসে গেছে কিনা সেজন্য নৌকা ও ট্রলার নিয়ে নদীর একূল-ওকূল খুঁজে বেড়ালেও কোন সন্ধান মিলেনি আবুল হাসেমের। মেয়ের জামাই হাবিবুর রহমান কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ৬৯টি লাশ তাদের স্বজনরা ফিরে পেয়েছে। ওই পরিবারগুলোতো এইটুকু সান্ত্বনা নিয়ে বেঁচে থাকতে পারবে। কিন্তু আমরা কি নিয়ে বেঁচে থাকবো। লাশ পেলেও মনকে বুঝাতে পারতাম।
কুষ্টিয়ার কুমারখালীর যাদবপুর গ্রামের মিলন শেখের স্ত্রী লিপি আক্তার (৪২)। নিখোঁজ রয়েছেন তিনদিন হলো। লিপির খালাতো ভাই হাফিজুর জানান, লাশটা পেলেও মনটাকে সান্ত্বনা দিতে পারতাম। এখন কোন সান্ত্বনা নিয়ে বাড়ি ফিরবো। দুর্ঘটনাকবলিত এমভি মোস্তফা লঞ্চের মাস্টার আফজাল হোসেন পলাতক থাকলেও লঞ্চের চালক আবুল কাসেম মারা গেছেন। তার লাশ উদ্ধার করে শিবালয়ের শিমুলিয়া এলাকায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
এরকম মানিকগঞ্জের শিবালয় এলাচিপুর গ্রামের শেখ আফাজ উদ্দিনের ছেলে সোহরাব হোসেন, চরকুশণ্ড গ্রামের হাবিব মোল্লার ছেলে মান্নু পাগলা (৬৫), ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার দলিলপুর গ্রামের নাজমুল হোসেনের মেয়ে মারুফা খাতুন (৫), রাজবাড়ীর পাংশা উপজেলার মুরাদনগর গ্রামের সেকেন আলীর স্ত্রী অজিরুননেসা ((৩৮), নড়াইলের লোহাগড়া এলাকার হাসেম আলীর স্ত্রী সাহেদা বেগম ও ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার নুর ইসলামের ছেলে জুয়েল রানা (২৭)সহ নিখোঁজ পরিবারের সদস্যরা কোন সান্ত্বনাই খুঁজে পাচ্ছে না। মৃতদেহটি যদি বাড়ি নিয়ে যেতে পারতেন তাহলেও সান্ত্বনা খুঁজে পেতেন তারা।
এদিকে রোববার মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া ঘাটের অদূরে পদ্মায় লঞ্চডুবির ঘটনায় গত সোমবার পর্যন্ত ৭০টি মৃতদেহ উদ্ধার হলেও এখন পর্যন্ত নিখোঁজ রয়েছে আরো ১১ লঞ্চযাত্রী। এরই মধ্যে ৬৯টি মরদেহ তাদের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। বাকি অজ্ঞাত এক মধ্যবয়সী নারীর মরদেহ দুইদিন বিআইডব্লিউটিসির যাত্রী ছাউনিতে পড়ে ছিল। কোন পরিচয় না পাওয়ায় গতকাল দুপুরে আঞ্জুমানে মুফিদুল ইসলামের মাধ্যমে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। আঞ্জুমানে মুফিদুলের প্রতিনিধি কামরুল হাসানের নিকট ওই মরদেহটি হস্তান্তর করা হয়। আরিচা বন্দর কর্মকর্তা এনামুল হক জানান, লঞ্চ দুর্ঘটনার কারণ সম্পর্কে তিনটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্তের পরিপূর্ণ তথ্য না পাওয়া পর্যন্ত দুর্ঘটনার সঠিক কারণ আমরা বলতে পারবো না। কার্গো জাহাজ অনেক শক্তিশালী। দুই চালকের ভুল বুঝাবুঝিতেই এই দুর্ঘটনাটি ঘটেছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।
শিবালয় থানার ওসি রকিবুজ্জামান জানান, লঞ্চ দুর্ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। কার্গোর মাস্টার ইকবাল হোসেনসহ আটককৃত চারজনকে আদালতে পাঠানো হয়েছে। এছাড়া, লঞ্চের মালিক ও মাস্টারকে খোঁজা হচ্ছে। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের পর লঞ্চ ও কার্গো জাহাজের কর্মকর্তা ও কর্মচারীর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
মানিকগঞ্জের জেলা প্রশাসক রাশিদা ফেরদৌস জানান, লঞ্চডুবির ঘটনায় এখনও যারা নিখোঁজ রয়েছেন তাদের সন্ধানে ফায়ার সার্ভিস ও প্রশাসনের লোকজন কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। এই উদ্ধার তৎপরতা আরো কয়েকদিন অব্যাহত থাকবে।
এদিকে উদ্ধার অভিযান শেষে সোমবার রাতে উদ্ধারকারী জাহাজ রুস্তম পাটুরিয়া এলাকা ত্যাগ করেছে। এছাড়া, উদ্ধারকৃত লঞ্চটি পড়ে আছে পাটুরিয়া ৫নং ফেরিঘাটের এক কিলোমিটার অদূরে পদ্মার তীরে।
No comments