সহিংসতার সংস্কৃতি by জাহিরুল ইসলাম
সংবাদপত্র
কিংবা টিভিতে চোখ রাখলেই দেখা যাচ্ছে মানুষের আগুনে ঝলসানো শরীর, মৃতদেহ।
একটি জাতীয় দৈনিকের হিসাবমতে, টানা ৪৭ দিন ধরে চলা অবরোধ-হরতালে সারাদেশে
নিহতের সংখ্যা ৯৯। আহতের হিসাব নেই। এভাবে আর কতদিন চলবে, তা নিশ্চিত করে
বলা যাচ্ছে না। কিন্তু এটা ঠিক, একেকজন মানুষের মৃত্যুর সঙ্গে শুধু লাশের
সারিই দীর্ঘ হচ্ছে না, গভীরতর হচ্ছে সংকট। পরিবারের কোনো সদস্য যখন
সহিংসতার শিকার হচ্ছেন, তা অন্য সদস্যদের মনে জাগিয়ে তুলছে ক্ষোভ; প্রতিশোধ
স্পৃহা। এমন মনোভাব থেকে কখনও কখনও তারাও হয়ে উঠছেন সহিংস। আবার এ
মুহূর্তে প্রতিশোধ নেওয়ার ক্ষমতা যাদের নেই, ভবিষ্যতে যে তারা এ থেকে
নিজেদের নিবৃত্ত রাখবেন, সেটিও নিশ্চিত করে বলা যায় না। দেখা যাচ্ছে,
এভাবেই চলমান অবরোধ-হরতাল রাজনৈতিক সংকট নিরসনে তো নয়ই, বরং তা ভূমিকা
রাখছে সহিংসতার সংস্কৃতি বিস্তারে।
একই ধরনের সংবাদ দীর্ঘদিন ধরে পরিবেশিত হলে তার প্রতি মানুষ আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। মর্মান্তিক সংবাদ হলেও তা মানুষের মনে তেমন কোনো প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে না। বলা বাহুল্য, টানা সহিংস অবরোধ-হরতালের সংবাদের ক্ষেত্রেও কিন্তু এমনটিই ঘটছে। সংবাদপত্র ও টিভি পর্দায় মানুষের আগুনে ঝলসানো শরীর ও লাশের সারি দেখতে দেখতে অভ্যস্ত হয়ে উঠছে মানুষ; হয়ে উঠছে অসহিষ্ণু। একটা সময় ছিল, যখন একজন নিরীহ মানুষ প্রাণ হারালে বড় আন্দোলন হতো। অথচ এখন সেই পরিস্থিতি নেই। অনুভূতি ভোঁতা হয়ে গেছে বলেই হাজার মানুষের মৃত্যুও আমাদের শোকাহত কিংবা ক্ষুব্ধ করে না। যদি করতই, তাহলে লাশের সংখ্যা ৯৯-এ পেঁৗছানোর অনেক আগেই এ হত্যাযজ্ঞের অবসান হতো।
প্রশ্ন হলো, এ সহিংসতা আমাদের কী দিচ্ছে? বর্তমান তো বটেই, দীর্ঘমেয়াদের জন্যও কি এটি আমাদের জন্য হুমকির কারণ হয়ে উঠছে না? শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যয়নের শিক্ষার্থী হিসেবে জেনেছি, একটি সহিংসতার ঘটনা আরেকটি সহিংসতাকে উসকে দেয়। আর কোনো সমাজে সহিংসতা যদি 'সংস্কৃতি'তে পরিণত হয়, তাহলে সেখানে অস্থিতিশীলতা দীর্ঘায়িত হয়। বাংলাদেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, নেতারা 'শান্তিপূর্ণ' আন্দোলনের কথা বললেও শেষ পর্যন্ত তা আর শান্তিপূর্ণ থাকছে না। ঘন ঘন ও টানা অবরোধ-হরতালে গাড়ি পোড়ানো এবং মানুষ হত্যায় আগের রেকর্ড ভাঙার চেষ্টা চলছে। শুরুতে এটা রাজধানীতে সীমাবদ্ধ থাকলেও এখন তা ছড়িয়ে পড়েছে। মফস্বল শহর এমনকি উপজেলাতেও এখন অবরোধ-হরতালে গাড়ি পোড়ানো ও মানুষ হত্যা করা হয়। এসব উদাহরণ থেকেই বলা যায়, সহিংসতা আমাদের সমাজে ক্রমে পরিণত হচ্ছে 'সংস্কৃতি'তে আর তা শিকড় গাড়ছে তৃণমূলে।
কোনো সমাজে সহিংসতার সংস্কৃতি যদি তৃণমূল পর্যন্ত বিস্তার লাভ করে সেখানে শুধু রাজনৈতিক নয়, অর্থনৈতিক কাঠামোও ভেঙে পড়ে। অর্থনৈতিক কাঠামো ভেঙে পড়ার অর্থ হচ্ছে, সেখানে শান্তি দূর অস্ত। মানুষ যদি দু'বেলা খেয়ে-পরে বাঁচতে না পারে, এমন পরিস্থিতিতে তারা শান্ত থাকবে, তা কি ভাবার উপায় আছে? অনেকের জানা, 'ইতিবাচক শান্তির' অন্যতম উপাদান অর্থনৈতিক সচ্ছলতা। এটা তখনই সম্ভব, যখন কোনো সমাজে দীর্ঘমেয়াদে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা থাকে। রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা দীর্ঘায়িত হলে বিবদমান পক্ষগুলোর সদিচ্ছায় স্থিতিশীলতা হয়তো সহসা ফিরে আসে; কিন্তু এমন পরিস্থিতিতে অর্থনৈতিক ক্ষয়ক্ষতি সমানতালে পুষিয়ে নেওয়া সম্ভব হয় না। অন্যদিকে জাতীয় অর্থনীতি ব্যাপকভাবে আক্রান্ত হয় বলে মানুষের অর্থনৈতিক অসচ্ছলতার কারণে সেখানে পুনরায় সহিংসতা সৃষ্টির আশঙ্কাও থেকে যায়। যার ফলে সহিংসতার সংস্কৃতি ডালপালা বিস্তার করে। এভাবেই একটি সমাজে সৃষ্টি হয় সহিংসতার দুষ্টচক্র। চলমান সংকট ও সহিংসতা কিন্তু আমাদের সেই পরিস্থিতির দিকেই ঠেলে দিচ্ছে।
একই ধরনের সংবাদ দীর্ঘদিন ধরে পরিবেশিত হলে তার প্রতি মানুষ আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। মর্মান্তিক সংবাদ হলেও তা মানুষের মনে তেমন কোনো প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে না। বলা বাহুল্য, টানা সহিংস অবরোধ-হরতালের সংবাদের ক্ষেত্রেও কিন্তু এমনটিই ঘটছে। সংবাদপত্র ও টিভি পর্দায় মানুষের আগুনে ঝলসানো শরীর ও লাশের সারি দেখতে দেখতে অভ্যস্ত হয়ে উঠছে মানুষ; হয়ে উঠছে অসহিষ্ণু। একটা সময় ছিল, যখন একজন নিরীহ মানুষ প্রাণ হারালে বড় আন্দোলন হতো। অথচ এখন সেই পরিস্থিতি নেই। অনুভূতি ভোঁতা হয়ে গেছে বলেই হাজার মানুষের মৃত্যুও আমাদের শোকাহত কিংবা ক্ষুব্ধ করে না। যদি করতই, তাহলে লাশের সংখ্যা ৯৯-এ পেঁৗছানোর অনেক আগেই এ হত্যাযজ্ঞের অবসান হতো।
প্রশ্ন হলো, এ সহিংসতা আমাদের কী দিচ্ছে? বর্তমান তো বটেই, দীর্ঘমেয়াদের জন্যও কি এটি আমাদের জন্য হুমকির কারণ হয়ে উঠছে না? শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যয়নের শিক্ষার্থী হিসেবে জেনেছি, একটি সহিংসতার ঘটনা আরেকটি সহিংসতাকে উসকে দেয়। আর কোনো সমাজে সহিংসতা যদি 'সংস্কৃতি'তে পরিণত হয়, তাহলে সেখানে অস্থিতিশীলতা দীর্ঘায়িত হয়। বাংলাদেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, নেতারা 'শান্তিপূর্ণ' আন্দোলনের কথা বললেও শেষ পর্যন্ত তা আর শান্তিপূর্ণ থাকছে না। ঘন ঘন ও টানা অবরোধ-হরতালে গাড়ি পোড়ানো এবং মানুষ হত্যায় আগের রেকর্ড ভাঙার চেষ্টা চলছে। শুরুতে এটা রাজধানীতে সীমাবদ্ধ থাকলেও এখন তা ছড়িয়ে পড়েছে। মফস্বল শহর এমনকি উপজেলাতেও এখন অবরোধ-হরতালে গাড়ি পোড়ানো ও মানুষ হত্যা করা হয়। এসব উদাহরণ থেকেই বলা যায়, সহিংসতা আমাদের সমাজে ক্রমে পরিণত হচ্ছে 'সংস্কৃতি'তে আর তা শিকড় গাড়ছে তৃণমূলে।
কোনো সমাজে সহিংসতার সংস্কৃতি যদি তৃণমূল পর্যন্ত বিস্তার লাভ করে সেখানে শুধু রাজনৈতিক নয়, অর্থনৈতিক কাঠামোও ভেঙে পড়ে। অর্থনৈতিক কাঠামো ভেঙে পড়ার অর্থ হচ্ছে, সেখানে শান্তি দূর অস্ত। মানুষ যদি দু'বেলা খেয়ে-পরে বাঁচতে না পারে, এমন পরিস্থিতিতে তারা শান্ত থাকবে, তা কি ভাবার উপায় আছে? অনেকের জানা, 'ইতিবাচক শান্তির' অন্যতম উপাদান অর্থনৈতিক সচ্ছলতা। এটা তখনই সম্ভব, যখন কোনো সমাজে দীর্ঘমেয়াদে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা থাকে। রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা দীর্ঘায়িত হলে বিবদমান পক্ষগুলোর সদিচ্ছায় স্থিতিশীলতা হয়তো সহসা ফিরে আসে; কিন্তু এমন পরিস্থিতিতে অর্থনৈতিক ক্ষয়ক্ষতি সমানতালে পুষিয়ে নেওয়া সম্ভব হয় না। অন্যদিকে জাতীয় অর্থনীতি ব্যাপকভাবে আক্রান্ত হয় বলে মানুষের অর্থনৈতিক অসচ্ছলতার কারণে সেখানে পুনরায় সহিংসতা সৃষ্টির আশঙ্কাও থেকে যায়। যার ফলে সহিংসতার সংস্কৃতি ডালপালা বিস্তার করে। এভাবেই একটি সমাজে সৃষ্টি হয় সহিংসতার দুষ্টচক্র। চলমান সংকট ও সহিংসতা কিন্তু আমাদের সেই পরিস্থিতির দিকেই ঠেলে দিচ্ছে।
No comments