হরতাল-অবরোধ, এই অনমনীয়তা কাম্য নয়
মহান
একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসেও বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয়
জোটের অবরোধ কর্মসূচি শিথিল হবে না_ এটা ছিল অভাবনীয়। এ দিবসটি যথাযথ
মর্যাদায় যেন পালিত হতে পারে, সেজন্য এমনকি সামরিক শাসনামলেও সব ধরনের
বিধিনিষেধ তুলে নেওয়া হয়েছে। আইয়ুব খান, ইয়াহিয়া খান, জিয়াউর রহমান এবং
এইচএম এরশাদ_ কোনো আমলেই ব্যতিক্রম ঘটেনি। এটাও লক্ষণীয়, একুশে পালনে যেন
সরকার কোনো ধরনের সমস্যা সৃষ্টি না করে সেজন্য বিরোধী দলগুলো সব আমলেই
সোচ্চার থাকে। কিন্তু ২০১৫ সালের বাংলাদেশ অতীব বিস্ময়ে দেখল যে, সরকার
পতনের আন্দোলনে রাজপথে সক্রিয় থেকেই একটি রাজনৈতিক জোট একুশে ফেব্রুয়ারিতেও
তাদের টানা অবরোধ কর্মসূচি বহাল রাখল। ২০ দলের এই জোটটি সরকারের বিরুদ্ধে
সভা-সমাবেশ-মিছিল না করতে দেওয়া এবং গ্রেফতারসহ নানা ধরনের দমননীতি
অনুসরণের অভিযোগ করে থাকে। অতীতে দেখা গেছে, সরকারের এ ধরনের আচরণের
প্রতিবাদ করার জন্য রাজনৈতিক দলগুলো একুশে ফেব্রুয়ারির দিনটিকে বিশেষভাবে
বেছে নিয়েছে। বিএনপিতে অনেক অভিজ্ঞ ও প্রজ্ঞাবান রাজনীতিক রয়েছেন। তারা এ
অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করলেন না কেন, সেটা বোধগম্য নয়। উপরন্তু দিনটি
পালনে যেন বিঘ্ন ঘটে সে ধরনের কর্মসূচিই বহাল রাখা হলো। তারা বলতে পারেন
যে, প্রায় ১৫ লাখ শিক্ষার্থীর মাধ্যমিক পরীক্ষা, বিশ্ব ইজতেমা কিংবা মিলাদ
মাহফিল কোনো কারণেই অবরোধ-হরতাল প্রত্যাহার বা শিথিল করা হয়নি। একুশে
ফেব্রুয়ারিকেও একইভাবে দেখতে হবে। কিন্তু তারা কেন ভুলে গেলেন যে, আমাদের
মহান একুশে এখন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। বিশ্বের সর্বত্র দিনটি পালিত
হচ্ছে। রাজনীতিসহ নানা ইস্যুতে দেশে মতপার্থক্য থাকা স্বাভাবিক। কিন্তু এমন
দিনে সেসব ভুলে যেতে হয়। আমাদের সৌভাগ্য যে, ২০ দলীয় জোটের টানা অবরোধের
আহ্বানে খুব একটা সাড়া মিলছে না। তবে হরতাল ডাকা হলে পরিস্থিতি কিছুটা
ভিন্ন হয়। পরপর দুই সপ্তাহ এ জোট সপ্তাহের পাঁচটি কর্মদিবসে একটানা হরতাল
ডেকেছে। গতকাল রোববার থেকে আবার শুরু হয়েছে টানা হরতাল। এ ধরনের কর্মসূচির
কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির শিকার হচ্ছে মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীরা। সরকার
সিদ্ধান্ত নিয়েছে, হরতাল থাকলে পরীক্ষা গ্রহণ করা হবে না। এ কারণে কেবল
শুক্র ও শনিবারে পরীক্ষা গ্রহণ করা হচ্ছে। গত শনিবার মহান একুশে ফেব্রুয়ারি
থাকায় পরীক্ষা গ্রহণ করা যায়নি। এভাবে চলতে থাকলে পরীক্ষা কবে শেষ হবে,
কেউ বলতে পারে না। ব্যবসায়ীরা বলছেন, প্রতিদিন অবরোধ-হরতালে অর্থনীতির
ক্ষতি দুই হাজার কোটি টাকার বেশি। অর্থনীতির প্রতিটি খাত কমবেশি আক্রান্ত
হচ্ছে এই কর্মনাশা কর্মসূচিতে। জনজীবন অনেকটাই বিপর্যস্ত। আন্তর্জাতিক
অঙ্গনে ক্ষুণ্ন হচ্ছে দেশের ভাবমূর্তি। তার প্রতি কর্ণপাত করার কোনো
প্রয়োজনই কি 'আন্দোলনকারী' ২০ দলীয় জোট বোধ করবে না? তারা বাংলাদেশের
ব্যাপারে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণে নানাবিধ কৌশল অনুসরণ
করছে। বিশেষ করে সংলাপ অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনার সরকারকে বাধ্য করায় তাদের
সহায়তা চাইছে। কিন্তু সহিংস আন্দোলন অব্যাহত রেখে, একুশে ফেব্রুয়ারি এবং
মাধ্যমিক পরীক্ষার মতো ইস্যুতেও অনমনীয় অবস্থান বজায় রেখে কী রাজনৈতিক
লক্ষ্য হাসিল করতে চাইছে তারা, সেটা আমাদের বোধগম্য নয়।
No comments