বাংলিশ-হিংলিশ by মাহফুজুর রহমান মানিক
(ন্যক্বারজনক ‘বাংলিশ’ নিষিদ্ধ করল হাইকোর্ট) বাংলার
সঙ্গে ইংরেজি বা অন্যান্য ভাষার মিশ্রণে কথা বলা, মেসেজ করা কিংবা যে কোনো
ধরনের যোগাযোগ নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার অন্ত নেই। বিশেষ করে শিক্ষিত তরুণ
প্রজন্ম তাদের যোগাযোগে প্রধানত বাংলার সঙ্গে ইংরেজি শব্দ বেশি ব্যবহার
করেন বলেই হয়তো এর নাম হয়েছে 'বাংলিশ'। তবে এ নিয়ে অলোচনা-সমালোচনা সবই
একটি মাসকে কেন্দ্র করেই। মহান ভাষা আন্দোলনের ফেব্রুয়ারি এলেই অনেকে সচেতন
হন, লেখালেখি করেন। তারই ধারাবাহিকতায় বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়ায়।
সংবাদমাধ্যমে ভাষা বিকৃতির বিরুদ্ধে ও বাংলা ভাষার পবিত্রতা রক্ষায় ২০১২
সালে হাইকোর্ট স্বপ্রণোদিত হয়ে নির্দেশ দেন। এ ছাড়া আদালত বাংলা ভাষার
দূষণ, বিকৃত উচ্চারণ, ভিন্ন ভাষার সুরে বাংলা উচ্চারণ, সঠিক শব্দ চয়ন না
করা এবং বাংলা ভাষার অবক্ষয় রোধে কী কী পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে, সে বিষয়ে
সুপারিশ দিতে বাংলা একাডেমির সভাপতি অধ্যাপক আনিসুজ্জামানকে প্রধান করে
একটি কমিটি করার আদেশ দেন। আদালতের এ আদেশের সর্বশেষ খবরে জানা গেল, কমিটি
২০১৩ সালের মাঝামাঝি একটি প্রতিবেদন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠায়। পরে
মন্ত্রণালয় প্রতিবেদনটি হাইকোর্টে পাঠিয়ে দেয়। এখন তা আদালতেই ফাইলবন্দি
অবস্থায় রয়েছে। আদালতের সে নির্দেশ ও চলমান আলোচনা-সমালোচনার মধ্যেও আমাদের
ভাষা বিকৃতির বর্তমান অবস্থা কী?
তার আগে বলা প্রয়োজন, বাংলা দূষণের ব্যাপারে আমরা যেমন সোচ্চার, তেমনি ইংরেজিও যে বিকৃতি হচ্ছে, তা নিয়েও ইংরেজদের ভাবনার অন্ত নেই। অন্তত বর্তমান ইন্টারনেট-ফেসবুকের যুগে ইংরেজি নিয়ে তাদের শঙ্কার কথাই বলছে ২০১২ সালেরই শেষ দিকে বিবিসি ম্যাগাজিনের একটি প্রতিবেদন। 'লার্ন ইংলিশ অনলাইন :হাউ দ্য ইন্টারনেট ইজ চেঞ্জিং ল্যাঙ্গুয়েজ' শিরোনামে প্রতিবেদনটি দেখাচ্ছে, বিভিন্ন জায়গায় কীভাবে ইংরেজি পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে। যেটি বলছে, আজকের দুনিয়ায় ইন্টারনেটে ইংরেজির আধিপত্য থাকলেও, এমনকি কোটি কোটি ওয়েবসাইট ইংরেজিতে হলেও দ্বিতীয় ভাষা হিসেবে যারা ইংরেজি ব্যবহার করেন, তারা ভুলভাল ইংরেজি ব্যবহারে অভ্যস্ত। বিশেষ করে তারা ব্যাকরণগত বিষয়, বানান ও উচ্চারণে তেমন যত্নবান নয়। প্রতিবেদনটি এও বলছে, ফেসবুক ব্যবহারকারীরা ইতিমধ্যে ইংরেজির কয়েকটি সংস্করণ বানিয়ে ফেলেছে। যেমন_ ইন্ডিয়ান ইংলিশ বা হিংলিশ, স্প্যানিশ ইংলিশ বা স্পাংলিশ। এ রকম কোংলিশ মানে কোরিয়ান ইংলিশ। আমাদের দেশে বাংলিশ নিয়ে যে আলোচনা প্রতিবেদনটিতে তা না এলেও কিন্তু আলোচনার ধরন একই। তবে তাদের শঙ্কা বোধহয় আরেকটু বেশিই। যেখানে হিংলিশের উদাহরণ দিতে তারা 'ইভ টিজিং' শব্দটি ব্যবহার করেছে। যেটি বাংলাদেশ-ভারতে যৌন নিপীড়নের ইংরেজি হিসেবে ব্যবহৃত হয়। অথচ এটি আদৌ তা নয়।
এসব যখন ইন্টারনেটের প্রভাব; যখন দিন দিন ইন্টারনেট-ফেসবুক ব্যবহারকারী বাড়ছে; তখন আমাদের সে ভাষা পরিস্থিতি বলার অপেক্ষা রাখে না। যেটি স্বয়ং সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম মনে করছেন, যার পত্রিকার নিবন্ধেই আদালতের নির্দেশনা এসেছে, তিনি বলছেন, ভাষার দূষণ আরও বেড়ে গেছে।
এর পরিণতি কী, কিংবা এটা কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে_ সে প্রসঙ্গ আজকের বিষয় নয়। তবে খোদ ইংরেজরা যেখানে ইংরেজিকেও এ আলোচনায় এনেছে, সেখানে আলোচনার বিষয় হিসেবে যে এটি গুরুত্বপূর্ণ তা বলাই বাহুল্য। তারপরও বলা যায়, অনেক কিছুই চাপিয়ে রাখা যায় না। নদীর মতো সবই তার নতুন গতিপথ ঠিক করে নেয়। ভাষার দিক দিয়ে বাংলা নিঃসন্দেহে শক্তিশালী। আজ ৩০ কোটি মানুষ বাংলা বলছে, লিখছে। ইন্টারনেটেও লাখ লাখ মানুষ সক্রিয় বাংলা নিয়ে। নতুনভাবে দাঁড়ালেও দুশ্চিন্তার কিছু আছে কি! বাংলা ভাষা তার শক্তি ও স্বকীয়তা নিয়েই দাঁড়াবে_ এ আশা হয়তো বাতুলতা নয়। বাকিটা সময়ই বলে দেবে।
ন্যক্বারজনক ‘বাংলিশ’ নিষিদ্ধ করল হাইকোর্ট
তার আগে বলা প্রয়োজন, বাংলা দূষণের ব্যাপারে আমরা যেমন সোচ্চার, তেমনি ইংরেজিও যে বিকৃতি হচ্ছে, তা নিয়েও ইংরেজদের ভাবনার অন্ত নেই। অন্তত বর্তমান ইন্টারনেট-ফেসবুকের যুগে ইংরেজি নিয়ে তাদের শঙ্কার কথাই বলছে ২০১২ সালেরই শেষ দিকে বিবিসি ম্যাগাজিনের একটি প্রতিবেদন। 'লার্ন ইংলিশ অনলাইন :হাউ দ্য ইন্টারনেট ইজ চেঞ্জিং ল্যাঙ্গুয়েজ' শিরোনামে প্রতিবেদনটি দেখাচ্ছে, বিভিন্ন জায়গায় কীভাবে ইংরেজি পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে। যেটি বলছে, আজকের দুনিয়ায় ইন্টারনেটে ইংরেজির আধিপত্য থাকলেও, এমনকি কোটি কোটি ওয়েবসাইট ইংরেজিতে হলেও দ্বিতীয় ভাষা হিসেবে যারা ইংরেজি ব্যবহার করেন, তারা ভুলভাল ইংরেজি ব্যবহারে অভ্যস্ত। বিশেষ করে তারা ব্যাকরণগত বিষয়, বানান ও উচ্চারণে তেমন যত্নবান নয়। প্রতিবেদনটি এও বলছে, ফেসবুক ব্যবহারকারীরা ইতিমধ্যে ইংরেজির কয়েকটি সংস্করণ বানিয়ে ফেলেছে। যেমন_ ইন্ডিয়ান ইংলিশ বা হিংলিশ, স্প্যানিশ ইংলিশ বা স্পাংলিশ। এ রকম কোংলিশ মানে কোরিয়ান ইংলিশ। আমাদের দেশে বাংলিশ নিয়ে যে আলোচনা প্রতিবেদনটিতে তা না এলেও কিন্তু আলোচনার ধরন একই। তবে তাদের শঙ্কা বোধহয় আরেকটু বেশিই। যেখানে হিংলিশের উদাহরণ দিতে তারা 'ইভ টিজিং' শব্দটি ব্যবহার করেছে। যেটি বাংলাদেশ-ভারতে যৌন নিপীড়নের ইংরেজি হিসেবে ব্যবহৃত হয়। অথচ এটি আদৌ তা নয়।
এসব যখন ইন্টারনেটের প্রভাব; যখন দিন দিন ইন্টারনেট-ফেসবুক ব্যবহারকারী বাড়ছে; তখন আমাদের সে ভাষা পরিস্থিতি বলার অপেক্ষা রাখে না। যেটি স্বয়ং সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম মনে করছেন, যার পত্রিকার নিবন্ধেই আদালতের নির্দেশনা এসেছে, তিনি বলছেন, ভাষার দূষণ আরও বেড়ে গেছে।
এর পরিণতি কী, কিংবা এটা কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে_ সে প্রসঙ্গ আজকের বিষয় নয়। তবে খোদ ইংরেজরা যেখানে ইংরেজিকেও এ আলোচনায় এনেছে, সেখানে আলোচনার বিষয় হিসেবে যে এটি গুরুত্বপূর্ণ তা বলাই বাহুল্য। তারপরও বলা যায়, অনেক কিছুই চাপিয়ে রাখা যায় না। নদীর মতো সবই তার নতুন গতিপথ ঠিক করে নেয়। ভাষার দিক দিয়ে বাংলা নিঃসন্দেহে শক্তিশালী। আজ ৩০ কোটি মানুষ বাংলা বলছে, লিখছে। ইন্টারনেটেও লাখ লাখ মানুষ সক্রিয় বাংলা নিয়ে। নতুনভাবে দাঁড়ালেও দুশ্চিন্তার কিছু আছে কি! বাংলা ভাষা তার শক্তি ও স্বকীয়তা নিয়েই দাঁড়াবে_ এ আশা হয়তো বাতুলতা নয়। বাকিটা সময়ই বলে দেবে।
ন্যক্বারজনক ‘বাংলিশ’ নিষিদ্ধ করল হাইকোর্ট
No comments