আদালতপাড়ায় কান্না by আল আমিন
প্রিজন ভ্যান নম্বর ঢাকা মেট্রো-ড-(১৪০৪)। ভেতরে আসামিতে ঠাসা। ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতের সামনে ভ্যানটি আসামাত্র চারদিকে হুলুস্থূল। দুই সন্তান নিয়ে আগেই সেখানে দাঁড়িয়ে ছিলেন মিনারা বেগম। ভ্যানের ভেতরে থাকা স্বামী আজম আলীকে হাতের ইশারায় ডাকলেন তিনি। তাদের ছোট সন্তান রায়হান ডেকে উঠলেন আব্বু আব্বু বলে। ততক্ষণে ভ্যানটি ঢুকে গেছে গারদখানায়। আর চিৎকার করে কাঁদতে লাগলো শিশুটি। ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিমের আদালতে গতকাল সরজমিন এমন বহু পরিবারের ভিড় দেখা যায়। অনেকেরই অভিযোগ কোন ধরনের নাশকতা বা রাজনীতির সঙ্গে জড়িত না থাকলেও তাদের স্বজনদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সন্দেহজনকভাবে পুলিশ তাদের বাড়ি, রাস্তা অথবা কর্মক্ষেত্র থেকে ধরে নিয়ে এসেছে। কেউ ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, কেউ দিনমজুর অথবা বাসের হেলপার। তাদেরকে দেয়া হয়েছে নাশকতা ও পুলিশের কাজে বাধা দেয়ার মামলা। অথবা কাউকে সন্দেহভাজন হিসেবে ৫৪ ধারায় চালান দেয়া হয়েছে। এতে প্রতিটি পরিবারের দিন কাটছে উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠায়। পরিবারের একমাত্র কর্মক্ষম ব্যক্তি পুলিশের হাতে আটক হওয়ায় অনেকের আর্থিক সঙ্কট শুরু হয়েছে। দিন কাটছে অর্ধাহারে।
গত ৫ই জানুয়ারি থেকে ২০দলীয় জোট কর্তৃক ঘোষিত লাগাতার অবরোধ ও হরতাল ঘোষণার পর থেকে ঢাকাসহ সারা দেশে সাঁড়াশি অভিযান চালাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এতে সারা দেশে এখন পর্যন্ত গ্রেপ্তার করা হয়েছে ১৪ হাজারের বেশি লোককে। গতকাল সকালে ঢাকা মহানগর আদালতের সামনের গারদখানার সামনে গিয়ে দেখা যায় মিনারা বেগম গারদখানার সামনের সরু একটি ড্রেনের স্লাবের ওপর একটি পত্রিকা বিছিয়ে বসে আছেন। চেহারায় হতাশার চিহ্ন। কার জন্য বসে আছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ১২০/ক যাত্রাবাড়ীর শহীদ ফারুক সড়কের একটি বাড়িতে তিনি স্বামী আজম (৪০) ও দুই সন্তান নিয়ে বসবাস করেন। আজম সবজি ব্যবসায়ী। যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তার মোড়ে ফুটপাথে ব্যবসা করেন। তিনি জানান, ১৫ই ফেব্রুয়ারি রাত ১২টায় শহীদ ফারুক সড়কে বাড়িতে ফেরার পথে ডিবি পুলিশের পরিচয় দিয়ে তুলে নিয়ে যায় আজমকে। পরে ডিবি অফিসে যোগাযোগ করে জানতে পারেন তার স্বামীকে সন্দেহভাজন হিসেবে আটক করা হয়েছে। পরে ৫৪ ধারায় তাকে আদালতে চালান দেয় পুলিশ। তিনি আরও জানান, তারা গরিব মানুষ। তার স্বামী একদিন রোজগার না করলে সংসারে টানাপড়েন শুরু হয়। কোন রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নন আজম। থানায় কোন অভিযোগও নেই। তার স্বামী সাতদিন ধরে কারাগারে। গ্রামের বাড়ি থেকে ভাইয়ের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে এসেছি। এভাবে চলা যাচ্ছে না।
গারদখানার সামনে অপেক্ষারত লিমা আক্তার নামে অপর এক গৃহবধূ জানান, ১৯শে ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় পল্টন মোড় থেকে তার স্বামী সোহেল আহমেদ (৩০)কে পল্টন থানা পুলিশ সন্দেহভাজন হিসেবে আটক করে। সোহেল মোটরসাইকেলযোগে উত্তরা থেকে ব্যক্তিগত কাজ সেরে ডেমরার কোনাপাড়ার বাসায় যাচ্ছিলেন। তাকে বিস্ফোরকদ্রব্য আইনে দায়ের করা মামলায় আসামি করা হয়েছে। মামলার অভিযোগে বাস পোড়ানোর সময় পেট্রল বোমা সরবরাহকারী হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। তিনি আরও জানান, তার স্বামীর ডেমরার কোনাপাড়ায় একটি মোবাইলের দোকান আছে। তাদের বিয়ে হয়েছে দেড় বছর হলো। তার স্বামী কোন রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নন। কারও সঙ্গে যোগাযোগও নেই। ব্যক্তিগত শত্রুতাই তাকে ফাঁসানো হয়েছে বলে তিনি দাবি করেন। তিনি তার স্বামীর মুক্তি দাবি করেন।
একই রকম অভিযোগ করলেন তোফাজ্জল হোসেন নামে এক ব্যক্তি। তার ছেলে আশরাফুল ইসলাম ইমন কদমতলীর কাঠেরপুল এলাকার তামিরুল মিল্লাত মহিলা মাদরাসার পাশেই একটি বাড়িতে পরিবারের সঙ্গে থাকেন। যাত্রাবাড়ীর দনিয়া স্কুল অ্যান্ড কলেজে এইচএসসি’র দ্বিতীয় বর্ষে পড়াশোনা করেন। ১১ই ফেব্রুয়ারি রাতে বাড়ি থেকে ডিবি পুলিশ পরিচয় দিয়ে মাইক্রোবাসে করে তাকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। এতে পরিবারের মধ্যে উৎকণ্ঠা সৃষ্টি হয়। পরে তাকে পুলিশ সন্দেহভাজন হিসেবে আদালতে হাজির করে। আদালত তাকে জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠান। কালকে আবার তাকে আদালতে তোলার কথা আছে।
গারদখানার সামনে রাশেদুল ইসলাম নামে এক যুবক জানালেন, তার ভাই আবুল কাসেম (৪০) পেশায় লেগুনার হেলপার। ২রা ফেব্রুয়ারি রাতে রামপুরা থানার বনশ্রী ব্রিজের সামনে থেকে ডিবি পুলিশ পিকেটার সন্দেহে তাকে ধরে নিয়ে যায়। গত ১১ই ফেব্রুয়ারি পুলিশ তাকে আদালতে হাজির করে। তখন আদালত তাকে কারাগারে পাঠায়। তার বিরুদ্ধে কোন মামলা দেয়া হয়নি। গতকাল তাকে আবার আদালতে হাজিরের কথা রয়েছে। তার ভাই কোন রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নয়। তার টাকায় পরিবারের ভরণ পোষণ হয়ে থাকে। প্রায় ২০ দিন ধরে জেলে থাকায় পরিবারে অভাব নেমে এসেছে। তিনি তার ভাইয়ের মুক্তি দাবি করেন। তাদের গ্রামের বাড়ি রংপুর জেলার পীরগঞ্জ এলাকায়।
গত ৫ই জানুয়ারি থেকে ২০দলীয় জোট কর্তৃক ঘোষিত লাগাতার অবরোধ ও হরতাল ঘোষণার পর থেকে ঢাকাসহ সারা দেশে সাঁড়াশি অভিযান চালাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এতে সারা দেশে এখন পর্যন্ত গ্রেপ্তার করা হয়েছে ১৪ হাজারের বেশি লোককে। গতকাল সকালে ঢাকা মহানগর আদালতের সামনের গারদখানার সামনে গিয়ে দেখা যায় মিনারা বেগম গারদখানার সামনের সরু একটি ড্রেনের স্লাবের ওপর একটি পত্রিকা বিছিয়ে বসে আছেন। চেহারায় হতাশার চিহ্ন। কার জন্য বসে আছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ১২০/ক যাত্রাবাড়ীর শহীদ ফারুক সড়কের একটি বাড়িতে তিনি স্বামী আজম (৪০) ও দুই সন্তান নিয়ে বসবাস করেন। আজম সবজি ব্যবসায়ী। যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তার মোড়ে ফুটপাথে ব্যবসা করেন। তিনি জানান, ১৫ই ফেব্রুয়ারি রাত ১২টায় শহীদ ফারুক সড়কে বাড়িতে ফেরার পথে ডিবি পুলিশের পরিচয় দিয়ে তুলে নিয়ে যায় আজমকে। পরে ডিবি অফিসে যোগাযোগ করে জানতে পারেন তার স্বামীকে সন্দেহভাজন হিসেবে আটক করা হয়েছে। পরে ৫৪ ধারায় তাকে আদালতে চালান দেয় পুলিশ। তিনি আরও জানান, তারা গরিব মানুষ। তার স্বামী একদিন রোজগার না করলে সংসারে টানাপড়েন শুরু হয়। কোন রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নন আজম। থানায় কোন অভিযোগও নেই। তার স্বামী সাতদিন ধরে কারাগারে। গ্রামের বাড়ি থেকে ভাইয়ের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে এসেছি। এভাবে চলা যাচ্ছে না।
গারদখানার সামনে অপেক্ষারত লিমা আক্তার নামে অপর এক গৃহবধূ জানান, ১৯শে ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় পল্টন মোড় থেকে তার স্বামী সোহেল আহমেদ (৩০)কে পল্টন থানা পুলিশ সন্দেহভাজন হিসেবে আটক করে। সোহেল মোটরসাইকেলযোগে উত্তরা থেকে ব্যক্তিগত কাজ সেরে ডেমরার কোনাপাড়ার বাসায় যাচ্ছিলেন। তাকে বিস্ফোরকদ্রব্য আইনে দায়ের করা মামলায় আসামি করা হয়েছে। মামলার অভিযোগে বাস পোড়ানোর সময় পেট্রল বোমা সরবরাহকারী হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। তিনি আরও জানান, তার স্বামীর ডেমরার কোনাপাড়ায় একটি মোবাইলের দোকান আছে। তাদের বিয়ে হয়েছে দেড় বছর হলো। তার স্বামী কোন রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নন। কারও সঙ্গে যোগাযোগও নেই। ব্যক্তিগত শত্রুতাই তাকে ফাঁসানো হয়েছে বলে তিনি দাবি করেন। তিনি তার স্বামীর মুক্তি দাবি করেন।
একই রকম অভিযোগ করলেন তোফাজ্জল হোসেন নামে এক ব্যক্তি। তার ছেলে আশরাফুল ইসলাম ইমন কদমতলীর কাঠেরপুল এলাকার তামিরুল মিল্লাত মহিলা মাদরাসার পাশেই একটি বাড়িতে পরিবারের সঙ্গে থাকেন। যাত্রাবাড়ীর দনিয়া স্কুল অ্যান্ড কলেজে এইচএসসি’র দ্বিতীয় বর্ষে পড়াশোনা করেন। ১১ই ফেব্রুয়ারি রাতে বাড়ি থেকে ডিবি পুলিশ পরিচয় দিয়ে মাইক্রোবাসে করে তাকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। এতে পরিবারের মধ্যে উৎকণ্ঠা সৃষ্টি হয়। পরে তাকে পুলিশ সন্দেহভাজন হিসেবে আদালতে হাজির করে। আদালত তাকে জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠান। কালকে আবার তাকে আদালতে তোলার কথা আছে।
গারদখানার সামনে রাশেদুল ইসলাম নামে এক যুবক জানালেন, তার ভাই আবুল কাসেম (৪০) পেশায় লেগুনার হেলপার। ২রা ফেব্রুয়ারি রাতে রামপুরা থানার বনশ্রী ব্রিজের সামনে থেকে ডিবি পুলিশ পিকেটার সন্দেহে তাকে ধরে নিয়ে যায়। গত ১১ই ফেব্রুয়ারি পুলিশ তাকে আদালতে হাজির করে। তখন আদালত তাকে কারাগারে পাঠায়। তার বিরুদ্ধে কোন মামলা দেয়া হয়নি। গতকাল তাকে আবার আদালতে হাজিরের কথা রয়েছে। তার ভাই কোন রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নয়। তার টাকায় পরিবারের ভরণ পোষণ হয়ে থাকে। প্রায় ২০ দিন ধরে জেলে থাকায় পরিবারে অভাব নেমে এসেছে। তিনি তার ভাইয়ের মুক্তি দাবি করেন। তাদের গ্রামের বাড়ি রংপুর জেলার পীরগঞ্জ এলাকায়।
No comments