বেহাল ব্যবসা বিনিয়োগ
চলমান
অস্থিতিশীল রাজনৈতিক অবস্থা এবং টানা অবরোধ-হরতালে ৫০ দিন পার হয়েছে। একই
সঙ্গে দেশের অর্থনীতির ক্ষতির পরিমাণ দিন দিন বেড়েই চলেছে। টানা
হরতাল-অবরোধে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ১ লাখ ১৩ হাজার ৮৫০
কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে বলে ব্যবসায়ীরা মনে করছেন। ঢাকা চেম্বার অব কমার্স
অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই), এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ ও সংশ্লিষ্ট
সংগঠনগুলোর হিসাব অনুযায়ী, এক দিনের হরতাল-অবরোধে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের
ক্ষতি ২ হাজার ২৭৭ কোটি টাকা। এ বিষয়ে বিশ্লেষকরা জানান, হরতাল-অবরোধে
দেশের সবগুলো খাতই আক্রান্ত হচ্ছে। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বাড়ছে। উৎপাদনের দিক
থেকেও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দেশ। রপ্তানিতেও সমস্যায় পড়েছে। সারা বিশ্বে
আমাদের ভাবমূর্তি সঙ্কট দেখা দিয়েছে। ফলে অর্থনৈতিক সম্ভাবনাময় দেশ হিসেবে
বিশ্বে বাংলাদেশ পরিচিতি পেয়েছে, সেটাও নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। শিল্পের কাঁচামাল
আমদানি ও সরবরাহ কমে যাওয়ায় উৎপাদন কমেছে। কৃষিতেও উপকরণ সরবরাহ করা যাচ্ছে
না। অর্থনীতিতে সবদিকে এতটা অচলাবস্থা আর কখনও দেখা যায়নি সাবেক
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. এ বি মীর্জ্জা মো. আজিজুল ইসলাম
মানবজমিনকে জানান, ক্ষতি হচ্ছে সন্দেহ নেই। দেশ ৫০ দিনে বড় ধরনের ক্ষতির
মধ্যে পড়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এভাবে চলতে থাকলে দেশে ক্ষুধার্ত
মানুষের সংখ্যা বেড়ে যাবে। খোঁজ নিলে জানা যাবে, নিম্ন আয়ের অনেক মানুষ এখন
অনাহারে-অর্ধাহারে দিন পার করছে। মানুষের হাতে কোন কাজ নেই। কর্মহারা এসব
মানুষ পথে পথে ঘুরছে। অস্বস্তিকর পরিবেশ দীর্ঘায়িত হলে প্রবৃদ্ধির টার্গেট,
মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করা কোনভাবেই বাস্তবায়ন হবে না বলে জানান এ
অর্থনীতিবিদ।
উদ্যোক্তারা বলছেন, এ অবস্থা আর কিছুদিন চলতে থাকলে যে অর্থনৈতিক সঙ্কট তৈরি হবে, তা থেকে বের হওয়ার কোন সুযোগ থাকবে না। বিশ্ববাজার হাতছাড়া হবে। কেননা, হরতাল-অবরোধে সড়ক, বন্দর ও গুদাম থেকে পণ্য সরবরাহ কার্যত বন্ধ হয়ে পড়েছে। সরবরাহ বন্ধ থাকায় ব্যবসা-বাণিজ্যও এখন স্থবির। অথচ বন্দরে ও বেসরকারি ডিপোতে পড়ে থাকা পণ্যের মাশুল গুনতে হবে ব্যবসায়ীদের।
পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ’র দাবি, চলমান অস্থিরতায় প্রতিদিন তাদের রপ্তানি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে ৬৯৫ কোটি টাকার। সে হিসাবে ৫০ দিনে ক্ষতি ৩৪ হাজার ৭৫০ কোটি টাকা। আর ৫০ দিনে ১ লাখ ১৪ হাজার ডলারের পোশাকের ক্রয়াদেশ বাতিল হয়েছে। এর সঙ্গে মূল্যছাড়, উড়োজাহাজে পণ্য পাঠানো, জাহাজীকরণে বিলম্ব ও নাশকতার ক্ষতি যোগ করে লোকসান দাঁড়িয়েছে ১৮১ কাটি টাকা। বিজিএমইএর সভাপতি আতিকুল ইসলাম দাবি করে বলেন, বর্তমানে পরিস্থিতিতে পোশাকের ক্রয়াদেশ স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে ৩০ শতাংশ কমে গেছে। তিনি বলেন, আগে ক্রেতারা এ দেশে এসে ক্রয়াদেশ দিতেন। এ পরিস্থিতিতে তারা তো আসছেনই না, উল্টো বিদেশে ডেকে নিয়ে যাচ্ছেন।
সড়ক ও পণ্য পরিবহন খাতের ব্যবসায়ীদের তথ্য অনুযায়ী, পরিবহন ও যোগাযোগ খাতের প্রতিদিনের ক্ষতি প্রায় ৩০০ কোটি টাকা। সে হিসাবে ৫০ দিনে ক্ষতি ১৫ হাজার কোটি টাকা।
পর্যটন খাতের ব্যবসায়ীরা বছরের মধ্যে শীত মওসুমের জন্য অপেক্ষায় থাকেন। কিন্তু হরতাল-অবরোধের কারণে দেশের পর্যটন স্থানগুলো এখন পর্যটকশূন্য। ট্যুরিজম ডেভেলপারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ বলছে, হরতাল-অবরোধে পর্যটন খাতে প্রতিদিনের ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ২১০ কোটি টাকা। সে হিসাবে ৫০ দিনে ক্ষতি হয়েছে ১০ হাজার ৫০০ কোটি টাকা।
শপিংমল, বিপণিবিতানসহ সারা দেশে ছোট-বড় ২৫ লাখ দোকান আছে। এসব দোকানে গড়ে তিন হাজার টাকার বেচাবিক্রি হয়। ৫ শতাংশ মুনাফা বাদ দিলেও প্রতিদিন এসব দোকানে লোকসানের পরিমাণ ১৫০ কোটি টাকা। এ তথ্য বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির। সে হিসাবে ৫০ দিনের অস্থিরতায় দোকান মালিকদের ৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।
চলমান অবস্থায় ফুটপাতের হকার ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের দুর্দশা আরও বেশি বেড়ে গেছে। দেশের এমন কয়েক লাখ ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী আছেন। তাদের সম্মিলিতভাবে প্রতিদিন প্রায় ১৫ কোটি টাকার ক্ষতি হয়। সে হিসেবে ৫০ দিনে হকার্সদের ক্ষতি হয়েছে ৭৫০ কোটি টাকা।
রপ্তানিমুখী খাত চিংড়ি শিল্পের কারখানাগুলোতে প্রায় ১১ হাজার টন চিংড়ির মজুত জমে গেছে। এর বাজারমূল্য প্রায় ১ হাজার ৪৫২ কোটি টাকা। হিমায়িত খাদ্য রপ্তানিকারক সমিতির মতে, হরতাল-অবরোধে চিংড়ি শিল্পে প্রতিদিন ক্ষতি হচ্ছে ৮ থেকে ১০ কোটি টাকা। সে হিসাবে ৫০ দিনের ক্ষতির পরিমাণ ৪০০ কোটি টাকার বেশি।
পরিবহন ব্যবস্থা প্রায় ভেঙে পড়ায় খামারে উৎপাদিত ডিম ও মুরগি ভোক্তার কাছে ঠিকমতো পৌঁছানো যাচ্ছে না। সে কারণে ক্ষতিও বাড়ছে। পোলট্রি খাতের উদ্যোক্তারা বলছেন, হরতাল-অবরোধে তাদের প্রতিদিন ক্ষতি হচ্ছে ১৮ কোটি টাকা। আর ৫০ দিনের ক্ষতি ৯ হাজার ৫০ কোটি টাকা।
এছাড়া ৫০ দিনের হরতাল-অবরোধে কৃষিখাতে ১৪ হাজার ৪০০ কোটি, প্লাস্টিক পণ্য খাতে ৮৫০ কোটি, বীমা খাতে ৭৫০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। এদিকে উৎপাদনমুখী শিল্পই দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রেখেছে। গত ২০১৩-১৪ অর্থবছরে প্রাক্কলিত জিডিপিতে শিল্পখাতের ১ দিনের অবদান ৮৭৫ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। আর ঢাকা চেম্বার বলছে, প্রতিদিনই শিল্পকারখানায় সক্ষমতার চেয়ে ২৫ শতাংশ কম পণ্য উৎপাদিত হচ্ছে। সে হিসাবে রাজনৈতিক অস্থিরতায় দেশের কারখানাগুলোতে প্রতিদিন উৎপাদন কম হচ্ছে ২১৮ কোটি ৯৬ লাখ টাকার। সংগঠনটির আশঙ্কা, এর প্রভাবে শিল্পকারখানায় শ্রমিক ছাঁটাইয়ের প্রবণতা বাড়বে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ জানান, এভাবে চলতে থাকলে উন্নয়নের গতি থেমে যাবে। কর্মসংস্থান হারাবে দেশ। গণতন্ত্রের জন্য লড়াইমূলক এসব আন্দোলনে দেশ থাকে টালমাটাল। এ সময় নিয়ন্ত্রককারী প্রতিষ্ঠানগুলো সমন্বয়হীনতায় ভোগে। ফলে দেশে অনিয়ম-অনাচার বেড়ে যায়। আখেরে এর জন্য দেশকে বড় মূল্য দিতে হয় বলে মন্তব্য করেন তিনি।
উদ্যোক্তারা বলছেন, এ অবস্থা আর কিছুদিন চলতে থাকলে যে অর্থনৈতিক সঙ্কট তৈরি হবে, তা থেকে বের হওয়ার কোন সুযোগ থাকবে না। বিশ্ববাজার হাতছাড়া হবে। কেননা, হরতাল-অবরোধে সড়ক, বন্দর ও গুদাম থেকে পণ্য সরবরাহ কার্যত বন্ধ হয়ে পড়েছে। সরবরাহ বন্ধ থাকায় ব্যবসা-বাণিজ্যও এখন স্থবির। অথচ বন্দরে ও বেসরকারি ডিপোতে পড়ে থাকা পণ্যের মাশুল গুনতে হবে ব্যবসায়ীদের।
পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ’র দাবি, চলমান অস্থিরতায় প্রতিদিন তাদের রপ্তানি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে ৬৯৫ কোটি টাকার। সে হিসাবে ৫০ দিনে ক্ষতি ৩৪ হাজার ৭৫০ কোটি টাকা। আর ৫০ দিনে ১ লাখ ১৪ হাজার ডলারের পোশাকের ক্রয়াদেশ বাতিল হয়েছে। এর সঙ্গে মূল্যছাড়, উড়োজাহাজে পণ্য পাঠানো, জাহাজীকরণে বিলম্ব ও নাশকতার ক্ষতি যোগ করে লোকসান দাঁড়িয়েছে ১৮১ কাটি টাকা। বিজিএমইএর সভাপতি আতিকুল ইসলাম দাবি করে বলেন, বর্তমানে পরিস্থিতিতে পোশাকের ক্রয়াদেশ স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে ৩০ শতাংশ কমে গেছে। তিনি বলেন, আগে ক্রেতারা এ দেশে এসে ক্রয়াদেশ দিতেন। এ পরিস্থিতিতে তারা তো আসছেনই না, উল্টো বিদেশে ডেকে নিয়ে যাচ্ছেন।
সড়ক ও পণ্য পরিবহন খাতের ব্যবসায়ীদের তথ্য অনুযায়ী, পরিবহন ও যোগাযোগ খাতের প্রতিদিনের ক্ষতি প্রায় ৩০০ কোটি টাকা। সে হিসাবে ৫০ দিনে ক্ষতি ১৫ হাজার কোটি টাকা।
পর্যটন খাতের ব্যবসায়ীরা বছরের মধ্যে শীত মওসুমের জন্য অপেক্ষায় থাকেন। কিন্তু হরতাল-অবরোধের কারণে দেশের পর্যটন স্থানগুলো এখন পর্যটকশূন্য। ট্যুরিজম ডেভেলপারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ বলছে, হরতাল-অবরোধে পর্যটন খাতে প্রতিদিনের ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ২১০ কোটি টাকা। সে হিসাবে ৫০ দিনে ক্ষতি হয়েছে ১০ হাজার ৫০০ কোটি টাকা।
শপিংমল, বিপণিবিতানসহ সারা দেশে ছোট-বড় ২৫ লাখ দোকান আছে। এসব দোকানে গড়ে তিন হাজার টাকার বেচাবিক্রি হয়। ৫ শতাংশ মুনাফা বাদ দিলেও প্রতিদিন এসব দোকানে লোকসানের পরিমাণ ১৫০ কোটি টাকা। এ তথ্য বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির। সে হিসাবে ৫০ দিনের অস্থিরতায় দোকান মালিকদের ৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।
চলমান অবস্থায় ফুটপাতের হকার ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের দুর্দশা আরও বেশি বেড়ে গেছে। দেশের এমন কয়েক লাখ ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী আছেন। তাদের সম্মিলিতভাবে প্রতিদিন প্রায় ১৫ কোটি টাকার ক্ষতি হয়। সে হিসেবে ৫০ দিনে হকার্সদের ক্ষতি হয়েছে ৭৫০ কোটি টাকা।
রপ্তানিমুখী খাত চিংড়ি শিল্পের কারখানাগুলোতে প্রায় ১১ হাজার টন চিংড়ির মজুত জমে গেছে। এর বাজারমূল্য প্রায় ১ হাজার ৪৫২ কোটি টাকা। হিমায়িত খাদ্য রপ্তানিকারক সমিতির মতে, হরতাল-অবরোধে চিংড়ি শিল্পে প্রতিদিন ক্ষতি হচ্ছে ৮ থেকে ১০ কোটি টাকা। সে হিসাবে ৫০ দিনের ক্ষতির পরিমাণ ৪০০ কোটি টাকার বেশি।
পরিবহন ব্যবস্থা প্রায় ভেঙে পড়ায় খামারে উৎপাদিত ডিম ও মুরগি ভোক্তার কাছে ঠিকমতো পৌঁছানো যাচ্ছে না। সে কারণে ক্ষতিও বাড়ছে। পোলট্রি খাতের উদ্যোক্তারা বলছেন, হরতাল-অবরোধে তাদের প্রতিদিন ক্ষতি হচ্ছে ১৮ কোটি টাকা। আর ৫০ দিনের ক্ষতি ৯ হাজার ৫০ কোটি টাকা।
এছাড়া ৫০ দিনের হরতাল-অবরোধে কৃষিখাতে ১৪ হাজার ৪০০ কোটি, প্লাস্টিক পণ্য খাতে ৮৫০ কোটি, বীমা খাতে ৭৫০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। এদিকে উৎপাদনমুখী শিল্পই দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রেখেছে। গত ২০১৩-১৪ অর্থবছরে প্রাক্কলিত জিডিপিতে শিল্পখাতের ১ দিনের অবদান ৮৭৫ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। আর ঢাকা চেম্বার বলছে, প্রতিদিনই শিল্পকারখানায় সক্ষমতার চেয়ে ২৫ শতাংশ কম পণ্য উৎপাদিত হচ্ছে। সে হিসাবে রাজনৈতিক অস্থিরতায় দেশের কারখানাগুলোতে প্রতিদিন উৎপাদন কম হচ্ছে ২১৮ কোটি ৯৬ লাখ টাকার। সংগঠনটির আশঙ্কা, এর প্রভাবে শিল্পকারখানায় শ্রমিক ছাঁটাইয়ের প্রবণতা বাড়বে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ জানান, এভাবে চলতে থাকলে উন্নয়নের গতি থেমে যাবে। কর্মসংস্থান হারাবে দেশ। গণতন্ত্রের জন্য লড়াইমূলক এসব আন্দোলনে দেশ থাকে টালমাটাল। এ সময় নিয়ন্ত্রককারী প্রতিষ্ঠানগুলো সমন্বয়হীনতায় ভোগে। ফলে দেশে অনিয়ম-অনাচার বেড়ে যায়। আখেরে এর জন্য দেশকে বড় মূল্য দিতে হয় বলে মন্তব্য করেন তিনি।
No comments