সিলেট ছাত্রলীগে ভাই আর দা’ই সব by চৌধুরী মুমতাজ আহমদ
নাদেল ভাই, নাসির ভাই, আজাদ ভাই। নয়তো
বিধান দা, রণজিৎ দা, পীযূষ দা। ছোট্ট ছোট্ট এমন আশ্রয়েই আটকে আছে সিলেটে
ছাত্রলীগের কর্মকাণ্ড। এখানে ভাই আর দাদারাই সব। আর কারও কোন খবরদারি চলে
না। ভাইয়ের হুকুমে গুলি ছোটে, দাদার আদেশে ছুরি ওঠে। ভাই আর দাদাদের অনুগত
কর্মীরা নিজেদের জীবন হাতে নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে রাজপথে। তবে যুদ্ধের মাঠে সে
জীবন হাত থেকে ছিটকে পড়লে এই ভাই-দাদারাই মুহূর্তেই অস্বীকার করেন ‘ছোট
ভাই’দের। চিনতে গেলেই বিপদ। কে আর সেধে ‘বিপদে’ জড়াতে চায়! শাহজালাল
বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের দু’গ্রুপের সংঘর্ষে নিহত সুমন চন্দ্র দাসকে যেমন
এখন কেউই আর চিনতে চান না।
দু’দফা শাসনক্ষমতার আশ্রয় থেকে বিচ্ছিন্ন থাকায় রাজপথের দখলে খুব একটা সুবিধা করতে পারছে না বিএনপির নেতৃত্বাধীন ছাত্র সংগঠন ছাত্রদল। সারা দেশের মতো একই অবস্থা সিলেটেও। মাঠজুড়ে তাই কেবলই ছাত্রলীগের আধিপত্য। ক্ষমতার পরশ না থাকায় ছাত্রলীগের মূল প্রতিপক্ষরা কোণঠাসা। তাই খালি মাঠে নিজেরাই নিজেদের প্রতিপক্ষ সেজে মাঠ গরম রাখছে ছাত্রলীগ। রাজনৈতিক আদর্শ মোকাবিলার দায় না থাকায় সিলেটে তাদের রাজনীতি মূলত দখল, টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি নির্ভর হয়ে পড়েছে। আর এ সবের নিয়ন্ত্রণ নিজ নিজ মুঠোয় ধরে রাখতে ভাই-দাদারা গড়ে তুলেছেন নিজস্ব কর্মীবাহিনী। সাম্রাজ্য টিকিয়ে রাখতে সৈনিকের ভূমিকায় নামছেন তাদের ‘ছোট ভাইয়েরাই’। আর সবাইকে পেছন থেকে মদত দিচ্ছেন আরও ‘বড় ভাই’ না হয় আরও ‘বড় দাদা’রা।
সিলেট জেলা ছাত্রলীগের এককালের দাপুটে নেতা শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল। এখন তিনি মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্বে। ব্যস্ততা আছে ব্যবসা নিয়ে, পত্রিকা প্রকাশনা নিয়েও। পরিচিতি আছে ক্রীড়াব্যক্তিত্ব হিসেবেও। তবে ছাত্রলীগের সঙ্গে তার সম্পর্ক মোটেও চুকেবুকে যায়নি। ‘নাদেল ভাই’- ছোট্ট এ পরিচয়ে এখনও তিনি ছাত্রলীগের ত্রাতা। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের স্নেহধন্য সদালাপী এ ব্যক্তিটি নিয়ন্ত্রণ করেন নগরীর ‘দর্শন দেউড়ি’ এলাকার নামাঙ্কিত ছাত্রলীগের একটি গ্রুপ। সংঘাত-সংঘর্ষ এড়িয়ে যে গ্রুপটি মূলত বিভিন্ন ব্যবসা-কাজের দখল নিতেই সক্রিয়।
হোটেল কাশ্মীর। এক সময় সিলেট নগরীর দরগা গেইট এলাকায় এ নামে একটি হোটেল ছিল। হোটেল নেই, তবে হোটেলের নাম বুকে নিয়ে এখনও ছাত্রলীগের একটি গ্রুপ ঠিকই মাঠ দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। এ গ্রুপের নেতৃত্বে যিনি রয়েছেন কর্মীদের কাছে তার সহজ পরিচয় ‘বিধান দা’। পুরো নাম বিধান কুমার সাহা। ছাত্রলীগের পাট চুকিয়ে তিনি এখন মহানগর আওয়ামী লীগের উপ-দপ্তর সম্পাদক। তবু নাটাই ছাড়েননি ছাত্রলীগের। টেন্ডারবাজি আর চাঁদাবাজির বিস্তর অভিযোগ তার কর্মীবাহিনীর বিরুদ্ধে।
বিধান দা’র এককালের সৈনিক পীযূষ কান্তি দে’রও এখন নিজস্ব কর্মীবাহিনী রয়েছে। অনুসারীদের কাছে ‘পীযূষ দা’ হিসেবে পরিচিত মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক এ যুগ্ম আহ্বায়কের রাজত্ব পরিচালিত হয় নগরীর মির্জাজাঙ্গাল এলাকা থেকে। এ এলাকার সকল কর্মকাণ্ডেরই নিয়ন্ত্রণ পীযূষ কান্তি ও তার বাহিনীর হাতে। দখল ও টেন্ডারবাজির ক্ষেত্রে এ বাহিনীর ‘সুনাম’ নগরজুড়েই।
জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন খান যখন ছাত্রলীগের নেতা তখন থেকেই তার ছোট্ট নাম ‘নাসির ভাই’। কর্পোরেট এলাকা হিসেবে পরিচিত নগরীর তালতলায় এক নামেই তিনি পরিচিত। নিজে ক্লিন ইমেজ গড়ে তুলতে সচেষ্ট হলেও তার কর্মীদের পরিচয় কিন্তু মোটেও ‘ক্লিন’ নয়। টেণ্ডারবাজি-চাঁদাবাজির অভিযোগ তো আছেই, তার বাহিনীর বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিনতাই পরিচালনারও।
নগরীর টিলাগড় এলাকায় থেকে ছাত্রলীগের রাজনীতি করতে হলে নাম লেখাতে হবে ‘রণজিৎ দা’ ও ‘আজাদ ভাই’য়ের যুগল গ্রুপে- দীর্ঘ দিন ধরে ছোট ভাইরা এমন শর্তের জালেই বাঁধা ছিলেন। জেলা আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক রণজিৎ সরকারই হচ্ছেন ছোট ভাইদের ‘রণজিৎ দা’। আর ‘আজাদ ভাই’ হচ্ছেন সিটি কাউন্সিলর আজাদুর রহমান আজাদ। তবে আধিপত্যের ঠাণ্ডা লড়াইয়ে ভেঙে গেছে আজাদ-রণজিৎ জুটি। এখন আলাদা আলাদা ভাবে নিজস্ব ‘সাম্রাজ্য’ সামলান তারা। এ দুই গ্রুপের নিয়ন্ত্রণাধীন এলাকায় সিলেটের ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমসি কলেজ ও সরকারি কলেজের অবস্থান। চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজিসহ নানা কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি তাই ভর্তি বাণিজ্যও ‘সামলাতে’ হয় দু’টো গ্রুপকে। এমসি কলেজ হোস্টেলে অগ্নিসংযোগে সম্পৃক্ততার অভিযোগও তাদের বিরুদ্ধে।
রণজিৎ-আজাদের ছায়ায় ছায়ায় টিলাগড়ে ছাত্রলীগের আরও একটি উপগ্রুপও বেড়ে উঠেছে। বড় ভাই-দাদাদের অবহেলার শোধ নিতেই জোট বেঁধেছেন জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি পঙ্কজ পুরকায়স্থ ও সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক বাবলা চৌধুরী। ছোট ভাইরা ভিড়ছেন পঙ্কজ-বাবলা গ্রুপেও। এমসি কলেজ হোস্টেলে অগ্নিসংযোগের দায়ে অভিযুক্ত ‘পঙ্কজ-বাবলা’র অনুসারীদের ‘খ্যাতি’ রয়েছে অস্ত্রবাজি, দখল ও টেন্ডারবাজিতেও।
নগরীর সুবিদবাজার-পাঠানটুলা-মদিনা মার্কেট এলাকাজুড়ে ছড়িয়ে থাকা ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা পরিচিত সোনার বাংলা গ্রুপ নামে। গ্রুপটি নিয়ন্ত্রণ করছেন জেলা ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক সেলিম আহমদ সেলিম, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা সুলতান আলী মনসুর ও জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আফতাব হোসেন খান। তবে তারা অনুসারীদের কাছে সেলিম ভাই-মনসুর ভাই-আফতাব ভাই হিসেবেই পরিচিত। এছাড়া ‘আফতাব ভাই’ এককভাবে নিয়ন্ত্রণ করেন পীরমহল্লার ছোট ভাইদেরও।
দু’দফা শাসনক্ষমতার আশ্রয় থেকে বিচ্ছিন্ন থাকায় রাজপথের দখলে খুব একটা সুবিধা করতে পারছে না বিএনপির নেতৃত্বাধীন ছাত্র সংগঠন ছাত্রদল। সারা দেশের মতো একই অবস্থা সিলেটেও। মাঠজুড়ে তাই কেবলই ছাত্রলীগের আধিপত্য। ক্ষমতার পরশ না থাকায় ছাত্রলীগের মূল প্রতিপক্ষরা কোণঠাসা। তাই খালি মাঠে নিজেরাই নিজেদের প্রতিপক্ষ সেজে মাঠ গরম রাখছে ছাত্রলীগ। রাজনৈতিক আদর্শ মোকাবিলার দায় না থাকায় সিলেটে তাদের রাজনীতি মূলত দখল, টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি নির্ভর হয়ে পড়েছে। আর এ সবের নিয়ন্ত্রণ নিজ নিজ মুঠোয় ধরে রাখতে ভাই-দাদারা গড়ে তুলেছেন নিজস্ব কর্মীবাহিনী। সাম্রাজ্য টিকিয়ে রাখতে সৈনিকের ভূমিকায় নামছেন তাদের ‘ছোট ভাইয়েরাই’। আর সবাইকে পেছন থেকে মদত দিচ্ছেন আরও ‘বড় ভাই’ না হয় আরও ‘বড় দাদা’রা।
সিলেট জেলা ছাত্রলীগের এককালের দাপুটে নেতা শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল। এখন তিনি মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্বে। ব্যস্ততা আছে ব্যবসা নিয়ে, পত্রিকা প্রকাশনা নিয়েও। পরিচিতি আছে ক্রীড়াব্যক্তিত্ব হিসেবেও। তবে ছাত্রলীগের সঙ্গে তার সম্পর্ক মোটেও চুকেবুকে যায়নি। ‘নাদেল ভাই’- ছোট্ট এ পরিচয়ে এখনও তিনি ছাত্রলীগের ত্রাতা। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের স্নেহধন্য সদালাপী এ ব্যক্তিটি নিয়ন্ত্রণ করেন নগরীর ‘দর্শন দেউড়ি’ এলাকার নামাঙ্কিত ছাত্রলীগের একটি গ্রুপ। সংঘাত-সংঘর্ষ এড়িয়ে যে গ্রুপটি মূলত বিভিন্ন ব্যবসা-কাজের দখল নিতেই সক্রিয়।
হোটেল কাশ্মীর। এক সময় সিলেট নগরীর দরগা গেইট এলাকায় এ নামে একটি হোটেল ছিল। হোটেল নেই, তবে হোটেলের নাম বুকে নিয়ে এখনও ছাত্রলীগের একটি গ্রুপ ঠিকই মাঠ দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। এ গ্রুপের নেতৃত্বে যিনি রয়েছেন কর্মীদের কাছে তার সহজ পরিচয় ‘বিধান দা’। পুরো নাম বিধান কুমার সাহা। ছাত্রলীগের পাট চুকিয়ে তিনি এখন মহানগর আওয়ামী লীগের উপ-দপ্তর সম্পাদক। তবু নাটাই ছাড়েননি ছাত্রলীগের। টেন্ডারবাজি আর চাঁদাবাজির বিস্তর অভিযোগ তার কর্মীবাহিনীর বিরুদ্ধে।
বিধান দা’র এককালের সৈনিক পীযূষ কান্তি দে’রও এখন নিজস্ব কর্মীবাহিনী রয়েছে। অনুসারীদের কাছে ‘পীযূষ দা’ হিসেবে পরিচিত মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক এ যুগ্ম আহ্বায়কের রাজত্ব পরিচালিত হয় নগরীর মির্জাজাঙ্গাল এলাকা থেকে। এ এলাকার সকল কর্মকাণ্ডেরই নিয়ন্ত্রণ পীযূষ কান্তি ও তার বাহিনীর হাতে। দখল ও টেন্ডারবাজির ক্ষেত্রে এ বাহিনীর ‘সুনাম’ নগরজুড়েই।
জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন খান যখন ছাত্রলীগের নেতা তখন থেকেই তার ছোট্ট নাম ‘নাসির ভাই’। কর্পোরেট এলাকা হিসেবে পরিচিত নগরীর তালতলায় এক নামেই তিনি পরিচিত। নিজে ক্লিন ইমেজ গড়ে তুলতে সচেষ্ট হলেও তার কর্মীদের পরিচয় কিন্তু মোটেও ‘ক্লিন’ নয়। টেণ্ডারবাজি-চাঁদাবাজির অভিযোগ তো আছেই, তার বাহিনীর বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিনতাই পরিচালনারও।
নগরীর টিলাগড় এলাকায় থেকে ছাত্রলীগের রাজনীতি করতে হলে নাম লেখাতে হবে ‘রণজিৎ দা’ ও ‘আজাদ ভাই’য়ের যুগল গ্রুপে- দীর্ঘ দিন ধরে ছোট ভাইরা এমন শর্তের জালেই বাঁধা ছিলেন। জেলা আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক রণজিৎ সরকারই হচ্ছেন ছোট ভাইদের ‘রণজিৎ দা’। আর ‘আজাদ ভাই’ হচ্ছেন সিটি কাউন্সিলর আজাদুর রহমান আজাদ। তবে আধিপত্যের ঠাণ্ডা লড়াইয়ে ভেঙে গেছে আজাদ-রণজিৎ জুটি। এখন আলাদা আলাদা ভাবে নিজস্ব ‘সাম্রাজ্য’ সামলান তারা। এ দুই গ্রুপের নিয়ন্ত্রণাধীন এলাকায় সিলেটের ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমসি কলেজ ও সরকারি কলেজের অবস্থান। চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজিসহ নানা কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি তাই ভর্তি বাণিজ্যও ‘সামলাতে’ হয় দু’টো গ্রুপকে। এমসি কলেজ হোস্টেলে অগ্নিসংযোগে সম্পৃক্ততার অভিযোগও তাদের বিরুদ্ধে।
রণজিৎ-আজাদের ছায়ায় ছায়ায় টিলাগড়ে ছাত্রলীগের আরও একটি উপগ্রুপও বেড়ে উঠেছে। বড় ভাই-দাদাদের অবহেলার শোধ নিতেই জোট বেঁধেছেন জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি পঙ্কজ পুরকায়স্থ ও সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক বাবলা চৌধুরী। ছোট ভাইরা ভিড়ছেন পঙ্কজ-বাবলা গ্রুপেও। এমসি কলেজ হোস্টেলে অগ্নিসংযোগের দায়ে অভিযুক্ত ‘পঙ্কজ-বাবলা’র অনুসারীদের ‘খ্যাতি’ রয়েছে অস্ত্রবাজি, দখল ও টেন্ডারবাজিতেও।
নগরীর সুবিদবাজার-পাঠানটুলা-মদিনা মার্কেট এলাকাজুড়ে ছড়িয়ে থাকা ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা পরিচিত সোনার বাংলা গ্রুপ নামে। গ্রুপটি নিয়ন্ত্রণ করছেন জেলা ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক সেলিম আহমদ সেলিম, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা সুলতান আলী মনসুর ও জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আফতাব হোসেন খান। তবে তারা অনুসারীদের কাছে সেলিম ভাই-মনসুর ভাই-আফতাব ভাই হিসেবেই পরিচিত। এছাড়া ‘আফতাব ভাই’ এককভাবে নিয়ন্ত্রণ করেন পীরমহল্লার ছোট ভাইদেরও।
No comments