প্রধানমন্ত্রী রাজনীতিকে কলুষিত করছেন -সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি
প্রধানমন্ত্রী
শেখ হাসিনা সংবাদ সম্মেলনে চিরাচরিত রুচিহীন ভাষায় মিথ্যাচার করেছেন বলে
মন্তব্য করেছে বিএনপি। দলটি অভিযোগ করেছে, বিরোধী জোট নেতা খালেদা জিয়ার
প্রতি প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য ছিল ব্যক্তিগত প্রতিহিংসামূলক। এছাড়া মার্কিন
মন্ত্রী ও রাষ্ট্রদূত সম্পর্কে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফের
মন্তব্যের তীব্র সমালোচনা করে দলটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তার এই বক্তব্য
শুধু কূটনৈতিক শিষ্টাচারবহির্ভূতই নয়, এতে বর্ণবাদের ইঙ্গিত রয়েছে। এতে
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্কে ঘাটতি দেখা দেবে।
প্রধানমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলনের প্রতিক্রিয়া জানাতে গতকাল বিএনপি
চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত
মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও ভাইস চেয়ারম্যান শমসের মবিন চৌধুরী
এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের সমালোচনা করে মির্জা আলমগীর বলেন,
প্রধানমন্ত্রী চিরাচরিত ভাষায় খালেদা জিয়া সম্পর্কে রুচিহীন ভাষায় কথা
বলেছেন এবং ব্যক্তিগত প্রতিহিংসার বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছেন। চিরাচরিত
বাচনভঙ্গি, রুচিহীন, শিষ্টাচার বহির্ভূত আচরণ করে বাংলাদেশের রাজনীতিকে
কলুষিত করছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, তার পায়ের নিচে মাটি শক্ত। এক্ষেত্রে
আমাদের বক্তব্য হলো- যদি মাটি এতই শক্ত হয়ে থাকে, তাহলে ক্ষমতা ছেড়ে দিন।
সবার কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন দিন। তখন দেখা যাবে কার পায়ের তলার মাটি
শক্ত। মির্জা আলমগীর বলেন, ষড়যন্ত্র করে ক্ষমতায় যাওয়ার ইতিহাস বিএনপির
নেই। দেশের রাষ্ট্র ক্ষমতায় বসতে দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার ষড়যন্ত্রের দরকার
হয় না। তিনি রাজনীতিতে উড়ে এসে জুড়ে বসেননি। অথবা অন্য কারও মতো বিদেশে
পালিয়ে থেকে বিশেষ মহলের সহযোগিতা নিয়েও ক্ষমতায় বসেননি। ১৯৮২ সালে
বিচারপতি আবদুস সাত্তারকে বন্দুকের মুখে হটিয়ে তৎকালীন সেনাপ্রধান এরশাদের
ক্ষমতা দখল এবং ২০০৭ সালে ওয়ান-ইলেভেন সৃষ্টি ও জরুরি অবস্থা জারির মাধ্যমে
অগণতান্ত্রিক শক্তির ক্ষমতায় যাওয়ায় শেখ হাসিনার সমর্থন ছিল। তিনি বলেন,
ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত বরাবরই আওয়ামী লীগ করে আসছে। এজন্য সব কিছুতেই তারা
ষড়যন্ত্রের গন্ধ খুঁজে পায়। আওয়ামী লীগ দুর্নীতিকে জাতীয়করণ করেছে অভিযোগ
করে মির্জা আলমগীর বলেন, শুধু দুর্নীতিকে জাতীয়করণ করেই ক্ষান্ত হয়নি
আওয়ামী লীগ, তাকে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি ও বৈধতাও দিয়েছে তারা। হাজার হাজার
কোটি টাকার দুর্নীতিকে আওয়ামী লীগ দুর্নীতি মনে করে না। সরকারের লুটপাটের
বিরুদ্ধে তথ্য-উপাত্ত উপস্থাপন করায় প্রধানমন্ত্রী টিআইবির বিরুদ্ধে
ব্যবস্থা গ্রহণেরও হুমকি দিয়েছেন। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী টিআইবির
প্রতিবেদন সম্পর্কে যে বক্তব্য দিয়েছেন, তা প্রচ্ছন্নভাবে হুমকি দেয়ার মতো।
সংস্থার আয়-ব্যয়ের হিসাব দেখা হবে বলে তিনি এ হুমকি দিয়েছেন। এর মাধ্যমে
তিনি বোঝাতে চান, টিআইবি এ ধরনের প্রতিবেদন আবার করলে সরকার ব্যবস্থা নেবে।
এ সময় তিনি বিমানবন্দরে সোনা চোরাচালানের সঙ্গে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর
কাছের লোকজন জড়িত বলে অভিযোগ করেন। জিয়াউর রহমানের আমলে দুর্নীতির শুরু-
প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে মির্জা আলমগীর বলেন, শেখ
হাসিনার এই বক্তব্য শুনে বাংলাদেশের মানুষ হাসবে। কারণ জিয়াউর রহমানের সততা
দেশের মানুষের কাছে কিংবদন্তির মতো। আওয়ামী লীগ দুর্নীতি ও দুঃশাসনের জনক।
অতীতে আওয়ামী লীগের দুর্নীতির কারণে দেশে দুর্ভিক্ষ হয়েছিল। আর এবার শেখ
হাসিনা দুর্নীতিকে রাষ্ট্রীয়করণ করেছেন। সাবেক মন্ত্রী লতিফ সিদ্দিকীর
চাকরি পবিত্র হজ ও রাসুল (সা.) সম্পর্কে কটূক্তির কারণে যায়নি দাবি করে
মির্জা আলমগীর বলেন, পত্র-পত্রিকায় এসেছে শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়
সম্পর্কে কথা বলার কারণেই তার চাকরি হারিয়েছেন। তিনি তার বক্তব্যে
রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে জয়ের বেতন গ্রহণের কথা জাতির কাছে প্রকাশ করেছেন।
আমরা এ ব্যাপারে জানতে চেয়েছি। কিন্তু সরকার কোন ব্যাখ্যা না দিলেও সমপ্রতি
একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে জয়কে অবৈতনিক উপদেষ্টা করে। তাহলে এতদিন জয় কি
বৈতনিক ছিলেন? বৈতনিক থাকলে রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে কত টাকা নিয়েছেন? এটা
সরকারকে প্রকাশ করার দাবি জানাচ্ছি। আমলাদের সঙ্গে খালেদা জিয়ার বৈঠকের খবর
মিথ্যা বলে উড়িয়ে দিয়ে মির্জা আলমগীর বলেন, দেশের জনগণের দৃষ্টিকে ভিন্ন
দিকে সরিয়ে দিতে এ রকম ষড়যন্ত্রের কথা বলে তারা বিভ্রান্ত করে-
বৃহস্পতিবারের বৈঠকের বিষয়টিও তেমনি একটি। ওই বৈঠক নিয়ে গণমাধ্যমের খবরের
কোন ভিত্তি নেই। গুলশানের কার্যালয়ে সব সময় মিটিং হয়। প্রতিদিন দলের
উপদেষ্টারা আসেন। কিন্তু বৃহস্পতিবারের মিটিং নিয়ে পত্রপত্রিকা ও গণমাধ্যমে
যেসব সংবাদ বেরিয়েছে এর কোন সত্যতা নেই। গণমাধ্যম পূর্ণ স্বাধীনতা ভোগ
করছে- প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্যের সমালোচনা করে মির্জা আলমগীর বলেন,
সংবাদপত্রের স্বাধীনতা থাকলে আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে
জেলে থাকতে হতো না। কেবল তাই নয়, অনেক সাংবাদিককে খুন ও নির্যাতন করা
হয়েছে। চ্যানেল ওয়ান, দিগন্ত টিভি, ইসলামিক টিভিসহ বিভিন্ন সংবাদপত্র বন্ধ
করে দেয়া হয়েছে। ফেসবুকে এক লাইন লেখার অপরাধে একজন সাবেক ঊর্ধ্বতন সেনা
কর্মকর্তার বিচার চলছে। একজন ছাত্র সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলার জন্য তাকে
সাত বছরের জেল দেয়া হয়েছে। এ হচ্ছে দেশে বাকস্বাধীনতার নমুনা। ৬ই ডিসেম্বর
স্বৈরাচার এরশাদ পতন দিবস স্মরণ করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব বলেন, আজ
২৪ বছর পর নব্য স্বৈরাচার জাতির কাঁধের ওপর চেপে বসেছে। প্রতিনিয়ত মানুষের
গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ করে দেশকে একদলীয় শাসনের দিকে ঠেলে দিচ্ছে তারা।
বাংলাদেশে বর্তমানে যে গভীর রাজনৈতিক সংকট বিরাজ করছে তা থেকে উত্তরণের
একমাত্র পথ নির্বাচন।
প্রধানমন্ত্রীর দুটি সফর ও সৈয়দ আশরাফের বক্তব্যের বিষয়ে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শমসের মবিন চৌধুরী বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিশা দেশাই ও বাংলাদেশে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত ড্যান মজিনা সম্পর্কে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের বক্তব্য শুধু কূটনৈতিক শিষ্টাচার বিবর্জিতই নয়, এতে বর্ণবিদ্বেষের ইঙ্গিত রয়েছে। বাংলাদেশের মানুষ চিরদিন বর্ণবাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে আসছে। সরকারের তরফ থেকে আশরাফের বক্তব্যের কোন প্রতিক্রিয়া না আসায় প্রমাণিত হয়েছে তারা বর্ণবাদের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। শমসের মবিন বলেন, আশরাফের এ বক্তব্যে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক রাষ্ট্রদূত উইলিয়াম বি মাইলাম ইতিমধ্যেই তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, সৈয়দ আশরাফের বক্তব্য তার একক বক্তব্য নয়। এটা আওয়ামী লীগের দলীয় বক্তব্য। তার এই বক্তব্যের ফলে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্কে দীর্ঘমেয়াদি একটা প্রভাব পড়তে পারে। কোন দেশ পাশে না থাকলে আমরা মরে যাবো না- প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় সাবেক এ কূটনীতিক বলেন, দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে শুধু অর্থনৈতিক সম্পর্ক নয়, আরও অনেক বিষয় থাকে। সরকার যখন এ ধরনের মিথ্যাচার বা এ ধরনের আচরণ করে, তখন কূটনৈতিক সম্পর্কে ঘাটতি দেখা দেয়। সরকারের এ ধরনের অদূরদর্শী আচরণের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত হবে। সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, মিথ্যাচারের কূটনীতি বন্ধ করুন। এটি কারও কাম্য নয়। শমসের মবিন বলেন, সার্ক সম্মেলনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদির সঙ্গে সাক্ষাতে শেখ হাসিনাকে তিস্তা পানি বণ্টন নিয়ে কোন সমাধান দেয়া হয়নি। যা দেয়া হয়েছে, তা শুধু আশ্বাস। তবে ছিটমহল নিয়ে একটি প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এ জন্য আমরা সাধুবাদ জানাই। এটা আসলে বিগত খালেদা সরকারের দৃঢ় কূটনৈতিক প্রচেষ্টার ধারাবাহিক ফল। তিনি বলেন, সমপ্রতি মালয়েশিয়ায় আমাদের শ্রমশক্তি রপ্তানি নিয়ে চুক্তির বিষয়ে শেখ হাসিনা উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন। মালয়েশিয়ায় আমাদের লোকদের সমস্যার মূলে আওয়ামী লীগ। অবৈধভাবে সেখানে আমাদের হাজার হাজার শ্রমিকের যাওয়ার পেছনে আওয়ামী লীগের লোকজনই জড়িত। সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির সহ-দপ্তর সম্পাদক আবদুল লতিফ জনি ও আসাদুল করিম শাহিন উপস্থিত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রীর দুটি সফর ও সৈয়দ আশরাফের বক্তব্যের বিষয়ে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শমসের মবিন চৌধুরী বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিশা দেশাই ও বাংলাদেশে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত ড্যান মজিনা সম্পর্কে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের বক্তব্য শুধু কূটনৈতিক শিষ্টাচার বিবর্জিতই নয়, এতে বর্ণবিদ্বেষের ইঙ্গিত রয়েছে। বাংলাদেশের মানুষ চিরদিন বর্ণবাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে আসছে। সরকারের তরফ থেকে আশরাফের বক্তব্যের কোন প্রতিক্রিয়া না আসায় প্রমাণিত হয়েছে তারা বর্ণবাদের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। শমসের মবিন বলেন, আশরাফের এ বক্তব্যে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক রাষ্ট্রদূত উইলিয়াম বি মাইলাম ইতিমধ্যেই তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, সৈয়দ আশরাফের বক্তব্য তার একক বক্তব্য নয়। এটা আওয়ামী লীগের দলীয় বক্তব্য। তার এই বক্তব্যের ফলে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্কে দীর্ঘমেয়াদি একটা প্রভাব পড়তে পারে। কোন দেশ পাশে না থাকলে আমরা মরে যাবো না- প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় সাবেক এ কূটনীতিক বলেন, দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে শুধু অর্থনৈতিক সম্পর্ক নয়, আরও অনেক বিষয় থাকে। সরকার যখন এ ধরনের মিথ্যাচার বা এ ধরনের আচরণ করে, তখন কূটনৈতিক সম্পর্কে ঘাটতি দেখা দেয়। সরকারের এ ধরনের অদূরদর্শী আচরণের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত হবে। সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, মিথ্যাচারের কূটনীতি বন্ধ করুন। এটি কারও কাম্য নয়। শমসের মবিন বলেন, সার্ক সম্মেলনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদির সঙ্গে সাক্ষাতে শেখ হাসিনাকে তিস্তা পানি বণ্টন নিয়ে কোন সমাধান দেয়া হয়নি। যা দেয়া হয়েছে, তা শুধু আশ্বাস। তবে ছিটমহল নিয়ে একটি প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এ জন্য আমরা সাধুবাদ জানাই। এটা আসলে বিগত খালেদা সরকারের দৃঢ় কূটনৈতিক প্রচেষ্টার ধারাবাহিক ফল। তিনি বলেন, সমপ্রতি মালয়েশিয়ায় আমাদের শ্রমশক্তি রপ্তানি নিয়ে চুক্তির বিষয়ে শেখ হাসিনা উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন। মালয়েশিয়ায় আমাদের লোকদের সমস্যার মূলে আওয়ামী লীগ। অবৈধভাবে সেখানে আমাদের হাজার হাজার শ্রমিকের যাওয়ার পেছনে আওয়ামী লীগের লোকজনই জড়িত। সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির সহ-দপ্তর সম্পাদক আবদুল লতিফ জনি ও আসাদুল করিম শাহিন উপস্থিত ছিলেন।
No comments