চোরাচালানের টাকায় সম্পদের পাহাড়- পান্থপথে বহুতল ভবন, চড়েন মার্সিডিজে by নুরুজ্জামান লাবু
স্বর্ণ চোরাচালানের টাকায় রীতিমতো সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছেন বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের উপ-মহাব্যবস্থাপক এমদাদ হোসেন। ঢাকার কেন্দ্রস্থল পান্থপথে গড়ে তুলেছেন বহুতল ভবন। গুলশানের ডিসিসি মার্কেট ও যমুনা ফিউচার পার্কে রয়েছে দু’টি বিদেশী কসমেটিকসের দোকান। নামে-বেনামে রয়েছে ফ্ল্যাট ও ব্যাংক ব্যালেন্স। এসবই হয়েছে চোরাচালানের টাকায়। এর মধ্যে স্বর্ণ চোরাচালান থেকেই ‘কাঁচা টাকা’ এসেছে বেশি। পিছিয়ে নেই অন্যরাও। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের চেয়ারম্যানের ‘ধর্মপুত্র’ পলাশও কোটি কোটি টাকার মালিক। ঢাকায় নিজের বাড়ি-গাড়ি রয়েছে চিফ অব প্ল্যানিং অ্যান্ড শিডিউলিংয়ের ক্যাপ্টেন আবু মো. আসলাম শহীদ এবং ম্যানেজার (শিডিউলিং) তোজাম্মেল হোসেনেরও। গোয়েন্দা সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। এদিকে গোয়েন্দা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বিমানবন্দরের স্বর্ণ চোরাচালানের সঙ্গে অন্তত এক ডজন মানি এক্সচেঞ্জ ব্যবসায়ী জড়িত বলে তারা তথ্য পেয়েছেন। তারা মানি এক্সচেঞ্জ ব্যবসার আড়ালে মূলত স্বর্ণ চোরাচালান করেই আসছিল।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সিনিয়র সহকারী কমিশনার (এসি) মিনহাজুল আবেদীন জানান, গ্রেপ্তারকৃতরা দীর্ঘদিন ধরে স্বর্ণ চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত। চোরাচালান থেকে তারা প্রতিমাসে বিপুল অঙ্কের অর্থ আয় করতো। তাদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। ডিবি’র এই কর্মকর্তা বলেন, বিমানবন্দরে স্বর্ণ চোরাচালানের সঙ্গে আরও যাদের নাম এসেছে তাদের গ্রেপ্তারের জন্য অভিযান চালানো হচ্ছে। শিগগিরই আরও কিছু চোরাচালানকারীকে গ্রেপ্তার করা হবে।
গোয়েন্দা সূত্র জানায়, বিমান বাংলাদেশ-এর ডিজিএম এমদাদ হোসেন স্বর্ণ চোরাচালানের অন্যতম নিয়ন্ত্রক। ফ্লাইট সার্ভিসের ডিজিএম হিসেবে তিনিই মূলত কোন ফ্লাইটে কে দায়িত্ব পালন করবেন তা নির্ধারণ করতেন। তাকে সহযোগিতা করতেন চিফ অব প্ল্যানিং অ্যান্ড সিডিউলিংয়ের ক্যাপ্টেন আসলাম শহীদ ও ম্যানেজার (সিডিউলিং) তোজাম্মেল হোসেন। দীর্ঘদিন ধরে তারা বিমানে বাংলাদেশের বিভিন্ন ফ্লাইটের মাধ্যমে স্বর্ণ চোরাচালানকারীদের সহযোগিতা করে আসছিলেন। বিনিময়ে প্রতি মাসে আয় করতেন কোটি কোটি টাকা। এসব টাকা বিমানের সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ভাগ-বাটোয়ারা হতো। কমিশনের একটি অংশ যেতো ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষ এক নেতাসহ সাত রাজনীতিকের কাছে। সূত্র জানায়, মাঝারি মানের পদে থেকেও বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ডিজিএম এমদাদ একমাত্র স্বর্ণ চোরাচালানের টাকায় কোটি কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন। ২০০৩-০৪ সালে তিনি রাজধানীর পান্থপথের ৪৪/এফ/৬ নম্বর প্লটে বহুতল অট্টালিকা গড়ে তোলেন। এছাড়া প্রায় এক যুগ আগেই তিনি গুলশানের ডিসিসি মার্কেটে ‘মড’ নামে একটি কসমেটিক্সের দোকান দেন। যমুনা ফিউচার পার্ক চালু হওয়ার পর সেখানেও দোকান কিনে ‘মড’-এর শাখা খোলেন। এসব দোকানে বিদেশ থেকে আনা চোরাচালানের কসমেটিক্স সামগ্রী। বিশেষ করে কেবিন ক্রু ও পাইলটরা বিদেশ থেকে নামী-দামি ব্র্যান্ডের কসমেটিক্স এনে তার দোকানে সরবরাহ করতো। সূত্র জানায়, আগে সাধারণ প্রাইভেটকার চালালেও ২০১০ সালে এমদাদ কোটি টাকা দিয়ে কেনেন একটি মার্সিডিজ বেঞ্জ গাড়ি। সেই গাড়িতেই তিনি বিমানের অফিসে যাতায়াত করতেন। এছাড়া নামে-বেনানে আরও প্রচুর সম্পত্তি রয়েছে। গোয়েন্দা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এমদাদের নামে আয় বহির্ভূত প্রচুর পরিমাণে ব্যাংক ব্যালান্স রয়েছে স্ত্রী-সন্তানদের নামে। এছাড়া ঢাকার অভিজাত এলাকায় একাধিক ফ্ল্যাটও রয়েছে। কিন্তু চতুর এমদাদ এসব সম্পদের কথা সহজেই স্বীকার করতে চাইছেন না। তার ভয়, চোরাচালানের মামলার আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের জন্য দুদক তার পিছু নিতে পারে।
গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, ফ্লাইট সার্ভিসের একই বিভাগে ডিজিএম এমদাদের নিচের পদে কর্মরত ম্যানেজার (সিডিউলিং) তোজাম্মেল হোসেন খানেরও ঢাকার উত্তরার ৫ নম্বর সেক্টরের ১/এ সড়কের ১ নম্বর প্লটে ছয় তলা ভবন রয়েছে। স্বর্ণ চোরাচালানের টাকায় তিনি এই বাড়ি নির্মাণ করেছেন। দামি গাড়ি রয়েছে তারও। সন্তানেরা সবাই বিদেশে লেখাপড়া করে বলে গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের কাছে স্বীকার করেছে। অপরদিকে চিফ অব প্ল্যানিং অ্যান্ড সিডিউলিংয়ের ক্যাপ্টেন আসলাম শহীদ চোরাচালানের টাকায় বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার সি-ব্লকের ৪৫ নম্বর প্লটে ছয়তলা বাড়ি তৈরি করছেন। বাড়ি তৈরি কাজ এখনও চলছে। চার তলা পর্যন্ত সম্পন্ন হয়েছে। দামি গাড়ি ও বসুন্ধরা এলাকাতেই একাধিক ফ্ল্যাট রয়েছে তারও। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের চেয়ারম্যান এয়ার মার্শাল (অব.) জামাল উদ্দিনের কথিত ‘ধর্মপুত্র’ পলাশও কোটি কোটি টাকার মালিক। রাজধানীর সিদ্ধেশ্বরী কলেজ থেকে এসএসসি পাস পলাশ চোরাচালানের টাকায় কোটিপতি বনে গেছেন। নিজের কেনা ফ্ল্যাট থাকলেও সেখানে থাকেন না তিনি। উত্তরার এক নম্বর সেক্টরের দুই নম্বর সড়কের তিন নম্বর প্লটের যেই ফ্ল্যাটে তিনি থাকেন তারা ভাড়াই পরিশোধ করতে হয় মাসিক ৪০ হাজার টাকা। স্ত্রী নূরজাহান কেবিন ক্রু হিসেবে কাজ করেন। নিজে জাল এইচএসসি’র সনদ ও প্রভাব খাটিয়ে ফ্লাইং ক্লাবের মেম্বার হয়েছিলেন। কিন্তু জাল সনদের বিষয়টি ফাঁস হয়ে গেলে মেম্বারশিপ বাতিল হয়। কিন্তু কুমিল্লার একই এলাকার এয়ার মার্শাল (অব.) জামাল উদ্দিন বিমানের চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার পর তার কপাল খুলে যায়। বিমানে একচ্ছত্র আধিপত্য প্রভাব বিস্তার করেন তিনি। বিমানকর্মীদের পদোন্নতি, নিয়োগ-বদলি, শাস্তি সবখানেই তার হাত ছিল। ঠিকাদারির কোন প্রতিষ্ঠান না থাকলেও নিজেকে ঠিকাদার হিসেবে পরিচয় দিতেন। তার প্রধান কাজই ছিল চোরাচালানকারীদের সঙ্গে বিমানের লোকজনের যোগসূত্র ঘটিয়ে দেয়া। এছাড়া গত কয়েক বছরে নাইজেরিয়াভিত্তিক নিম্নমানের উড়োজাহাজ লিজে আনার ব্যাপারে মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকায় ছিলেন পলাশ। এছাড়া কাবো উড়োজাহাজ ভাড়া নেয়াতেও তিনিই মধ্যস্থতার ভূমিকা পালন করেন। চোরাচালানের পাশাপাশি কেবিন ক্রু নিয়োগ বাণিজ্যের হোতাও ছিলেন এই পলাশ। এমনকি সমপ্রতি ক্যাপ্টেন শহীদের চাকরির মেয়াদ বাড়ানোর জন্য তার মধ্যস্থতাতেই বিমানের এক শীর্ষ কর্তা এবং বোর্ড মেম্বারের কাছে ৭০ লাখ টাকা দিয়েছেন বলে জানা গেছে।
জড়িত এক ডজন মানি এক্সচেঞ্জ ব্যবসায়ীও: বিমানবন্দরের স্বর্ণ চোরাচালানের সঙ্গে অন্তত এক ডজন মানি এক্সচেঞ্জ ব্যবাসয়ীও জড়িত বলে তথ্য পেয়েছেন গোয়েন্দারা। এসব মানি এক্সচেঞ্জ ব্যবসায়ী বিদেশী মুদ্রা কেনাবেচার আড়ালে প্রধানত স্বর্ণ চোরাচালনকারী হিসেবে কাজ করে। এর আগে গোয়েন্দা পুলিশ পল্টনের আমিন মানি এক্সচেঞ্জের শামসুদ্দিন ও সিটি মানি এক্সচেঞ্জের কামরুলকে অবৈধ স্বর্ণের বারসহ গ্রেপ্তার করে। বিমানের তিন শীর্ষ কর্মকর্তার সঙ্গে এবার উত্তরার ফারহান মানি এক্সচেঞ্জ নামে আরেকটি প্রতিষ্ঠানের মালিক হারুণকে গ্রেপ্তার করা হয়। গোয়েন্দা পুলিশের একজন কর্মকর্তা জানান, মানি এক্সচেঞ্জ ব্যবসায়ীরা চোরাচালানের স্বর্ণ সিন্ডিকেটের কাছে কিনে নেয়। পরে সেই স্বর্ণ ভারতে পাচার করে দেয়। কমদামে কিনে বেশি দামে বিক্রি করে বিপুল অর্থ আয় করে তারা। পুরো টাকা লেনদেন হয় দুবাইয়ে বসে। গোয়েন্দা সূত্র জানায়, উত্তরা, বিমানন্দর, ও পল্টন-মতিঝিল কেন্দ্রিক মানি এক্সচেঞ্জ ব্যবসায়ীদের মধ্যে অন্তত এক ডজন প্রতিষ্ঠান স্বর্ণ চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত। এর মধ্যে ঢাকা, সিটি, প্যারামাউন্ট, অঙ্কন, আলামীন, আমিন, ভাইভাই, নিবেদিতা, নাইটিঙ্গেল, ফারহান মানি এক্সচেঞ্জ উল্লেখযোগ্য। গোয়েন্দা সূত্র জানায়, এসব মানি এক্সচেঞ্জ ব্যবসায়ীদের নজরদারির মধ্যে রাখা হয়েছে। যে কোন সময় তাদের গ্রেপ্তার করা হতে পারে।
উল্লেখ্য, গত ১২ই নভেম্বর বাংলাদেশ বিমানের বিজি-০৪৬ ফ্লাইটের স্টুয়ার্ড মাজহারুল ইসলাম রাসেল দুই কেজি স্বর্ণসহ কাস্টমস কর্তৃপক্ষের কাছে হাতেনাতে ধরা পড়ে। গোয়েন্দা পুলিশ তাকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করলে সে বিমান বাংলাদেশের কারা কারা স্বর্ণ চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত তা ফাঁস করে দেয়। গত সোমবার রাসেল আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়। ওই জবানবন্দির তথ্য অনুযায়ী মঙ্গলবার রাতে প্রথমে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট সার্ভিসের উপ-মহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) এমদাদ হোসেনকে উত্তরার বাসা থেকে আটক করা হয়। পরে তার দেয়া তথ্য অনুযায়ী বিমান বাংলাদেশের চিফ অব প্ল্যানিং অ্যান্ড সিডিউলিংয়ের ক্যাপ্টেন আবু মো. আসলাম শহীদ, ম্যানেজার (সিডিউলিং) তোজাম্মেল হোসেন, ঠিকাদার মাহমুদুল হক পলাশ এবং উত্তরার ‘ফারহান মানি এক্সচেঞ্জ’-এর মালিক হারুন অর রশীদকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃতদের তিনদিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে গোয়েন্দা পুলিশ।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সিনিয়র সহকারী কমিশনার (এসি) মিনহাজুল আবেদীন জানান, গ্রেপ্তারকৃতরা দীর্ঘদিন ধরে স্বর্ণ চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত। চোরাচালান থেকে তারা প্রতিমাসে বিপুল অঙ্কের অর্থ আয় করতো। তাদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। ডিবি’র এই কর্মকর্তা বলেন, বিমানবন্দরে স্বর্ণ চোরাচালানের সঙ্গে আরও যাদের নাম এসেছে তাদের গ্রেপ্তারের জন্য অভিযান চালানো হচ্ছে। শিগগিরই আরও কিছু চোরাচালানকারীকে গ্রেপ্তার করা হবে।
গোয়েন্দা সূত্র জানায়, বিমান বাংলাদেশ-এর ডিজিএম এমদাদ হোসেন স্বর্ণ চোরাচালানের অন্যতম নিয়ন্ত্রক। ফ্লাইট সার্ভিসের ডিজিএম হিসেবে তিনিই মূলত কোন ফ্লাইটে কে দায়িত্ব পালন করবেন তা নির্ধারণ করতেন। তাকে সহযোগিতা করতেন চিফ অব প্ল্যানিং অ্যান্ড সিডিউলিংয়ের ক্যাপ্টেন আসলাম শহীদ ও ম্যানেজার (সিডিউলিং) তোজাম্মেল হোসেন। দীর্ঘদিন ধরে তারা বিমানে বাংলাদেশের বিভিন্ন ফ্লাইটের মাধ্যমে স্বর্ণ চোরাচালানকারীদের সহযোগিতা করে আসছিলেন। বিনিময়ে প্রতি মাসে আয় করতেন কোটি কোটি টাকা। এসব টাকা বিমানের সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ভাগ-বাটোয়ারা হতো। কমিশনের একটি অংশ যেতো ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষ এক নেতাসহ সাত রাজনীতিকের কাছে। সূত্র জানায়, মাঝারি মানের পদে থেকেও বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ডিজিএম এমদাদ একমাত্র স্বর্ণ চোরাচালানের টাকায় কোটি কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন। ২০০৩-০৪ সালে তিনি রাজধানীর পান্থপথের ৪৪/এফ/৬ নম্বর প্লটে বহুতল অট্টালিকা গড়ে তোলেন। এছাড়া প্রায় এক যুগ আগেই তিনি গুলশানের ডিসিসি মার্কেটে ‘মড’ নামে একটি কসমেটিক্সের দোকান দেন। যমুনা ফিউচার পার্ক চালু হওয়ার পর সেখানেও দোকান কিনে ‘মড’-এর শাখা খোলেন। এসব দোকানে বিদেশ থেকে আনা চোরাচালানের কসমেটিক্স সামগ্রী। বিশেষ করে কেবিন ক্রু ও পাইলটরা বিদেশ থেকে নামী-দামি ব্র্যান্ডের কসমেটিক্স এনে তার দোকানে সরবরাহ করতো। সূত্র জানায়, আগে সাধারণ প্রাইভেটকার চালালেও ২০১০ সালে এমদাদ কোটি টাকা দিয়ে কেনেন একটি মার্সিডিজ বেঞ্জ গাড়ি। সেই গাড়িতেই তিনি বিমানের অফিসে যাতায়াত করতেন। এছাড়া নামে-বেনানে আরও প্রচুর সম্পত্তি রয়েছে। গোয়েন্দা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এমদাদের নামে আয় বহির্ভূত প্রচুর পরিমাণে ব্যাংক ব্যালান্স রয়েছে স্ত্রী-সন্তানদের নামে। এছাড়া ঢাকার অভিজাত এলাকায় একাধিক ফ্ল্যাটও রয়েছে। কিন্তু চতুর এমদাদ এসব সম্পদের কথা সহজেই স্বীকার করতে চাইছেন না। তার ভয়, চোরাচালানের মামলার আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের জন্য দুদক তার পিছু নিতে পারে।
গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, ফ্লাইট সার্ভিসের একই বিভাগে ডিজিএম এমদাদের নিচের পদে কর্মরত ম্যানেজার (সিডিউলিং) তোজাম্মেল হোসেন খানেরও ঢাকার উত্তরার ৫ নম্বর সেক্টরের ১/এ সড়কের ১ নম্বর প্লটে ছয় তলা ভবন রয়েছে। স্বর্ণ চোরাচালানের টাকায় তিনি এই বাড়ি নির্মাণ করেছেন। দামি গাড়ি রয়েছে তারও। সন্তানেরা সবাই বিদেশে লেখাপড়া করে বলে গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের কাছে স্বীকার করেছে। অপরদিকে চিফ অব প্ল্যানিং অ্যান্ড সিডিউলিংয়ের ক্যাপ্টেন আসলাম শহীদ চোরাচালানের টাকায় বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার সি-ব্লকের ৪৫ নম্বর প্লটে ছয়তলা বাড়ি তৈরি করছেন। বাড়ি তৈরি কাজ এখনও চলছে। চার তলা পর্যন্ত সম্পন্ন হয়েছে। দামি গাড়ি ও বসুন্ধরা এলাকাতেই একাধিক ফ্ল্যাট রয়েছে তারও। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের চেয়ারম্যান এয়ার মার্শাল (অব.) জামাল উদ্দিনের কথিত ‘ধর্মপুত্র’ পলাশও কোটি কোটি টাকার মালিক। রাজধানীর সিদ্ধেশ্বরী কলেজ থেকে এসএসসি পাস পলাশ চোরাচালানের টাকায় কোটিপতি বনে গেছেন। নিজের কেনা ফ্ল্যাট থাকলেও সেখানে থাকেন না তিনি। উত্তরার এক নম্বর সেক্টরের দুই নম্বর সড়কের তিন নম্বর প্লটের যেই ফ্ল্যাটে তিনি থাকেন তারা ভাড়াই পরিশোধ করতে হয় মাসিক ৪০ হাজার টাকা। স্ত্রী নূরজাহান কেবিন ক্রু হিসেবে কাজ করেন। নিজে জাল এইচএসসি’র সনদ ও প্রভাব খাটিয়ে ফ্লাইং ক্লাবের মেম্বার হয়েছিলেন। কিন্তু জাল সনদের বিষয়টি ফাঁস হয়ে গেলে মেম্বারশিপ বাতিল হয়। কিন্তু কুমিল্লার একই এলাকার এয়ার মার্শাল (অব.) জামাল উদ্দিন বিমানের চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার পর তার কপাল খুলে যায়। বিমানে একচ্ছত্র আধিপত্য প্রভাব বিস্তার করেন তিনি। বিমানকর্মীদের পদোন্নতি, নিয়োগ-বদলি, শাস্তি সবখানেই তার হাত ছিল। ঠিকাদারির কোন প্রতিষ্ঠান না থাকলেও নিজেকে ঠিকাদার হিসেবে পরিচয় দিতেন। তার প্রধান কাজই ছিল চোরাচালানকারীদের সঙ্গে বিমানের লোকজনের যোগসূত্র ঘটিয়ে দেয়া। এছাড়া গত কয়েক বছরে নাইজেরিয়াভিত্তিক নিম্নমানের উড়োজাহাজ লিজে আনার ব্যাপারে মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকায় ছিলেন পলাশ। এছাড়া কাবো উড়োজাহাজ ভাড়া নেয়াতেও তিনিই মধ্যস্থতার ভূমিকা পালন করেন। চোরাচালানের পাশাপাশি কেবিন ক্রু নিয়োগ বাণিজ্যের হোতাও ছিলেন এই পলাশ। এমনকি সমপ্রতি ক্যাপ্টেন শহীদের চাকরির মেয়াদ বাড়ানোর জন্য তার মধ্যস্থতাতেই বিমানের এক শীর্ষ কর্তা এবং বোর্ড মেম্বারের কাছে ৭০ লাখ টাকা দিয়েছেন বলে জানা গেছে।
জড়িত এক ডজন মানি এক্সচেঞ্জ ব্যবসায়ীও: বিমানবন্দরের স্বর্ণ চোরাচালানের সঙ্গে অন্তত এক ডজন মানি এক্সচেঞ্জ ব্যবাসয়ীও জড়িত বলে তথ্য পেয়েছেন গোয়েন্দারা। এসব মানি এক্সচেঞ্জ ব্যবসায়ী বিদেশী মুদ্রা কেনাবেচার আড়ালে প্রধানত স্বর্ণ চোরাচালনকারী হিসেবে কাজ করে। এর আগে গোয়েন্দা পুলিশ পল্টনের আমিন মানি এক্সচেঞ্জের শামসুদ্দিন ও সিটি মানি এক্সচেঞ্জের কামরুলকে অবৈধ স্বর্ণের বারসহ গ্রেপ্তার করে। বিমানের তিন শীর্ষ কর্মকর্তার সঙ্গে এবার উত্তরার ফারহান মানি এক্সচেঞ্জ নামে আরেকটি প্রতিষ্ঠানের মালিক হারুণকে গ্রেপ্তার করা হয়। গোয়েন্দা পুলিশের একজন কর্মকর্তা জানান, মানি এক্সচেঞ্জ ব্যবসায়ীরা চোরাচালানের স্বর্ণ সিন্ডিকেটের কাছে কিনে নেয়। পরে সেই স্বর্ণ ভারতে পাচার করে দেয়। কমদামে কিনে বেশি দামে বিক্রি করে বিপুল অর্থ আয় করে তারা। পুরো টাকা লেনদেন হয় দুবাইয়ে বসে। গোয়েন্দা সূত্র জানায়, উত্তরা, বিমানন্দর, ও পল্টন-মতিঝিল কেন্দ্রিক মানি এক্সচেঞ্জ ব্যবসায়ীদের মধ্যে অন্তত এক ডজন প্রতিষ্ঠান স্বর্ণ চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত। এর মধ্যে ঢাকা, সিটি, প্যারামাউন্ট, অঙ্কন, আলামীন, আমিন, ভাইভাই, নিবেদিতা, নাইটিঙ্গেল, ফারহান মানি এক্সচেঞ্জ উল্লেখযোগ্য। গোয়েন্দা সূত্র জানায়, এসব মানি এক্সচেঞ্জ ব্যবসায়ীদের নজরদারির মধ্যে রাখা হয়েছে। যে কোন সময় তাদের গ্রেপ্তার করা হতে পারে।
উল্লেখ্য, গত ১২ই নভেম্বর বাংলাদেশ বিমানের বিজি-০৪৬ ফ্লাইটের স্টুয়ার্ড মাজহারুল ইসলাম রাসেল দুই কেজি স্বর্ণসহ কাস্টমস কর্তৃপক্ষের কাছে হাতেনাতে ধরা পড়ে। গোয়েন্দা পুলিশ তাকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করলে সে বিমান বাংলাদেশের কারা কারা স্বর্ণ চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত তা ফাঁস করে দেয়। গত সোমবার রাসেল আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়। ওই জবানবন্দির তথ্য অনুযায়ী মঙ্গলবার রাতে প্রথমে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট সার্ভিসের উপ-মহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) এমদাদ হোসেনকে উত্তরার বাসা থেকে আটক করা হয়। পরে তার দেয়া তথ্য অনুযায়ী বিমান বাংলাদেশের চিফ অব প্ল্যানিং অ্যান্ড সিডিউলিংয়ের ক্যাপ্টেন আবু মো. আসলাম শহীদ, ম্যানেজার (সিডিউলিং) তোজাম্মেল হোসেন, ঠিকাদার মাহমুদুল হক পলাশ এবং উত্তরার ‘ফারহান মানি এক্সচেঞ্জ’-এর মালিক হারুন অর রশীদকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃতদের তিনদিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে গোয়েন্দা পুলিশ।
No comments