তদন্ত নিয়ে বিপাকে পুলিশ
রাজশাহী
বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শফিউল ইসলাম হত্যার কারণ
সম্পর্কে এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। বহুল অলোচিত এ ঘটনার তদন্তে র্যাব ও
পুলিশের একাধিক টিম কাজ করলেও কোনো কূলকিনারা পাওয়া যায়নি। হত্যাকাণ্ডে
স্বাধীনতাবিরোধী দল হিসেবে পরিচিত একটি রাজনৈতিক দল নাকি কোনো জঙ্গি সংগঠন
জড়িত তা নিয়েই পুলিশ বেকায়দায় পড়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রগতিশীল শিক্ষকরা
ওই বিতর্কিত রাজনৈতিক দলের প্রতি অভিযোগের আঙুল তুলেছেন। কিন্তু ড. শফিউল
ইসলামের ফেসবুকসহ তার চলাফেরা ও কর্মকাণ্ড বিশ্লেষণ করে পুলিশ জঙ্গি
সংশ্লিষ্টতার জোরাল ইঙ্গিত পাচ্ছে বলে একাধিক সূত্র জানিয়েছে। ড. শফিউল
ইসলাম হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে গ্রেফতার ১১ জনকে দুই দিনের রিমান্ড শেষে
শুক্রবার আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। হত্যার ঘটনায় তাদের কাছ
থেকে কোনো তথ্য পায়নি পুলিশ। তাই ফের তাদের সাত দিনের রিমান্ড আবেদন জানানো
হয়েছে। রোববার রিমান্ড শুনানি হবে। শুক্রবার বিকালে রাজশাহী মহানগর পুলিশ
কমিশনার মো. শামসুদ্দিন যুগান্তরকে বলেন, ‘এখন পর্যন্ত তদন্তে যেসব
তথ্য-উপাত্ত পাওয়া গেছে, তাতে অধ্যাপক শফিউল ইসলাম হত্যাকাণ্ডে জঙ্গি
সম্পৃক্ততার বিষয়টিই বেশি আলোচনায় আসছে। তবে তার ব্যক্তিগত ও পারিবারিক
জীবনের নানা ধরনের দ্বন্দ্ব বা টানাপোড়েনের বিষয়গুলোও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তা
ছাড়া তার পুরনো কোনো ছাত্রের সঙ্গে দ্বন্দ্ব ছিল না কিনা তাও খোঁজখবর
নেয়া হচ্ছে। এ হত্যাকাণ্ডের তদন্ত নিয়ে অন্ধকারে রয়েছে পুলিশ। ক্যাম্পাসে
বিভিন্ন মহল থেকে এ হত্যাকাণ্ডে জামায়াত-শিবিরের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ
উঠেছে।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের
মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মূল্যবোধে বিশ্বাসী শিক্ষকদের সংগঠন ‘প্রগতিশীল
শিক্ষক সমাজ’-এর একাধিক সদস্য অভিযোগ করে বলেছেন, জামায়াত-শিবিরই এ
হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি
মিজানুর রহমান রানা বলেন, অতীতের ন্যায় এবারও মৌলবাদী জামায়াত-শিবিরের
প্রশিক্ষিত ক্যাডাররা এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত।
মঙ্গলবার ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে স্থানীয় সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা জামায়াত-শিবিরের প্রতি ইঙ্গিত করে সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করে বলেন, স্বাধীনতাবিরোধী চক্রই এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত। তবে প্রগতিশীল সমাজের আহ্বায়ক অধ্যাপক জাহিদুল হাসান বলেন, ড. শফিউল ইসলাম ছিলেন প্রগতিশীল একজন মানুষ। যারা তার এই বিশ্বাস বা প্রগতির বাধা তারাই তাকে হত্যা করেছে। তবে এটি জামায়াত-শিবিরের কাজ নাকি জঙ্গিগোষ্ঠীর তা পুলিশকেই তদন্ত করে বের করতে হবে। এ বিষয়ে রাবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক কামরুল হাসান মজুদার বলেন, জামায়াত না জঙ্গি তা আমাদের বিতর্ক নয়, আমরা চাই প্রকৃত খুনিদের অবিলম্বে খুঁজে বের করা হোক।
রাজশাহী মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার সরদার তমিজ উদ্দিন আবারও বলেছেন, ঘটনাস্থল পরিদর্শন ও ঘটনার বর্ণনায় এটি মোটামুটি নিশ্চিত যে, প্রশিক্ষিত জঙ্গিরাই পরিকল্পিতভাবে এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। অধ্যাপক শফিউল প্রচলিত ধর্মীয় ধ্যান-ধারণার বাইরে গিয়ে নানান ব্যক্তিগত আচরণ ও মন্তব্য করেছিলেন। তিনি লালনচর্চার নামে প্রতি সপ্তাহেই বাসায় গানের আসর বসাতেন। তিনি ফেসবুকেও ধর্ম নিয়ে কঠোর সমালোচনা করেছেন। এ কারণে উগ্র জঙ্গিগোষ্ঠীদের টার্গেট হয়ে থাকতে পারেন বলে তদন্তের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তারা ধারণা করছেন।
বৃহস্পতিবার সমাজবিজ্ঞান সমিতি আয়োজিত শোকসভায় নিহতের বোন ওয়াসিম রুমানা বলেন, স্বাধীনতাবিরোধীরাই এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। খুনিদের অবিলম্বে বিচারের আওতায় আনার দাবি জানান তিনি। হত্যাকাণ্ডের জন্য জঙ্গিদের দায়ী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ও নিহত শফিউলের একমাত্র ছেলে সৌমিন শাহরিদ জেভিন ওই শোকসভায় বলেছেন, ‘এটা সম্পূর্ণ জঙ্গি হামলা, মৌলবাদী জঙ্গিগোষ্ঠীর দ্বারা আক্রান্ত হয়েছেন আমার বাবা।’
পুলিশের অপর একটি সূত্র জানায়, পুলিশের প্রাথমিক তদন্তে জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার তথ্য পাওয়া গেলেও ক্যাম্পাসে গড়ে ওঠা আন্দোলন থেকে অভিযোগ করা হয় একটি রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে। তাই নিশ্চিতভাবে কোনো দিকেই এগোচ্ছে না তদন্তকাজ। ফলে এ হত্যাকাণ্ডের তদন্ত নিয়ে অনেকটা রাজনৈতিক চাপে বিপাকে পড়েছে পুলিশ। গ্রেফতারকৃতদের ফের সাত দিনের রিমান্ড আবেদন : ঘটনায় সঙ্গে জড়িত সন্দেহে পুলিশ ইতিমধ্যে জামায়াত-শিবির-সমর্থক অন্তত ১১ জনকে গ্রেফতার করে রিমান্ডে নিয়েছে। শুক্রবার দু’দিনের রিমান্ড শেষে দ্বিতীয় দফা আরও সাত দিনের রিমান্ডের আবেদন জানানো হয়েছে। গ্রেফতারকৃত ১১ জনকে দুই দিনের রিমান্ড শেষে শুক্রবার দুপুরে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও মতিহার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলমগীর হোসেন যুগান্তরকে জানিয়েছেন, দু’দিনের রিমান্ডে আসামিদের কাছে তেমন গুরুত্বপূর্ণ কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। তাই ফের রিমান্ডের আবেদন জানানো হয়েছে। রোববার রিমান্ড শুনানি হবে। এর আগে বুধবার রিমান্ডের শুনানি শেষে মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট-৩ আদালতের বিচারক শারমিন আখতার আসামিদের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এরা হলেন- রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়সংলগ্ন জামায়াত নিয়ন্ত্রিত বিনোদপুর ইসলামিয়া কলেজের অধ্যক্ষ হুমায়ন কবির, ওই কলেজের শিক্ষক ফজলুল হক, চৌদ্দপাই এলাকার পল্লী চিকিৎসক মোশারফ হোসেন, আবদুল্লা আল মাহামুদ, মশিউর রহমান, হাসিবুর রহমান, জিন্নাত আলী, সাইফুদ্দিন, রেজাউল করিম, সাগর ও আরিফ।
১৫ নভেম্বর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক শফিউল ইসলামকে নগরীর চৌদ্দপাই এলাকায় বাসার সামনে কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক এন্তাজুল হক বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে মতিহার থানায় একটি মামলা করেন।
মঙ্গলবার ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে স্থানীয় সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা জামায়াত-শিবিরের প্রতি ইঙ্গিত করে সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করে বলেন, স্বাধীনতাবিরোধী চক্রই এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত। তবে প্রগতিশীল সমাজের আহ্বায়ক অধ্যাপক জাহিদুল হাসান বলেন, ড. শফিউল ইসলাম ছিলেন প্রগতিশীল একজন মানুষ। যারা তার এই বিশ্বাস বা প্রগতির বাধা তারাই তাকে হত্যা করেছে। তবে এটি জামায়াত-শিবিরের কাজ নাকি জঙ্গিগোষ্ঠীর তা পুলিশকেই তদন্ত করে বের করতে হবে। এ বিষয়ে রাবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক কামরুল হাসান মজুদার বলেন, জামায়াত না জঙ্গি তা আমাদের বিতর্ক নয়, আমরা চাই প্রকৃত খুনিদের অবিলম্বে খুঁজে বের করা হোক।
রাজশাহী মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার সরদার তমিজ উদ্দিন আবারও বলেছেন, ঘটনাস্থল পরিদর্শন ও ঘটনার বর্ণনায় এটি মোটামুটি নিশ্চিত যে, প্রশিক্ষিত জঙ্গিরাই পরিকল্পিতভাবে এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। অধ্যাপক শফিউল প্রচলিত ধর্মীয় ধ্যান-ধারণার বাইরে গিয়ে নানান ব্যক্তিগত আচরণ ও মন্তব্য করেছিলেন। তিনি লালনচর্চার নামে প্রতি সপ্তাহেই বাসায় গানের আসর বসাতেন। তিনি ফেসবুকেও ধর্ম নিয়ে কঠোর সমালোচনা করেছেন। এ কারণে উগ্র জঙ্গিগোষ্ঠীদের টার্গেট হয়ে থাকতে পারেন বলে তদন্তের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তারা ধারণা করছেন।
বৃহস্পতিবার সমাজবিজ্ঞান সমিতি আয়োজিত শোকসভায় নিহতের বোন ওয়াসিম রুমানা বলেন, স্বাধীনতাবিরোধীরাই এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। খুনিদের অবিলম্বে বিচারের আওতায় আনার দাবি জানান তিনি। হত্যাকাণ্ডের জন্য জঙ্গিদের দায়ী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ও নিহত শফিউলের একমাত্র ছেলে সৌমিন শাহরিদ জেভিন ওই শোকসভায় বলেছেন, ‘এটা সম্পূর্ণ জঙ্গি হামলা, মৌলবাদী জঙ্গিগোষ্ঠীর দ্বারা আক্রান্ত হয়েছেন আমার বাবা।’
পুলিশের অপর একটি সূত্র জানায়, পুলিশের প্রাথমিক তদন্তে জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার তথ্য পাওয়া গেলেও ক্যাম্পাসে গড়ে ওঠা আন্দোলন থেকে অভিযোগ করা হয় একটি রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে। তাই নিশ্চিতভাবে কোনো দিকেই এগোচ্ছে না তদন্তকাজ। ফলে এ হত্যাকাণ্ডের তদন্ত নিয়ে অনেকটা রাজনৈতিক চাপে বিপাকে পড়েছে পুলিশ। গ্রেফতারকৃতদের ফের সাত দিনের রিমান্ড আবেদন : ঘটনায় সঙ্গে জড়িত সন্দেহে পুলিশ ইতিমধ্যে জামায়াত-শিবির-সমর্থক অন্তত ১১ জনকে গ্রেফতার করে রিমান্ডে নিয়েছে। শুক্রবার দু’দিনের রিমান্ড শেষে দ্বিতীয় দফা আরও সাত দিনের রিমান্ডের আবেদন জানানো হয়েছে। গ্রেফতারকৃত ১১ জনকে দুই দিনের রিমান্ড শেষে শুক্রবার দুপুরে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও মতিহার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলমগীর হোসেন যুগান্তরকে জানিয়েছেন, দু’দিনের রিমান্ডে আসামিদের কাছে তেমন গুরুত্বপূর্ণ কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। তাই ফের রিমান্ডের আবেদন জানানো হয়েছে। রোববার রিমান্ড শুনানি হবে। এর আগে বুধবার রিমান্ডের শুনানি শেষে মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট-৩ আদালতের বিচারক শারমিন আখতার আসামিদের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এরা হলেন- রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়সংলগ্ন জামায়াত নিয়ন্ত্রিত বিনোদপুর ইসলামিয়া কলেজের অধ্যক্ষ হুমায়ন কবির, ওই কলেজের শিক্ষক ফজলুল হক, চৌদ্দপাই এলাকার পল্লী চিকিৎসক মোশারফ হোসেন, আবদুল্লা আল মাহামুদ, মশিউর রহমান, হাসিবুর রহমান, জিন্নাত আলী, সাইফুদ্দিন, রেজাউল করিম, সাগর ও আরিফ।
১৫ নভেম্বর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক শফিউল ইসলামকে নগরীর চৌদ্দপাই এলাকায় বাসার সামনে কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক এন্তাজুল হক বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে মতিহার থানায় একটি মামলা করেন।
No comments