সাকিবের ম্যাচে উড়ে গেল জিম্বাবুয়ে by তারেক মাহমুদ
(দলের সাময়িক বিপর্যয়ে সাকিব উইকেটে আসতেই আন্দোলিত হয়েছিল গ্যালারি। সেই সাকিবই সেঞ্চুরি করে উদ্যাপন তরঙ্গ ছড়িয়ে দিলেন দর্শকমনে। কাল চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে l ছবিঃ শামসুল হক) এলটন চিগুম্বুরার বলটা কাভারে ঠেলে দিয়েই ১ রান। পূর্ণ হয়ে গেল ওয়ানডেতে সাকিব আল হাসানের ষষ্ঠ সেঞ্চুরি। কিন্তু অন্য প্রান্তে থাকা মুশফিকুর রহিম অর্ধেক ক্রিজ দৌড়েই যেভাবে ব্যাট উঁচিয়ে লাফ দিলেন, মনে হলো সেঞ্চুরিটা বুঝি তিনিই করেছেন!
বর্তমান বাংলাদেশ দলেরই প্রতীকী ছবি যেন দৃশ্যটা। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজেই দল হয়ে ওঠার লক্ষণটা পরিষ্কার হয়ে ফুটছিল। কাল সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে সেটি স্পষ্ট হলো আরও। দল হয়ে ওঠার, কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াইয়ের মানসিকতা পুরোপুরিই ফিরে এসেছে সবার মধ্যে। সাকিবের সেঞ্চুরিতে আগেই উৎসব শুরু করে মুশফিক কি সেটাই জানিয়ে দিলেন না?
তো মাথা উঁচু করে জেগে ওঠা দলটার কাছে কাল জিম্বাবুয়ের হার শেষ পর্যন্ত ৮৭ রানে। ২০১৩ সালের ৩ নভেম্বর ফতুল্লায় নিউজিল্যান্ডকে হারানোর পর গত এক বছরে ওয়ানডেতে জয়ের মুখ দেখেনি বাংলাদেশ। কালকের জয়টিই এ বছরের প্রথম, যা আসলে সাকিবময়। সেঞ্চুরি তো করেছেনই, মুশফিকের সঙ্গে পঞ্চম উইকেটে ১৪৮ রানের জুটিতে বাংলাদেশের হয়ে গড়েছেন নতুন রেকর্ড। এই জুটিতে ১১৯ রানের আগের রেকর্ডটি ছিল ২০০৮ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে, রকিবুল হাসানের সঙ্গে সেই রেকর্ডেও ছিলেন সাকিব। ওই ম্যাচে ৮ ওভার বল করে কোনো উইকেট না পেলেও কাল তিনি বল হাতেও সফল। এক বলের ব্যবধানে ওপেনার সিকান্দার রাজা ও ভুসি সিবান্দার উইকেট দুটি তুলে নিয়ে জিম্বাবুয়েকে প্রথম ধাক্কাটা তো দিয়েছিলেন সাকিবই। এরপর আরও দুটি উইকেট নিয়ে সম্ভাবনা জাগিয়েছিলেন সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট নেওয়ার গৌরবে ভাসার, এর আগে গৌরব সিক্ত হয়েছেন মাত্র দুজন। শেষ দিকে চরম আক্রমণাত্মক ফিল্ডিং সাজিয়েও সেই মাইলফলকটা ছুঁতে পারেননি সাকিব। তবে এক ম্যাচে সেঞ্চুরি ও চার উইকেট নেওয়া ক্রিকেটারদের ক্লাবের ১২তম সদস্য হিসেবে নাম তুলে দিতে পেরেছেন বাংলাদেশের অলরাউন্ডার।
এই সিরিজে শিশিরকে ধরা হচ্ছে বড় একটা প্রভাবক। ম্যাচ জয়ের জন্য টস জেতাটা তাই গুরুত্বপূর্ণ ভাবা হচ্ছে। যদিও কালকের ম্যাচে এর প্রমাণ মেলেনি। বাংলাদেশ ম্যাচ জিতেছে অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা টসে হারার পরও। সত্যি বলতে কী, পরে বল করলেও বাংলাদেশি বোলারদের ওপর শিশিরের প্রভাব খুব বেশি দেখা যায়নি। নিয়মিত বিরতিতে জিম্বাবুয়ের উইকেট নেওয়া, বড় জুটি হতে না দেওয়া—সবকিছুতেই সফল তারা। তবে একেবারেই যে সমস্যা হয়নি, তাও না। মাহমুদউল্লাহর বলে ব্রেন্ডন টেলরের ক্যাচটা যে ডিপ ফাইন লেগে আরাফাত সানির হাতে পড়েও বেরিয়ে গেল, সেটার পেছনে শিশিরভেজা বল একটা কারণ হতে পারে। ৫১ রানে জীবন ফিরে পেলেও টেলর অবশ্য সেটিকে কাজে লাগাতে পারেননি। আর ৩ রান করেই কট বিহাইন্ড হয়েছেন মাশরাফির বলে।
সাকিব-মুশফিক জুটির সৌজন্যে বাংলাদেশ শেষ পর্যন্ত ৭ উইকেটে ২৮১ রান পেলেও শুরুর ছবিটা ইঙ্গিত দিয়েছিল খারাপ কিছুরই। ৫ ওভার পর পর স্কোরগুলোয় রানের পাশে যোগ হচ্ছিল একটি করে উইকেট—৫ ওভার শেষে ৮/১, ১০ ওভার শেষে ২৭/২, ১৫ ওভার শেষে ৪৪/৩, ২০ ওভার শেষে ৭০/৪। কিন্তু ৭০ রানে ৪ উইকেট পড়ার পরই সাকিব-মুশফিকই দাঁড়িয়ে যান দেয়াল হয়ে।
৫৭ বলে ফিফটির পর সাকিবের সেঞ্চুরি আসে ৯৫ বলে, যাতে বাউন্ডারি ১০টি। ব্যাটিংয়ের মতোই দারুণ ছিল সাকিবের সেঞ্চুরি উদ্যাপন। খুলনা টেস্টে সেঞ্চুরি করে স্ত্রীকে বাতাসে হৃদয় এঁকে দেখিয়েছিলেন। কাল লক্ষ্য ছিল গ্যালারির দর্শক। মুশফিকের সঙ্গে আলিঙ্গনের পর ব্যাট-হেলমেট মাটিতে রেখে নাচের ভঙ্গিতে দর্শকদের উদ্দেশে হাত দিয়ে ব্যাটিং শ্যাডো করলেন। এরপর ড্রেসিংরুমে থাকা সতীর্থদের উদ্দেশেও ওঠালেন ব্যাট আর হেলমেট। অবশ্য সেঞ্চুরির পর আর ১ রান যোগ করেই কামুনগোজির বলে লং অনে পানিয়াঙ্গারার ক্যাচ হয়ে ফিরে গেছেন সাকিব। গ্যালারিতে তখনো ‘সাকিব, সাকিব’ ধ্বনি। বাংলাদেশের রান ৪৪ ওভারেই ২১৮-তে পৌঁছে দেওয়ার কৃতিত্ব যে তাঁরই!
মুশফিকের অবদানও কম নয়। ৭২ বলে ৬৫ রান করেছেন ২ চার আর স্লগ সুইপে সিকান্দার রাজা ও কামুনগোজিকে মারা ২ ছক্কায়। তবে এই ইনিংসটার জন্য মুশফিক ‘কৃতিত্ব’ দিতে পারেন জিম্বাবুয়ের বোলার-ফিল্ডারদের। ব্যক্তিগত ১৬ আর ৬০ রানের সময় তাঁকে জীবন দিয়েছে এলটন চিগুম্বুরা ও ব্রেন্ডন টেলরের পিচ্ছিল হাত। ৫৬ রানে থাকতে ডিপ মিড উইকেটে ক্যাচ হয়েছিলেন সলোমন মায়ারের। কিন্তু টেলিভিশন রিপ্লে তাঁকে বাঁচিয়ে দেয় এবারও। চিগুম্বুরার ওই বলটা ছিল ‘নো’।
সাকিব-মুশফিক ছিলেন না, তারপরও শেষ ৫ ওভারে বাংলাদেশ করেছে ৫২ রান। এর প্রায় পুরো কৃতিত্ব এ ম্যাচেই অভিষিক্ত সাব্বির রহমানের। ৭ নম্বরে নেমে মাত্র ২৫ বলে করেছেন ৪৪ রান, যাতে তিন বাউন্ডারির সঙ্গে চাতারা ও পানিয়াঙ্গারার বলে মেরেছেন তিন ছক্কা। যার দুটিই পানিয়াঙ্গারার করা শেষ ওভারের শেষ দুই বলে। শেষ ওভার থেকে বাংলাদেশের সংগ্রহ ১৮ রান, দুই ছক্কা আর এক চারে যার ১৭-ই নিয়েছেন সাব্বির।
শুরুর বিপর্যয় সামলে পথ দেখালেন অভিজ্ঞ সাকিব-মুশফিক। ব্যাট হাতে তুলির শেষ আঁচড়টা দিলেন নবাগত সাব্বির। বিষাদময় একটি বছর কাটিয়ে আবারও দলীয় সংহতির জয়গান গাইতে শুরু করেছে বাংলাদেশ।
বাংলাদেশ: ৫০ ওভারে ২৮১/৭
জিম্বাবুয়ে: ৪২.১ ওভারে ১৯৪
ফল: বাংলাদেশ ৮৭ রানে জয়ী
বর্তমান বাংলাদেশ দলেরই প্রতীকী ছবি যেন দৃশ্যটা। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজেই দল হয়ে ওঠার লক্ষণটা পরিষ্কার হয়ে ফুটছিল। কাল সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে সেটি স্পষ্ট হলো আরও। দল হয়ে ওঠার, কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াইয়ের মানসিকতা পুরোপুরিই ফিরে এসেছে সবার মধ্যে। সাকিবের সেঞ্চুরিতে আগেই উৎসব শুরু করে মুশফিক কি সেটাই জানিয়ে দিলেন না?
তো মাথা উঁচু করে জেগে ওঠা দলটার কাছে কাল জিম্বাবুয়ের হার শেষ পর্যন্ত ৮৭ রানে। ২০১৩ সালের ৩ নভেম্বর ফতুল্লায় নিউজিল্যান্ডকে হারানোর পর গত এক বছরে ওয়ানডেতে জয়ের মুখ দেখেনি বাংলাদেশ। কালকের জয়টিই এ বছরের প্রথম, যা আসলে সাকিবময়। সেঞ্চুরি তো করেছেনই, মুশফিকের সঙ্গে পঞ্চম উইকেটে ১৪৮ রানের জুটিতে বাংলাদেশের হয়ে গড়েছেন নতুন রেকর্ড। এই জুটিতে ১১৯ রানের আগের রেকর্ডটি ছিল ২০০৮ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে, রকিবুল হাসানের সঙ্গে সেই রেকর্ডেও ছিলেন সাকিব। ওই ম্যাচে ৮ ওভার বল করে কোনো উইকেট না পেলেও কাল তিনি বল হাতেও সফল। এক বলের ব্যবধানে ওপেনার সিকান্দার রাজা ও ভুসি সিবান্দার উইকেট দুটি তুলে নিয়ে জিম্বাবুয়েকে প্রথম ধাক্কাটা তো দিয়েছিলেন সাকিবই। এরপর আরও দুটি উইকেট নিয়ে সম্ভাবনা জাগিয়েছিলেন সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট নেওয়ার গৌরবে ভাসার, এর আগে গৌরব সিক্ত হয়েছেন মাত্র দুজন। শেষ দিকে চরম আক্রমণাত্মক ফিল্ডিং সাজিয়েও সেই মাইলফলকটা ছুঁতে পারেননি সাকিব। তবে এক ম্যাচে সেঞ্চুরি ও চার উইকেট নেওয়া ক্রিকেটারদের ক্লাবের ১২তম সদস্য হিসেবে নাম তুলে দিতে পেরেছেন বাংলাদেশের অলরাউন্ডার।
এই সিরিজে শিশিরকে ধরা হচ্ছে বড় একটা প্রভাবক। ম্যাচ জয়ের জন্য টস জেতাটা তাই গুরুত্বপূর্ণ ভাবা হচ্ছে। যদিও কালকের ম্যাচে এর প্রমাণ মেলেনি। বাংলাদেশ ম্যাচ জিতেছে অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা টসে হারার পরও। সত্যি বলতে কী, পরে বল করলেও বাংলাদেশি বোলারদের ওপর শিশিরের প্রভাব খুব বেশি দেখা যায়নি। নিয়মিত বিরতিতে জিম্বাবুয়ের উইকেট নেওয়া, বড় জুটি হতে না দেওয়া—সবকিছুতেই সফল তারা। তবে একেবারেই যে সমস্যা হয়নি, তাও না। মাহমুদউল্লাহর বলে ব্রেন্ডন টেলরের ক্যাচটা যে ডিপ ফাইন লেগে আরাফাত সানির হাতে পড়েও বেরিয়ে গেল, সেটার পেছনে শিশিরভেজা বল একটা কারণ হতে পারে। ৫১ রানে জীবন ফিরে পেলেও টেলর অবশ্য সেটিকে কাজে লাগাতে পারেননি। আর ৩ রান করেই কট বিহাইন্ড হয়েছেন মাশরাফির বলে।
সাকিব-মুশফিক জুটির সৌজন্যে বাংলাদেশ শেষ পর্যন্ত ৭ উইকেটে ২৮১ রান পেলেও শুরুর ছবিটা ইঙ্গিত দিয়েছিল খারাপ কিছুরই। ৫ ওভার পর পর স্কোরগুলোয় রানের পাশে যোগ হচ্ছিল একটি করে উইকেট—৫ ওভার শেষে ৮/১, ১০ ওভার শেষে ২৭/২, ১৫ ওভার শেষে ৪৪/৩, ২০ ওভার শেষে ৭০/৪। কিন্তু ৭০ রানে ৪ উইকেট পড়ার পরই সাকিব-মুশফিকই দাঁড়িয়ে যান দেয়াল হয়ে।
৫৭ বলে ফিফটির পর সাকিবের সেঞ্চুরি আসে ৯৫ বলে, যাতে বাউন্ডারি ১০টি। ব্যাটিংয়ের মতোই দারুণ ছিল সাকিবের সেঞ্চুরি উদ্যাপন। খুলনা টেস্টে সেঞ্চুরি করে স্ত্রীকে বাতাসে হৃদয় এঁকে দেখিয়েছিলেন। কাল লক্ষ্য ছিল গ্যালারির দর্শক। মুশফিকের সঙ্গে আলিঙ্গনের পর ব্যাট-হেলমেট মাটিতে রেখে নাচের ভঙ্গিতে দর্শকদের উদ্দেশে হাত দিয়ে ব্যাটিং শ্যাডো করলেন। এরপর ড্রেসিংরুমে থাকা সতীর্থদের উদ্দেশেও ওঠালেন ব্যাট আর হেলমেট। অবশ্য সেঞ্চুরির পর আর ১ রান যোগ করেই কামুনগোজির বলে লং অনে পানিয়াঙ্গারার ক্যাচ হয়ে ফিরে গেছেন সাকিব। গ্যালারিতে তখনো ‘সাকিব, সাকিব’ ধ্বনি। বাংলাদেশের রান ৪৪ ওভারেই ২১৮-তে পৌঁছে দেওয়ার কৃতিত্ব যে তাঁরই!
মুশফিকের অবদানও কম নয়। ৭২ বলে ৬৫ রান করেছেন ২ চার আর স্লগ সুইপে সিকান্দার রাজা ও কামুনগোজিকে মারা ২ ছক্কায়। তবে এই ইনিংসটার জন্য মুশফিক ‘কৃতিত্ব’ দিতে পারেন জিম্বাবুয়ের বোলার-ফিল্ডারদের। ব্যক্তিগত ১৬ আর ৬০ রানের সময় তাঁকে জীবন দিয়েছে এলটন চিগুম্বুরা ও ব্রেন্ডন টেলরের পিচ্ছিল হাত। ৫৬ রানে থাকতে ডিপ মিড উইকেটে ক্যাচ হয়েছিলেন সলোমন মায়ারের। কিন্তু টেলিভিশন রিপ্লে তাঁকে বাঁচিয়ে দেয় এবারও। চিগুম্বুরার ওই বলটা ছিল ‘নো’।
সাকিব-মুশফিক ছিলেন না, তারপরও শেষ ৫ ওভারে বাংলাদেশ করেছে ৫২ রান। এর প্রায় পুরো কৃতিত্ব এ ম্যাচেই অভিষিক্ত সাব্বির রহমানের। ৭ নম্বরে নেমে মাত্র ২৫ বলে করেছেন ৪৪ রান, যাতে তিন বাউন্ডারির সঙ্গে চাতারা ও পানিয়াঙ্গারার বলে মেরেছেন তিন ছক্কা। যার দুটিই পানিয়াঙ্গারার করা শেষ ওভারের শেষ দুই বলে। শেষ ওভার থেকে বাংলাদেশের সংগ্রহ ১৮ রান, দুই ছক্কা আর এক চারে যার ১৭-ই নিয়েছেন সাব্বির।
শুরুর বিপর্যয় সামলে পথ দেখালেন অভিজ্ঞ সাকিব-মুশফিক। ব্যাট হাতে তুলির শেষ আঁচড়টা দিলেন নবাগত সাব্বির। বিষাদময় একটি বছর কাটিয়ে আবারও দলীয় সংহতির জয়গান গাইতে শুরু করেছে বাংলাদেশ।
বাংলাদেশ: ৫০ ওভারে ২৮১/৭
জিম্বাবুয়ে: ৪২.১ ওভারে ১৯৪
ফল: বাংলাদেশ ৮৭ রানে জয়ী
No comments