কাপড়ের রঙ মিশিয়ে তৈরি হচ্ছে কেক, বিস্কুট by হাফিজ উদ্দিন
সাভারে দেদার বিক্রি হচ্ছে ভেজাল শিশুখাদ্য। ভেজাল শিশুখাদ্যে সয়লাব হয়ে পড়েছে সাভারের বাজারগুলো। কাপড়ের রঙ ও পাউডার মিশিয়ে তৈরি করা হয় মুখরোচক খাবার। বিএসটিআই’র সিল লাগানো লেবেলে বেশির ভাগ দোকানেই বিক্রি হচ্ছে ভেজাল এসব শিশুখাদ্য। এসব খাবার সামগ্রী গ্রাহকের কাছে আকর্ষণীয় করে তুলতে মেশানো হচ্ছে বিষাক্ত কাপড়ের রঙ, সুগন্ধি ও ট্যালকম পাউডার। লাচ্ছির ক্ষেত্রে সাদা টিস্যু পেপার মেশানো হচ্ছে। তবে এসব ভেজাল শিশুখাদ্য তৈরির বিরুদ্ধে কার্যত কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না সরকারের মান নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্স অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই)। এসব ভেজাল খাদ্য গ্রহণের ফলে শিশুরা আক্রান্ত হচ্ছে নানা ধরনের মরণব্যাধিতে। জানা গেছে, বিভিন্ন বেকারিতে কাপড়ের রঙ ও সুগন্ধি মিশিয়ে কেক, বিস্কুট, পাউরুটি, ফ্রুটস কেক তৈরি হচ্ছে। আবার বিভিন্ন কারখানায় ক্ষতিকারক কেমিক্যাল মিশিয়ে বিভিন্ন ধরনের জেলি, চকোলেট, আচার, লাচ্ছি, মাঠা তৈরি করা হচ্ছে। আটা মিশিয়ে তৈরি হচ্ছে ‘হট টমেটো সস’। ড্রেনের পানি দিয়ে তৈরি হচ্ছে আইসক্রিম। যার সবই অস্বাস্থ্যকর ও নোংরা পরিবেশে তৈরি। অনুসন্ধানে জানা যায়, বিএসটিআই’র নকল সিল লাগিয়ে সাভারের ভাটপাড়া এলাকার ‘টপওয়ান’ স্পেশাল বিস্কুট, কেক তৈরি করছে। নোংরা ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে কাপড়ের রঙ মিশিয়ে তৈরি করছে সুস্বাদু মুখরোচক খাবার। একই পরিবেশে ডগরমোড়া এলাকায় জমজম আইসক্রিম ফ্যাক্টরিতে তৈরি করা হচ্ছে বিভিন্ন নামীদামি ব্র্যান্ডের আসক্রিম, যা মোটেই স্বাস্থ্যসম্মত নয়। হেমায়েতপুরের মোনা ফুড ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডে, বাঁধন ফুড ইন্ডাস্ট্রিজ, পৌর এলাকার ব্যাংক কলোনি মহল্লার পপি বেকারি, শাহীবাগ মহল্লার ঢাকা বেকারি, থানা রোডের হাসান বেকারিতেও ক্ষতিকারক রঙ মিশিয়ে তৈরি হচ্ছে শিশুখাদ্য। ‘টপওয়ান’ বেকারির মালিক মিজানুর রহমান মিজান দাবি করেন, তার বেকারির বিএসটিআই অনুমোদন রয়েছে। তবে বিএসটিআই’র কোন কাগজপত্র দেখাতে পারেননি কেউ। নোংরা অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে খাবার তৈরি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, দিনভর কাজ শেষে সন্ধ্যার পরে আমরা পরিষ্কার করি। ফলে নোংরা ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ বলা চলে না। একই কথা বলেন অন্য বেকারির কর্মকর্তারা। সবাই খাদ্যসামগ্রীর প্যাকেটের গায়ে বিএসটিআই সিল লাগালেও নেই কারও কোন অনুমোদন। শুধু একটি ট্রেড লাইসেন্সই তাদের ভরসা। সাভার থানা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা অফিসার (টিএইচও) ডা. নজিবুর রহমান বলেন, এ ধরনের ভেজাল ও রঙমিশ্রিত খাবার নীরব ঘাতক। শিশুদের মেধা বিকাশে এসব খাবার ব্যাঘাত সৃষ্টি করে। এসব ভেজাল শিশুখাদ্য মানুষের জীবন প্রদীপ নিভিয়ে দেয়। শিশুরা নিয়মিত এসব ভেজাল খাদ্য গ্রহণ করলে একসময় দেখা যাবে পেটের পীড়া ও বমি হচ্ছে এবং অস্বাভাবিক আচার-আচরণ করবে। মাত্রাতিরিক্ত খেলে কিডনির সমস্যাও হতে পারে। এ ধরনের খাবার প্রস্তুতকারকদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন।
No comments