ক্যাম্পাসের রাজা-প্রজারা
গণতান্ত্রিক যুগে’ এটা রীতিমতো নিয়ম। বিশেষত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ক্ষমতাসীন দল সমর্থিত ছাত্র সংগঠনের একক রাজত্ব। অন্যরা সবাই প্রজা। এ দৃশ্য খুবই পরিচিত। নির্বাচনের দিন গভীর রাত পর্যন্ত নেতাদের অপেক্ষা। ফল বিপর্যয়ে হলত্যাগ। জয়ীদের নব উদ্যমে হল দখল। ২০০৮ সালের ২৯শে ডিসেম্বর থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র লীগের একক আধিপত্য। ছাত্রদল নির্বাসিত। বিশ্ববিদ্যালয়ের ত্রিসীমায় তাদের প্রবেশ নিষেধ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে ছাত্র শিবিরের রাজনীতি বহু বছর থেকেই নিষিদ্ধ। প্রগতিশীল কয়েকটি ছাত্র সংগঠন সক্রিয়। তবে তা নাম কা ওয়াস্তে ক্যাম্পাসে মিছিল-মিটিংয়ের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। কোন হলেই তাদের কোন নিয়ন্ত্রণ নেই। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি হলে এখন ছাত্র লীগের একক নিয়ন্ত্রণ। তারা নিয়মিত সংবাদ শিরোনাম হচ্ছেন নানাবিধ কারণে। কখনও মুক্তিপণ আদায়ের জন্য কাউকে হলে এনে আটকে রেখে। কখনও বা সাবেক ছাত্রীকে ক্যাম্পাসে লাঞ্ছিত করে। এ ক্ষেত্রে ছাত্রলীগ নিজেই নিজের প্রতিদ্বন্দ্বী। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কখনও তাদের সহযোগী। কখনও বা অসহায়। যদিও সাধারণ ছাত্রদের আন্দোলনে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কখনও কখনও ছাত্রলীগকে ব্যবহার করে এমন অভিযোগও রয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া অন্যান্য ক্যাম্পাসে বহু ক্ষেত্রে অতীতে ক্ষমতাসীন দল সমর্থিতদের বাইরে অন্য ছাত্রসংগঠনগুলোও আধিপত্য ধরে রাখতে সক্ষম হয়। এরশাদ জমানার মাঝামাঝি থেকেই চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র শিবিরের আধিপত্য শুরু। তবে বহুল আলোচিত-সমালোচিত সংগঠনটির সেদিন আর নেই। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রশিবির কার্যত এখন আন্ডারগ্রাউন্ডে। ছাত্রলীগের দু’টি গ্রুপ এখন সেখানে পরস্পরের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে লিপ্ত। ক’দিন আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ দ্বন্দ্ব নিরসনের নির্দেশ দেন। এরপর চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা দুই পক্ষকে নিয়ে এরই মধ্যে বৈঠক করেছেন। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়েও ছাত্রলীগের একক রাজত্ব চলছে। নিজেদের মধ্যে প্রায়ই লড়াইয়ে লিপ্ত হচ্ছেন তাদের বিবদমান গ্রপের নেতা-কর্মীরা। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থাও একই। এক সময় শিবিরের নিয়ন্ত্রণে থাকা এ ক্যাম্পাসে এখন প্রবেশ করতে পারছে না শিবির। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের চিত্র একই। ছাত্রলীগ, ছাত্রলীগ, ছাত্রলীগ এবং ছাত্রলীগ। আর কোন ছাত্র সংগঠনেরই অস্তিত্ব নেই। বাংলাদেশে এক সময়কার প্রবল-প্রতাপশালী ছাত্র সংগঠন ছাত্রদল এখন দেশের সব ক্যাম্পাস থেকেই নির্বাসিত। মাঝে মাঝে নয়া পল্টন কার্যালয়ের সামনে নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়ে তারা খবর হচ্ছেন। বিএনপির এই সহযোগী সংগঠনটি সরকারবিরোধী আন্দোলনেও কোন ভূমিকা রাখতে পারছে না। জামায়াতে ইসলামীর সহযোগী সংগঠন ছাত্রশিবির তাদের ইতিহাসে সবচেয়ে বিপর্যস্ত সময় অতিক্রম করছে। যুদ্ধাপরাধের দায়ে জামায়াতের প্রায় সব শীর্ষ নেতাই এখন কারাবন্দি। এক নেতার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়েছে। আরেকজনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের অপেক্ষায় আছে। জামায়াত নেতাদের মুক্তি আন্দোলনে শিবির নেতাকর্মীরা হত্যা-নির্যাতনের মুখোমুখি হয়েছেন। আন্দোলনে সহিংসতার জন্যও অভিযুক্ত হয়েছেন তারা। এ অবস্থায় বাংলাদেশের সব ক্যাম্পাসেই ছাত্রলীগ এখন রাজা। অন্য প্রতিদ্বন্দ্বীর অনুপস্থিতিতে যে কারণে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা প্রায়ই নিজেরা নিজেরাই লিপ্ত হচ্ছেন লড়াইয়ে। এ যেন রাজায় রাজায় লড়াই।
No comments