নূর হোসেন অনন্ত প্রেরণার উৎস by মাহমদুর রহমান মান্না
১০ নভেম্বর নূর হোসেনকে গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করি। বর্তমান সময়ে নূর হোসেনকে স্মরণ করার প্রয়োজন এ কারণে যে, সম্ভবত তিনি বাংলাদেশের আন্দোলনগুলোর মধ্যে একমাত্র ব্যক্তি, যিনি জেনে-বুঝে বুকে পিঠে ফুলকি এঁকে বুলেটের সামনে বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন। দুর্বিনীত নূর হোসেন বলেছিলন, দরকার লাগলে জান দিয়া দিমু। ধরে নেয়াই যায়- জীবন চলে যেতে পারে জেনেই তিনি রাজপথের লড়াইয়ে নেমেছিলেন।
আন্দোলনে রক্ত-ঘাম ঝরানো নির্যাতন সহ্য করা, জেল খাটা, এমনকি জীবন দেয়ার ঘটনা তো আছেই। কিন্তু সেসব ঘটনা পরম্পরায় নিশ্চিত বন্দিত্ব জেনে, মৃত্যুকে দেখে সাধারণ কেউ পা বাড়ায় না। নূর হোসেন সেদিক দিয়ে সবার থেকে আলাদা। এ দুর্বিনীত সাহসের আজ খুবই প্রয়োজন। নূর হোসেনের মৃত্যু দিবসে আজ এ ভাবনাই সবচেয়ে আগে আসে। আশির দশকের আন্দোলনের পরে আরও অনেকেই জীবন দিয়েছেন। এরশাদের আধিপত্যের পতন হয়েছে। কিন্তু গণতন্ত্র কি মুক্তি পেয়েছে? এ বছরের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের নামে যে প্রহসন হয়েছে, তাতে একথাই বরং বলতে হবে যে, নির্বাচন এখন এরশাদের আমলের নির্বাচনের চেয়েও বড় প্রহসনে পরিণত হয়েছে। এমন একপক্ষীয় ভোটারহীন নির্বাচন একবার খালেদা জিয়াও করেছিলেন। এবার শেখ হাসিনাও করলেন। কবরের নিচে নূর হোসেন সম্ভবত এখন পাশ ফিরে কিংবা উপুড় হয়ে কাঁদতে শুরু করেছেন- হায়রে এজন্যই কী জীবনটা দিলাম! তখন তো চক্ষুলজ্জা বলে একটা জিনিস ছিল, এখন তাও চলে গেছে। স্বনির্বাচিত এ সরকার এখন দম্ভ করে বলছে- নির্বাচন যেমনই হোক, আমরা তো সংবিধানের বাইরে কিছু করিনি। আমাদের অবৈধ তো বলা যাবে না। সারা বিশ্ব এখন আমাদের মেনে নিয়েছে। জনসমর্থনহীন এ সরকার এখন পুলিশ আর র্যাবের ওপর নির্ভর করে দেশ চালাচ্ছে। দুটো দলের বিরুদ্ধেই এখন বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, ঘুষ, দুর্নীতিসহ অজস্র অভিযাগ। পুলিশ তো এখন জনগণকে সভা করতে দেয়া না দেয়ার মালিক হয়ে গেছে। তারাই এখন মাইক ব্যবহারের অনুমতি দেয়ার মালিক হয়ে বিরোধী দলের কণ্ঠ চেপে ধরছে। সরকারের সমালোচনাকারীরা সরকারের সমালোচনা করার জন্য ঢাকা মহানগরের কোথাও মাইক ব্যবহারের অনুমতি পাচ্ছেন না। যেখানে মত প্রকাশের স্বাধীনতা থাকে না সেখানে গণতন্ত্র থাকে না। সার্বিক বিবেচনায় বাংলাদেশের গণতন্ত্র আওয়ামী জোটের ক্ষমতার বালাখানায় বন্দি, নূর হোসেনসহ শহীদরা এখন বিকট শব্দে ঠা ঠা করে হাসছে।
আজকের এই দিনে ভাষা আন্দোলনের নেতা আবদুল মতিনকেও গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি। ভারত বিভক্তির এক বছরের মাথায় মুসলিম জাতীয়তাবাদের জোয়ারে প্লাবিত, সিক্ত, প্রচণ্ড ব্যক্তিত্বসম্পন্ন মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর সামনে দাঁড়িয়ে আবদুল মতিন উর্দুই হবে একমাত্র রাষ্ট্র ভাষা- এ বক্তব্যের প্রতিবাদে না বলেছিলেন। এ এক অনন্য সাহসিকতার নজির। তখন জিন্নাহর জনপ্রিয়তা তুঙ্গে। মুসলিম লীগের কাছাকাছি জনপ্রিয় কোনো দলই ছিল না। জিন্নাহর সামনে দাঁড়িয়ে যে কেউ প্রতিবাদ করতে পারে, তা ভাবাই অসম্ভব ছিল। ভাষা মতিন তাই করেছিলেন। সেই সাহস শক্তিতে রূপান্তরিত হয়ে ৫২-এর ভাষা আন্দোলন তৈরি করেছিল। কোনো ইতিহাস রচিত হয় যখন, তখন সমসাময়িকতা তা ধরতে পারে না। সময়ে তা ফুটে ওঠে। ১৯৪৮-এ মতিন এত বড় ছিলেন না। ১৯৫২-তে কিংবা ১৯৭১-এও নয়। কিন্তু আজ আবদুল মতিন আমাদের কাছে একটি আইকন। অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার সাহস ও শক্তি আমরা তার কাছে পাই। এখনও নূর হোসেনকে আমরা পাদপ্রদীপের আলোয় আনিনি। কারণ আমরা যারা এরপর থেকে ক্ষমতায় ছিলাম- আওয়ামী লীগ বা বিএনপি- কেউই তিন জোটের রূপরেখার প্রতি সম্মান জানাইনি। দেশে এখন স্বেচ্ছাচার চলছে- আগামীতে যে গণতন্ত্রের আন্দোলন হবে, তাতে নূর হোসেন বারে বারে ফিরে আসবে।
মাহমুদুর রহমান মান্না : আহ্বায়ক, নাগরিক ঐক্য
আন্দোলনে রক্ত-ঘাম ঝরানো নির্যাতন সহ্য করা, জেল খাটা, এমনকি জীবন দেয়ার ঘটনা তো আছেই। কিন্তু সেসব ঘটনা পরম্পরায় নিশ্চিত বন্দিত্ব জেনে, মৃত্যুকে দেখে সাধারণ কেউ পা বাড়ায় না। নূর হোসেন সেদিক দিয়ে সবার থেকে আলাদা। এ দুর্বিনীত সাহসের আজ খুবই প্রয়োজন। নূর হোসেনের মৃত্যু দিবসে আজ এ ভাবনাই সবচেয়ে আগে আসে। আশির দশকের আন্দোলনের পরে আরও অনেকেই জীবন দিয়েছেন। এরশাদের আধিপত্যের পতন হয়েছে। কিন্তু গণতন্ত্র কি মুক্তি পেয়েছে? এ বছরের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের নামে যে প্রহসন হয়েছে, তাতে একথাই বরং বলতে হবে যে, নির্বাচন এখন এরশাদের আমলের নির্বাচনের চেয়েও বড় প্রহসনে পরিণত হয়েছে। এমন একপক্ষীয় ভোটারহীন নির্বাচন একবার খালেদা জিয়াও করেছিলেন। এবার শেখ হাসিনাও করলেন। কবরের নিচে নূর হোসেন সম্ভবত এখন পাশ ফিরে কিংবা উপুড় হয়ে কাঁদতে শুরু করেছেন- হায়রে এজন্যই কী জীবনটা দিলাম! তখন তো চক্ষুলজ্জা বলে একটা জিনিস ছিল, এখন তাও চলে গেছে। স্বনির্বাচিত এ সরকার এখন দম্ভ করে বলছে- নির্বাচন যেমনই হোক, আমরা তো সংবিধানের বাইরে কিছু করিনি। আমাদের অবৈধ তো বলা যাবে না। সারা বিশ্ব এখন আমাদের মেনে নিয়েছে। জনসমর্থনহীন এ সরকার এখন পুলিশ আর র্যাবের ওপর নির্ভর করে দেশ চালাচ্ছে। দুটো দলের বিরুদ্ধেই এখন বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, ঘুষ, দুর্নীতিসহ অজস্র অভিযাগ। পুলিশ তো এখন জনগণকে সভা করতে দেয়া না দেয়ার মালিক হয়ে গেছে। তারাই এখন মাইক ব্যবহারের অনুমতি দেয়ার মালিক হয়ে বিরোধী দলের কণ্ঠ চেপে ধরছে। সরকারের সমালোচনাকারীরা সরকারের সমালোচনা করার জন্য ঢাকা মহানগরের কোথাও মাইক ব্যবহারের অনুমতি পাচ্ছেন না। যেখানে মত প্রকাশের স্বাধীনতা থাকে না সেখানে গণতন্ত্র থাকে না। সার্বিক বিবেচনায় বাংলাদেশের গণতন্ত্র আওয়ামী জোটের ক্ষমতার বালাখানায় বন্দি, নূর হোসেনসহ শহীদরা এখন বিকট শব্দে ঠা ঠা করে হাসছে।
আজকের এই দিনে ভাষা আন্দোলনের নেতা আবদুল মতিনকেও গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি। ভারত বিভক্তির এক বছরের মাথায় মুসলিম জাতীয়তাবাদের জোয়ারে প্লাবিত, সিক্ত, প্রচণ্ড ব্যক্তিত্বসম্পন্ন মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর সামনে দাঁড়িয়ে আবদুল মতিন উর্দুই হবে একমাত্র রাষ্ট্র ভাষা- এ বক্তব্যের প্রতিবাদে না বলেছিলেন। এ এক অনন্য সাহসিকতার নজির। তখন জিন্নাহর জনপ্রিয়তা তুঙ্গে। মুসলিম লীগের কাছাকাছি জনপ্রিয় কোনো দলই ছিল না। জিন্নাহর সামনে দাঁড়িয়ে যে কেউ প্রতিবাদ করতে পারে, তা ভাবাই অসম্ভব ছিল। ভাষা মতিন তাই করেছিলেন। সেই সাহস শক্তিতে রূপান্তরিত হয়ে ৫২-এর ভাষা আন্দোলন তৈরি করেছিল। কোনো ইতিহাস রচিত হয় যখন, তখন সমসাময়িকতা তা ধরতে পারে না। সময়ে তা ফুটে ওঠে। ১৯৪৮-এ মতিন এত বড় ছিলেন না। ১৯৫২-তে কিংবা ১৯৭১-এও নয়। কিন্তু আজ আবদুল মতিন আমাদের কাছে একটি আইকন। অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার সাহস ও শক্তি আমরা তার কাছে পাই। এখনও নূর হোসেনকে আমরা পাদপ্রদীপের আলোয় আনিনি। কারণ আমরা যারা এরপর থেকে ক্ষমতায় ছিলাম- আওয়ামী লীগ বা বিএনপি- কেউই তিন জোটের রূপরেখার প্রতি সম্মান জানাইনি। দেশে এখন স্বেচ্ছাচার চলছে- আগামীতে যে গণতন্ত্রের আন্দোলন হবে, তাতে নূর হোসেন বারে বারে ফিরে আসবে।
মাহমুদুর রহমান মান্না : আহ্বায়ক, নাগরিক ঐক্য
No comments