ষোড়শ সংশোধনী কেন সংবিধান পরিপন্থী নয়
বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে ফিরিয়ে নিয়ে করা সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী কেন অবৈধ, বাতিল ও সংবিধান পরিপন্থী ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। জনস্বার্থে করা এক রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি মো. আশরাফুল কামালের সমন্বয়ে
গঠিত দ্বৈত বেঞ্চ রোববার এ রুল জারি করেন।দুই সপ্তাহের মধ্যে মন্ত্রিপরিষদ সচিব, রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ের সচিব, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব, সংসদ সচিবালয়ের সচিব ও আইন সচিবকে এ রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি আদালত ২৬ নভেম্বর প্রয়োজনীয় আদেশের জন্য পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করে দিয়েছেন।১৭ সেপ্টেম্বর রাতে সংসদে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বিল-২০১৪ পাস হয়। এর মধ্য দিয়ে ৪০ বছর পর সুপ্রিমকোর্টের বিচারকদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের কাছে ন্যস্ত হয়। বিরোধী দল জাতীয় পার্টিও বিলের পক্ষে ভোট দেয়। এরপর রাষ্ট্রপতির অনুমোদন শেষে ২২ সেপ্টেম্বর সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী আইন-২০১৪র গেজেট জারি হয়। সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী আইন-২০১৪র বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ৫ নভেম্বর সুপ্রিমকোর্টের নয়জন আইনজীবী রিট আবেদনটি দায়ের করেন। রিটকারীরা হলেন- অ্যাডভোকেট আসাদুজ্জামান সিদ্দিকী, ইমরুল কাউসার, মামুন আলিম, এখলাস উদ্দিন ভুঁইয়া, সারওয়ার আহাদ চৌধুরী, মাহবুবুল ইসলাম, নুরুল ইনাম বাবুল, শাহীন আরা লাইলী ও রিপন বাড়ৈই। রিট আবেদনটির শুনানি করেন অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোতাহার হোসেন সাজু।শুনানিতে মনজিল মোরসেদ বলেন, একটি রিট মামলায় সুপ্রিমকোর্ট সামরিক আইন ও বিধিবিধান বাতিল করলেও সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদে বিচারক অপসারণসংক্রান্ত সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিলের বিধান সংরক্ষণ করা হয়েছে। সংবিধান পুনর্মুদ্রণের মাধ্যমে তা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। কিন্তু হঠাৎ করেই বিচারক অপসারণের বিধান সংশোধন করে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বিল পাস হয়।তিনি বলেন, কোনো সংশোধনী আনার জন্য বা আইন তৈরির জন্য প্রয়োজনীয়তা থাকতে হয়। আগের আইনে ত্র“টি থাকতে হয়। কিন্তু এক্ষেত্রে কোনোটাই ছিল না। বিশেষ কোনো কারণে এই সংশোধনী আনা হতে পারে। মনজিল মোরসেদ ব্যাখ্যা করে বলেন, গত এক বছরে সাম্প্রতিককালে পাসকৃত আদালত অবমাননার আইন ও দুর্নীতি দমন কমিশন আইনের সংশোধনী বাতিল করে দেন সুপ্রিমকোর্ট। এমনকি নারায়ণগঞ্জের খুনের ঘটনায় আসামি গ্রেফতারের নির্দেশও দেন আদালত। এসব কারণে প্রশাসন উদ্দেশ্যমূলকভাবে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ক্ষুণ্ন করার প্রয়াস হতে পারে এবং এ ধরনের সংশোধনী আনা হতে পারে। তিনি রুল জারির জন্য আদালতের কাছে আবেদন জানান। রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোতাহার হোসেন সাজু এই রুল জারির বিরোধিতা করেন। আদালত উভয়পক্ষের শুনানি নিয়ে রুল জারি করেন।সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদে সুপ্রিমকোর্টের বিচারকদের অপসারণের বিষয়টি উল্লেখ রয়েছে। ৭২র সংবিধানে বিচারকদের অপসারণ ক্ষমতা সংসদের হাতে ছিল। পরবর্তী সময়ে ১৯৭৫ সালের জানুয়ারিতে সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে বিচারকদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের কাছ থেকে রাষ্ট্রপতির কাছে ন্যস্ত হয়েছিল। এরপর সামরিক ফরমানের দ্বারা পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে বিচারকদের অপসারণের ক্ষমতা সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিলের কাছে ন্যস্ত হয়। প্রধান বিচারপতি ও আপিল বিভাগের অপর দুজন জ্যেষ্ঠ বিচারপতি নিয়ে জুডিসিয়াল কাউন্সিল গঠিত হয়।২০১২ সালে সড়ক ভবনকে কেন্দ্র করে আদালতের একটি রায় নিয়ে সংসদে বিরূপ সমালোচনা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে একজন বিচারক সংসদ ও স্পিকারকে নিয়ে মন্তব্য করলে সেই সময় সংসদ সদস্যদের অনেকেই বিচারকদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের কাছে ফিরিয়ে আনার দাবি তোলেন। এ নিয়ে স্পিকার পরে একটি রুলিংও দেন। সেই রুলিং আবার হাইকোর্ট অকার্যকর ও ভিত্তিহীন ঘোষণা করে রায় দেন। সম্প্রতি নারায়ণগঞ্জের সাত খুনের ঘটনায় র্যাব সদস্যদের গ্রেফতারের জন্য হাইকোর্ট নির্দেশ দিলে আবারও নির্বাহী বিভাগ থেকে সমালোচনা আসে। এর কিছুদিন পরে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বিল সংসদে পাস হয়।পাস হওয়া বিলে ৯৬ অনুচ্ছেদ সংশোধন করে দফা ২-এ বলা হয়, প্রমাণিত অসদাচরণ বা অসামর্থ্যরে কারণে সংসদের মোট সদস্য সংখ্যার দুই-তৃতীয়াংশ সদস্যের প্রস্তাবক্রমে রাষ্ট্রপতির আদেশে সুপ্রিমকোর্টের বিচারকদের অপসারণ করা যাবে। ৩ দফায় বলা হয়, সংসদ সদস্যদের প্রস্তাব-সম্পর্কিত এবং বিচারকের অসদাচরণ ও অসামর্থ্য সম্পর্কে তদন্ত ও প্রমাণের পদ্ধতি সংসদ আইনের দ্বারা নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে। ৪ দফায় বলা হয়, কোনো বিচারক রাষ্ট্রপতিকে উদ্দেশ করে স্বাক্ষরযুক্ত পত্রযোগে স্বীয় পদত্যাগ করতে পারবেন। এই সংশোধনীর পর দেশের শীর্ষ আইনজীবীসহ নানা মহলে সমালোচনার ঝড় ওঠে। এর দেড় মাসেরও বেশি সময় পর হাইকোর্ট সংশোধনীটির বৈধতা ও সাংবিধানিক গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে রুল জারি করলেন।
গঠিত দ্বৈত বেঞ্চ রোববার এ রুল জারি করেন।দুই সপ্তাহের মধ্যে মন্ত্রিপরিষদ সচিব, রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ের সচিব, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব, সংসদ সচিবালয়ের সচিব ও আইন সচিবকে এ রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি আদালত ২৬ নভেম্বর প্রয়োজনীয় আদেশের জন্য পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করে দিয়েছেন।১৭ সেপ্টেম্বর রাতে সংসদে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বিল-২০১৪ পাস হয়। এর মধ্য দিয়ে ৪০ বছর পর সুপ্রিমকোর্টের বিচারকদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের কাছে ন্যস্ত হয়। বিরোধী দল জাতীয় পার্টিও বিলের পক্ষে ভোট দেয়। এরপর রাষ্ট্রপতির অনুমোদন শেষে ২২ সেপ্টেম্বর সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী আইন-২০১৪র গেজেট জারি হয়। সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী আইন-২০১৪র বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ৫ নভেম্বর সুপ্রিমকোর্টের নয়জন আইনজীবী রিট আবেদনটি দায়ের করেন। রিটকারীরা হলেন- অ্যাডভোকেট আসাদুজ্জামান সিদ্দিকী, ইমরুল কাউসার, মামুন আলিম, এখলাস উদ্দিন ভুঁইয়া, সারওয়ার আহাদ চৌধুরী, মাহবুবুল ইসলাম, নুরুল ইনাম বাবুল, শাহীন আরা লাইলী ও রিপন বাড়ৈই। রিট আবেদনটির শুনানি করেন অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোতাহার হোসেন সাজু।শুনানিতে মনজিল মোরসেদ বলেন, একটি রিট মামলায় সুপ্রিমকোর্ট সামরিক আইন ও বিধিবিধান বাতিল করলেও সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদে বিচারক অপসারণসংক্রান্ত সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিলের বিধান সংরক্ষণ করা হয়েছে। সংবিধান পুনর্মুদ্রণের মাধ্যমে তা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। কিন্তু হঠাৎ করেই বিচারক অপসারণের বিধান সংশোধন করে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বিল পাস হয়।তিনি বলেন, কোনো সংশোধনী আনার জন্য বা আইন তৈরির জন্য প্রয়োজনীয়তা থাকতে হয়। আগের আইনে ত্র“টি থাকতে হয়। কিন্তু এক্ষেত্রে কোনোটাই ছিল না। বিশেষ কোনো কারণে এই সংশোধনী আনা হতে পারে। মনজিল মোরসেদ ব্যাখ্যা করে বলেন, গত এক বছরে সাম্প্রতিককালে পাসকৃত আদালত অবমাননার আইন ও দুর্নীতি দমন কমিশন আইনের সংশোধনী বাতিল করে দেন সুপ্রিমকোর্ট। এমনকি নারায়ণগঞ্জের খুনের ঘটনায় আসামি গ্রেফতারের নির্দেশও দেন আদালত। এসব কারণে প্রশাসন উদ্দেশ্যমূলকভাবে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ক্ষুণ্ন করার প্রয়াস হতে পারে এবং এ ধরনের সংশোধনী আনা হতে পারে। তিনি রুল জারির জন্য আদালতের কাছে আবেদন জানান। রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোতাহার হোসেন সাজু এই রুল জারির বিরোধিতা করেন। আদালত উভয়পক্ষের শুনানি নিয়ে রুল জারি করেন।সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদে সুপ্রিমকোর্টের বিচারকদের অপসারণের বিষয়টি উল্লেখ রয়েছে। ৭২র সংবিধানে বিচারকদের অপসারণ ক্ষমতা সংসদের হাতে ছিল। পরবর্তী সময়ে ১৯৭৫ সালের জানুয়ারিতে সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে বিচারকদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের কাছ থেকে রাষ্ট্রপতির কাছে ন্যস্ত হয়েছিল। এরপর সামরিক ফরমানের দ্বারা পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে বিচারকদের অপসারণের ক্ষমতা সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিলের কাছে ন্যস্ত হয়। প্রধান বিচারপতি ও আপিল বিভাগের অপর দুজন জ্যেষ্ঠ বিচারপতি নিয়ে জুডিসিয়াল কাউন্সিল গঠিত হয়।২০১২ সালে সড়ক ভবনকে কেন্দ্র করে আদালতের একটি রায় নিয়ে সংসদে বিরূপ সমালোচনা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে একজন বিচারক সংসদ ও স্পিকারকে নিয়ে মন্তব্য করলে সেই সময় সংসদ সদস্যদের অনেকেই বিচারকদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের কাছে ফিরিয়ে আনার দাবি তোলেন। এ নিয়ে স্পিকার পরে একটি রুলিংও দেন। সেই রুলিং আবার হাইকোর্ট অকার্যকর ও ভিত্তিহীন ঘোষণা করে রায় দেন। সম্প্রতি নারায়ণগঞ্জের সাত খুনের ঘটনায় র্যাব সদস্যদের গ্রেফতারের জন্য হাইকোর্ট নির্দেশ দিলে আবারও নির্বাহী বিভাগ থেকে সমালোচনা আসে। এর কিছুদিন পরে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বিল সংসদে পাস হয়।পাস হওয়া বিলে ৯৬ অনুচ্ছেদ সংশোধন করে দফা ২-এ বলা হয়, প্রমাণিত অসদাচরণ বা অসামর্থ্যরে কারণে সংসদের মোট সদস্য সংখ্যার দুই-তৃতীয়াংশ সদস্যের প্রস্তাবক্রমে রাষ্ট্রপতির আদেশে সুপ্রিমকোর্টের বিচারকদের অপসারণ করা যাবে। ৩ দফায় বলা হয়, সংসদ সদস্যদের প্রস্তাব-সম্পর্কিত এবং বিচারকের অসদাচরণ ও অসামর্থ্য সম্পর্কে তদন্ত ও প্রমাণের পদ্ধতি সংসদ আইনের দ্বারা নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে। ৪ দফায় বলা হয়, কোনো বিচারক রাষ্ট্রপতিকে উদ্দেশ করে স্বাক্ষরযুক্ত পত্রযোগে স্বীয় পদত্যাগ করতে পারবেন। এই সংশোধনীর পর দেশের শীর্ষ আইনজীবীসহ নানা মহলে সমালোচনার ঝড় ওঠে। এর দেড় মাসেরও বেশি সময় পর হাইকোর্ট সংশোধনীটির বৈধতা ও সাংবিধানিক গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে রুল জারি করলেন।
No comments