লিভ টু আপিলের সাক্ষ্য গ্রহণ ২৪ নভেম্বর
দুটি দুর্নীতির মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার লিভ টু আপিল উচ্চ আদালতে শুনানির অপেক্ষায় থাকায় সাক্ষ্য গ্রহণ কার্যক্রম মুলতবি করেছেন বিচারিক আদালত। ২৪ নভেম্বর উচ্চ আদালতের আদেশ দাখিলের দিন ধার্য করে ওই দিন পরবর্তী শুনানির জন্য রাখা হয়েছে। খালেদা জিয়ার উপস্থিতিতে রোববার ঢাকার বিশেষ জজ (আদালত)-৩ এর বিচারক বাসুদেব রায় এ আদেশ দেন। এদিকে অভিযোগ গঠন বাতিলের বিষয়ে করা দুটি লিভ টু আপিলসহ খালেদার পক্ষে করা তিনটি আবেদনের ওপর ১৬ নভেম্বর শুনানির দিন ধার্য করেছেন সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগ। প্রধান বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হোসেনের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ রোববার এ দিন ধার্য করেন। জিয়া অরফানেজ ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট নামক এই দুটি দুর্নীতির মামলার বিচার চলছে পুরান ঢাকার বকশি বাজারের আলীয়া মাদ্রাসার মাঠে স্থাপিত বিশেষ জজ আদালতে। ১৯ মার্চ এ দুটি মামলায় অভিযোগ গঠন করেন আদালত। এই আদালতে মামলা দুটি সাক্ষ্য গ্রহণের পর্যায়ে রয়েছে। রোববার সাক্ষ্য গ্রহণের দিন ধার্য ছিল।অপরদিকে এ দুটি মামলায় অভিযোগ গঠন আইনানুগ হয়নি দাবি করে তা বাতিল চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করেছিলেন খালেদা জিয়া। এই দুটি আবেদন ২৩ এপ্রিল খারিজ করেন হাইকোর্ট। এর বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে খালেদার পক্ষে লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) করা হয়। এছাড়া জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলাটি আমলে নেয়ার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে করা একটি রিট ২০১২ সালে খারিজ করেন হাইকোর্ট। এই খারিজ আদেশের বিরুদ্ধেও আপিল বিভাগে একটি লিভ টু আপিল বিচারাধীন রয়েছে। রোববার তিনটি লিভ টু আপিলই শুনানির জন্য আপিল বিভাগের কার্য তালিকায় ছিল। পরে খালেদার আইনজীবীদের সময় আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আপিল বিভাগ তিনটি আবেদনের ওপর ১৬ নভেম্বর শুনানির দিন ধার্য করেন।এদিকে সাক্ষ্য গ্রহণের দিন ধার্য থাকায় রোববার ১১টা ৬ মিনিটে বিশেষ জজ আদালতে উপস্থিত হন খালেদা জিয়া। এজলাস কক্ষের একটি কাঠের চেয়ারে বসেন তিনি। এ সময় খালেদা জিয়ার আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন আদালতকে বলেন, মামলা দুটির অভিযোগ গঠনের আদেশের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে লিভ টু আপিল শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে। দেশবাসী জানে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াসহ অপর আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন আইনানুগ হয়নি। অভিযোগ গঠন করতে হলে, আসামির বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ পড়ে শোনাতে হয়। যা করা হয়নি। আইনের ব্যত্যয় ঘটান হয়েছে।প্রবীণ এই আইনজীবী আরও বলেন, আমরা এ আদালতের কাছ থেকে ন্যায়বিচার পাচ্ছি না। যে কারণে মামলাটি অন্য আদালতে স্থানান্তর করার জন্যও উচ্চ আদালতে আবেদন করেছি। যেহেতু উচ্চ আদালতে এসব বিষয়ে শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে তাই মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ কার্যক্রম মুলতবি করার আবেদন করেছি। আমাদের আবেদন মঞ্জুর করা হোক। তবে এই আবেদনের বিরোধিতা করেন দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল।তিনি আদালতকে বলেন, উচ্চ আদালতে আসামি পক্ষ গেছেন সত্য, কিন্তু তারা কোনো আদেশ আদালতে দাখিল করতে পারেননি। উচ্চ আদালত মামলার কার্যক্রম বন্ধ রাখার কোনো আদেশও দেননি। আমাদের সাক্ষী আদালতে হাজির আছেন। তার সাক্ষ্য গ্রহণ নেয়া হোক। পিপির বক্তব্যের জবাব দেন সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এজে মোহাম্মদ আলী। উচ্চ আদালতের একাধিক সিদ্ধান্ত তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘মামলার বিষয়ে উচ্চ আদালতে কোনো বিষয় শুনানির অপেক্ষায় থাকলে নিু আদালত বিচারিক কার্যক্রম চালাতে পারে না। এক্ষেত্রে বিচারককে অবশ্যই উচ্চ আদালতের সিদ্ধান্ত মানতে হবে।’ এর পরে খালেদা জিয়ার পক্ষে সময় আবেদন করেন অ্যাডভোকেট জয়নাল আবেদিন।খালেদা জিয়ার মুখে হাসি : দুই পক্ষের শুনানি শেষে বিচারক বাসুদেব রায় আদেশের জন্য কথা বলতে শুরু করেন। শুরুতে তিনি খালেদা জিয়াকে ‘ম্যাডাম’ হিসেবে সম্বোধন করেন। বলতে থাকেন, আদালতে আসার জন্য ম্যাডামকে ধন্যবাদ। তার উপস্থিতিতে দুই পক্ষই সুন্দরভাবে শুনানিতে অংশগ্রহণ করেছেন। এ সময় খালেদা জিয়াকে হাসতে দেখা যায়। তখনই দুদকের আইনজীবী কাজল খালেদা জিয়ার উদ্দেশে বলেন, ‘ম্যাডাম আপনি প্রত্যেক ধার্য তারিখে আসবেন। আপনার বিষয়ে আপনি নিজেই সব শুনবেন। কারোর মাধ্যমে মামলার খোঁজ নিতে হবে না।’ এ সময় খালেদা আবার হাসতে থাকেন।শুনানির সময় খালেদা জিয়ার পক্ষে সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এজে মোহাম্মদ আলী, অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া, মাসুদ আহমেদ তালুকদার, ব্যারিস্টার একেএম এহসানুর রহমান, অ্যাডভোকেট তাহেরুল ইসলাম, অ্যাডভোকেট সিদ্দিকউল্লাহ মিয়া প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া এ মামলার আসামি না হলেও হাজির হন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, যুগ্ম মহাসচিব বরকতউল্লাহ বুলু, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী প্রমুখ।
No comments