মধ্যরাতে বঙ্গবন্ধুর মাজারে গিয়েছিলেন তারেক রহমান
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মাজার জিয়ারত করেছিলেন বিএনপির তৎকালীন সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব বর্তমানে সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান। ঘটনাটি ২০০৪ সালের জানুয়ারি মাসের ২৭ তারিখ দিবাগত রাতের। ওই রাতে তারেক রহমান সদলবলে বঙ্গবন্ধুর মাজারেই শুধু যাননি, গিয়ে তিনি মাজারের খাদেমকে ডেকে তুলে এনে ফাতেহা পাঠ করেন। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন বিএনপির তৎকালীন সাংগঠনিক সম্পাদক আমান উল্লাহ আমান, রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, রশিদুজ্জামান মিল্লাত, সাইফুর রহমান নান্টু, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স এবং গোপালগঞ্জ জেলা বিএনপির তৎকালীন সভাপতি এম এইচ খান মঞ্জুসহ অন্য নেতারা। রাজনৈতিক অঙ্গনে ওই সময়ের এমন প্রশংসনীয় একটি ঘটনা মিডিয়ায় আসেনি। কারণ তখন ওই ঘটনাটি ছিল ‘টপ সিক্রেট’। সম্প্রতি বাংলাদেশ প্রতিদিনের অনুসন্ধানে বিষয়টি বেরিয়ে আসে। অনুসন্ধানে জানা যায়, তারেক রহমান টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর মাজারে যাওয়ার আগে কোথায় যাচ্ছেন সে বিষয়ে সঙ্গে থাকা দলের অন্য নেতাদের কাউকেই কিছু জানাননি। এমনকি তার সঙ্গে কোনো মিডিয়া কর্মীও ছিলেন না। তারেক তার সফরসঙ্গীদের শুধু বললেন, ‘আমরা এক জায়গায় যাব।’ সফরসঙ্গীরা হঠাৎ করেই দেখতে পেলেন গাড়িবহর গিয়ে থেমেছে বঙ্গবন্ধুর মাজার গেটে। তারপর তিনি হেঁটে মাজারের ভিতরে প্রবেশ করলেন। ডাকালেন মাজারের খাদেমকে। তারপর ফাতেহা পাঠ, দোয়া-দরুদ পড়লেন। এরই মধ্যে স্থানীয় নারী-পুরুষরা উপস্থিত হতে থাকলেন। দোয়া শেষে তারেক রহমান তাদের সঙ্গেও কথা বলেন। বাংলাদেশ প্রতিদিনের অনুসন্ধানে তারেক রহমানের সদলবলে বঙ্গবন্ধুর মাজার জিয়ারতে যাওয়ার সত্যতা নিশ্চিত হওয়া গেছে। ওই সফরের সঙ্গী একাধিক বিএনপি নেতা বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, তারা কেউই জানতেন না বঙ্গবন্ধুর মাজার জিয়ারতের বিষয়টি। পুরোটাই গোপন রাখা হয়েছিল। শুধু তারেক রহমানের দু-একজন ব্যক্তিগত স্টাফ এবং গোপালগঞ্জের স্থানীয় বিএনপি নেতাদের কয়েকজন সেটা আগে থেকে জানতেন।অনুসন্ধানে জানা গেছে, ২০০৪ সালের ২৭ জানুয়ারি গোপালগঞ্জ জেলা বিএনপির ইউনিয়ন প্রতিনিধি সভায় যোগ দেন তারেক রহমান। সারাদিন দলীয় অনুষ্ঠান শেষে সন্ধ্যায় সার্কিট হাউসে যান তারেক। সেখান থেকে রাতে ঢাকায় রওনা হওয়ার সময় হঠাৎ করেই উল্টো পথে যাত্রা করেন তারেক রহমান। এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে গোপালগঞ্জ জেলা বিএনপির তৎকালীন সভাপতি এম এইচ খান মঞ্জু বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, গোপালগঞ্জের প্রতিনিধি সম্মেলন শেষে রাতে তারেক রহমান সদলবলে টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর মাজার জিয়ারত করতে যান। এ বিষয়টি সফরসঙ্গী দলীয় নেতারা জানতে না পারলেও স্থানীয় নেতা হিসেবে তিনি ও আরও কয়েকজন আগে থেকেই জানতেন। তাই স্থানীয় নেতা-কর্মীরা আগে থেকেই বঙ্গবন্ধুর মাজারে উপস্থিত হন। তারেক রহমান মাজারে পৌঁছার পর সেখানে স্থানীয় নারী-পুরুষ মিলে প্রায় তিন থেকে চার শ লোক উপস্থিত হন। মঞ্জু বলেন, তারেক ফাতেহা পাঠ করেন এবং মাজারের খাদেম যখন দোয়া শুরু করেন তখন তারেক রহমান জোরে জোরে দোয়া পড়েন। সেখানে তিনি প্রায় দুই ঘণ্টা অবস্থান করেছিলেন। ওই বিএনপি নেতা আরও বলেন, বঙ্গবন্ধুর মাজার জিয়ারতের বিষয়ে স্থানীয় এবং সফরসঙ্গী দলীয় নেতারা প্রশ্ন করলে তারেক রহমান বলেন, জাতির পিতা হিসেবে উনাকে (বঙ্গবন্ধু) সম্মান ও শ্রদ্ধা জানাতে এসেছি। এম এইচ মঞ্জু বলেন, আমি মনে করি রাজনৈতিক নেতা হিসেবে তারেক রহমান বড় মনের পরিচয় দিয়েছেন। এলাকার মানুষও তার উপস্থিতিতে খুশি হয়েছে।একই বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপি নেতা সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ওই সময়ে সাংগঠনিক সফরের জন্য একটা জাতীয় কমিটি গঠন করা হয়েছিল। পরবর্তীতে একাধিক সাব-কমিটি গঠন করা হয়। ঢাকা বিভাগের সাব-কমিটি করা হয়েছিল তৎকালীন সাংগঠনিক সম্পাদক আমান উল্লাহ আমানের নেতৃত্বে। আমিও ওই টিমের একজন সদস্য ছিলাম। এ হিসেবে ২০০৪ সালের ২৭ জানুয়ারি গোপালগঞ্জের প্রতিনিধি সম্মেলনে অংশ নিয়েছিলাম। আমরা সারাদিন প্রতিনিধি সম্মেলন নিয়েই ব্যস্ত ছিলাম। কিন্তু ঘুণাক্ষরেও জানতে পারিনি বঙ্গবন্ধুর মাজার জিয়ারতের পরিকল্পনার বিষয়টি। তিনি আরও বলেন, প্রতিনিধি সম্মেলন চলাকালীন দলের কেউ কেউ তারেক রহমানকে বঙ্গবন্ধুর মাজার জিয়ারতের বিষয়টি বললে তিনি শুধু মুচকি হেসেছিলেন। কিন্তু প্রতিনিধি সম্মেলন শেষ হওয়ার পর আমরা সার্কিট হাউসে যাই। সেখানে বিশ্রাম শেষে রাতে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হতে আমরা গাড়িতে উঠলাম। হঠাৎ করে দেখি গাড়ি বহর উল্টো দিকে যাত্রা করেছে। তিনি সফরসঙ্গী নেতাদের শুধু বললেন, ‘আমাকে ফলো করো।’ তারপর দেখলাম গাড়িবহর গিয়ে থামল বঙ্গবন্ধুর মাজারের অদূরে। সেখান থেকে হেঁটে তারেক রহমান দলীয় নেতা-কর্মীদের নিয়ে বঙ্গবন্ধুর মাজারে গেলেন। দোয়া করলেন। প্রিন্স বলেন, তখন অনেকে এ বিষয়ে তারেক রহমানের দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, ‘আমরা কেন তার (বঙ্গবন্ধু) মাজারে যাব না? উনি আমাদের জাতীয় নেতা, সাবেক রাষ্ট্রপতি এবং বাংলাদেশের অন্যতম স্থপতি। আর আমি সাবেক রাষ্ট্রপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রীর ছেলে। যেহেতু আমি উনার জেলায় এসেছি সেহেতু আমার দায়িত্ব তার কবর জিয়ারত করা।’ এ ব্যাপারে জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তারেকের অপর একজন সফরসঙ্গী বলেন, জানুয়ারি মাসের ওই সফরের পর বঙ্গবন্ধুর মাজার জিয়ারতের ছবিটি মিডিয়ায় প্রকাশ করা হয়নি। কোনো মিডিয়াকেও জানানো হয়নি। তখনকার রাজনৈতিক পরিস্থিতিও ভিন্ন ছিল। বঙ্গবন্ধুর মাজার জিয়ারত করে বের হওয়ার পরপরই সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়ার মৃত্যু সংবাদটিও জানতে পারেন তারেক রহমান। ওই নেতা আরও বলেন, তারেক গাড়িতে বসেই সহকর্মীদের সামনে বঙ্গবন্ধুর ১৯৭১-এর ভূমিকার উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেন।
No comments