৬০০ কোটি টাকা নিয়ে উধাও কুসুম : অস্থির শিপব্রেকিং শিল্প
বিভিন্ন ব্যাংক ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ৬০০ কোটি টাকা নিয়ে ‘উধাও’ চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী গিয়াস উদ্দিন কুসুম। এ টাকার জন্য তার প্রতিষ্ঠানে নিত্য ভিড় করছেন পাওনাদাররা। সম্পত্তির দখল নিয়ে টাকা তুলতে বসিয়েছেন পাহারা। তার এ রহস্যজনক অন্তর্ধানে চট্টগ্রামে শিপ ব্রেকিং শিল্পে এখন চরম অস্থিরতা। পারস্পরিক বিশ্বাস ও আস্থাহীনতায় ভুগছে পুরো সেক্টর।
১০ বছর আগেও নুন আনতে পান্তা ফুরোয় অবস্থা ছিল কুসুমের। জীবন-জীবিকার জন্যে ছোটখাটো অনেক কিছু করেছেন। সীতাকুণ্ডে বাড়ির কাছে পোলট্রি ফার্ম দিয়ে ব্যবসা শুরু করেন ২০০৭ সালে। তেমন সুবিধা করতে না পেরে স্ক্র্যাপ লোহার ব্যবসায় যুক্ত হন। বড় বড় ব্যবসায়ীদের আস্থা অর্জন করায় বাকিতে মাল এনে বিক্রি করে টাকা শোধের সুযোগ পান। দাঁড়িয়ে যান এক সময়। নিজে মালিক হন শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ডের। আমদানি করেন পুরানো জাহাজ। ব্যাংকগুলো তাকে অকাতরে ঋণ দিতে থাকে। অন্যান্য ব্যবসায়ীরাও মুখের কথায় তার হাতে কোটি কোটি টাকা তুলে দিতে দ্বিধা করেননি। বিস্ময়কর উত্থানে তুলাতলি গ্রামের এ মানুষটির জীবনযাত্রা বদলে যায়। গ্রামে তৈরি করেন আলিশান বাড়ি। চলাফেরা করেন সর্বশেষ মডেলের প্রাডো গাড়িতে। এরপর হঠাৎই লাপাত্তা। বিভিন্ন ব্যাংক কুসুমের কাছে পাবে ২৫০ কোটি টাকার উপরে। স্ক্র্যাপ ব্যবসায় সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান পাবে আরও প্রায় ৩৫০ কোটি টাকা।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ফেব্র“য়ারিতে কাউকে কিছু না জানিয়ে হঠাৎ গিয়াস উদ্দিন কুসুম স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে প্রথমে যুক্তরাষ্ট্রে ভাইয়ের কাছে এবং পরে সেখান থেকে কানাডা গিয়ে আশ্রয় নেন। সীতাকুণ্ডের সোনাইছড়ি উপকূলে তার রয়েছে দুটি ইয়ার্ড। এর মধ্যে আল-মদিনা শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ডে কাটার অপেক্ষায় নোঙর করা আছে ‘এমটি আটলান্টা’ নামের একটি পুরানো জাহাজ। এটি কেটে বিক্রি করলে আদায় হবে একশ’ কোটি টাকার মতো। সে আশায় বিভিন্ন ব্যাংক ও পাওনাদার প্রতিষ্ঠান ওই ইয়ার্ডে পৃথক পৃথক নোটিশ বোর্ড টাঙিয়ে পাহারাদারও নিয়োগ দিয়েছে। এর কর্তৃত্ব কার হাতে থাকবে এ নিয়ে পাওনাদারদের মধ্যে চলছে দ্বন্দ্ব।
কুসুমের অফিস, গোডাউন, স্ক্র্যাপ রাখার বিশাল জায়গা এবং তার আলিশান বাড়িতেও একাধিক ব্যাংক-পাওনাদার একইভাবে নোটিশ টাঙিয়ে পাহারা বসিয়েছে। কুসুমের ব্যবহৃত বিলাসবহুল প্রাডো জিপ, দশটি কাভার্ড ভ্যান ও ট্রাক এবং অন্যান্য সম্পত্তি দখল নিয়েও চলছে পাওনাদারদের মধ্যে টানাহেঁচড়া। চিটাগাং এন্টারপ্রাইজ নামে এক প্রতিষ্ঠান ৩০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে কুসুমের বিরুদ্ধে মামলা করেছে।
পাওনাদারদের মধ্যে রয়েছেন- ঢাকার রহিমা ইস্পাতের মালিক সুমন (১২ কোটি টাকা), চট্টগ্রামের কদমতলীর ইউনিক স্টিল (১০ কোটি), বাবুল (৫০ কোটি), সেকান্দার (১৫ কোটি), চসিকের এক কাউন্সিলর ২৬ কোটি টাকাসহ শতাধিক ব্যবসায়ী।
সংশ্লিষ্টরা জানান, আগে লোহা ও স্ক্র্যাপ ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন ইয়ার্ড মালিকদের অগ্রিম কোটি কোটি টাকা নিতেন স্ক্র্যাপের জন্য। কিন্তু কুসুমের অন্তর্ধানের পর এখন অগ্রিম লেনদেন প্রায় বন্ধ। পুঁজি হারিয়ে অনেক ব্যবসায়ী ফতুর হওয়ার উপক্রম হওয়ায় ব্যবসা-বাণিজ্যে নেমে এসেছে স্থবিরতা।
বাংলাদেশ শিপ ব্রেকার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. হেফাজতুর রহমান জানান, কুসুমের পালিয়ে যাওয়ার ঘটনায় বিশ্বাস ও আস্থার সংকট তৈরি হয়েছে। এ ঘটনায় ব্যাংকগুলো আতংকগ্রস্ত হয়ে ঋণ প্রদানে বেশি সতর্ক হয়েছে। ঝুঁকি নিতে চাচ্ছে না। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা বড় অংকের লেনদেন বন্ধ করে দিয়েছেন। এসব কারণে এ শিল্পে ব্যবসা-বাণিজ্যে এখন চরম মন্দা বিরাজ করছে।
ব্যাংক এশিয়ার উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ রোসাঙ্গীর যুগান্তরকে জানান, কুসুমের কাছে তাদের মূল পাওনা ৫২ কোটি টাকা। সুদসহ তা আরও বেশি। যে জাহাজটি বর্তমানে ইয়ার্ডে আছে তার এলসি ব্যাংকের নামে। সেজন্য আমরা জাহাজটি কঠোর নিরাপত্তায় রেখেছি। যমুনা ব্যাংকের ভাটিয়ারি শাখার ব্যবস্থাপক ইয়াসিন সিদ্দিকী জানান, কুসুমের কাছে তাদের পাওনা ১০ কোটি টাকা। এর বিপরীতে গ্রামের বাড়ি বন্ধক রয়েছে। সেটা তারা আগলে রেখেছেন। মার্কেন্টাইল ও আইএফআইসি ব্যাংকসহ আরও কয়েকটি ব্যাংক পাওনা আদায় নিয়ে উদ্বিগ্ন।
কুসুমের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য বিভিন্ন মাধ্যমে চেষ্টা করা করে যুগান্তর। কিন্তু কোনোভাবেই সম্ভব না হওয়ায় তার ছোট ভাই জসীম উদ্দিনের সঙ্গে কথা বলে। তিনি জানান, তার ভাই কুসুম পালিয়ে যাননি। ব্যবসায় মার খেয়ে আপাতত সরে থাকতে বাধ্য হয়েছেন। বর্তমান ইয়ার্ডে ১০০ কোটি টাকা দামের জাহাজ আছে, ইয়ার্ডের দাম ৪০ কোটি টাকা, মালামাল আছে ১৫ কোটি টাকার, জমি-সম্পদ আছে ১০০ কোটি টাকার, সরঞ্জাম আছে ৩০ কোটি টাকার। ড্রাম ট্রাক, স্কেভেটর, ট্রাক, প্রাডো জিপ মিলিয়ে ২০ কোটি টাকার সম্পদ আছে।
জসীমের মতে, ইয়ার্ডে থাকা শিপটি কাটার ব্যবস্থা করেছেন কিন্তু কিছু পাওনাদার কুসুম যাতে দেশে ফিরতে না পারে সেজন্য মামলা করে দেন। তিনি আরও একটি জাহাজ কিনতে এমও করেছেন। যাতে নতুন জাহাজ কিনতে না পারেন সেজন্য কিছু লোক এ পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছেন। পাওনাদারদের টাকা পরিশোধের ইচ্ছে না থাকলে তিনি জাহাজ ও সম্পত্তি বিক্রি করে দেশ ছাড়তেন। তাছাড়া আসলাম চৌধুরীসহ (৮৫ কোটি) অনেকের কাছে তিনি বিপুল টাকা পাবেন। যা এখন তারা অস্বীকার করছেন। বিএনপি উত্তর জেলার আহ্বায়ক আসলাম চৌধুরী শনিবার যুগান্তরকে জানান, কুসুমের হিসাবে সে আমার কাছে এক থেকে দেড় কোটি টাকা পাবে। কিন্তু আমার হিসাবে আমি তার কাছে ৩৩ লাখ টাকা পাই। সামনাসামনি বসলে এটা পরিষ্কার হবে। তিনি বলেন, আমরা চাই সে ফিরে আসুক। সবাই তাকে সহযোগিতা করবে।
আমাদের সীতাকুণ্ড প্রতিনিধি ফোরকান আবু ব্যবসায়ী গিয়াস উদ্দিন কুসুমের ইয়ার্ড, অফিস ও বাড়ি পরিদর্শন করে জানিয়েছেন, প্রতিদিন পাওনাদাররা তার ইয়ার্ড ও বাড়িতে হাজির হচ্ছেন। তার সম্পত্তি কে কোনটা দখলে নেবেন সে নিয়ে চলছে প্রতিযোগিতা। পাওনাদারদের টাকা আদায়ে মধ্যস্থতাকারী স্থানীয় ব্যবসায়ী মোহাম্মদ রফিক জানান, ঘটনার পর থেকে কুসুমের কাছ থেকে পাওনাদারদের টাকা আদায়ের চেষ্টা তিনি করেছিলেন। দেশত্যাগের পর কুসুম তার সঙ্গে একবার যোগাযোগ করেন। পরে আর কোনো যোগাযোগ করেননি। এখন এ ব্যাপারে তার আর কোনো ভূমিকা নেই।
এক পাওনাদার মো. নুরুল আমিন জানান, তিনি ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে সাড়ে ৮ কোটি টাকা কুসুমকে প্লেটের বিপরীতে অগ্রিম বাবদ দিয়েছিলেন। কিন্তু এখন চরম বেকায়দায় পড়েছেন। ব্যাংকের টাকা পরিশোধে ব্যর্থ হওয়ায় তাকে ব্যাংক আর কোনো ঋণ দিচ্ছে না। মোহাম্মদ জয়নাল জানান, অগ্রিম বাবদ তারা ১২ জন মিলে ২৭ কোটি টাকা দিয়েছিলেন। কিন্তু কুসুম টাকা বা মাল না দিয়ে পালিয়ে যাওয়ায় তারা খুবই বিপদে পড়ে গেছেন। এ কারণে তিনি মামলা করেছেন। ব্যবসায়ী মো. জামাল পাশা বলেন, তিনি ও তার দুই ভাই প্লেটের বিপরীতে কুসুমকে ৭ কোটি টাকা অগ্রিম দেন। ব্যাংক থেকে নেয়া ঋণের টাকা তাকে দেয়ায় এখন ব্যাংকের চাপে রয়েছেন তারা।
১০ বছর আগেও নুন আনতে পান্তা ফুরোয় অবস্থা ছিল কুসুমের। জীবন-জীবিকার জন্যে ছোটখাটো অনেক কিছু করেছেন। সীতাকুণ্ডে বাড়ির কাছে পোলট্রি ফার্ম দিয়ে ব্যবসা শুরু করেন ২০০৭ সালে। তেমন সুবিধা করতে না পেরে স্ক্র্যাপ লোহার ব্যবসায় যুক্ত হন। বড় বড় ব্যবসায়ীদের আস্থা অর্জন করায় বাকিতে মাল এনে বিক্রি করে টাকা শোধের সুযোগ পান। দাঁড়িয়ে যান এক সময়। নিজে মালিক হন শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ডের। আমদানি করেন পুরানো জাহাজ। ব্যাংকগুলো তাকে অকাতরে ঋণ দিতে থাকে। অন্যান্য ব্যবসায়ীরাও মুখের কথায় তার হাতে কোটি কোটি টাকা তুলে দিতে দ্বিধা করেননি। বিস্ময়কর উত্থানে তুলাতলি গ্রামের এ মানুষটির জীবনযাত্রা বদলে যায়। গ্রামে তৈরি করেন আলিশান বাড়ি। চলাফেরা করেন সর্বশেষ মডেলের প্রাডো গাড়িতে। এরপর হঠাৎই লাপাত্তা। বিভিন্ন ব্যাংক কুসুমের কাছে পাবে ২৫০ কোটি টাকার উপরে। স্ক্র্যাপ ব্যবসায় সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান পাবে আরও প্রায় ৩৫০ কোটি টাকা।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ফেব্র“য়ারিতে কাউকে কিছু না জানিয়ে হঠাৎ গিয়াস উদ্দিন কুসুম স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে প্রথমে যুক্তরাষ্ট্রে ভাইয়ের কাছে এবং পরে সেখান থেকে কানাডা গিয়ে আশ্রয় নেন। সীতাকুণ্ডের সোনাইছড়ি উপকূলে তার রয়েছে দুটি ইয়ার্ড। এর মধ্যে আল-মদিনা শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ডে কাটার অপেক্ষায় নোঙর করা আছে ‘এমটি আটলান্টা’ নামের একটি পুরানো জাহাজ। এটি কেটে বিক্রি করলে আদায় হবে একশ’ কোটি টাকার মতো। সে আশায় বিভিন্ন ব্যাংক ও পাওনাদার প্রতিষ্ঠান ওই ইয়ার্ডে পৃথক পৃথক নোটিশ বোর্ড টাঙিয়ে পাহারাদারও নিয়োগ দিয়েছে। এর কর্তৃত্ব কার হাতে থাকবে এ নিয়ে পাওনাদারদের মধ্যে চলছে দ্বন্দ্ব।
কুসুমের অফিস, গোডাউন, স্ক্র্যাপ রাখার বিশাল জায়গা এবং তার আলিশান বাড়িতেও একাধিক ব্যাংক-পাওনাদার একইভাবে নোটিশ টাঙিয়ে পাহারা বসিয়েছে। কুসুমের ব্যবহৃত বিলাসবহুল প্রাডো জিপ, দশটি কাভার্ড ভ্যান ও ট্রাক এবং অন্যান্য সম্পত্তি দখল নিয়েও চলছে পাওনাদারদের মধ্যে টানাহেঁচড়া। চিটাগাং এন্টারপ্রাইজ নামে এক প্রতিষ্ঠান ৩০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে কুসুমের বিরুদ্ধে মামলা করেছে।
পাওনাদারদের মধ্যে রয়েছেন- ঢাকার রহিমা ইস্পাতের মালিক সুমন (১২ কোটি টাকা), চট্টগ্রামের কদমতলীর ইউনিক স্টিল (১০ কোটি), বাবুল (৫০ কোটি), সেকান্দার (১৫ কোটি), চসিকের এক কাউন্সিলর ২৬ কোটি টাকাসহ শতাধিক ব্যবসায়ী।
সংশ্লিষ্টরা জানান, আগে লোহা ও স্ক্র্যাপ ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন ইয়ার্ড মালিকদের অগ্রিম কোটি কোটি টাকা নিতেন স্ক্র্যাপের জন্য। কিন্তু কুসুমের অন্তর্ধানের পর এখন অগ্রিম লেনদেন প্রায় বন্ধ। পুঁজি হারিয়ে অনেক ব্যবসায়ী ফতুর হওয়ার উপক্রম হওয়ায় ব্যবসা-বাণিজ্যে নেমে এসেছে স্থবিরতা।
বাংলাদেশ শিপ ব্রেকার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. হেফাজতুর রহমান জানান, কুসুমের পালিয়ে যাওয়ার ঘটনায় বিশ্বাস ও আস্থার সংকট তৈরি হয়েছে। এ ঘটনায় ব্যাংকগুলো আতংকগ্রস্ত হয়ে ঋণ প্রদানে বেশি সতর্ক হয়েছে। ঝুঁকি নিতে চাচ্ছে না। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা বড় অংকের লেনদেন বন্ধ করে দিয়েছেন। এসব কারণে এ শিল্পে ব্যবসা-বাণিজ্যে এখন চরম মন্দা বিরাজ করছে।
ব্যাংক এশিয়ার উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ রোসাঙ্গীর যুগান্তরকে জানান, কুসুমের কাছে তাদের মূল পাওনা ৫২ কোটি টাকা। সুদসহ তা আরও বেশি। যে জাহাজটি বর্তমানে ইয়ার্ডে আছে তার এলসি ব্যাংকের নামে। সেজন্য আমরা জাহাজটি কঠোর নিরাপত্তায় রেখেছি। যমুনা ব্যাংকের ভাটিয়ারি শাখার ব্যবস্থাপক ইয়াসিন সিদ্দিকী জানান, কুসুমের কাছে তাদের পাওনা ১০ কোটি টাকা। এর বিপরীতে গ্রামের বাড়ি বন্ধক রয়েছে। সেটা তারা আগলে রেখেছেন। মার্কেন্টাইল ও আইএফআইসি ব্যাংকসহ আরও কয়েকটি ব্যাংক পাওনা আদায় নিয়ে উদ্বিগ্ন।
কুসুমের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য বিভিন্ন মাধ্যমে চেষ্টা করা করে যুগান্তর। কিন্তু কোনোভাবেই সম্ভব না হওয়ায় তার ছোট ভাই জসীম উদ্দিনের সঙ্গে কথা বলে। তিনি জানান, তার ভাই কুসুম পালিয়ে যাননি। ব্যবসায় মার খেয়ে আপাতত সরে থাকতে বাধ্য হয়েছেন। বর্তমান ইয়ার্ডে ১০০ কোটি টাকা দামের জাহাজ আছে, ইয়ার্ডের দাম ৪০ কোটি টাকা, মালামাল আছে ১৫ কোটি টাকার, জমি-সম্পদ আছে ১০০ কোটি টাকার, সরঞ্জাম আছে ৩০ কোটি টাকার। ড্রাম ট্রাক, স্কেভেটর, ট্রাক, প্রাডো জিপ মিলিয়ে ২০ কোটি টাকার সম্পদ আছে।
জসীমের মতে, ইয়ার্ডে থাকা শিপটি কাটার ব্যবস্থা করেছেন কিন্তু কিছু পাওনাদার কুসুম যাতে দেশে ফিরতে না পারে সেজন্য মামলা করে দেন। তিনি আরও একটি জাহাজ কিনতে এমও করেছেন। যাতে নতুন জাহাজ কিনতে না পারেন সেজন্য কিছু লোক এ পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছেন। পাওনাদারদের টাকা পরিশোধের ইচ্ছে না থাকলে তিনি জাহাজ ও সম্পত্তি বিক্রি করে দেশ ছাড়তেন। তাছাড়া আসলাম চৌধুরীসহ (৮৫ কোটি) অনেকের কাছে তিনি বিপুল টাকা পাবেন। যা এখন তারা অস্বীকার করছেন। বিএনপি উত্তর জেলার আহ্বায়ক আসলাম চৌধুরী শনিবার যুগান্তরকে জানান, কুসুমের হিসাবে সে আমার কাছে এক থেকে দেড় কোটি টাকা পাবে। কিন্তু আমার হিসাবে আমি তার কাছে ৩৩ লাখ টাকা পাই। সামনাসামনি বসলে এটা পরিষ্কার হবে। তিনি বলেন, আমরা চাই সে ফিরে আসুক। সবাই তাকে সহযোগিতা করবে।
আমাদের সীতাকুণ্ড প্রতিনিধি ফোরকান আবু ব্যবসায়ী গিয়াস উদ্দিন কুসুমের ইয়ার্ড, অফিস ও বাড়ি পরিদর্শন করে জানিয়েছেন, প্রতিদিন পাওনাদাররা তার ইয়ার্ড ও বাড়িতে হাজির হচ্ছেন। তার সম্পত্তি কে কোনটা দখলে নেবেন সে নিয়ে চলছে প্রতিযোগিতা। পাওনাদারদের টাকা আদায়ে মধ্যস্থতাকারী স্থানীয় ব্যবসায়ী মোহাম্মদ রফিক জানান, ঘটনার পর থেকে কুসুমের কাছ থেকে পাওনাদারদের টাকা আদায়ের চেষ্টা তিনি করেছিলেন। দেশত্যাগের পর কুসুম তার সঙ্গে একবার যোগাযোগ করেন। পরে আর কোনো যোগাযোগ করেননি। এখন এ ব্যাপারে তার আর কোনো ভূমিকা নেই।
এক পাওনাদার মো. নুরুল আমিন জানান, তিনি ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে সাড়ে ৮ কোটি টাকা কুসুমকে প্লেটের বিপরীতে অগ্রিম বাবদ দিয়েছিলেন। কিন্তু এখন চরম বেকায়দায় পড়েছেন। ব্যাংকের টাকা পরিশোধে ব্যর্থ হওয়ায় তাকে ব্যাংক আর কোনো ঋণ দিচ্ছে না। মোহাম্মদ জয়নাল জানান, অগ্রিম বাবদ তারা ১২ জন মিলে ২৭ কোটি টাকা দিয়েছিলেন। কিন্তু কুসুম টাকা বা মাল না দিয়ে পালিয়ে যাওয়ায় তারা খুবই বিপদে পড়ে গেছেন। এ কারণে তিনি মামলা করেছেন। ব্যবসায়ী মো. জামাল পাশা বলেন, তিনি ও তার দুই ভাই প্লেটের বিপরীতে কুসুমকে ৭ কোটি টাকা অগ্রিম দেন। ব্যাংক থেকে নেয়া ঋণের টাকা তাকে দেয়ায় এখন ব্যাংকের চাপে রয়েছেন তারা।
No comments