সরকারের বোধোদয় হোক by মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন
দেশের রাজনীতিতে এক অস্বস্তিকর পরিস্থিতি বিরাজ করছে। সংকট সমাধানের কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। সংকট উত্তরণে সরকার কারও কোনো কথাই আমলে নিচ্ছে না। ৭ নভেম্বর বিএনপি জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস হিসেবে পালন করে। এ উপলক্ষে পরদিন ৮ নভেম্বর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করতে চেয়েছিল বিএনপি। কিন্তু সেই গণতান্ত্রিক অধিকারও হরণ করেছে সরকার। বিএনপিকে সমাবেশ করার অনুমতি দেয়নি ঢাকা মহানগর পুলিশ। প্রতিদিন হতাশাজনক কথা সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে। ২৫ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ‘খালেদা জিয়াকেও ছাড় দেয়া হবে না।’ তার একদিন পর মন্ত্রী কামরুল ইসলাম বলেছেন, ‘খালেদা জিয়ার মামলা কিছুতেই বিলম্ব করা যাবে না।’ অর্থাৎ দ্রুত খালেদা জিয়াকে জেলে নিতে হবে। খালেদা জিয়াকে জেলে নেয়া রাজনৈতিক সংকটের সমাধান নয় বরং এটা হবে জ্বলন্ত আগুনে পেট্রল ঢেলে দেয়ার শামিল। মইন-ফখরুদ্দীনের সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারও খালেদা-হাসিনাকে জেলে নিয়েছিল। কিন্তু পরে তাদের ‘ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি’র মতো অবস্থা হয়েছিল- এটি সবারই জানা। কাজেই খালেদা জিয়াকে জেলে নেয়ার মতো বিপজ্জনক রাজনৈতিক খেলা বন্ধ করতে হবে।
বেরিয়ে আসতে হবে দোষারোপের রাজনীতি থেকেও। একে অপরকে দোষারোপের বৃত্ত থেকে রাজনৈতিক নেতানেত্রীরা কিছুতেই বেরিয়ে আসতে পারছেন না। বরং এ তালিকায় যোগ হচ্ছে নতুন নতুন বিতর্ক। সরকারের শীর্ষ ব্যক্তিরা বলেছেন, ‘নির্বাচনে অংশ না নিয়ে বিএনপি ভুল করেছে’, ‘বিএনপি পচে গেছে’, ‘বিএনপিকে আমরা ফরমালিন দিয়ে বাঁচিয়ে রেখেছি’ ইত্যাদি। তাদের কাছে বিনীত প্রশ্ন, বিএনপি না হয় পচেছে; কিন্তু আওয়ামী লীগ? ৫ জানুয়ারি একতরফা নির্বাচন করে আওয়ামী লীগও কি ঠিক আছে? আওয়ামী লীগের একজন আরেকজনকে নৃশংসভাবে মেরে পেট কেটে, ইট বেঁধে লাশ নদীতে ফেলে দিচ্ছে। শুধু তাই নয়, বর্বর ও নিষ্ঠুরভাবে লাশ আগুন দিয়েও পুড়িয়ে দিচ্ছে। এসব কি কোনো সুস্থ রাজনৈতিক দলের কাজ? এমন নৃশংস রাজনীতির পৃষ্ঠপোষকতা করে রাষ্ট্র কী পাবে? সব দলের অংশগ্রহণে একটি সুষ্ঠু ও পক্ষপাতহীন নির্বাচন না হলে দেশে সুস্থ রাজনৈতিক ধারা ফিরে আসবে না।
আমরা দেশে সুস্থ রাজনীতি চাই। রাজনীতিতে কেউ কারও শত্র“ নয়, প্রতিপক্ষ মাত্র। এ বাস্তবতা মেনেই রাজনীতি করতে হয়। বিএনপি যদি পচে যায়, সেটা আওয়ামী লীগের জন্য হিতকর নয়। অনুরূপ আওয়ামী লীগও যদি পচে যায়, সেটা বিএনপির জন্যও মঙ্গলজনক নয়। কারণ এ দুটি দল বাংলাদেশের রাজনীতির ভারসাম্য। ৫ জানুয়ারির একতরফা নির্বাচনের পর দেশের রাজনীতির ভারসাম্য লংঘিত হয়েছে। এই ভারসাম্য ফিরিয়ে আনতে সব দলের অংশগ্রহণে দ্রুত একটি নির্বাচনের প্রয়োজন। এ বাস্তবতা শাসক দলকে মেনে নিতে হবে।
নয়তো রাষ্ট্র সঠিকভাবে চলবে না, গুম-খুনও বন্ধ হবে না, বন্ধ হবে না রাজনীতির পচনও।
আসলে ভারসাম্য ছাড়া কোনো কিছুই সঠিকভাবে চলতে পারে না। ৫ জানুয়ারি একতরফা নির্বাচনের পর বাংলাদেশের রাজনীতিতে ভারসাম্য লংঘিত হয়েছে। তাই বাংলাদেশ সঠিকভাবে চলছে না। একটা অনিশ্চয়তা ও আতংক সর্বত্র বিরাজ করছে। বিএনপিকে ছাড়া আওয়ামী লীগ যেমন অচল, তেমনি আওয়ামী লীগকে ছাড়াও বিএনপি অচল। এ অনিবার্য সত্য উভয় দলকেই মানতে হবে, তাহলেই দেশে মারামারি-কাটাকাটি বন্ধ হবে। নয়তো কোনো নেতানেত্রীর পক্ষেই দেশে স্থায়ী শান্তি ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে না।
সরকারের কোনো মত ও সিদ্ধান্ত পছন্দ না হলে প্রতিবাদ অবশ্যই হবে এবং সে প্রতিবাদ জরুরিও। কারণ তা সরকারকে সঠিক পথে চলতে সাহায্য করে। কিন্তু যৌক্তিক প্রতিবাদ সহ্য করার মতো শক্তি বর্তমান ক্ষমতাসীন দলের নেই। তাই তারা বিরোধী দলকে রাজপথে দাঁড়াতে দিতেও রাজি নয়। সরকারের অব্যাহত দমননীতির কারণে প্রধান বিরোধী দল রাজপথ থেকে বিতাড়িত হয়ে ঘরোয়া সভা-সমাবেশের পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে, কিন্তু সেখানেও সরকারের বাধা। কিছুদিন আগে খালেদা জিয়ার দুটি ঘরোয়া সমাবেশ সরকার পণ্ড করে দিয়েছে। দেশের অন্যতম বৃহৎ একটি দল যদি রাজনীতি করার সুযোগ না পায়, তাহলে দেশ কীভাবে চলবে? কীভাবে রাজনীতি ঠিক হবে, কীভাবে দেশে গণতন্ত্র শক্তিশালী হবে? বিএনপির মতো একটি রাজনৈতিক দলকে রাষ্ট্র পরিচালনা প্রক্রিয়ার
বাইরে রেখে এবং নজিরবিহীন দমনপীড়ন চালিয়ে দেশ সঠিকভাবে চলতে পারে না।
ক্ষমতাসীন দলের অন্তর্কোন্দল ছড়িয়ে পড়েছে সর্বত্র। এটা নিয়ন্ত্রণ করার শক্তিও যেন তারা হারিয়ে ফেলেছে। এভাবে চলতে থাকলে নিজেরা মারামারি করেই রসাতলে যাবে। কাজেই এ থেকে পরিত্রাণ চাইলে রাজনীতিকে সঠিক পথে চলতে দিতে হবে। বিরোধী দলের ওপর দমনপীড়ন বন্ধ করতে হবে। তাদের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড করার সুযোগ দিতে হবে। রাজনৈতিক সংকট সমাধানের বাস্তবধর্মী উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের পথ তৈরি করতে দ্রুত সংলাপে বসার ব্যবস্থা করতে হবে।
জাতি হিসেবে সব দিক থেকে আমরা বিভক্ত। বিভক্ত জাতি সাহসহীন, আশাহীন বিপন্ন এক জাতিতে পরিণত হয়। আমরাও আজ এক বিপন্ন জাতিতে পরিণত হয়েছি। গুম-খুন ও অপহরণ আতংকে দেশের মানুষ শান্তিতে ঘুমাতে পারে না, রাস্তায় চলাচল করতে পারে না, ব্যবসা-বাণিজ্য করতে পারে না। এভাবে একটি রাষ্ট্র চলতে পারে না। বলতে দ্বিধা নেই, একটি সংকটময় সময় অতিক্রম করছে দেশ। এ থেকে বেরিয়ে আসতে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐক্যের বিকল্প নেই। যে কারণেই হোক, গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা ব্যাহত হলে দেশ ও জনগণ যে অপূরণীয় ক্ষতির সম্মুখীন হবে, তা অনুধাবন করতে হবে সবাইকেই।
অন্যসব দাবি নিয়ে বিতর্ক থাকলেও বিরোধী দলের নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারের দাবি নিরেট গণতান্ত্রিক দাবি। এ দাবির সঙ্গে সর্বস্তরের মানুষের সম্পৃক্ততা রয়েছে। কারণ এর সঙ্গে ভোটাধিকারের প্রশ্ন জড়িত। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ ভোট দিতে পারেনি। মানুষ চায় সব দলের অংশগ্রহণে দেশে দ্রুত একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক। কিন্তু এর কোনো বাস্তব লক্ষণ দৃশ্যমান হচ্ছে না। তাই মানুষের শংকাও দূর হচ্ছে না। আস্থা ফিরে পাচ্ছে না ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগকারীরা। তাই ব্যবসা ও বিনিয়োগে নেমে এসেছে স্থবিরতা। তবে আশার কথা হল, বিরোধী দল বিশেষত বিএনপি রাজনৈতিক কর্মসূচি দেয়ার ক্ষেত্রে অত্যন্ত দায়িত্বশীলতার পরিচয়
দিচ্ছে। তাদের এই দায়িত্বশীলতা সর্বমহলে প্রশংসিত হচ্ছে। এর ফলে তারা রাজনৈতিকভাবে এগিয়ে
যাচ্ছে। পক্ষান্তরে একতরফা নির্বাচন করে ক্ষমতাসীন দল রাজনীতিতে নিঃসন্দেহে পিছিয়ে পড়েছে।
গুম, খুন ও অপহরণের দায় তাদের নিতে হচ্ছে।
সরকারের সাংবিধানিক দায়িত্ব যে কোনো নাগরিকের জীবনের নিরাপত্তা দেয়া। রাষ্ট্রের কোনো নাগরিক গুম বা খুন হলে দোষীদের গ্রেফতার করা এবং বিচারে সোপর্দ করা। সরকার যদি তা না করে, তাহলে বুঝতে হবে অপরাধীরা সরকারের লোক বলে বিচার করতে অনিচ্ছুক। নয়তো সরকার অপরাধী শনাক্ত করতে বা অপরাধের বিচার করতে অক্ষম। যদি এর কোনোটিও সত্য হয়, তাহলে সেই সরকারের ক্ষমতায় থাকার নৈতিক অধিকার কোথায়? জনগণকে অস্বস্তি ও আতংকে রেখে রাষ্ট্র সঠিকভাবে চলতে পারে না। জনগণের নিরাপত্তা ও সব মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করার দায়িত্ব সরকারের এবং এ শপথ নিয়েই তারা ক্ষমতাসীন হয়েছেন।
মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন : রাজনৈতিক বিশ্লেষক
বেরিয়ে আসতে হবে দোষারোপের রাজনীতি থেকেও। একে অপরকে দোষারোপের বৃত্ত থেকে রাজনৈতিক নেতানেত্রীরা কিছুতেই বেরিয়ে আসতে পারছেন না। বরং এ তালিকায় যোগ হচ্ছে নতুন নতুন বিতর্ক। সরকারের শীর্ষ ব্যক্তিরা বলেছেন, ‘নির্বাচনে অংশ না নিয়ে বিএনপি ভুল করেছে’, ‘বিএনপি পচে গেছে’, ‘বিএনপিকে আমরা ফরমালিন দিয়ে বাঁচিয়ে রেখেছি’ ইত্যাদি। তাদের কাছে বিনীত প্রশ্ন, বিএনপি না হয় পচেছে; কিন্তু আওয়ামী লীগ? ৫ জানুয়ারি একতরফা নির্বাচন করে আওয়ামী লীগও কি ঠিক আছে? আওয়ামী লীগের একজন আরেকজনকে নৃশংসভাবে মেরে পেট কেটে, ইট বেঁধে লাশ নদীতে ফেলে দিচ্ছে। শুধু তাই নয়, বর্বর ও নিষ্ঠুরভাবে লাশ আগুন দিয়েও পুড়িয়ে দিচ্ছে। এসব কি কোনো সুস্থ রাজনৈতিক দলের কাজ? এমন নৃশংস রাজনীতির পৃষ্ঠপোষকতা করে রাষ্ট্র কী পাবে? সব দলের অংশগ্রহণে একটি সুষ্ঠু ও পক্ষপাতহীন নির্বাচন না হলে দেশে সুস্থ রাজনৈতিক ধারা ফিরে আসবে না।
আমরা দেশে সুস্থ রাজনীতি চাই। রাজনীতিতে কেউ কারও শত্র“ নয়, প্রতিপক্ষ মাত্র। এ বাস্তবতা মেনেই রাজনীতি করতে হয়। বিএনপি যদি পচে যায়, সেটা আওয়ামী লীগের জন্য হিতকর নয়। অনুরূপ আওয়ামী লীগও যদি পচে যায়, সেটা বিএনপির জন্যও মঙ্গলজনক নয়। কারণ এ দুটি দল বাংলাদেশের রাজনীতির ভারসাম্য। ৫ জানুয়ারির একতরফা নির্বাচনের পর দেশের রাজনীতির ভারসাম্য লংঘিত হয়েছে। এই ভারসাম্য ফিরিয়ে আনতে সব দলের অংশগ্রহণে দ্রুত একটি নির্বাচনের প্রয়োজন। এ বাস্তবতা শাসক দলকে মেনে নিতে হবে।
নয়তো রাষ্ট্র সঠিকভাবে চলবে না, গুম-খুনও বন্ধ হবে না, বন্ধ হবে না রাজনীতির পচনও।
আসলে ভারসাম্য ছাড়া কোনো কিছুই সঠিকভাবে চলতে পারে না। ৫ জানুয়ারি একতরফা নির্বাচনের পর বাংলাদেশের রাজনীতিতে ভারসাম্য লংঘিত হয়েছে। তাই বাংলাদেশ সঠিকভাবে চলছে না। একটা অনিশ্চয়তা ও আতংক সর্বত্র বিরাজ করছে। বিএনপিকে ছাড়া আওয়ামী লীগ যেমন অচল, তেমনি আওয়ামী লীগকে ছাড়াও বিএনপি অচল। এ অনিবার্য সত্য উভয় দলকেই মানতে হবে, তাহলেই দেশে মারামারি-কাটাকাটি বন্ধ হবে। নয়তো কোনো নেতানেত্রীর পক্ষেই দেশে স্থায়ী শান্তি ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে না।
সরকারের কোনো মত ও সিদ্ধান্ত পছন্দ না হলে প্রতিবাদ অবশ্যই হবে এবং সে প্রতিবাদ জরুরিও। কারণ তা সরকারকে সঠিক পথে চলতে সাহায্য করে। কিন্তু যৌক্তিক প্রতিবাদ সহ্য করার মতো শক্তি বর্তমান ক্ষমতাসীন দলের নেই। তাই তারা বিরোধী দলকে রাজপথে দাঁড়াতে দিতেও রাজি নয়। সরকারের অব্যাহত দমননীতির কারণে প্রধান বিরোধী দল রাজপথ থেকে বিতাড়িত হয়ে ঘরোয়া সভা-সমাবেশের পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে, কিন্তু সেখানেও সরকারের বাধা। কিছুদিন আগে খালেদা জিয়ার দুটি ঘরোয়া সমাবেশ সরকার পণ্ড করে দিয়েছে। দেশের অন্যতম বৃহৎ একটি দল যদি রাজনীতি করার সুযোগ না পায়, তাহলে দেশ কীভাবে চলবে? কীভাবে রাজনীতি ঠিক হবে, কীভাবে দেশে গণতন্ত্র শক্তিশালী হবে? বিএনপির মতো একটি রাজনৈতিক দলকে রাষ্ট্র পরিচালনা প্রক্রিয়ার
বাইরে রেখে এবং নজিরবিহীন দমনপীড়ন চালিয়ে দেশ সঠিকভাবে চলতে পারে না।
ক্ষমতাসীন দলের অন্তর্কোন্দল ছড়িয়ে পড়েছে সর্বত্র। এটা নিয়ন্ত্রণ করার শক্তিও যেন তারা হারিয়ে ফেলেছে। এভাবে চলতে থাকলে নিজেরা মারামারি করেই রসাতলে যাবে। কাজেই এ থেকে পরিত্রাণ চাইলে রাজনীতিকে সঠিক পথে চলতে দিতে হবে। বিরোধী দলের ওপর দমনপীড়ন বন্ধ করতে হবে। তাদের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড করার সুযোগ দিতে হবে। রাজনৈতিক সংকট সমাধানের বাস্তবধর্মী উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের পথ তৈরি করতে দ্রুত সংলাপে বসার ব্যবস্থা করতে হবে।
জাতি হিসেবে সব দিক থেকে আমরা বিভক্ত। বিভক্ত জাতি সাহসহীন, আশাহীন বিপন্ন এক জাতিতে পরিণত হয়। আমরাও আজ এক বিপন্ন জাতিতে পরিণত হয়েছি। গুম-খুন ও অপহরণ আতংকে দেশের মানুষ শান্তিতে ঘুমাতে পারে না, রাস্তায় চলাচল করতে পারে না, ব্যবসা-বাণিজ্য করতে পারে না। এভাবে একটি রাষ্ট্র চলতে পারে না। বলতে দ্বিধা নেই, একটি সংকটময় সময় অতিক্রম করছে দেশ। এ থেকে বেরিয়ে আসতে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐক্যের বিকল্প নেই। যে কারণেই হোক, গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা ব্যাহত হলে দেশ ও জনগণ যে অপূরণীয় ক্ষতির সম্মুখীন হবে, তা অনুধাবন করতে হবে সবাইকেই।
অন্যসব দাবি নিয়ে বিতর্ক থাকলেও বিরোধী দলের নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারের দাবি নিরেট গণতান্ত্রিক দাবি। এ দাবির সঙ্গে সর্বস্তরের মানুষের সম্পৃক্ততা রয়েছে। কারণ এর সঙ্গে ভোটাধিকারের প্রশ্ন জড়িত। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ ভোট দিতে পারেনি। মানুষ চায় সব দলের অংশগ্রহণে দেশে দ্রুত একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক। কিন্তু এর কোনো বাস্তব লক্ষণ দৃশ্যমান হচ্ছে না। তাই মানুষের শংকাও দূর হচ্ছে না। আস্থা ফিরে পাচ্ছে না ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগকারীরা। তাই ব্যবসা ও বিনিয়োগে নেমে এসেছে স্থবিরতা। তবে আশার কথা হল, বিরোধী দল বিশেষত বিএনপি রাজনৈতিক কর্মসূচি দেয়ার ক্ষেত্রে অত্যন্ত দায়িত্বশীলতার পরিচয়
দিচ্ছে। তাদের এই দায়িত্বশীলতা সর্বমহলে প্রশংসিত হচ্ছে। এর ফলে তারা রাজনৈতিকভাবে এগিয়ে
যাচ্ছে। পক্ষান্তরে একতরফা নির্বাচন করে ক্ষমতাসীন দল রাজনীতিতে নিঃসন্দেহে পিছিয়ে পড়েছে।
গুম, খুন ও অপহরণের দায় তাদের নিতে হচ্ছে।
সরকারের সাংবিধানিক দায়িত্ব যে কোনো নাগরিকের জীবনের নিরাপত্তা দেয়া। রাষ্ট্রের কোনো নাগরিক গুম বা খুন হলে দোষীদের গ্রেফতার করা এবং বিচারে সোপর্দ করা। সরকার যদি তা না করে, তাহলে বুঝতে হবে অপরাধীরা সরকারের লোক বলে বিচার করতে অনিচ্ছুক। নয়তো সরকার অপরাধী শনাক্ত করতে বা অপরাধের বিচার করতে অক্ষম। যদি এর কোনোটিও সত্য হয়, তাহলে সেই সরকারের ক্ষমতায় থাকার নৈতিক অধিকার কোথায়? জনগণকে অস্বস্তি ও আতংকে রেখে রাষ্ট্র সঠিকভাবে চলতে পারে না। জনগণের নিরাপত্তা ও সব মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করার দায়িত্ব সরকারের এবং এ শপথ নিয়েই তারা ক্ষমতাসীন হয়েছেন।
মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন : রাজনৈতিক বিশ্লেষক
No comments