তিতুমীর মার্কেটে দোকান বরাদ্দে রাজ্যের দুর্নীতি
ফরিদপুর শহরের সরকারি তিতুমীর মার্কেটে (পূর্বাংশ) প্রকৃত ব্যবসায়ীদের বঞ্চিত করে নিয়মবহির্ভূতভাবে দোকান বরাদ্দ দেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। নির্মাণাধীন এ মার্কেটের দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলার দোকান রাজনৈতিক নেতা, সরকারি কর্মকর্তা, পুলিশসহ প্রশাসনের বিভিন্ন প্রভাবশালী ব্যক্তি ও তাদের স্বজনদের নামে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী প্রকৃত ব্যবসায়ীদের এসব দোকান বরাদ্দ পাওয়ার কথা ছিল। এছাড়া একটি পরিবারের নামে একাধিক দোকান বরাদ্দ দেয়া হবে না বলে জেলা প্রশাসন বরাদ্দ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করেছিল। অথচ দোকান বরাদ্দ পাওয়ার তালিকায় অন্তত ২৯টি পরিবারের ৬৮ জনকে দোকান বরাদ্দ দেয়ার তথ্য মিলেছে। একই পরিবারের সদস্যদের নামে সর্বাধিক ৬টি পর্যন্ত দোকান বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এ তালিকায় আরও আছেন প্রভাবশালী স্থানীয় আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জামায়াত নেতাসহ তাদের স্বজনদের নাম। সরেজমিন ফরিদপুরের ব্যবসায়ী, রাজনৈতিক নেতা ও প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপ করে এসব তথ্য জানা গেছে।
জানা গেছে, ২০০০ সালে অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত ১৬৭ জন ব্যবসায়ীর লিজ নেয়া জমিতে তিন তলা বিশিষ্ট এ মার্কেটটি তৈরি হচ্ছে। এসব ব্যবসায়ীর টাকায় নির্মাণাধীন মার্কেটের দোকান তাদের নামেই বরাদ্দ দেয়া হবে- এমন শর্তে প্রকল্প পাস করে ভূমি মন্ত্রণালয়। কিন্তু প্রকল্প পাস হওয়ার পর একের পর এক নতুন শর্ত জারি করে স্থানীয় প্রশাসন। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের শুধু নিচ তলায় ১৬৭টি দোকান দেয়া হয়েছে। দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলার ৩৩৪টি দোকান ক্ষমতাসীনরা ভাগ-বাটোয়ারা করে নিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন ক্ষুব্ধ ব্যবসায়ীরা।
ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা জানান, দোকান বরাদ্দে অনিয়ম নিয়ে প্রতিবাদ করায় পুলিশ ও স্থানীয় ক্ষমতাসীনরা তাদের হয়রানি করছে। বাজার ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ সাত সদস্যের নামে চাঁদাবাজি মামলা করা হয়। কয়েকজন ব্যবসায়ীকে আটক করে বেধড়ক মারধর করা হয়েছে। যদিও ওই মামলায় সবাই বেকসুর খালাস পেয়েছেন। তবুও বিভিন্ন সময়ে পুলিশ সদস্যরা প্রতিবাদকারী ব্যবসায়ীদের হয়রানি করছেন। আতংকে অনেক ব্যবসায়ী এলাকা ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।
ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, মার্কেটের নির্মাণ কাজ শুরুর আগে জমি খালি করতে আকস্মিকভাবে ব্যবসায়ীদের উচ্ছেদ করা হয়। ব্যবসায়ীদের মার্কেট ছেড়ে দিতে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাইকিং চলাবস্থায় চালানো হয় উচ্ছেদ কার্যক্রম। ব্যবসায়ীদের মালামাল সরানোর পর্যাপ্ত সময় দেয়া হয়নি। উচ্ছেদের সময় বিপুলসংখ্যক পুলিশের উপস্থিতিতে স্থানীয় আওয়ামী লীগের কিছু নেতাকর্মী দোকান থেকে অনেক মালপত্রও তুলে নিয়ে যায়। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা মানবেতর জীবন-যাপন করছেন।
ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, এসব ঘটনার নেপথ্যে কলকাঠি নাড়ছেন প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেনের ভাই ফরিদপুর সদর উপজেলা চেয়ারম্যান খন্দকার মোহতেশাম হোসেন বাবরসহ স্থানীয় আওয়ামী লীগের আরও কয়েকজন নেতা। যদিও এ অভিযোগগুলো অস্বীকার করেছেন তারা। জানতে চাইলে খন্দকার মোহতেশাম হোসেন বাবর বলেন, এ মার্কেটের দোকান বরাদ্দ দেয়ার বিষয়ে আমার কোনো ধারণা নেই। আমার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ আনা হয়েছে তা অবান্তর।
তিতুমীর মার্কেটের দোকান বরাদ্দে অনিয়ম ও পর্যাপ্ত সময় না দিয়ে ব্যবসায়ীদের উচ্ছেদের বিষয়ে জানতে চাইলে সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ফরিদপুর জেলা প্রশাসক সরদার সরাফত আলী। এ বিষয়ে প্রথমে কোনো মন্তব্য করতেও রাজি হননি তিনি। পরে বিভিন্ন প্রশ্নের এক পর্যায়ে সরদার সরাফত আলী বলেন, আগের জেলা প্রশাসকের আমলে দোকান বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এখন আমি সব নিয়ম মেনে মার্কেটের নির্মাণ কাজ করছি। দোকানদারদের উচ্ছেদের আগে ৪ দিন মাইকিং করা হয়েছে। তবে জেলা প্রশাসকের এ বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা বলেছেন, ঈদুল আজহার পর পরই কোনো নোটিশ ছাড়াই মার্কেট ভাঙা হয়েছে।
সরেজমিন দেখা গেছে, ফরিদপুর নিউ মার্কেটের ভেতরে অবস্থিত সরকারি তিতুমীর মার্কেটের নির্মাণ কাজ করছে বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠান। নির্মাণাধীন এলাকায় টিন দিয়ে ঘিরে রেখে কাজ করছেন শ্রমিকরা। সেখানে পাথর, বালুসহ নির্মাণ সামগ্রী মজুদ রাখা হয়েছে। ওই মার্কেট নির্মাণ এলাকায় নিজস্ব নিরাপত্তা ব্যবস্থা রয়েছে। নির্মাণ কাজ দেখতে চাইলে নিরাপত্তা রক্ষায় নিয়োজিত ব্যক্তিরা বাধা দেন।
দোকান বরাদ্দে অনিয়ম : জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা জানান, নিয়ম মেনে লটারির মাধ্যমে প্রকৃত ব্যবসায়ীদের মধ্যে দোকান বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। ১ হাজার ২৪০টি আবেদনের মধ্যে যাচাই-বাছাই করে ৬৯৮টি সঠিক পাওয়া গেছে। ত্র“টি থাকায় ৫৪২টি আবেদনপত্র বাতিল করা হয়েছে।
তবে অনুসন্ধানে জানা গেছে, ওই মার্কেটের ব্যবসায়ী নন এমন অনেকেই দোকান বরাদ্দ পেয়েছেন। তাদের বেশির ভাগই আওয়ামী লীগ ও বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত। এ তালিকায় প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেনের সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস) ও ফরিদপুর জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সত্যজিৎ মুখার্জি নিজ নামে ২১৩০ নম্বর ও তার বাবা মানস কুমার মুখার্জির নামে ২১৫১ নম্বর দোকান বরাদ্দ নিয়েছেন। মন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত জেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক মো. মোকাররম মিয়া বাবুর পরিবারের দুই সদস্য দোকান বরাদ্দ পেয়েছেন। তার স্ত্রী নাজনীন সুলতানার নামে ২০৮৭ নম্বর ও তার ভাই মো. মনছুর মিয়া লাবলুর নামে ২০৮৮ নম্বর দোকান বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. মিরাজ হোসেন ২১৫৩ নম্বর, জেলা যুবলীগ আহ্বায়ক নাজমুল ইসলাম খন্দকার লেভীর নামে ৩০৬২ নম্বর, জেলা আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা এসএম নুরুন্নবীর দুই ছেলে ও স্ত্রীর নামে তিনটি (২০০৮, ২০০৯ ও ২০১০ নম্বর) দোকান বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এছাড়া আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক সাহেব সারোয়ারের নামে ২০১৬ নম্বর, জেলা শ্রমিক লীগের অর্থ সম্পাদক মো. বিল্লাল হোসেনের নামে ২১১০ নম্বর, যুবলীগের যুগ্ম-আহ্বায়ক মো. জাহিদ বেপারীর নামে ২১৪১ নম্বর, ছাত্রলীগ নেতা মো. উজ্জল মিয়ার নামে ২১৪৫ নম্বর, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট সুবল চন্দ্র সাহার ছেলে দেবাশীষ সাহার নামে ৩০৩৬ নম্বর দোকান বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। বরাদ্দের তালিকায় রয়েছেন বিএনপির একাধিক নেতা। অভিযোগ রয়েছে, তাদের ম্যানেজ করতেই এসব দোকান ‘উপহার’ হিসেবে দেয়া হয়েছে। জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মোদাররেস আলী ইছার স্ত্রী সেলিমা সুলতানার নামে ৩০২৯ নম্বর দোকান বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। জেলা বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট জসিমউদ্দিন মৃধার স্ত্রী কানিজ খাদিজাতুল কুবরার নামে ৩০০১ নম্বর, যুবদলের সাধারণ সম্পাদক একেএম কিবরিয়ার নামে ২০১৫ নম্বর দোকান বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এর বাইরে আরও কয়েকজন বিএনপি ও জামায়াত নেতা দোকান বরাদ্দ পেয়েছেন। এছাড়া একই পরিবারের পাঁচ ভাই ও এক ভাইয়ের স্ত্রীর নামে ৬টি দোকান বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এর বাইরে চারটি, তিনটি ও দুটি দোকান পেয়েছে এমন পরিবার রয়েছে বেশ কয়েকটি।
ফরিদপুর সরকারি তিতুমীর বাজার ব্যবস্থাপনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো. হারুন-অর-রশিদ বলেন, অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত ১৬৭ জন ব্যবসায়ীকে মার্কেটের তিন তলা পর্যন্ত তিনটি করে দোকান বরাদ্দ দেয়ার কথা ছিল। কিন্তু শুধু নিচ তলায় প্রকৃত ব্যবসায়ীদের দোকান বরাদ্দ দিয়ে বাকি দুটি তলার ৩৩৪টি দোকান ভাগ-বাটোয়ারা করা হয়েছে। লেনদেন হয়েছে বড় অংকের টাকা। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, তৎকালীন জেলা প্রশাসক একাধিক দোকান দেয়ার নিয়ম নেই জানিয়ে আমাদের একটি করে দোকান দিয়েছেন। অথচ নিউ মার্কেটে একই পরিবারের একাধিক সদস্যকে দোকান বরাদ্দ দেয়ার অনেক নজির আছে।
কোটি কোটি টাকা লেনদেন : অনুসন্ধানে জানা গেছে, নির্মাণাধীন তিন তলা মার্কেটের ৫০১টি দোকানের মধ্যে দোতলা ও তিন তলার ৩৩৪টি দোকান বরাদ্দের নামে কোটি কোটি টাকা লেনদেন নিয়ে মূলত ব্যবসায়ীদের একটি অংশ ও ক্ষমতাসীনদের মধ্যে দ্বন্দ্ব দেখা দিয়েছে। ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, ১৬৭ জন ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীর নামে মার্কেটটি নির্মাণের অনুমোদন দিয়েছে ভূমি মন্ত্রণালয়। কিন্তু ওই ব্যবসায়ীদের এক-তৃতীয়াংশ দোকান দিয়ে বাকি ৩৩৪টি দোকান ভাগ-বাটোয়ারা করেছেন ক্ষমতাসীনরা। যেসব ব্যবসায়ী এসব কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদ করেছেন তাদের পুলিশ ও সন্ত্রাসীদের দিয়ে হয়রানি করা হয়েছে। এসবের সঙ্গে জেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক মো. মোকাররম মিয়া বাবু, ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সত্যজিৎ মুখার্জি, বিল্লাল হোসেনসহ কয়েকজন রাজনৈতিক নেতা ও ব্যবসায়ী জড়িত বলেও অভিযোগ করেছেন তারা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সত্যজিৎ মুখার্জি দুটি দোকান বরাদ্দ নেয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, কোন প্রক্রিয়ায় দোকান বরাদ্দ পেয়েছি তা জেলা প্রশাসক ভালো বলতে পারবেন। লটারির মাধ্যমে দোকান বরাদ্দ দিয়েছেন জেলা প্রশাসক। এখানে কোনো অবৈধ লেনদেন হয়নি। দোকানীদের ভয়-ভীতি দেখানোর অভিযোগ সম্পর্কে তিনি বলেন, কমিটির বেশিরভাগ নেতাই বিএনপি-জামায়াতের লোক। তারা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এসব অভিযোগ করছে। এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন। মোকাররম মিয়া বাবুর বক্তব্য জানতে ফোন করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি।
অপরদিকে দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলার দোকান ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের বরাদ্দের দাবিতে আন্দোলনরত মার্কেটের ব্যবস্থাপনা কমিটির একাধিক সদস্য ও তাদের সহযোগীদের বিরুদ্ধে অর্থ হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ করেছেন জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা। মার্কেটের দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলার দোকান পাইয়ে দেয়ার নামে প্রত্যেক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ৫০ হাজার থেকে ৮০ হাজার টাকা নেয়ার লিখিত অভিযোগ জেলা প্রশাসকের কাছে দায়ের করেছেন ১৭ সদস্যের ব্যবস্থাপনা কমিটির ১৪ জন সদস্য। তারা ওই কমিটি থেকে অব্যাহতির আবেদন করেছেন। কমিটির সদস্যসহ কয়েকজন সুবিধাভোগী ব্যবসায়ী ওই টাকা ভাগ করে নিয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন তারা। এ বিষয়ে জানতে চাইলে কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো. হারুন-অর রশিদ বলেন, নির্বাচিত ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্যদের ভয়-ভীতি, প্রলোভন ও মারধর করে এ ধরনের অভিযোগ করতে বাধ্য করা হয়েছে। আমাদের সঙ্গে কথা বলার সময় তারা বিষয়টি স্বীকারও করেছেন। তাদের সঙ্গে কথোপকথনের রেকর্ড আমাদের কাছে রয়েছে। বিষয়টি জানতে পদত্যাগী কয়েকজন সদস্যের সঙ্গে যুগান্তরের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হলে তারা কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক ব্যবসায়ী বলেন, ভাই সবই বোঝেন। তারপরও জিজ্ঞাসা করেন কেন? তবে এক ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে অল্প কিছু টাকা নেয়া হয়েছে। ওই টাকা মামলা পরিচালনাসহ অন্য খাতে ব্যয় করা হচ্ছে। কোনো টাকা আত্মসাৎ করা হয়নি।
আলোচিত এক পুলিশ কর্মকর্তা : বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের দমন, ব্যবসায়ীদের মারধর, হয়রানিসহ নানা ঘটনার জন্মদাতা ফরিদপুরে আলোচিত এক পুলিশ কর্মকর্তা হচ্ছেন কোতোয়ালি থানার উপপরিদর্শক (এসআই) নজরুল ইসলাম। সাতক্ষীরার শ্যামনগরের পদ্মপুকুর এলাকার বাসিন্দা নজরুল ইসলাম তার স্ত্রী লুৎফুন্নেছা ইসলামের নামে এ মার্কেটে একটি দোকান বরাদ্দ নিয়েছেন। অভিযোগ রয়েছে, দোকান বরাদ্দ পেয়ে ক্ষমতাসীনদের ইন্ধনে নজরুল ইসলাম প্রতিবাদকারী ব্যবসায়ীদের বিভিন্নভাবে হয়রানি করছেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে এসআই নজরুল ইসলাম বলেন, আমার স্ত্রীর নামে একটি দোকান বরাদ্দ পেয়েছি। তিনি ব্যবসায়ী। ওই এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা না হওয়া সত্ত্বেও কিভাবে দোকান বরাদ্দ পেলেন তা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি এদেশের নাগরিক। আমার স্ত্রী ব্যবসা করতে পারে না? ব্যবসায়ী হিসেবেই তিনি দোকান বরাদ্দ পেয়েছেন। ব্যবসায়ীদের হয়রানি করার অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমার বিরুদ্ধে তদন্ত করুন। আমি তো আইনের ঊর্ধ্বে নই। আমার বিরুদ্ধে এর আগেও প্রশাসনিক তদন্ত হয়েছে। কোনো দোষ পায়নি।’
জানা গেছে, ২০০০ সালে অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত ১৬৭ জন ব্যবসায়ীর লিজ নেয়া জমিতে তিন তলা বিশিষ্ট এ মার্কেটটি তৈরি হচ্ছে। এসব ব্যবসায়ীর টাকায় নির্মাণাধীন মার্কেটের দোকান তাদের নামেই বরাদ্দ দেয়া হবে- এমন শর্তে প্রকল্প পাস করে ভূমি মন্ত্রণালয়। কিন্তু প্রকল্প পাস হওয়ার পর একের পর এক নতুন শর্ত জারি করে স্থানীয় প্রশাসন। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের শুধু নিচ তলায় ১৬৭টি দোকান দেয়া হয়েছে। দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলার ৩৩৪টি দোকান ক্ষমতাসীনরা ভাগ-বাটোয়ারা করে নিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন ক্ষুব্ধ ব্যবসায়ীরা।
ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা জানান, দোকান বরাদ্দে অনিয়ম নিয়ে প্রতিবাদ করায় পুলিশ ও স্থানীয় ক্ষমতাসীনরা তাদের হয়রানি করছে। বাজার ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ সাত সদস্যের নামে চাঁদাবাজি মামলা করা হয়। কয়েকজন ব্যবসায়ীকে আটক করে বেধড়ক মারধর করা হয়েছে। যদিও ওই মামলায় সবাই বেকসুর খালাস পেয়েছেন। তবুও বিভিন্ন সময়ে পুলিশ সদস্যরা প্রতিবাদকারী ব্যবসায়ীদের হয়রানি করছেন। আতংকে অনেক ব্যবসায়ী এলাকা ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।
ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, মার্কেটের নির্মাণ কাজ শুরুর আগে জমি খালি করতে আকস্মিকভাবে ব্যবসায়ীদের উচ্ছেদ করা হয়। ব্যবসায়ীদের মার্কেট ছেড়ে দিতে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাইকিং চলাবস্থায় চালানো হয় উচ্ছেদ কার্যক্রম। ব্যবসায়ীদের মালামাল সরানোর পর্যাপ্ত সময় দেয়া হয়নি। উচ্ছেদের সময় বিপুলসংখ্যক পুলিশের উপস্থিতিতে স্থানীয় আওয়ামী লীগের কিছু নেতাকর্মী দোকান থেকে অনেক মালপত্রও তুলে নিয়ে যায়। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা মানবেতর জীবন-যাপন করছেন।
ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, এসব ঘটনার নেপথ্যে কলকাঠি নাড়ছেন প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেনের ভাই ফরিদপুর সদর উপজেলা চেয়ারম্যান খন্দকার মোহতেশাম হোসেন বাবরসহ স্থানীয় আওয়ামী লীগের আরও কয়েকজন নেতা। যদিও এ অভিযোগগুলো অস্বীকার করেছেন তারা। জানতে চাইলে খন্দকার মোহতেশাম হোসেন বাবর বলেন, এ মার্কেটের দোকান বরাদ্দ দেয়ার বিষয়ে আমার কোনো ধারণা নেই। আমার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ আনা হয়েছে তা অবান্তর।
তিতুমীর মার্কেটের দোকান বরাদ্দে অনিয়ম ও পর্যাপ্ত সময় না দিয়ে ব্যবসায়ীদের উচ্ছেদের বিষয়ে জানতে চাইলে সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ফরিদপুর জেলা প্রশাসক সরদার সরাফত আলী। এ বিষয়ে প্রথমে কোনো মন্তব্য করতেও রাজি হননি তিনি। পরে বিভিন্ন প্রশ্নের এক পর্যায়ে সরদার সরাফত আলী বলেন, আগের জেলা প্রশাসকের আমলে দোকান বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এখন আমি সব নিয়ম মেনে মার্কেটের নির্মাণ কাজ করছি। দোকানদারদের উচ্ছেদের আগে ৪ দিন মাইকিং করা হয়েছে। তবে জেলা প্রশাসকের এ বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা বলেছেন, ঈদুল আজহার পর পরই কোনো নোটিশ ছাড়াই মার্কেট ভাঙা হয়েছে।
সরেজমিন দেখা গেছে, ফরিদপুর নিউ মার্কেটের ভেতরে অবস্থিত সরকারি তিতুমীর মার্কেটের নির্মাণ কাজ করছে বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠান। নির্মাণাধীন এলাকায় টিন দিয়ে ঘিরে রেখে কাজ করছেন শ্রমিকরা। সেখানে পাথর, বালুসহ নির্মাণ সামগ্রী মজুদ রাখা হয়েছে। ওই মার্কেট নির্মাণ এলাকায় নিজস্ব নিরাপত্তা ব্যবস্থা রয়েছে। নির্মাণ কাজ দেখতে চাইলে নিরাপত্তা রক্ষায় নিয়োজিত ব্যক্তিরা বাধা দেন।
দোকান বরাদ্দে অনিয়ম : জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা জানান, নিয়ম মেনে লটারির মাধ্যমে প্রকৃত ব্যবসায়ীদের মধ্যে দোকান বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। ১ হাজার ২৪০টি আবেদনের মধ্যে যাচাই-বাছাই করে ৬৯৮টি সঠিক পাওয়া গেছে। ত্র“টি থাকায় ৫৪২টি আবেদনপত্র বাতিল করা হয়েছে।
তবে অনুসন্ধানে জানা গেছে, ওই মার্কেটের ব্যবসায়ী নন এমন অনেকেই দোকান বরাদ্দ পেয়েছেন। তাদের বেশির ভাগই আওয়ামী লীগ ও বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত। এ তালিকায় প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেনের সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস) ও ফরিদপুর জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সত্যজিৎ মুখার্জি নিজ নামে ২১৩০ নম্বর ও তার বাবা মানস কুমার মুখার্জির নামে ২১৫১ নম্বর দোকান বরাদ্দ নিয়েছেন। মন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত জেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক মো. মোকাররম মিয়া বাবুর পরিবারের দুই সদস্য দোকান বরাদ্দ পেয়েছেন। তার স্ত্রী নাজনীন সুলতানার নামে ২০৮৭ নম্বর ও তার ভাই মো. মনছুর মিয়া লাবলুর নামে ২০৮৮ নম্বর দোকান বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. মিরাজ হোসেন ২১৫৩ নম্বর, জেলা যুবলীগ আহ্বায়ক নাজমুল ইসলাম খন্দকার লেভীর নামে ৩০৬২ নম্বর, জেলা আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা এসএম নুরুন্নবীর দুই ছেলে ও স্ত্রীর নামে তিনটি (২০০৮, ২০০৯ ও ২০১০ নম্বর) দোকান বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এছাড়া আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক সাহেব সারোয়ারের নামে ২০১৬ নম্বর, জেলা শ্রমিক লীগের অর্থ সম্পাদক মো. বিল্লাল হোসেনের নামে ২১১০ নম্বর, যুবলীগের যুগ্ম-আহ্বায়ক মো. জাহিদ বেপারীর নামে ২১৪১ নম্বর, ছাত্রলীগ নেতা মো. উজ্জল মিয়ার নামে ২১৪৫ নম্বর, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট সুবল চন্দ্র সাহার ছেলে দেবাশীষ সাহার নামে ৩০৩৬ নম্বর দোকান বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। বরাদ্দের তালিকায় রয়েছেন বিএনপির একাধিক নেতা। অভিযোগ রয়েছে, তাদের ম্যানেজ করতেই এসব দোকান ‘উপহার’ হিসেবে দেয়া হয়েছে। জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মোদাররেস আলী ইছার স্ত্রী সেলিমা সুলতানার নামে ৩০২৯ নম্বর দোকান বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। জেলা বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট জসিমউদ্দিন মৃধার স্ত্রী কানিজ খাদিজাতুল কুবরার নামে ৩০০১ নম্বর, যুবদলের সাধারণ সম্পাদক একেএম কিবরিয়ার নামে ২০১৫ নম্বর দোকান বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এর বাইরে আরও কয়েকজন বিএনপি ও জামায়াত নেতা দোকান বরাদ্দ পেয়েছেন। এছাড়া একই পরিবারের পাঁচ ভাই ও এক ভাইয়ের স্ত্রীর নামে ৬টি দোকান বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এর বাইরে চারটি, তিনটি ও দুটি দোকান পেয়েছে এমন পরিবার রয়েছে বেশ কয়েকটি।
ফরিদপুর সরকারি তিতুমীর বাজার ব্যবস্থাপনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো. হারুন-অর-রশিদ বলেন, অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত ১৬৭ জন ব্যবসায়ীকে মার্কেটের তিন তলা পর্যন্ত তিনটি করে দোকান বরাদ্দ দেয়ার কথা ছিল। কিন্তু শুধু নিচ তলায় প্রকৃত ব্যবসায়ীদের দোকান বরাদ্দ দিয়ে বাকি দুটি তলার ৩৩৪টি দোকান ভাগ-বাটোয়ারা করা হয়েছে। লেনদেন হয়েছে বড় অংকের টাকা। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, তৎকালীন জেলা প্রশাসক একাধিক দোকান দেয়ার নিয়ম নেই জানিয়ে আমাদের একটি করে দোকান দিয়েছেন। অথচ নিউ মার্কেটে একই পরিবারের একাধিক সদস্যকে দোকান বরাদ্দ দেয়ার অনেক নজির আছে।
কোটি কোটি টাকা লেনদেন : অনুসন্ধানে জানা গেছে, নির্মাণাধীন তিন তলা মার্কেটের ৫০১টি দোকানের মধ্যে দোতলা ও তিন তলার ৩৩৪টি দোকান বরাদ্দের নামে কোটি কোটি টাকা লেনদেন নিয়ে মূলত ব্যবসায়ীদের একটি অংশ ও ক্ষমতাসীনদের মধ্যে দ্বন্দ্ব দেখা দিয়েছে। ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, ১৬৭ জন ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীর নামে মার্কেটটি নির্মাণের অনুমোদন দিয়েছে ভূমি মন্ত্রণালয়। কিন্তু ওই ব্যবসায়ীদের এক-তৃতীয়াংশ দোকান দিয়ে বাকি ৩৩৪টি দোকান ভাগ-বাটোয়ারা করেছেন ক্ষমতাসীনরা। যেসব ব্যবসায়ী এসব কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদ করেছেন তাদের পুলিশ ও সন্ত্রাসীদের দিয়ে হয়রানি করা হয়েছে। এসবের সঙ্গে জেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক মো. মোকাররম মিয়া বাবু, ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সত্যজিৎ মুখার্জি, বিল্লাল হোসেনসহ কয়েকজন রাজনৈতিক নেতা ও ব্যবসায়ী জড়িত বলেও অভিযোগ করেছেন তারা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সত্যজিৎ মুখার্জি দুটি দোকান বরাদ্দ নেয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, কোন প্রক্রিয়ায় দোকান বরাদ্দ পেয়েছি তা জেলা প্রশাসক ভালো বলতে পারবেন। লটারির মাধ্যমে দোকান বরাদ্দ দিয়েছেন জেলা প্রশাসক। এখানে কোনো অবৈধ লেনদেন হয়নি। দোকানীদের ভয়-ভীতি দেখানোর অভিযোগ সম্পর্কে তিনি বলেন, কমিটির বেশিরভাগ নেতাই বিএনপি-জামায়াতের লোক। তারা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এসব অভিযোগ করছে। এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন। মোকাররম মিয়া বাবুর বক্তব্য জানতে ফোন করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি।
অপরদিকে দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলার দোকান ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের বরাদ্দের দাবিতে আন্দোলনরত মার্কেটের ব্যবস্থাপনা কমিটির একাধিক সদস্য ও তাদের সহযোগীদের বিরুদ্ধে অর্থ হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ করেছেন জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা। মার্কেটের দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলার দোকান পাইয়ে দেয়ার নামে প্রত্যেক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ৫০ হাজার থেকে ৮০ হাজার টাকা নেয়ার লিখিত অভিযোগ জেলা প্রশাসকের কাছে দায়ের করেছেন ১৭ সদস্যের ব্যবস্থাপনা কমিটির ১৪ জন সদস্য। তারা ওই কমিটি থেকে অব্যাহতির আবেদন করেছেন। কমিটির সদস্যসহ কয়েকজন সুবিধাভোগী ব্যবসায়ী ওই টাকা ভাগ করে নিয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন তারা। এ বিষয়ে জানতে চাইলে কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো. হারুন-অর রশিদ বলেন, নির্বাচিত ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্যদের ভয়-ভীতি, প্রলোভন ও মারধর করে এ ধরনের অভিযোগ করতে বাধ্য করা হয়েছে। আমাদের সঙ্গে কথা বলার সময় তারা বিষয়টি স্বীকারও করেছেন। তাদের সঙ্গে কথোপকথনের রেকর্ড আমাদের কাছে রয়েছে। বিষয়টি জানতে পদত্যাগী কয়েকজন সদস্যের সঙ্গে যুগান্তরের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হলে তারা কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক ব্যবসায়ী বলেন, ভাই সবই বোঝেন। তারপরও জিজ্ঞাসা করেন কেন? তবে এক ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে অল্প কিছু টাকা নেয়া হয়েছে। ওই টাকা মামলা পরিচালনাসহ অন্য খাতে ব্যয় করা হচ্ছে। কোনো টাকা আত্মসাৎ করা হয়নি।
আলোচিত এক পুলিশ কর্মকর্তা : বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের দমন, ব্যবসায়ীদের মারধর, হয়রানিসহ নানা ঘটনার জন্মদাতা ফরিদপুরে আলোচিত এক পুলিশ কর্মকর্তা হচ্ছেন কোতোয়ালি থানার উপপরিদর্শক (এসআই) নজরুল ইসলাম। সাতক্ষীরার শ্যামনগরের পদ্মপুকুর এলাকার বাসিন্দা নজরুল ইসলাম তার স্ত্রী লুৎফুন্নেছা ইসলামের নামে এ মার্কেটে একটি দোকান বরাদ্দ নিয়েছেন। অভিযোগ রয়েছে, দোকান বরাদ্দ পেয়ে ক্ষমতাসীনদের ইন্ধনে নজরুল ইসলাম প্রতিবাদকারী ব্যবসায়ীদের বিভিন্নভাবে হয়রানি করছেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে এসআই নজরুল ইসলাম বলেন, আমার স্ত্রীর নামে একটি দোকান বরাদ্দ পেয়েছি। তিনি ব্যবসায়ী। ওই এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা না হওয়া সত্ত্বেও কিভাবে দোকান বরাদ্দ পেলেন তা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি এদেশের নাগরিক। আমার স্ত্রী ব্যবসা করতে পারে না? ব্যবসায়ী হিসেবেই তিনি দোকান বরাদ্দ পেয়েছেন। ব্যবসায়ীদের হয়রানি করার অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমার বিরুদ্ধে তদন্ত করুন। আমি তো আইনের ঊর্ধ্বে নই। আমার বিরুদ্ধে এর আগেও প্রশাসনিক তদন্ত হয়েছে। কোনো দোষ পায়নি।’
No comments