বিকল্প সরকারের চেষ্টা বাতিল, দিল্লিতে ভোট
বিকল্প সরকারের চেষ্টা শিকেয় তুলে ভারতের দিল্লিতে বিধানসভা ভেঙে দিয়ে ফের ভোটের সুপারিশ করলেন উপরাজ্যপাল নাজিব জং। তাঁর এই সুপারিশ গত মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে পাঠানো হয়েছে। আগামী বছর ফেব্রুয়ারি মাসে রাষ্ট্রপতি শাসনের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই দিল্লিতে হবে নতুন নির্বাচন। মহারাষ্ট্র ও হরিয়ানার মতো দিল্লিতেও মুখ্যমন্ত্রী পদে কারও নাম ঘোষণা না করেই বিজেপি ভোটে লড়বে। ১০ মাস আগে এ বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে ৪৯ দিন ক্ষমতায় থেকে আম আদমি পার্টির (এএপি) অরবিন্দ কেজরিওয়াল মুখ্যমন্ত্রী পদে ইস্তফা দিয়েছিলেন। সেই থেকে বিধানসভা জিইয়ে রেখে বিকল্প সরকারের সন্ধানে ছিলেন উপরাজ্যপাল। কিন্তু দল না ভাঙিয়ে কোনোভাবেই বিকল্প সরকার গড়া সম্ভব নয়। এই দলভাঙানির খেলা রুখতে এএপির পক্ষ থেকে উপরাজ্যপালের কাছে শুধু দাবি জানানোই নয়, গোপন ক্যামেরায় তোলা ছবিও পেশ করা হয়। সেই ছবিতে বিজেপির পক্ষ থেকে বিধায়কদের ঘুষ দেওয়ার অভিযোগও ছিল। একই সঙ্গে এএপি সুপ্রিম কোর্টে মামলাও করে। সুপ্রিম কোর্টও সরকারকে ভর্ৎসনা করে উদ্যোগহীন চুপচাপ বসে থাকার জন্য। শেষ পর্যন্ত উপরাজ্যপাল গরিষ্ঠ দল হিসেবে বিজেপিকে আমন্ত্রণ জানানোর অনুমতি চায় রাষ্ট্রপতির কাছে। কিন্তু বিজেপি, কংগ্রেস ও এএপি তিন দলই গত সোমবার সরকার গঠনে তাদের অপারগতার কথা জানায়। এই অবস্থায় নতুন নির্বাচনের সুপারিশ করলেন উপরাজ্যপাল। এখন প্রশ্ন, কত দ্রুত সেই ভোট হতে পারে। নির্বাচন কমিশন ইতিমধ্যেই জম্মু-কাশ্মির ও ঝাড়খন্ডের ভোটের তারিখ ঘোষণা করেছে।
একই সঙ্গে উপনির্বাচন হওয়ার কথা দিল্লির তিন বিধানসভা কেন্দ্রে। বিজেপির তিন বিধায়ক লোকসভা ভোটে জিতে ওই তিন বিধানসভা কেন্দ্র থেকে ইস্তফা দেন। উপরাজ্যপালের সুপারিশের পর এই উপনির্বাচনও এখন স্থগিত হয়ে যাবে। কিন্তু জম্মু-কাশ্মির ও ঝাড়খন্ডের সঙ্গে দিল্লির ভোট করানো যাবে না। কারণ, দিল্লির ভোটার তালিকা সংশোধনের শেষ তারিখ ১৫ জানুয়ারি। অতএব ভোট সম্ভব একমাত্র মধ্য জানুয়ারির পর। ভোট না বিকল্প সরকার, এ নিয়ে বিজেপিতে দ্বন্দ্ব সেই শুরু থেকেই। বিধায়কদের অধিকাংশই বিকল্প সরকারের পক্ষে। কারণ সহজবোধ্য। কেউই নতুন করে ভোটের ঝুঁকি নিতে নারাজ। কিন্তু কেন্দ্রীয় নেতারা দলভাঙানির খেলা খেলে ভাবমূর্তি নষ্টে রাজি নন। এই বিতর্কে বহু সময় চলে যায়। এএপিও চাপ সৃষ্টি করতে থাকে নতুন নির্বাচনের। কংগ্রেস নিস্পৃহ ও হীনবল। ফলে লড়াইটা হয়ে দাঁড়াচ্ছে প্রধানত বিজেপির সঙ্গে এএপির। অরবিন্দ কেজরিওয়াল ইতিমধ্যেই স্বীকার করেছেন, সরকার ছেড়ে চলে আসার সিদ্ধান্তটা ভুল ছিল। তাঁর দল তাঁকেই মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে আবার তুলে ধরছে। বিজেপি কিন্তু তা করছে না। তাদের প্রচারের শীর্ষে সেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিই। মহারাষ্ট্র ও হরিয়ানার মতো দিল্লিতেও তারা মোদি-তাস খেলে জিততে চায়। মোদি-হাওয়া রুখতে কেজরিওয়ালদের হাতিয়ার একটাই। ভোটারদের তাঁরা সরাসরি বলতে শুরু করেছেন, মোদি প্রধানমন্ত্রী। তিনি দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী হতে আসছেন না। দিল্লির দরকার একটা সৎ ও স্বচ্ছ সরকার। কেজরিওয়ালদের দাবি, সততা ও স্বচ্ছতা বিজেপির নেই। কারণ, বিজেপির দিল্লি নেতৃত্ব ‘দুর্নীতিগ্রস্ত’।
No comments