যুদ্ধজাহাজের পর এখন তৈরি হচ্ছে কনটেইনারবাহী জাহাজ- ঘুরে দাঁড়িয়েছে খুলনা শিপইয়ার্ড by মামুনুর রশীদ
দেনার দায়ে ধুঁকছিল খুলনা শিপইয়ার্ড। প্রায় বন্ধ হওয়ার উপক্রম। সেই অবস্থা থেকে ঘুরে দাঁড়িয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। তৈরি করেছে যুদ্ধজাহাজ। প্রতিষ্ঠানটির সাফল্যের টুপিতে যুক্ত হলো আরও একটি পালক। এবার প্রথমবারের মতো তৈরি হচ্ছে একই সঙ্গে নদী ও সমুদ্র উপকূলে চলাচলের উপযোগী আধুনিক কনটেইনারবাহী জাহাজ। খুলনা শিপইয়ার্ডের ঘুরে দাঁড়ানোর গল্পটা চমকপ্রদ। ক্রমাগত লোকসান দিতে থাকা ৫৭ বছরের পুরোনো এই প্রতিষ্ঠান ঘোষিত হয়েছিল রুগ্ণ শিল্প হিসেবে। দেনার পরিমাণ দাঁড়িয়েছিল ৯৩ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। কিন্তু এখন সেই দুরবস্থা আর নেই। গত তিন অর্থবছরে প্রতিষ্ঠানটি খুলনা কর অঞ্চলের সর্বোচ্চ করদাতা প্রতিষ্ঠানের স্বীকৃতি পেয়েছে।
১৯৯৯ সালের ৩ অক্টোবর প্রতিষ্ঠানটির দায়িত্ব দেওয়া হয় নৌবাহিনীকে। ২০০৮ সালের মধ্যেই দেনা শোধ, এর পর থেকে লাভজনক হয়ে ওঠা। খুলনা শিপইয়ার্ড ২০১০ সালে নৌবাহিনীর জন্য তৈরি শুরু করে পাঁচটি যুদ্ধজাহাজ। ২০১৩ সালে দেশের তৈরি প্রথম যুদ্ধজাহাজ হস্তান্তর করা হয় নৌবাহিনীকে। এখন সেখানে তৈরি হচ্ছে কনটেইনারবাহী জাহাজ।
খুলনা শহরের রূপসা নদীর তীরে জাহাজ নির্মাণ ও মেরামতকারী এ প্রতিষ্ঠানটি এখন কর্মমুখর। নানা প্রকার নৌযান মেরামতের পাশাপাশি সেখানে এখন একই সঙ্গে চলছে চারটি কনটেইনারবাহী এবং দুটি কার্গো-কাম কনটেইনার জাহাজ নির্মাণের কাজ। সম্প্রতি প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশ নৌবাহিনীর জন্য আরও দুটি অত্যাধুনিক যুদ্ধজাহাজ তৈরির ব্যাপারে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে। আর্থিক দিক থেকে বাংলাদেশের জাহাজনির্মাণ শিল্পের ইতিহাসে এটিকে সবচেয়ে বড় প্রকল্প বলে ধরা হচ্ছে।
এসব বিষয়ে কথা হয় প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক কমোডর এস ইরশাদ আহমেদের সঙ্গে। তাঁর ভাষ্য, যুদ্ধজাহাজের মতোই বাংলাদেশে কনটেইনারবাহী জাহাজ নির্মাণের শুরুটাও খুলনা শিপইয়ার্ড থেকে। বর্তমানে নৌবাহিনীর একটি প্রতিষ্ঠান ‘নৌ-ফাউন্ডেশন’ এর জন্য যে দুটি কনটেইনার জাহাজ তৈরি হচ্ছে, তার প্রতিটি ২০ ফুটের ১৪০টি কনটেইনার বহন করতে পারবে। প্রতিটি জাহাজ দৈর্ঘ্যে ৭৫ মিটার, প্রস্থে ১৩ দশমিক ৫ মিটার, পানি থেকে তলদেশের উচ্চতা সর্বোচ্চ ৪ মিটার এবং গতি ঘণ্টায় ১০ নটিক্যাল মাইল। এ প্রকল্পের অর্থমূল্য ধরা হয়েছে ৭৮ কোটি টাকা। আগামী বছরের জুনে জাহাজ দুটি যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হবে। জাহাজ দুটির নকশা অনুমোদন করেছে জাহাজের আন্তর্জাতিক মান নির্ধারণকারী প্রতিষ্ঠান জাপানের নিপ্পন কাইজিকি কাইওকাই বা ক্লাস এনকে জাপান।
এদিকে নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান একই ইয়ার্ডে বিআইডব্লিউটিসির জন্য দুটো কনটেইনারবাহী জাহাজ নির্মাণের উদ্বোধন করেন গত ২৪ অক্টোবর। এ দুটি জাহাজের প্রতিটি ২০ ফুটের ১৫৮টি কনটেইনার বহনে সক্ষম। দৈর্ঘ্যে ৭৬ মিটার, প্রস্থে ১৫ মিটার এবং সর্বোচ্চ গতি ঘণ্টায় ১০ নটিক্যাল মাইল। নির্মিতব্য জাহাজ দুটির নকশা অনুমোদনকারী প্রতিষ্ঠান হচ্ছে নরওয়ের ব্যুরো ভেরিটাস বা ক্লাস বিভি। প্রকল্পের সময়সীমা ২২ মাস এবং অর্থমূল্য ৭৫ কোটি টাকারও বেশি।
এ ছাড়া দুই বছর ধরে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের জন্য তৈরি হতে থাকা দুটি কার্গো জাহাজকে বর্তমানে কনটেইনার জাহাজে রূপান্তর করা হচ্ছে বলে জানান কমোডর ইরশাদ আহমেদ। এগুলো একই সঙ্গে কার্গো এবং কনটেইনার জাহাজ হিসেবে কাজ করবে বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক মান রক্ষার জন্য এখানকার প্রতিটি জাহাজ তৈরি হয় ক্লাসিফিকেশন সোসাইটির অধীনে।
এ সময় নৌবাহিনীর জন্য আরও দুটি অত্যাধুনিক যুদ্ধজাহাজ নির্মাণে চুক্তিবদ্ধ হওয়ার কথা জানিয়ে ইরশাদ আহমেদ বলেন, আগামী কয়েক মাসের মধ্যে এর কাজ শুরু হবে। এখন পর্যন্ত এটি বাংলাদেশের জাহাজ নির্মাণ শিল্পে আর্থিক দিক থেকে সবচেয়ে বড় প্রকল্প।
ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প: খুলনার অধিকাংশ শিল্পপ্রতিষ্ঠান যখন একে একে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, সে সময় খুলনা শিপইয়ার্ডের উত্তরোত্তর এ সমৃদ্ধি ব্যতিক্রম। ২০১২-১৩ অর্থবছরে প্রতিষ্ঠানটির নিট মুনাফা ছিল ৪০ কোটি টাকারও বেশি। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে তা প্রায় ৪৮ কোটিতে পৌঁছায়। কর্মকর্তারা আশা করছেন, আগামী অর্থবছরে এই মুনাফা ৫০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। এ ছাড়া সর্বশেষ অর্থবছরে প্রতিষ্ঠানটি প্রায় ১৬ কোটি টাকা আয়কর দিয়ে খুলনা অঞ্চলের সর্বোচ্চ আয়করদাতা প্রতিষ্ঠানের স্বীকৃতি লাভ করে। এর আগের দুই অর্থবছরেও তারা এ স্বীকৃতি পেয়েছে। গত ১৪ বছরে ইয়ার্ডের বার্ষিক লেনদেন বেড়েছে ১৫ গুণ।
প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ বিষয়ে প্রথম আলোকে বলেন, নৌবাহিনী প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব নেওয়ার পর সব স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শ্রমিকের নিরলস প্রচেষ্টাতেই আজকের এই সাফল্য। বর্তমানে কর্মচারীদের বেতন-ভাতাসহ সবকিছুই এ প্রতিষ্ঠানের আয় থেকে মেটানো হচ্ছে।
খুলনা শিপইয়ার্ড ১৯৫৭ সাল থেকে এ পর্যন্ত ৬৯০টি বিভিন্ন ধরনের জলযান নির্মাণ করেছে। আর মেরামত করেছে দুই হাজার ১৩৩টি। ইয়ার্ডের বর্তমান অবস্থান আর কাজের গুণগত মান দেখে এর মধ্যে কোরিয়া, নেদারল্যান্ডস, ক্রোয়েশিয়া, চীন ও তুরস্কের বিভিন্ন শিপইয়ার্ড যৌথভাবে কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করেছে। ইয়ার্ডের কার্যক্ষমতা বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন উদ্যোগের পাশাপাশি ভবিষ্যৎ বিবেচনায় মংলার জয়মনিগোলে কিছু জায়গাও কেনা হয়েছে।
জাহাজ নির্মাণ ও মেরামতের বাইরে বর্তমানে এখানে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের জন্য বড় ময়লার কনটেইনার ও ট্রলি এবং চিনি ও পাটকলের বিভিন্ন যন্ত্রাংশ, ফেরির পন্টুনও তৈরি হচ্ছে।
পেছনের গল্প: ১৯৪৭ সালের দেশভাগের পর তৎকালীন পাকিস্তান ডেভেলপমেন্ট করপোরেশন (পিআইডিসি) খুলনায় একটি শিপইয়ার্ড নির্মাণের জন্য পশ্চিম জার্মানির মেসার্স স্টাকেন শন নামের একটি প্রতিষ্ঠানকে নিযুক্ত করে। ১৯৫৪ সালে নির্মাণকাজ শুরুর পর প্রতিষ্ঠানটি ১৯৫৭ সালের ২৩ নভেম্বর থেকে উৎপাদনে যায়। সে সময় রূপসা নদীর প্রাকৃতিক সীমাবদ্ধতা ও গভীরতাকে বিবেচনায় রেখে সর্বোচ্চ ৭০০ টন লাইট ওয়েট বা আড়াই হাজার টন কার্গো ধারণসম্পন্ন জাহাজ নির্মাণ ও মেরামতের সুযোগ-সুবিধাসহ এটি নির্মিত হয়।
উৎপাদনের শুরু থেকে ১৯৫৯ সাল পর্যন্ত নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা এবং পরে ১৯৬৫ সাল পর্যন্ত জার্মান এবং ব্রিটিশ ব্যবস্থাপনায় শিপইয়ার্ডের কার্যক্রম পরিচালিত হয়। এরপর একই বছর ইস্ট পাকিস্তান ইন্ডাস্ট্রিয়াল ডেভেলপমেন্ট করপোরেশন (ইপিআইডিসি) প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনার দায়িত্ব নেয়। আর স্বাধীনতার পর এটি পরিচালনার দায়িত্ব পায় বাংলাদেশ স্টিল অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশন (বিএসইসি)। প্রথম দিকে মোটামুটি সফলভাবে পরিচালিত হলেও আশির দশকের মাঝামাঝি সময় থেকে প্রতিষ্ঠানটির সফলতার হার নিম্নগামী হতে থাকে। নব্বই দশকে এসে যা লোকসানের ভারে বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়। এ অবস্থায় তৎকালীন বিএনপি সরকার প্রতিষ্ঠানটিকে রুগ্ণ শিল্পপ্রতিষ্ঠান হিসেবে চিহ্নিত করে। পরে আওয়ামী লীগ সরকারর ক্ষমতায় এসে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব নৌবাহিনীর কাছে হস্তান্তর করে।
১৯৯৯ সালের ৩ অক্টোবর প্রতিষ্ঠানটির দায়িত্ব দেওয়া হয় নৌবাহিনীকে। ২০০৮ সালের মধ্যেই দেনা শোধ, এর পর থেকে লাভজনক হয়ে ওঠা। খুলনা শিপইয়ার্ড ২০১০ সালে নৌবাহিনীর জন্য তৈরি শুরু করে পাঁচটি যুদ্ধজাহাজ। ২০১৩ সালে দেশের তৈরি প্রথম যুদ্ধজাহাজ হস্তান্তর করা হয় নৌবাহিনীকে। এখন সেখানে তৈরি হচ্ছে কনটেইনারবাহী জাহাজ।
খুলনা শহরের রূপসা নদীর তীরে জাহাজ নির্মাণ ও মেরামতকারী এ প্রতিষ্ঠানটি এখন কর্মমুখর। নানা প্রকার নৌযান মেরামতের পাশাপাশি সেখানে এখন একই সঙ্গে চলছে চারটি কনটেইনারবাহী এবং দুটি কার্গো-কাম কনটেইনার জাহাজ নির্মাণের কাজ। সম্প্রতি প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশ নৌবাহিনীর জন্য আরও দুটি অত্যাধুনিক যুদ্ধজাহাজ তৈরির ব্যাপারে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে। আর্থিক দিক থেকে বাংলাদেশের জাহাজনির্মাণ শিল্পের ইতিহাসে এটিকে সবচেয়ে বড় প্রকল্প বলে ধরা হচ্ছে।
এসব বিষয়ে কথা হয় প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক কমোডর এস ইরশাদ আহমেদের সঙ্গে। তাঁর ভাষ্য, যুদ্ধজাহাজের মতোই বাংলাদেশে কনটেইনারবাহী জাহাজ নির্মাণের শুরুটাও খুলনা শিপইয়ার্ড থেকে। বর্তমানে নৌবাহিনীর একটি প্রতিষ্ঠান ‘নৌ-ফাউন্ডেশন’ এর জন্য যে দুটি কনটেইনার জাহাজ তৈরি হচ্ছে, তার প্রতিটি ২০ ফুটের ১৪০টি কনটেইনার বহন করতে পারবে। প্রতিটি জাহাজ দৈর্ঘ্যে ৭৫ মিটার, প্রস্থে ১৩ দশমিক ৫ মিটার, পানি থেকে তলদেশের উচ্চতা সর্বোচ্চ ৪ মিটার এবং গতি ঘণ্টায় ১০ নটিক্যাল মাইল। এ প্রকল্পের অর্থমূল্য ধরা হয়েছে ৭৮ কোটি টাকা। আগামী বছরের জুনে জাহাজ দুটি যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হবে। জাহাজ দুটির নকশা অনুমোদন করেছে জাহাজের আন্তর্জাতিক মান নির্ধারণকারী প্রতিষ্ঠান জাপানের নিপ্পন কাইজিকি কাইওকাই বা ক্লাস এনকে জাপান।
এদিকে নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান একই ইয়ার্ডে বিআইডব্লিউটিসির জন্য দুটো কনটেইনারবাহী জাহাজ নির্মাণের উদ্বোধন করেন গত ২৪ অক্টোবর। এ দুটি জাহাজের প্রতিটি ২০ ফুটের ১৫৮টি কনটেইনার বহনে সক্ষম। দৈর্ঘ্যে ৭৬ মিটার, প্রস্থে ১৫ মিটার এবং সর্বোচ্চ গতি ঘণ্টায় ১০ নটিক্যাল মাইল। নির্মিতব্য জাহাজ দুটির নকশা অনুমোদনকারী প্রতিষ্ঠান হচ্ছে নরওয়ের ব্যুরো ভেরিটাস বা ক্লাস বিভি। প্রকল্পের সময়সীমা ২২ মাস এবং অর্থমূল্য ৭৫ কোটি টাকারও বেশি।
এ ছাড়া দুই বছর ধরে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের জন্য তৈরি হতে থাকা দুটি কার্গো জাহাজকে বর্তমানে কনটেইনার জাহাজে রূপান্তর করা হচ্ছে বলে জানান কমোডর ইরশাদ আহমেদ। এগুলো একই সঙ্গে কার্গো এবং কনটেইনার জাহাজ হিসেবে কাজ করবে বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক মান রক্ষার জন্য এখানকার প্রতিটি জাহাজ তৈরি হয় ক্লাসিফিকেশন সোসাইটির অধীনে।
এ সময় নৌবাহিনীর জন্য আরও দুটি অত্যাধুনিক যুদ্ধজাহাজ নির্মাণে চুক্তিবদ্ধ হওয়ার কথা জানিয়ে ইরশাদ আহমেদ বলেন, আগামী কয়েক মাসের মধ্যে এর কাজ শুরু হবে। এখন পর্যন্ত এটি বাংলাদেশের জাহাজ নির্মাণ শিল্পে আর্থিক দিক থেকে সবচেয়ে বড় প্রকল্প।
ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প: খুলনার অধিকাংশ শিল্পপ্রতিষ্ঠান যখন একে একে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, সে সময় খুলনা শিপইয়ার্ডের উত্তরোত্তর এ সমৃদ্ধি ব্যতিক্রম। ২০১২-১৩ অর্থবছরে প্রতিষ্ঠানটির নিট মুনাফা ছিল ৪০ কোটি টাকারও বেশি। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে তা প্রায় ৪৮ কোটিতে পৌঁছায়। কর্মকর্তারা আশা করছেন, আগামী অর্থবছরে এই মুনাফা ৫০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। এ ছাড়া সর্বশেষ অর্থবছরে প্রতিষ্ঠানটি প্রায় ১৬ কোটি টাকা আয়কর দিয়ে খুলনা অঞ্চলের সর্বোচ্চ আয়করদাতা প্রতিষ্ঠানের স্বীকৃতি লাভ করে। এর আগের দুই অর্থবছরেও তারা এ স্বীকৃতি পেয়েছে। গত ১৪ বছরে ইয়ার্ডের বার্ষিক লেনদেন বেড়েছে ১৫ গুণ।
প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ বিষয়ে প্রথম আলোকে বলেন, নৌবাহিনী প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব নেওয়ার পর সব স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শ্রমিকের নিরলস প্রচেষ্টাতেই আজকের এই সাফল্য। বর্তমানে কর্মচারীদের বেতন-ভাতাসহ সবকিছুই এ প্রতিষ্ঠানের আয় থেকে মেটানো হচ্ছে।
খুলনা শিপইয়ার্ড ১৯৫৭ সাল থেকে এ পর্যন্ত ৬৯০টি বিভিন্ন ধরনের জলযান নির্মাণ করেছে। আর মেরামত করেছে দুই হাজার ১৩৩টি। ইয়ার্ডের বর্তমান অবস্থান আর কাজের গুণগত মান দেখে এর মধ্যে কোরিয়া, নেদারল্যান্ডস, ক্রোয়েশিয়া, চীন ও তুরস্কের বিভিন্ন শিপইয়ার্ড যৌথভাবে কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করেছে। ইয়ার্ডের কার্যক্ষমতা বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন উদ্যোগের পাশাপাশি ভবিষ্যৎ বিবেচনায় মংলার জয়মনিগোলে কিছু জায়গাও কেনা হয়েছে।
জাহাজ নির্মাণ ও মেরামতের বাইরে বর্তমানে এখানে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের জন্য বড় ময়লার কনটেইনার ও ট্রলি এবং চিনি ও পাটকলের বিভিন্ন যন্ত্রাংশ, ফেরির পন্টুনও তৈরি হচ্ছে।
পেছনের গল্প: ১৯৪৭ সালের দেশভাগের পর তৎকালীন পাকিস্তান ডেভেলপমেন্ট করপোরেশন (পিআইডিসি) খুলনায় একটি শিপইয়ার্ড নির্মাণের জন্য পশ্চিম জার্মানির মেসার্স স্টাকেন শন নামের একটি প্রতিষ্ঠানকে নিযুক্ত করে। ১৯৫৪ সালে নির্মাণকাজ শুরুর পর প্রতিষ্ঠানটি ১৯৫৭ সালের ২৩ নভেম্বর থেকে উৎপাদনে যায়। সে সময় রূপসা নদীর প্রাকৃতিক সীমাবদ্ধতা ও গভীরতাকে বিবেচনায় রেখে সর্বোচ্চ ৭০০ টন লাইট ওয়েট বা আড়াই হাজার টন কার্গো ধারণসম্পন্ন জাহাজ নির্মাণ ও মেরামতের সুযোগ-সুবিধাসহ এটি নির্মিত হয়।
উৎপাদনের শুরু থেকে ১৯৫৯ সাল পর্যন্ত নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা এবং পরে ১৯৬৫ সাল পর্যন্ত জার্মান এবং ব্রিটিশ ব্যবস্থাপনায় শিপইয়ার্ডের কার্যক্রম পরিচালিত হয়। এরপর একই বছর ইস্ট পাকিস্তান ইন্ডাস্ট্রিয়াল ডেভেলপমেন্ট করপোরেশন (ইপিআইডিসি) প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনার দায়িত্ব নেয়। আর স্বাধীনতার পর এটি পরিচালনার দায়িত্ব পায় বাংলাদেশ স্টিল অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশন (বিএসইসি)। প্রথম দিকে মোটামুটি সফলভাবে পরিচালিত হলেও আশির দশকের মাঝামাঝি সময় থেকে প্রতিষ্ঠানটির সফলতার হার নিম্নগামী হতে থাকে। নব্বই দশকে এসে যা লোকসানের ভারে বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়। এ অবস্থায় তৎকালীন বিএনপি সরকার প্রতিষ্ঠানটিকে রুগ্ণ শিল্পপ্রতিষ্ঠান হিসেবে চিহ্নিত করে। পরে আওয়ামী লীগ সরকারর ক্ষমতায় এসে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব নৌবাহিনীর কাছে হস্তান্তর করে।
>>কনটেইনারবাহী জাহাজের একটি নমুনা
No comments