মতলবটা কি? আইজিডব্লিউ লাইসেন্স...
আইজিডব্লিউ লাইসেন্স হোল্ডাররা অন্তহীন সমস্যায় পড়েছেন। একদিকে শ’ শ’ কোটি টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে, অন্যদিকে কতিপয় লাইসেন্সধারী অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসার মাধ্যমে মোটা অঙ্কের টাকা কামিয়ে নিচ্ছে। সরকার সামগ্রিক পরিস্থিতি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল। কিভাবে এই পরিস্থিতি সামাল দেয়া যায়- এ নিয়ে নিরন্তর প্রচেষ্টার পর আইজিডব্লিউ লাইসেন্সধারীদের সঙ্গে একাধিক বৈঠক হয়। বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তারা একটি কনসোর্টিয়াম গঠন করেছেন। এতে ২৩টি লাইসেন্সধারী প্রতিষ্ঠানেরই থাকার কথা। কারণ এ সম্পর্কিত ১০ সদস্যের কমিটি সব ক’টা বৈঠকে তারা হাজির ছিলেন। সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব ও মতামত দিয়েছেন। অতি সম্প্রতি তিনটি প্রতিষ্ঠান বাংলাটেক, বিজিটেল ও ডিবিএল তাদের আপত্তির কথা জানিয়েছে। কি কারণে তাদের আপত্তি এটা অনুসন্ধান করতে গিয়ে বেরিয়ে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। বলাবলি হচ্ছে এরা কমবেশি অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। ৩ জনের বিরুদ্ধে আগে মামলা হয়েছে। ২টি লাইসেন্স ব্লক করা হয়েছে। কনসোর্টিয়াম গঠনকারীদের যুক্তি হচ্ছে, কতিপয় লাইসেন্সধারীর কারণে সরকার বিলিয়ন বিলিয়ন টাকা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। কারণ তারা নানা কৌশলে টাকা সরিয়ে নিচ্ছে। আন্তর্জাতিক টেলিকম প্রতিষ্ঠানগুলো মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে যাচ্ছে। কনসোর্টিয়াম হলে টাকা সরানোর সুযোগ একদম কমে যাবে। কারণ, ব্যবসাটি নিয়ন্ত্রিত হবে যৌথভাবে। আর শেয়ার বণ্টন হবে নিজেদের মধ্যে। একজন অন্যজনকে ব্যাংক গ্যারান্টি দেবে। ডিজিকন টেলিকমের কর্ণধার ইমরান করিম বলেন, এই প্রেক্ষাপটেই তারা বিটিআরসির কাছে প্রস্তাব পাঠান। প্রস্তাবটির ওপর দীর্ঘ পর্যবেক্ষণ শেষে বিটিআরসি মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য।
এই যখন অবস্থা তখনই উল্লিখিত লাইসেন্সধারীরা নানাভাবে তদবির করছেন ব্যবসাটি যেন আগের অবস্থায় থাকে। প্রশ্ন উঠেছে তাদের মতলব নিয়ে। এতে কার লাভ হবে? নিজেদের লাভ মাথায় রেখে তারা ঘুঁটি নাড়ছেন। তাদের একটুও চিন্তা নেই, কোটি কোটি টাকা খরচ করে যারা লাইসেন্স নিয়েছেন তাদের অবস্থা কি হবে? এছাড়া বেশির ভাগ লাইসেন্স মালিকরা যেখানে জোটবদ্ধ সেখানে তিনটি প্রতিষ্ঠান কেন বিরোধিতা করছে? তাদের বিরোধিতায় প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা থেকে বঞ্চিত হবে দেশ। বিরোধিতাকারী বাংলাটেল নামক সংস্থাটি লাইসেন্স পেয়েছে সুনামগঞ্জ থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন রতনের তদবিরে। এর পরে যোগ দেন আসিফ মাহমুদ। যিনি বেসরকারি ব্যাংক ইস্টার্ন ব্যাংকের পরিচালক। পাশাপাশি বিডিনিউজ টুয়েন্টিফোর-এর চেয়ারম্যান। বিডিনিউজ সম্ভবত এ কারণেই এ নিয়ে হইচই করছে। নায়ক হেলাল খানও যুক্ত রয়েছেন এর সঙ্গে। ওয়ান-ইলেভেনের সময় অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগে তিনি আটক হয়েছিলেন। আরও মজার ব্যাপার হচ্ছে, ওয়ান-ইলেভেনের সময় একজন ব্যবসায়ী বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে যিনি মামলা করেছিলেন, আদালতে সাক্ষ্যও দিয়েছিলেন- তিনিও এই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে রয়েছেন।
দেশে অব্যাহতভাবে অবৈধ কলের একটি অরাজক পরিস্থিতি চলছে। এটা নিয়ন্ত্রণের জন্য বিটিআরসির ইনকামিং কল রেট মিনিট প্রতি তিন সেন্ট থেকে কমিয়ে দেড় সেন্ট করার প্রস্তাবে সায় দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গত ১৮ই সেপ্টেম্বর এই প্রস্তাব কার্যকর করেছে বিটিআরসি। এই সিদ্ধান্তের পর বর্তমানে দিনে ৯৬ থেকে ৯৭ মিলিয়ন মিনিট কল আসছে- যা আগে ধারণা করা যায়নি। যেখানে বছরের গোড়ার দিকে এটি ছিল ৩০ থেকে ৩৫ মিলিয়ন মিনিট। সংবাদ মাধ্যমে প্রায় প্রতিদিনই খবর বের হয় ২০১২ থেকে এ পর্যন্ত আইজিডব্লিউ অপারেটরদের কাছে প্রায় ১০০০ কোটি টাকা পাওনা রয়েছে। কনসোর্টিয়ামের বিরোধিতাকারী প্রতিষ্ঠান বাংলাটেলের কাছে বিটিআরসির পাওনা রয়েছে ১৮ কোটি ৭৭ লাখ টাকা।
উল্লেখ্য, বিটিআরসি প্রস্তাবিত নতুন মডেলটি বিবেচনায় নেয়ার আগে একটি কমিটি গঠন করা হয়। এতে স্থির হয়, বৈদেশিক কল আদান-প্রদানের সব লেনদেন হবে ‘ঞজ-২’-এর একটি ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে। অন্য অপারেটররা কল আদান-প্রদানের সব অর্থ হস্তান্তর করবে ‘ঞজ-২’-এর মাধ্যমে। পরে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান (বিটিআরসি, আইসিএক্স ও এএনএস)-এর কাছে রাজস্ব হস্তান্তর করবে। লাইসেন্স নীতিমালা অনুযায়ী আইজিডব্লিউ তাদের রাজস্বের ৪০ শতাংশ বিটিআরসি, ১৭ দশমিক ৫ শতাংশ আইসিএক্স এবং ২২ দশমিক ৫ শতাংশ এএনএসের কাছে পরিশোধ করে থাকে। মন্ত্রণালয়ে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘মার্কেট ডেভেলপমেন্ট এক্সপ্রেস’ নামে একটি একাউন্ট থাকবে।
সর্বশেষ: বিটিআরসির চেয়ারম্যান সুনীল কান্তি বোস সংবাদ মাধ্যমকে বলেছেন, অনেক যাচাই-বাছাই করেই এ প্রস্তাব নেয়া হয়েছে। এতে উভয় পক্ষই লাভবান হবে।
No comments