ঠোকাঠুকি লাগবে ওবামা-ম্যাককনেলে
যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যবর্তী নির্বাচনে বড় জয় পেল দেশটির বিরোধী দল রিপাবলিকান পার্টি। পূর্ব উপকূল, মধ্যাঞ্চল, একেবারে দক্ষিণাঞ্চল কিংবা পশ্চিমাঞ্চল—সব এলাকাতেই মার্কিন আইনসভার উচ্চকক্ষ সিনেট ও নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদের আসন পেয়েছেন রিপাবলিকানরা। এখন উচ্চকক্ষ ও নিম্নকক্ষ—দুটিরই নিয়ন্ত্রণ তাঁদের হাতে। মধ্যবর্তী নির্বাচনে রিপাবলিকানদের এই জয় স্বাভাবিকভাবেই দলটিকে বেশ ক্ষমতাশালী করেছে। আর এই ক্ষমতার কেন্দ্রে থাকবেন রিপাবলিকান নেতা মিচ ম্যাককনেল। তিনিই সিনেটের সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা হতে যাচ্ছেন। মঙ্গলবারের নির্বাচনে কেনটাকি অঙ্গরাজ্য থেকে সিনেটর নির্বাচিত হয়েছেন ম্যাককনেল। ক্ষমতার কেন্দ্রে গেলে ক্ষমতা যেমন উপভোগ করা যায়, একইভাবে অনেক চ্যালেঞ্জেরও মুখোমুখি হতে হয়। সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা নির্বাচিত হলে ম্যাককনেলকে বিভিন্ন আইন, নীতিমালা বা সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে বারবার মুখোমুখি হতে হবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সঙ্গে।
এ ছাড়া এর আগে করা দলীয় নানা অঙ্গীকার বাস্তবায়নের প্রচেষ্টাও চালাতে হবে ম্যাককনেলকে। কারণ আইনসভার দুই কক্ষই তাঁর দলের নিয়ন্ত্রণে। সর্বোপরি আট বছর পর সিনেটের নিয়ন্ত্রণ পেল রিপাবলিকান পার্টি। আর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সবচেয়ে বেশি সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদের নিয়ন্ত্রণ পেল দলটি। যদিও মধ্যবর্তী নির্বাচনের আগে থেকেই প্রতিনিধি পরিষদের নিয়ন্ত্রণ ছিল রিপাবলিকানদের হাতে। এ ছাড়া গভর্নর নির্বাচনে এমন কিছু অঙ্গরাজ্যে রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থীরা জয়ী হয়েছেন, যেটা ছিল প্রত্যাশারও বাইরে। তবে নির্বাচনে রিপাবলিকানরা যেসব ইস্যু নিয়ে ভোটারদের সামনে গেছেন, তা পছন্দ করে ভোটারেরা রিপাবলিকান প্রার্থীদের পক্ষে রায় দিয়েছেন, বিষয়টি তেমন নয়। প্রেসিডেন্ট ওবামার জনপ্রিয়তায় ধস নামাটাও কিন্তু রিপাবলিকানদের এত বড় জয়ের অন্যতম একটি কারণ। আবার শুধু ওবামার জনপ্রিয়তাই কমেনি, বিভিন্ন জরিপে দেখা যায় মার্কিন রাজনীতিবিদদের নিয়েই হতাশ যুক্তরাষ্ট্রের জনগণ। এই বিষয়গুলো ভালোই জানা বর্ষীয়ান রিপাবলিকান নেতা ম্যাককনেলের। আর এটাও জানেন, ইতিমধ্যে প্রায় ছয় বছর ক্ষমতায় থাকা প্রেসিডেন্ট ওবামার মেয়াদ আছে আর মাত্র দুই বছর।
ওবামার প্রতি জনগণের অবসাদ আসতেই পারে। তাই ম্যাককনেলকে পাল্টাপাল্টি দোষারোপের বিষয়ে সতর্ক থাকতেই হবে। আবার এই সময়ে গুরুত্বপূর্ণ কিছু কৌশলগত সিদ্ধান্তও নিতে হবে ম্যাককনেলকে। ম্যাককনেল অবশ্য এর আগে ইঙ্গিত দেন, তিনি সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা হলে নানা ইস্যুতে হোয়াইট হাউসের সঙ্গে ইতিবাচকভাবে সমঝোতার মাধ্যমে উন্নয়নের দিকে এগিয়ে যাবেন। এখন তা করে দেখানোর সময় এসেছে ম্যাককনেলের। কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে সিদ্ধান্ত নিতে হবে তাঁকে। সেগুলো হলো: কানাডা থেকে পাইপলাইনে তেল আনা, কর আইন সংস্কার ও অভিবাসননীতি সংস্কার। আর গুরুত্বপূর্ণ এই ইস্যুগুলোতে ম্যাককনেল তাঁর দলের সিনেটর ও প্রতিনিধি পরিষদের সদস্যদের এক করতে পারবেন কি না, সেটাও প্রশ্ন। এসব বিষয় ম্যাককনেলের জন্য মধুর সমস্যা, কিন্তু প্রেসিডেন্ট ওবামাকে তো বেদনাদায়ক বাস্তবতার মুখোমুখি হতে হবে। ক্ষমতায় আসার পর যেকোনো সময়ের তুলনায় নিঃসঙ্গ হয়ে গেলেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্ট ওবামা। তিনি কখনোই চাইবেন না তাঁর শাসনামলের শেষ দুই বছর কোনো স্থবিরতা বা তাঁর কোনো উদ্যোগ ব্যর্থ হোক। কিন্তু বাস্তবতা তাঁকে সেই পরিস্থিতির মুখোমুখি নিয়ে যেতে পারে।
No comments