দালাল পুলিশ আনসারদের মিনি পাসপোর্ট অফিস
সাত দিন আগের কথা। রাজধানীর নিকেতনের বাসিন্দা গোলাম দস্তগীর মিয়া আগারগাঁওয়ে পাসপোর্ট অফিসে যান। উদ্দেশ্য পাসপোর্ট করাবেন। সেখানে যেতেই আয়নাল নামের এক ব্যক্তি তার পিছু নেন, বারবার বলতে থাকেন, ‘স্যার, কোনো ঝক্কিঝামেলা করতে হবে না। ভেরিফিকেশন ছাড়াই পাসপোর্ট পাবেন। কয়টা টাকা বেশি দিলেই পাসপোর্ট আপনার বাসায় গিয়ে হাজির হবে।’
চাপাচাপিতে গোলাম দস্তগীর শেষ পর্যন্ত কিছু টাকা বেশি দিয়ে আয়নালকেই পাসপোর্ট তৈরি করার দায়িত্ব দেন। আয়নাল পাসপোর্ট অফিসের দালাল। এভাবে পাসপোর্ট বানানোর ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘মেয়ের পাসপোর্ট বানাতে গিয়ে তার যে ঝামেলা সেই থেকে তিনি শিক্ষা পেয়েছেন। তাই দালালকেই তিনি বেছে নিলেন।’
দস্তগীরের পাসপোর্ট তৈরি হয়েছে ঠিকই, কিন্তু সেই পাসপোর্টসহ মঙ্গলবার ধরা পড়েছেন দালাল আয়নাল। অনেক দালাল ধরা পড়ার খবরে বুধবার পাসপোর্ট অফিসে ছুটে যান দস্তগীর। সেখানেই তার সঙ্গে কথা হয়।
সরকারি পাসপোর্ট অধিদফতরের পাশে মাত্র ২০০ গজ দূরেই ‘বেসরকারি পাসপোর্ট অফিস’ গড়ে তুলেছেন দালালরা। সরকারি অফিসের মতোই সেখানে চলে কার্যক্রম। কাজে দালালদের সহায়তা করে পুলিশ ও আনসার সদস্যরা। র্যাবের অনুসন্ধানে পাসপোর্ট অফিসের দুজন কর্মকর্তার সম্পৃক্ততার প্রাথমিক তথ্যও মিলেছে।
সরেজমিন দেখা যায়, দালালরা পাসপোর্ট অফিসের সামনে এবং সেখান থেকে একটু দূরে সোনালী ব্যাংকে গিয়ে পাসপোর্ট প্রত্যাশীদের পিছু ধরছেন। দালালরা টোপ দেয়, ফরম পূরণ, ফরম সত্যায়ন, ব্যাংকে ফি জমা, কাগজপত্র ঘাটতি ভুল বা ভুয়া কাগজপত্র, এমনকি ২ থেকে ৬ হাজার টাকায় ভেরিফিকেশন ছাড়াই অতি দ্রুত পাসপোর্ট তৈরি করে দেবে। দালাল পান্নু খান জানান, তার হাত দিয়ে ভেরিফিকেশন ছাড়াই অসংখ্য পাসপোর্ট গেছে। তার সঙ্গে মিরপুরের একটি অপরাধী চক্রের যোগসূত্রের তথ্যও পাওয়া গেছে।
অনেকে আবার তাদের কাছে টাকা দিয়ে প্রতারণার শিকার হয়েছেন। র্যাবের কাছে আবুল ফজল ও কান্তিলাল নামের দুই ব্যক্তি সম্প্রতি এ ধরনের অভিযোগ দিয়েছেন। ফজল অভিযোগ করেছেন, হারুন নামের এক দালাল তার কাছে ৬ হাজার টাকা নেয়। আর কান্তির কাছে আসলাম মিয়া নামের একজন নেয় প্রায় ৭ হাজার টাকা। এরা দ্রুত পাসপোর্ট তৈরি করে দিতে পারে বলে জানায়। কিন্তু পাসপোর্ট তো নেই, টাকারও খবর নেই।
ফজল ও কান্তি জানান, পাসপোর্ট অফিসের দক্ষিণ দিকে একটি মেস বাসায় তাদের নেয়া হয়। সেখানে তারা টাকা দেন। হয়রানির শিকার অভিযোগকারী আবু বক্কর বলেন, একজন পুলিশ কনস্টেবল তার কাছে টাকা নিয়েছে। এছাড়া মারুফ আক্তারকে পাসপোর্ট দেয়ার কথা বলে টাকা নেন দুই আনসার সদস্য। তারা সরকারি অফিস থেকে ওই বাসায় নিয়ে গিয়ে ফরম পূরণ করিয়ে নেয়।
দালালদেও উৎপাতের কারণে, পাসপোর্ট অধিদফতরে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি প্রচারিত করা হয়। বিজ্ঞপ্তিটি নোটিশ বোর্ড ছাড়াও বিভিন্ন দৃশ্যমান স্থানে ঝুলানো হয় এবং মাইকিং করে উপদ্রব সৃষ্টিকারী দালালদের সতর্ক করা হয়েছে। সতর্ক করা বিজ্ঞপ্তি বড় আকারের সাইনবোর্ডে বড় বড় অক্ষরে লিখে পাসপোর্ট অফিসের প্রবেশ গেট সংলগ্ন ভবনের দেয়ালে স্থাপন করা হয়। এতেও কোনো কাজ হচ্ছে না।
র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এএইচএম আনোয়ার পাশা যুগান্তরকে বলেন, পাসপোর্ট অফিস ঘিরে পুরনো সিন্ডিকেটই নানাভাবে সক্রিয় হয়েছে। বেশির ভাগ সময় এরা মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে।
র্যাব-২ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল কেএম আজাদ যুগান্তরকে বলেন, একটি হেল্পডেস্ক প্রয়োজন, যেখান থেকে লোকজন পাসপোর্ট করার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সহায়তা নিতে পারে। পাসপোর্ট অফিস থেকে টাকা জমা দেয়ার জন্য যারা সোনালী ব্যাংকে যান তারাও হয়রানির শিকার হন। পাসপোর্ট অফিস লাগোয়া টাকা জমা দেয়ার জন্য স্থায়ী বুথ স্থাপনও জরুরি।
তিনি বলেন, সরকারি অফিসের পাশেই দালালরা অবৈধ পাসপোর্ট অফিস তৈরি করে ফেলেছে। এ ধরনের অপরাধে ওই অফিসের কারও সংশ্লিষ্টতা থাকতে পারে।
‘বেসরকারি’ এই পাসপোর্ট অফিসের কার্যক্রম তদারকি করতেন দালাল আয়নাল হোসেন। ঢাকার মিরপুরের মধ্যপীরেরবাগে তার বাড়ি। তার সঙ্গে নাসির ও নুরুজ্জামান মূল সহযোগী হিসেবে কাজ করে থাকে। এদের সঙ্গে ঢাকা মহানগর পুলিশের প্রটেকশন বিভাগের কনস্টেবল ফিরোজ মিয়া এবং আনসার সদস্য আলতাফ হোসেন জড়িত। এই অফিসটি সাত মাস আগে স্থাপন করা হয়।
র্যাব কর্মকর্তারা জানান, এখানে অভিযান চালিয়ে ৯৭টি এমআরপি পাসপোর্ট এবং পাসপোর্ট তৈরির জন্য আবেদনকৃত অনেক ফরম পাওয়া গেছে। এগুলোতে দেখা গেছে, সরকারি কর্মকর্তাদের সিলমোহর ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সত্যায়িত করা। এর মধ্যে অনেকের পাসপোর্ট অধিদফতর থেকেই করে আনা।
মঙ্গলবার র্যাব অভিযান চালিয়ে এখান থেকে ৩০ জন দালালকে আটক করে। ভ্রাম্যমাণ আদালত তাদের বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেন। পুলিশ ও আনসার সদস্যের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হয়। তাদের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
চাপাচাপিতে গোলাম দস্তগীর শেষ পর্যন্ত কিছু টাকা বেশি দিয়ে আয়নালকেই পাসপোর্ট তৈরি করার দায়িত্ব দেন। আয়নাল পাসপোর্ট অফিসের দালাল। এভাবে পাসপোর্ট বানানোর ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘মেয়ের পাসপোর্ট বানাতে গিয়ে তার যে ঝামেলা সেই থেকে তিনি শিক্ষা পেয়েছেন। তাই দালালকেই তিনি বেছে নিলেন।’
দস্তগীরের পাসপোর্ট তৈরি হয়েছে ঠিকই, কিন্তু সেই পাসপোর্টসহ মঙ্গলবার ধরা পড়েছেন দালাল আয়নাল। অনেক দালাল ধরা পড়ার খবরে বুধবার পাসপোর্ট অফিসে ছুটে যান দস্তগীর। সেখানেই তার সঙ্গে কথা হয়।
সরকারি পাসপোর্ট অধিদফতরের পাশে মাত্র ২০০ গজ দূরেই ‘বেসরকারি পাসপোর্ট অফিস’ গড়ে তুলেছেন দালালরা। সরকারি অফিসের মতোই সেখানে চলে কার্যক্রম। কাজে দালালদের সহায়তা করে পুলিশ ও আনসার সদস্যরা। র্যাবের অনুসন্ধানে পাসপোর্ট অফিসের দুজন কর্মকর্তার সম্পৃক্ততার প্রাথমিক তথ্যও মিলেছে।
সরেজমিন দেখা যায়, দালালরা পাসপোর্ট অফিসের সামনে এবং সেখান থেকে একটু দূরে সোনালী ব্যাংকে গিয়ে পাসপোর্ট প্রত্যাশীদের পিছু ধরছেন। দালালরা টোপ দেয়, ফরম পূরণ, ফরম সত্যায়ন, ব্যাংকে ফি জমা, কাগজপত্র ঘাটতি ভুল বা ভুয়া কাগজপত্র, এমনকি ২ থেকে ৬ হাজার টাকায় ভেরিফিকেশন ছাড়াই অতি দ্রুত পাসপোর্ট তৈরি করে দেবে। দালাল পান্নু খান জানান, তার হাত দিয়ে ভেরিফিকেশন ছাড়াই অসংখ্য পাসপোর্ট গেছে। তার সঙ্গে মিরপুরের একটি অপরাধী চক্রের যোগসূত্রের তথ্যও পাওয়া গেছে।
অনেকে আবার তাদের কাছে টাকা দিয়ে প্রতারণার শিকার হয়েছেন। র্যাবের কাছে আবুল ফজল ও কান্তিলাল নামের দুই ব্যক্তি সম্প্রতি এ ধরনের অভিযোগ দিয়েছেন। ফজল অভিযোগ করেছেন, হারুন নামের এক দালাল তার কাছে ৬ হাজার টাকা নেয়। আর কান্তির কাছে আসলাম মিয়া নামের একজন নেয় প্রায় ৭ হাজার টাকা। এরা দ্রুত পাসপোর্ট তৈরি করে দিতে পারে বলে জানায়। কিন্তু পাসপোর্ট তো নেই, টাকারও খবর নেই।
ফজল ও কান্তি জানান, পাসপোর্ট অফিসের দক্ষিণ দিকে একটি মেস বাসায় তাদের নেয়া হয়। সেখানে তারা টাকা দেন। হয়রানির শিকার অভিযোগকারী আবু বক্কর বলেন, একজন পুলিশ কনস্টেবল তার কাছে টাকা নিয়েছে। এছাড়া মারুফ আক্তারকে পাসপোর্ট দেয়ার কথা বলে টাকা নেন দুই আনসার সদস্য। তারা সরকারি অফিস থেকে ওই বাসায় নিয়ে গিয়ে ফরম পূরণ করিয়ে নেয়।
দালালদেও উৎপাতের কারণে, পাসপোর্ট অধিদফতরে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি প্রচারিত করা হয়। বিজ্ঞপ্তিটি নোটিশ বোর্ড ছাড়াও বিভিন্ন দৃশ্যমান স্থানে ঝুলানো হয় এবং মাইকিং করে উপদ্রব সৃষ্টিকারী দালালদের সতর্ক করা হয়েছে। সতর্ক করা বিজ্ঞপ্তি বড় আকারের সাইনবোর্ডে বড় বড় অক্ষরে লিখে পাসপোর্ট অফিসের প্রবেশ গেট সংলগ্ন ভবনের দেয়ালে স্থাপন করা হয়। এতেও কোনো কাজ হচ্ছে না।
র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এএইচএম আনোয়ার পাশা যুগান্তরকে বলেন, পাসপোর্ট অফিস ঘিরে পুরনো সিন্ডিকেটই নানাভাবে সক্রিয় হয়েছে। বেশির ভাগ সময় এরা মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে।
র্যাব-২ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল কেএম আজাদ যুগান্তরকে বলেন, একটি হেল্পডেস্ক প্রয়োজন, যেখান থেকে লোকজন পাসপোর্ট করার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সহায়তা নিতে পারে। পাসপোর্ট অফিস থেকে টাকা জমা দেয়ার জন্য যারা সোনালী ব্যাংকে যান তারাও হয়রানির শিকার হন। পাসপোর্ট অফিস লাগোয়া টাকা জমা দেয়ার জন্য স্থায়ী বুথ স্থাপনও জরুরি।
তিনি বলেন, সরকারি অফিসের পাশেই দালালরা অবৈধ পাসপোর্ট অফিস তৈরি করে ফেলেছে। এ ধরনের অপরাধে ওই অফিসের কারও সংশ্লিষ্টতা থাকতে পারে।
‘বেসরকারি’ এই পাসপোর্ট অফিসের কার্যক্রম তদারকি করতেন দালাল আয়নাল হোসেন। ঢাকার মিরপুরের মধ্যপীরেরবাগে তার বাড়ি। তার সঙ্গে নাসির ও নুরুজ্জামান মূল সহযোগী হিসেবে কাজ করে থাকে। এদের সঙ্গে ঢাকা মহানগর পুলিশের প্রটেকশন বিভাগের কনস্টেবল ফিরোজ মিয়া এবং আনসার সদস্য আলতাফ হোসেন জড়িত। এই অফিসটি সাত মাস আগে স্থাপন করা হয়।
র্যাব কর্মকর্তারা জানান, এখানে অভিযান চালিয়ে ৯৭টি এমআরপি পাসপোর্ট এবং পাসপোর্ট তৈরির জন্য আবেদনকৃত অনেক ফরম পাওয়া গেছে। এগুলোতে দেখা গেছে, সরকারি কর্মকর্তাদের সিলমোহর ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সত্যায়িত করা। এর মধ্যে অনেকের পাসপোর্ট অধিদফতর থেকেই করে আনা।
মঙ্গলবার র্যাব অভিযান চালিয়ে এখান থেকে ৩০ জন দালালকে আটক করে। ভ্রাম্যমাণ আদালত তাদের বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেন। পুলিশ ও আনসার সদস্যের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হয়। তাদের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
No comments