নিজামীর মৃত্যুদণ্ডের শাস্তি পরিবর্তনের আহ্বান অ্যামনেস্টির
বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি অত্যন্ত
উত্তেজনাপূর্ণ। যে কোন প্রকার রাজপথের প্রতিবাদ সহিংসতায় রূপ নেয়ার ঝুঁকি
রয়েছে। জনগণের শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের অধিকার নিশ্চিত করাটা নিরাপত্তা
রক্ষাকারী বাহিনীগুলোর জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সব পক্ষের নেতৃবৃন্দের
উচিত সীমা লঙ্ঘন না করার জন্য তাদের সমর্থকদের তাগিদ দেয়া। আন্তর্জাতিক
অপরাধ আদালত বুধবার জামায়াতে ইসলামীর আমীর মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর
বিরুদ্ধে ফাঁসির রায় দিয়েছেন- তারই প্রেক্ষিতে এক বিবৃতিতে এসব কথা বলেছে
আন্তর্জাতিক মানবাধিকারবিষয়ক সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। এতে
নিজামীর মৃত্যুদণ্ডের শাস্তি পরিবর্তনের আহ্বান জানানো হয়েছে। তারা বলেছে,
যুদ্ধাপরাধের দায়ে তার মৃত্যুদণ্ড স্বাধীনতা যুদ্ধে নিহত ও নির্যাতিতদের
জন্য সুবিচার বয়ে আনবে না। এতে আরও বলা হয়, বিচার প্রক্রিয়ায় সুবিচারের
মানদণ্ড মেনে চলা হয়নি বলে আসামিপক্ষ বার বার উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের বাংলাদেশবিষয়ক গবেষক আব্বাস ফয়েজ বলেন, মতিউর
রহমান নিজামী ও অন্যদের মৃত্যুদণ্ডের শাস্তি পরিবর্তন করা উচিত।
মৃত্যুদণ্ড নিষ্ঠুর, অমানবিক ও অমর্যাদাকর শাস্তি। এটা ন্যায়বিচার দেয়ার
প্রক্রিয়া হতে পারে না। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় যে সব অপরাধ সংঘটিত হয়েছে
সেগুলো ভয়ঙ্কর আর অপরাধের শিকার ব্যক্তিদের ন্যায়বিচার প্রাপ্তির বিষয়ে কোন
প্রশ্ন নেই। কিন্তু মৃত্যুদণ্ড শুধু সহিংসতার ধারাকেই স্থায়ী করবে। তিনি
আরও বলেন, মৃত্যুদণ্ড শুধু মানুষের জীবনের অধিকার লঙ্ঘন নয় বরং এ শাস্তি
বাস্তবায়ন হলে তা পরিবর্তনযোগ্য নয়। কাজেই বিচার প্রক্রিয়ায় সম্ভাব্য
ত্রুটি সংশোধনের কোন সুযোগ থাকে না। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, এখন পর্যন্ত
সবগুলো রায় যেসব ব্যক্তির বিরুদ্ধে এসেছে তারা জামায়াতে ইসলামীর রাজনৈতিক
দলের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠিত হওয়ার পর থেকেই
মানবাধিকার সংস্থাগুলো পক্ষপাতমূলক বিচার ব্যবস্থার অভিযোগ তুলেছে। বিচার
চলাকালে একই অভিযোগ এসেছে নিজামীর আইনজীবীদের পক্ষ থেকে। আব্বাস ফয়েজ বলেন,
বাংলাদেশে ন্যায়বিচার ও সামঞ্জস্য বিধানের জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ
ট্রাইব্যুনাল একটি অদ্বিতীয় সুযোগ। কিন্তু বিচার প্রক্রিয়া সুষ্ঠু নয়,
আসামিপক্ষের তরফ থেকে আসা অব্যাহত এ উদ্বেগের প্রেক্ষিতে এর প্রভাব শুধুই
বিপরীত হবে এবং আরও বেশি অসন্তোষ সৃষ্টি করবে। আন্তর্জাতিক অপরাধ
ট্রাইব্যুনালের দেয়া আগের মৃত্যুদণ্ডের রায়গুলোর পর রাজপথে ব্যাপক প্রতিবাদ
সংঘটিত হয়েছে। আর জামায়াতে ইসলামী ইতিমধ্যে নিজামীর রায়ের প্রতিবাদে
তিনদিনের হরতাল দিয়েছে। অ্যামনেস্টির ওয়েবসাইটে প্রকাশিত ওই বিবৃতিতে আরও
বলা হয়, আইনগত বা প্রায়োগিকভাবে ১৪০টি দেশ এখন পর্যন্ত মৃত্যুদণ্ড বিলুপ্ত
করেছে। ২০০৯ সাল থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত বিশ্বব্যাপী যে নয়টি দেশ মৃত্যুদণ্ড
কার্যকর করেছে তার মধ্যে বাংলাদেশ একটি। অপরাধের ধরন বা ঘটনার পরিস্থিতি
যেমনই হোক না কেন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল যে কোন ক্ষেত্রে মৃত্যুদণ্ড
বা তা কার্যকর করতে যে প্রক্রিয়া ব্যবহার করা হয় তার বিরুদ্ধে। সংস্থাটি
মৃত্যুদণ্ড বিলুপ্ত ও শাস্তি লঘু করার প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে অবিলম্বে
মৃত্যুদণ্ড স্থগিত বা বিলম্ব করার প্রক্রিয়া স্থাপনে বাংলাদেশী কর্তৃপক্ষের
প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।
No comments