সরকারপ্রধানের মেয়াদ সর্বোচ্চ দুইবার হোক by ইকতেদার আহমেদ
১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল মুজিবনগর সরকারের জারিকৃত স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে উল্লেখ করা হয় যে, সংবিধান প্রণীত না হওয়া পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রপতি থাকবেন এবং সৈয়দ নজরুল ইসলাম প্রজাতন্ত্রের উপরাষ্ট্রপতি থাকবেন। ওই ঘোষণাপত্রে আরো উল্লেখ করা হয়, কোনো কারণে রাষ্ট্রপতি না থাকা বা রাষ্ট্রপতি তার কার্যভার গ্রহণ করতে অসমর্থ হওয়া বা তার ক্ষমতা প্রয়োগ করতে অসমর্থ হওয়ার ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতির ওপর এতদ্বারা অর্পিত সমুদয় ক্ষমতা, কর্তব্য ও দায়িত্ব উপরাষ্ট্রপতির থাকবে এবং তিনি উহা প্রয়োগ ও পালন করবেন।
বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রাম চলাকালে মুজিবনগর সরকার ভারতে অবস্থান করে মুক্তি সংগ্রাম পরিচালনাসহ সরকারের অপরাপর সমুদয় কার্যাবলি সম্পন্ন করেছিল। ওই সময় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানের কারাগারে আটক থাকাবস্থায় উপরাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতিরূপে দায়িত্ব পালন করেন। তার এ কারাবরণ স্বেচ্ছাধীন ছিলÑ তার একান্ত ঘনিষ্ঠ সহযোগী তাজউদ্দীন আহমদের কন্যা শারমিন আহমদের বইয়ে এমন দাবি করায় এ নিয়ে রাজনৈতিক মহলে বিতর্ক চলছে।
ঘোষণাপত্রে রাষ্ট্রপতি ও উপরাষ্ট্রপতির শপথ পরিচালনার জন্য বাংলাদেশের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা অর্থাৎ ১৯৭০ সালে অনুষ্ঠিত পাকিস্তানের সংসদ নির্বাচনে পূর্ব পাকিস্তান থেকে নির্বাচিত সদস্যরা অধ্যাপক ইউসুফ আলীকে যথাযথ ক্ষমতাপ্রাপ্ত প্রতিনিধি নিয়োগ করেন। ঘোষণাপত্রে প্রদত্ত ক্ষমতা অনুযায়ী অধ্যাপক ইউসুফ আলী যথাযথভাবে উপরাষ্ট্রপতি হিসেবে সৈয়দ নজরুল ইসলামের শপথপাঠ পরিচালনা করতে পারলেও বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতির কারণে প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রপতি হিসেবে তার শপথপাঠ পরিচালনা সম্ভব হয়নি।
স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র দৃষ্টে ধারণা পাওয়া যায়, ওই ঘোষণাপত্র রাষ্ট্রপতিশাসিত সরকারব্যবস্থার সমর্থনে প্রণীত। স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রটি ১৯৭২ সালের ১৬ ডিসেম্বর সংবিধান কার্যকর হওয়ার পূর্বক্ষণ পর্যন্ত বলবৎ থাকে। স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রটি বলবৎ থাকাবস্থায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্তি লাভ করে লন্ডন ও দিল্লি হয়ে ১০ জানুয়ারি ১৯৭২ সালে ঢাকায় প্রত্যাবর্তন করেন। অতঃপর তিনি ১২ জানুয়ারি ১৯৭২ সালে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথগ্রহণ করেন এবং গণপরিষদ ভেঙে যাওয়ার পূর্বক্ষণ পর্যন্ত স্বপদে বহাল থাকেন। সংবিধান প্রণয়ন-পরবর্তী ১৯৭৩ সালে অনুষ্ঠিত প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে ৩০০টি আসনের মধ্যে ২৯৩টিতে বিজয়ী হলে বঙ্গবন্ধু পুনরায় প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথগ্রহণ করেন এবং ১৯৭৫ সালে ২৫ জানুয়ারি চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে একদলীয় ব্যবস্থা বাকশাল প্রতিষ্ঠার পূর্বক্ষণ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী পদে বহাল থাকেন। চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে রাষ্ট্রপতির পদটি শূন্য ঘোষণা করা হয় এবং ওই সংশোধনীতে আরো উল্লেখ করা হয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি হবেন ও কার্যভার গ্রহণ করবেন এবং ওই প্রবর্তন থেকে তিনি বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি পদে বহাল থাকবেন, যেন তিনি এ আইনের দ্বারা সংশোধিত সংবিধানের অধীনে রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচিত হয়েছেন।
স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করায় এবং ওই ঘোষণাপত্রে কোনো ধরনের সংশোধনী আনয়ন ব্যতিরেকে তিনি পাকিস্তান থেকে প্রত্যাবর্তন-পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথগ্রহণ করায় তা আইনের দৃষ্টিতে বা সাংবিধানিকভাবে যথার্থ হয়েছে কি না, সে প্রশ্নটি এসে যায়।
’৭২-এর সংবিধানে সংসদীয় পদ্ধতির সরকারব্যবস্থার বিধান বলবৎ ছিল এবং তখন প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক বা তার কর্র্তৃত্বে সংবিধান অনুযায়ী প্রজাতন্ত্রের নির্বাহী ক্ষমতা প্রযুক্ত হতো। সে সংবিধানের বিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি রাষ্ট্রপ্রধানরূপে রাষ্ট্রের অন্য সব ব্যক্তির ঊর্ধ্বে স্থান লাভ করলেও প্রধানমন্ত্রী নিয়োগের ক্ষেত্র ব্যতীত রাষ্ট্রপতি তার অন্য সব দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ গ্রহণের আবশ্যকতা ছিল। প্রধানমন্ত্রীর নিয়োগ বিষয়ে যে বিধান ছিল, তাতে বলা ছিলÑ যে সংসদ সদস্য সংসদের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের আস্থাভাজন বলে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রতীয়মান হবেন, রাষ্ট্রপতি তাকে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করবেন।
সংসদের মেয়াদ প্রথম বৈঠকের তারিখ থেকে পাঁচ বছর হলেও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষেত্রে ওই সংবিধানে বলা ছিলÑ প্রধানমন্ত্রীর উত্তরাধিকার কার্যভার গ্রহণ না করা পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী স্বীয় পদে বহাল থাকবেন। সুতরাং ধারণা করা যায়, মেয়াদ অবসানের আগে প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করলে অথবা সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের আস্থা হারালে তিনি তার পদ হারাতে পারেন এবং এ ক্ষেত্রেও উত্তরাধিকারী কার্যভার গ্রহণ না করা পর্যন্ত তিনি স্বীয় পদে বহাল থাকবেন।
রাষ্ট্রপতির পদ বিষয়ে ’৭২-এর সংবিধানে উল্লেখ ছিলÑ তিনি সংসদ সদস্যগণ কর্তৃক নির্বাচিত হবেন এবং কার্যভার গ্রহণের তারিখ থেকে পাঁচ বছরের মেয়াদে তার পদে অধিষ্ঠিত থাকবেন।’ রাষ্ট্রপতি পদের ক্ষেত্রেও উল্লেখ ছিল- রাষ্ট্রপতির মেয়াদ শেষ হওয়া সত্ত্বেও তার উত্তরাধিকারী কার্যভার গ্রহণ না করা পর্যন্ত তিনি স্বীয় পদে বহাল থাকবেন। এ সংবিধানের একটি উল্লেখযোগ্য দিক হলো, রাষ্ট্রপতির পদটির মেয়াদ সীমিত করে বলা ছিলÑ একাদিক্রমে হোক বা না হোক দুই মেয়াদের অধিক রাষ্ট্রপতির পদে কোনো ব্যক্তি অধিষ্ঠিত থাকবেন না।
একজন ব্যক্তির রাষ্ট্রপতি পদে দু’মেয়াদের অধিককাল থাকার বিষয়টির উদ্ভব হওয়ার বহু আগে, অর্থাৎ এক মেয়াদ অবসানের আগেই সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সংশোধনীটি যে তারিখে কার্যকর হয়, সে তারিখ অর্থাৎ ২৫ জানুয়ারি ১৯৭৫ সাল থেকে আমৃত্যু রাষ্ট্রপতি পদে বহাল করা হয়। চতুর্থ সংশোধনী প্রবর্তন-পরবর্তী সাত মাসের মাথায় বঙ্গবন্ধু দুই কন্যা ছাড়া সপরিবারে মর্মান্তিকভাবে নিহত হলে দেশ সামরিক শাসনের কবলে পড়ে। পরে পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে একদলীয় বাকশাল ব্যবস্থা রহিত করা হলেও রাষ্ট্রপতিশাসিত সরকারব্যবস্থা বহাল রাখা হয়। এ ব্যবস্থায় প্রজাতন্ত্রের নির্বাহী কর্তৃত্ব বিষয়ে বলা হয়, রাষ্ট্রপতির ওপর তা ন্যস্ত হবে এবং সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি কর্তৃক তা প্রত্যক্ষভাবে অথবা তার অধীনস্থ কর্মচারীর মাধ্যমে প্রযুক্ত হবে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মৃত্যুর পর তারই একান্ত বিশ্বস্ত, মন্ত্রিসভার সদস্য খন্দকার মোশতাক আহমদ রাষ্ট্রপতি পদে আসীন হন এবং বিভিন্ন ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে তিন মাসের মাথায় তাকে ক্ষমতা হারাতে হয়। এরপর সেনাশাসক জিয়াউর রহমান ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হন। জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় থাকাকালে রাজনৈতিক দল গঠন করেন। তার প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অবতীর্ণ হয়ে সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে। এর আগেই অনুষ্ঠিত রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে বিপুল ভোট পেয়ে তিনি রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। জিয়াউর রহমান দুঃখজনকভাবে সামরিক বাহিনীর সদস্যদের দ্বারা নিহত হলে ক্ষণকালের বিরতিতে রাজনৈতিক মঞ্চে অপর সেনাশাসক, বহুরূপী ‘এরশাদ চাচা’র আবির্ভাব ঘটে এবং গণ-অভ্যুত্থান দ্বারা ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পূর্ববর্তী দীর্ঘ ৯ বছর তিনি শক্ত হাতে দেশ পরিচালনা করেন।
১৯৯১ সালে অনুষ্ঠিত পঞ্চম সংসদ নির্বাচনটি কর্মরত প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতির অধীনে অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশ অভ্যুদয়-পরবর্তী তুলনামূলক বিচারে স্বচ্ছ এ নির্বাচনটিতে জিয়াউর রহমানের স্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনপূর্বক সরকার গঠন করে। এর পর বেগম জিয়া উদার মনোভাবের বশবর্তী হয়ে আওয়ামী লীগ ও জামায়াতের সাথে সমঝোতার ভিত্তিতে সংবিধানে দ্বাদশ সংশোধনী আনয়নের মধ্য দিয়ে সংসদীয় সরকারব্যবস্থা প্রত্যাবর্তন করেন। সংসদীয় সরকারব্যবস্থায় প্রত্যাবর্তন করলে রাষ্ট্রপতি আক্ষরিক অর্থে নির্বাহী ক্ষমতাবিহীন, নামমাত্র রাষ্ট্রপ্রধানে পরিণত হন।
’৭২-এর সংবিধানে রাষ্ট্রপতির একাদিক্রমে হোক না হোক, দুই মেয়াদের অধিক পদে বহাল বারিত ছিল। দ্বাদশ সংশোধনীর মাধ্যমে রাষ্ট্রপতির মেয়াদের বিষয়টি ’৭২-এর সংবিধানের মতো অক্ষুণœ রাখা হয়।
’৭২-এর সংবিধানটি মুজিবনগর সরকারের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রের ধারাবাহিকতায় রচিত এবং সে অনুযায়ী সরকারপদ্ধতি রাষ্ট্রপতি শাসিত হবে, সে বিষয়টি বিবেচনায় নিয়েই রাষ্ট্রপতির পদটি একাদিক্রমে হোক বা না হোক দুই মেয়াদের জন্য সীমিত করে দেয়া হয়েছিল। সংসদীয় পদ্ধতির সরকারব্যবস্থায় রাষ্ট্রপতি নামমাত্র সরকারপ্রধান হওয়ায়, রাষ্ট্রপতির কোনো নির্বাহী ক্ষমতা না থাকায় এবং সংসদ সদস্যদের ভোটে তিনি নির্বাচিত বিধায়, কাকে রাষ্ট্রপতি পদে নিয়োগ দেয়া হবে সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছার ওপর নির্ভরশীল হওয়ায় রাষ্ট্রপতির পদের মেয়াদ সীমিতকরণ কোনোভাবেই দল বা দেশের রাজনীতিকে প্রভাবিত করে না।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও শহীদ জিয়াউর রহমান যেভাবে এ দেশের গণমানুষের আস্থা ভোগ করতেন, বাংলাদেশের অন্য কোনো রাজনীতিবিদের পক্ষে সে ধরনের আস্থা অর্জন সম্ভব হবে কি না, সে বিষয়ে সংশয় রয়েছে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, তারা উভয়ে রাষ্ট্রপতি পদে বহাল থাকাকালে মেয়াদবিষয়ে কোনো ধরনের বাধ্যবাধকতা না থাকলেও তাদের কেউই এক মেয়াদও পূর্ণ করতে পারেননি। তারা উভয়েই নিহত হওয়ার পর এরশাদের শাসনকাল ছাড়া তাদের উত্তরসূরি সংসদীয় পদ্ধতির সরকারব্যবস্থায় রাষ্ট্রক্ষমতা পরিচালনা করছেন। উভয় উত্তরসূরি একই সাথে সরকারপ্রধান ও দলীয় প্রধান হিসেবে কাজ করে চলেছেন। উভয় নেত্রী ইতোমধ্যে দু’মেয়াদ পূর্ণ করেছেন এবং উভয়েরই তৃতীয় মেয়াদে প্রধানমন্ত্রিত্বের সুযোগ হয়েছে।
এ কথাটি অনস্বীকার্য, একই ব্যক্তি একাদিক্রমে হোক বা না হোক রাষ্ট্রের শীর্ষ নির্বাহী পদে যদি দুই মেয়াদের অধিক অধিষ্ঠিত থাকেন, সে ক্ষেত্রে নিজ দলে যোগ্য নেতার আবির্ভাব ঘটে না এবং যোগ্য নেতা থাকলেও বিকশিত হওয়ার সুযোগ অনুপস্থিত। আর যদি একই ব্যক্তি যুগপৎ সরকারের শীর্ষ নির্বাহী এবং দলেরও প্রধান হন তখন দলের মধ্যে নতুন নেতৃত্বের আবির্ভাব ঘটতেই পারে না। তাই গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা অনুসৃত হয়, এমন অনেক দেশে কখনো একই ব্যক্তি যুগপৎভাবে সরকারের শীর্ষ নির্বাহী ও দলের শীর্ষ পদে বহাল থাকেন না।
দলের মধ্যে নতুন নেতৃত্বকে উৎসাহিত করার জন্য পৃথিবীর এমন অনেক দেশ আছে, যেখানে সরকারের শীর্ষ নির্বাহীর পদের মেয়াদ সীমিত করে দেয়া হয়। আমাদের দেশে সরকারের শীর্ষ নির্বাহীর পরিবর্তে নির্বাহী ক্ষমতাবিহীন নামমাত্র রাষ্ট্রপতির পদের মেয়াদ সীমিত করে দেয়া হয়েছে। রাষ্ট্রপতি পদের মেয়াদের এ সীমিতকরণ দেশের রাজনীতিতে কোনো ধরনের ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে, এ ধরনের সম্ভাবনা ক্ষীণ। তাই যে পদটি, অর্থাৎ সরকারের শীর্ষ নির্বাহীর পদটির মেয়াদ সীমিত করলে নতুন নেতৃত্ব দ্বারা দেশের ভবিষ্যৎ বিকশিত হতে পারে, সে পদটির মেয়াদ সীমিত করে দেয়া সমীচীন নয় কি?
লেখক : সাবেক জজ, সংবিধান, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বিশ্লেষক
iktederahmed@yahoo.com
বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রাম চলাকালে মুজিবনগর সরকার ভারতে অবস্থান করে মুক্তি সংগ্রাম পরিচালনাসহ সরকারের অপরাপর সমুদয় কার্যাবলি সম্পন্ন করেছিল। ওই সময় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানের কারাগারে আটক থাকাবস্থায় উপরাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতিরূপে দায়িত্ব পালন করেন। তার এ কারাবরণ স্বেচ্ছাধীন ছিলÑ তার একান্ত ঘনিষ্ঠ সহযোগী তাজউদ্দীন আহমদের কন্যা শারমিন আহমদের বইয়ে এমন দাবি করায় এ নিয়ে রাজনৈতিক মহলে বিতর্ক চলছে।
ঘোষণাপত্রে রাষ্ট্রপতি ও উপরাষ্ট্রপতির শপথ পরিচালনার জন্য বাংলাদেশের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা অর্থাৎ ১৯৭০ সালে অনুষ্ঠিত পাকিস্তানের সংসদ নির্বাচনে পূর্ব পাকিস্তান থেকে নির্বাচিত সদস্যরা অধ্যাপক ইউসুফ আলীকে যথাযথ ক্ষমতাপ্রাপ্ত প্রতিনিধি নিয়োগ করেন। ঘোষণাপত্রে প্রদত্ত ক্ষমতা অনুযায়ী অধ্যাপক ইউসুফ আলী যথাযথভাবে উপরাষ্ট্রপতি হিসেবে সৈয়দ নজরুল ইসলামের শপথপাঠ পরিচালনা করতে পারলেও বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতির কারণে প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রপতি হিসেবে তার শপথপাঠ পরিচালনা সম্ভব হয়নি।
স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র দৃষ্টে ধারণা পাওয়া যায়, ওই ঘোষণাপত্র রাষ্ট্রপতিশাসিত সরকারব্যবস্থার সমর্থনে প্রণীত। স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রটি ১৯৭২ সালের ১৬ ডিসেম্বর সংবিধান কার্যকর হওয়ার পূর্বক্ষণ পর্যন্ত বলবৎ থাকে। স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রটি বলবৎ থাকাবস্থায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্তি লাভ করে লন্ডন ও দিল্লি হয়ে ১০ জানুয়ারি ১৯৭২ সালে ঢাকায় প্রত্যাবর্তন করেন। অতঃপর তিনি ১২ জানুয়ারি ১৯৭২ সালে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথগ্রহণ করেন এবং গণপরিষদ ভেঙে যাওয়ার পূর্বক্ষণ পর্যন্ত স্বপদে বহাল থাকেন। সংবিধান প্রণয়ন-পরবর্তী ১৯৭৩ সালে অনুষ্ঠিত প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে ৩০০টি আসনের মধ্যে ২৯৩টিতে বিজয়ী হলে বঙ্গবন্ধু পুনরায় প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথগ্রহণ করেন এবং ১৯৭৫ সালে ২৫ জানুয়ারি চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে একদলীয় ব্যবস্থা বাকশাল প্রতিষ্ঠার পূর্বক্ষণ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী পদে বহাল থাকেন। চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে রাষ্ট্রপতির পদটি শূন্য ঘোষণা করা হয় এবং ওই সংশোধনীতে আরো উল্লেখ করা হয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি হবেন ও কার্যভার গ্রহণ করবেন এবং ওই প্রবর্তন থেকে তিনি বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি পদে বহাল থাকবেন, যেন তিনি এ আইনের দ্বারা সংশোধিত সংবিধানের অধীনে রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচিত হয়েছেন।
স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করায় এবং ওই ঘোষণাপত্রে কোনো ধরনের সংশোধনী আনয়ন ব্যতিরেকে তিনি পাকিস্তান থেকে প্রত্যাবর্তন-পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথগ্রহণ করায় তা আইনের দৃষ্টিতে বা সাংবিধানিকভাবে যথার্থ হয়েছে কি না, সে প্রশ্নটি এসে যায়।
’৭২-এর সংবিধানে সংসদীয় পদ্ধতির সরকারব্যবস্থার বিধান বলবৎ ছিল এবং তখন প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক বা তার কর্র্তৃত্বে সংবিধান অনুযায়ী প্রজাতন্ত্রের নির্বাহী ক্ষমতা প্রযুক্ত হতো। সে সংবিধানের বিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি রাষ্ট্রপ্রধানরূপে রাষ্ট্রের অন্য সব ব্যক্তির ঊর্ধ্বে স্থান লাভ করলেও প্রধানমন্ত্রী নিয়োগের ক্ষেত্র ব্যতীত রাষ্ট্রপতি তার অন্য সব দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ গ্রহণের আবশ্যকতা ছিল। প্রধানমন্ত্রীর নিয়োগ বিষয়ে যে বিধান ছিল, তাতে বলা ছিলÑ যে সংসদ সদস্য সংসদের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের আস্থাভাজন বলে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রতীয়মান হবেন, রাষ্ট্রপতি তাকে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করবেন।
সংসদের মেয়াদ প্রথম বৈঠকের তারিখ থেকে পাঁচ বছর হলেও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষেত্রে ওই সংবিধানে বলা ছিলÑ প্রধানমন্ত্রীর উত্তরাধিকার কার্যভার গ্রহণ না করা পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী স্বীয় পদে বহাল থাকবেন। সুতরাং ধারণা করা যায়, মেয়াদ অবসানের আগে প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করলে অথবা সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের আস্থা হারালে তিনি তার পদ হারাতে পারেন এবং এ ক্ষেত্রেও উত্তরাধিকারী কার্যভার গ্রহণ না করা পর্যন্ত তিনি স্বীয় পদে বহাল থাকবেন।
রাষ্ট্রপতির পদ বিষয়ে ’৭২-এর সংবিধানে উল্লেখ ছিলÑ তিনি সংসদ সদস্যগণ কর্তৃক নির্বাচিত হবেন এবং কার্যভার গ্রহণের তারিখ থেকে পাঁচ বছরের মেয়াদে তার পদে অধিষ্ঠিত থাকবেন।’ রাষ্ট্রপতি পদের ক্ষেত্রেও উল্লেখ ছিল- রাষ্ট্রপতির মেয়াদ শেষ হওয়া সত্ত্বেও তার উত্তরাধিকারী কার্যভার গ্রহণ না করা পর্যন্ত তিনি স্বীয় পদে বহাল থাকবেন। এ সংবিধানের একটি উল্লেখযোগ্য দিক হলো, রাষ্ট্রপতির পদটির মেয়াদ সীমিত করে বলা ছিলÑ একাদিক্রমে হোক বা না হোক দুই মেয়াদের অধিক রাষ্ট্রপতির পদে কোনো ব্যক্তি অধিষ্ঠিত থাকবেন না।
একজন ব্যক্তির রাষ্ট্রপতি পদে দু’মেয়াদের অধিককাল থাকার বিষয়টির উদ্ভব হওয়ার বহু আগে, অর্থাৎ এক মেয়াদ অবসানের আগেই সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সংশোধনীটি যে তারিখে কার্যকর হয়, সে তারিখ অর্থাৎ ২৫ জানুয়ারি ১৯৭৫ সাল থেকে আমৃত্যু রাষ্ট্রপতি পদে বহাল করা হয়। চতুর্থ সংশোধনী প্রবর্তন-পরবর্তী সাত মাসের মাথায় বঙ্গবন্ধু দুই কন্যা ছাড়া সপরিবারে মর্মান্তিকভাবে নিহত হলে দেশ সামরিক শাসনের কবলে পড়ে। পরে পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে একদলীয় বাকশাল ব্যবস্থা রহিত করা হলেও রাষ্ট্রপতিশাসিত সরকারব্যবস্থা বহাল রাখা হয়। এ ব্যবস্থায় প্রজাতন্ত্রের নির্বাহী কর্তৃত্ব বিষয়ে বলা হয়, রাষ্ট্রপতির ওপর তা ন্যস্ত হবে এবং সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি কর্তৃক তা প্রত্যক্ষভাবে অথবা তার অধীনস্থ কর্মচারীর মাধ্যমে প্রযুক্ত হবে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মৃত্যুর পর তারই একান্ত বিশ্বস্ত, মন্ত্রিসভার সদস্য খন্দকার মোশতাক আহমদ রাষ্ট্রপতি পদে আসীন হন এবং বিভিন্ন ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে তিন মাসের মাথায় তাকে ক্ষমতা হারাতে হয়। এরপর সেনাশাসক জিয়াউর রহমান ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হন। জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় থাকাকালে রাজনৈতিক দল গঠন করেন। তার প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অবতীর্ণ হয়ে সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে। এর আগেই অনুষ্ঠিত রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে বিপুল ভোট পেয়ে তিনি রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। জিয়াউর রহমান দুঃখজনকভাবে সামরিক বাহিনীর সদস্যদের দ্বারা নিহত হলে ক্ষণকালের বিরতিতে রাজনৈতিক মঞ্চে অপর সেনাশাসক, বহুরূপী ‘এরশাদ চাচা’র আবির্ভাব ঘটে এবং গণ-অভ্যুত্থান দ্বারা ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পূর্ববর্তী দীর্ঘ ৯ বছর তিনি শক্ত হাতে দেশ পরিচালনা করেন।
১৯৯১ সালে অনুষ্ঠিত পঞ্চম সংসদ নির্বাচনটি কর্মরত প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতির অধীনে অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশ অভ্যুদয়-পরবর্তী তুলনামূলক বিচারে স্বচ্ছ এ নির্বাচনটিতে জিয়াউর রহমানের স্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনপূর্বক সরকার গঠন করে। এর পর বেগম জিয়া উদার মনোভাবের বশবর্তী হয়ে আওয়ামী লীগ ও জামায়াতের সাথে সমঝোতার ভিত্তিতে সংবিধানে দ্বাদশ সংশোধনী আনয়নের মধ্য দিয়ে সংসদীয় সরকারব্যবস্থা প্রত্যাবর্তন করেন। সংসদীয় সরকারব্যবস্থায় প্রত্যাবর্তন করলে রাষ্ট্রপতি আক্ষরিক অর্থে নির্বাহী ক্ষমতাবিহীন, নামমাত্র রাষ্ট্রপ্রধানে পরিণত হন।
’৭২-এর সংবিধানে রাষ্ট্রপতির একাদিক্রমে হোক না হোক, দুই মেয়াদের অধিক পদে বহাল বারিত ছিল। দ্বাদশ সংশোধনীর মাধ্যমে রাষ্ট্রপতির মেয়াদের বিষয়টি ’৭২-এর সংবিধানের মতো অক্ষুণœ রাখা হয়।
’৭২-এর সংবিধানটি মুজিবনগর সরকারের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রের ধারাবাহিকতায় রচিত এবং সে অনুযায়ী সরকারপদ্ধতি রাষ্ট্রপতি শাসিত হবে, সে বিষয়টি বিবেচনায় নিয়েই রাষ্ট্রপতির পদটি একাদিক্রমে হোক বা না হোক দুই মেয়াদের জন্য সীমিত করে দেয়া হয়েছিল। সংসদীয় পদ্ধতির সরকারব্যবস্থায় রাষ্ট্রপতি নামমাত্র সরকারপ্রধান হওয়ায়, রাষ্ট্রপতির কোনো নির্বাহী ক্ষমতা না থাকায় এবং সংসদ সদস্যদের ভোটে তিনি নির্বাচিত বিধায়, কাকে রাষ্ট্রপতি পদে নিয়োগ দেয়া হবে সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছার ওপর নির্ভরশীল হওয়ায় রাষ্ট্রপতির পদের মেয়াদ সীমিতকরণ কোনোভাবেই দল বা দেশের রাজনীতিকে প্রভাবিত করে না।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও শহীদ জিয়াউর রহমান যেভাবে এ দেশের গণমানুষের আস্থা ভোগ করতেন, বাংলাদেশের অন্য কোনো রাজনীতিবিদের পক্ষে সে ধরনের আস্থা অর্জন সম্ভব হবে কি না, সে বিষয়ে সংশয় রয়েছে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, তারা উভয়ে রাষ্ট্রপতি পদে বহাল থাকাকালে মেয়াদবিষয়ে কোনো ধরনের বাধ্যবাধকতা না থাকলেও তাদের কেউই এক মেয়াদও পূর্ণ করতে পারেননি। তারা উভয়েই নিহত হওয়ার পর এরশাদের শাসনকাল ছাড়া তাদের উত্তরসূরি সংসদীয় পদ্ধতির সরকারব্যবস্থায় রাষ্ট্রক্ষমতা পরিচালনা করছেন। উভয় উত্তরসূরি একই সাথে সরকারপ্রধান ও দলীয় প্রধান হিসেবে কাজ করে চলেছেন। উভয় নেত্রী ইতোমধ্যে দু’মেয়াদ পূর্ণ করেছেন এবং উভয়েরই তৃতীয় মেয়াদে প্রধানমন্ত্রিত্বের সুযোগ হয়েছে।
এ কথাটি অনস্বীকার্য, একই ব্যক্তি একাদিক্রমে হোক বা না হোক রাষ্ট্রের শীর্ষ নির্বাহী পদে যদি দুই মেয়াদের অধিক অধিষ্ঠিত থাকেন, সে ক্ষেত্রে নিজ দলে যোগ্য নেতার আবির্ভাব ঘটে না এবং যোগ্য নেতা থাকলেও বিকশিত হওয়ার সুযোগ অনুপস্থিত। আর যদি একই ব্যক্তি যুগপৎ সরকারের শীর্ষ নির্বাহী এবং দলেরও প্রধান হন তখন দলের মধ্যে নতুন নেতৃত্বের আবির্ভাব ঘটতেই পারে না। তাই গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা অনুসৃত হয়, এমন অনেক দেশে কখনো একই ব্যক্তি যুগপৎভাবে সরকারের শীর্ষ নির্বাহী ও দলের শীর্ষ পদে বহাল থাকেন না।
দলের মধ্যে নতুন নেতৃত্বকে উৎসাহিত করার জন্য পৃথিবীর এমন অনেক দেশ আছে, যেখানে সরকারের শীর্ষ নির্বাহীর পদের মেয়াদ সীমিত করে দেয়া হয়। আমাদের দেশে সরকারের শীর্ষ নির্বাহীর পরিবর্তে নির্বাহী ক্ষমতাবিহীন নামমাত্র রাষ্ট্রপতির পদের মেয়াদ সীমিত করে দেয়া হয়েছে। রাষ্ট্রপতি পদের মেয়াদের এ সীমিতকরণ দেশের রাজনীতিতে কোনো ধরনের ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে, এ ধরনের সম্ভাবনা ক্ষীণ। তাই যে পদটি, অর্থাৎ সরকারের শীর্ষ নির্বাহীর পদটির মেয়াদ সীমিত করলে নতুন নেতৃত্ব দ্বারা দেশের ভবিষ্যৎ বিকশিত হতে পারে, সে পদটির মেয়াদ সীমিত করে দেয়া সমীচীন নয় কি?
লেখক : সাবেক জজ, সংবিধান, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বিশ্লেষক
iktederahmed@yahoo.com
No comments