অধ্যাপক সালাউদ্দিন সর্বপ্রথম বাকশালের বিরোধিতা করেছিলেন -স্মরণসভায় বক্তারা
প্রয়াত ইতিহাসবিদ ও শিক্ষাবিদ অধ্যাপক সালাউদ্দিন স্মরণসভায় বিশিষ্ট ব্যক্তিরা বলেছেন, দেশে যখন বাকশাল প্রতিষ্ঠা হয়েছিল সর্বপ্রথম তিনিই এর প্রকাশ্য বিরোধিতা করেছিলেন। এজন্য তাকে অনেক অপ্রীতিকর পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়েছিল। তারা বলেন, সংবিধান সংশোধন করে যখন বাকশাল প্রবর্তন করা হলো তখন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উৎসাহী কিছু শিক্ষক বাকশালে যোগ দেয়ার সিদ্ধান্ত নিলেও তিনি তখন সর্বপ্রথম বাকশালে যোগদানের বিরোধিত করেছিলেন। গতকাল বাংলা একাডেমিতে নাগরিক শোকসভায় অধ্যাপক সালাউদ্দিনকে স্মরণ করতে গিয়ে তারা এসব কথা বলেন। শোকসভায় অধ্যাপক জিল্লুর রহমান সিদ্দিকী বলেন, তিনি দৃঢ়চেতা জীবনাদর্শে বিশ্বাসী ছিলেন। সংবিধান সংশোধন করে যখন বাকশাল প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল তখন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু উৎসাহী শিক্ষক বাকশালে যোগ দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন। সে সময় ভিসি এনামুল হক বাকশালের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ছিলেন। তিনিও সভা করে আমাদের বাকশালে যোগ দিতে বললেন। কিন্তু এর প্রতিবাদ জানিয়ে সর্বপ্রথম অধ্যাপক সালাউদ্দিন আহমেদ বাকশালে যোগদানের বিরোধিতা করেন। পরে আমরাও তার সঙ্গে সম্মতি জানাই। সেসময় একটা বিব্রতকর পরিস্থিতি তৈরি হয়ে গেল। গণভবনের সবাই আমাদের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। ভিসি মাত্র কয়েকজন কর্মচারীকে নিয়ে বাকশালে যোগ দিলেন, শিক্ষকরা কেউ সেখানে গেলেন না। ওই সময়ে একে খন্দকারের বই নিয়ে বিতর্ক সত্ত্বেও তিনি খন্দকারের পক্ষ নিতে দ্বিধাবোধ করেননি। অধ্যাপক সালাউদ্দিন যাপিত জীবনে যে চিন্তা রেখে গেছেন সেগুলো নিয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন তিনি। তিনি সত্যের প্রতি আকুণ্ঠ সমর্থন নিয়ে ধর্মনিরপেক্ষ উদার নৈতিক দেশ গড়ার স্বপ্ন দেখে গেছেন। অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম সভাপতির বক্তব্যে বলেন, অধ্যাপক সালাউদ্দিন জ্ঞান এবং চিন্তাকে একত্রিত করেছেন। স্বাধীনতা বলতে কেবল ক্ষমতা হস্তান্তর নয় এটা বুঝতেন তিনি। স্ব্বাধীনতা অর্জনের জন্য যা প্রয়োজন তা সালাউদ্দিনের লেখায় আছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, সমাজকে বদলাতে হবে রাষ্ট্রকে ধর্মনিরপেক্ষ করতে হবে এ বোধটা সালাউদ্দিনের খুব দৃঢ় ছিল। ইতিহাসের মধ্য থেকে গবেষণার মাধ্যমে ইতিহাসকে বদলাতে চেয়েছিলেন তিনি। শোকসভায় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বলেন, উনিশ শতকের সমাজ নিয়ে তিনি গবেষণা করেছেন। মৌখিক ইতিহাস রচনায় ভূমিকা রাখার পাশাপাশি স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন করেছেন সামনে থেকে। এ ছাড়াও জাতীয় জীবনের যে কোন সঙ্কটে ভূমিকা রেখেছেন অনবদ্যভাবে। নতুন প্রজন্মের মাঝে তার উদার নৈতিক ধ্যান ধারণা ছড়িয়ে পড়বে এবং তরুণরা সেটা অনুশীলন করবে এমন আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি। নাগরিক শোকসভায় আরও বক্তব্য রাখেন সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হক, ইতিহাসবিদ অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন, বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের স্ট্রাস্টি সদস্য মফিদুল হক, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুস প্রমুখ। অনুষ্ঠানের শুরুতে সদ্যপ্রয়াত জাতীয় অধ্যাপক ড. সালাউদ্দিন আহমেদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
No comments