ভাষাসৈনিক আবদুল মতিন by শেখ রকিব উদ্দিন
জন্মিলে মৃত্যু হবে অমর কে কোথা কবে? মৃত্যু অবধারিত। প্রত্যেককে একদিন মৃত্যুর শীতল স্পর্শে ঢলে পড়তে হবে। কবি, সাহিত্যিক, বিজ্ঞানী, রাজা, সম্রাট, শাসক দিগি¦জয়ী বীরসহ সবাইকে পৃথিবী থেকে চিরবিদায় নিতে হবে। প্রতিটি জীবন তরঙ্গ বিুব্ধ সমুদ্রে জল বুদবুদ... যেন বিশাল শক্তির উন্মত্ততায় গর্জন করে উঠছে মুহূর্তের মধ্যে সীমাহীন জলরাশির মধ্যে বিলীন হয়ে যায়। জীবনটা হচ্ছে সমুদ্রের তরঙ্গ ক্ষণকালের জন্য তটভূমিতে আছড়ে পড়ে আবার ফিরে যায় সে মহাসমুদ্রের অতল নীলে। মহান ভাষা আন্দোলনের বীর সৈনিক আব্দুল মতিনের মৃত্যু সংবাদে বারবার উপরিউক্ত শব্দগুলো আমার হৃদয় কোণে উজ্জীবিত হচ্ছে।
ইতিহাসের খ্যাতনামা সাহিত্যিক সৈয়দ মুজতবা আলীর ময়ূরকণ্ঠী গ্রন্থে লিখিত কয়েকটি বাক্য ভাষাসৈনিক মতিনের মৃত্যুতে আমার স্মৃতির কোণে ভেসে উঠছে। মুজতবা আলী একজন জাপানি কবির একটি কবিতার কয়েকটি লাইন অনূদিত করেছিলেন ওই গ্রন্থে...
‘কমলের দলে শিশিরের মতো মোদের জীবন হায়Ñ ঝড়ের সময় লাগে যে কম্পন সেই তো জীবন।’
অর্থাৎ যে জীবনপ্রবাহ বর্ণাঢ্য জীবন পৃথিবী থেকে বিদায় নেয়ার প্রাক্কালে কম্পন দিয়ে যায় অর্থাৎ ঝাঁকুনি দিয়ে যায়। শত শত, হাজার হাজার, লাখ লাখ ও কোটি কোটি মানুষের হৃদয়ে ব্যথা বেদনার তাণ্ডব সৃষ্টি করে সেই জীবন বেশি সার্থক, বেশি সফল। ভাষা মতিন ইতিহাসে এমনই একজন খ্যাতিমান ইতিহাস সৃষ্টিকারী ব্যক্তিত্ব যিনি পৃথিবী থেকে প্রায় শতাব্দীর বর্ণাঢ্য জীবন যাপনের পর চলে গেছেন; কিন্তু তিনি অমর, অক্ষয়, ভাস্বর। বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের চির অগ্রগতির ছন্দে ছন্দে তার নামটি সুমধুর সঙ্গীতের লহরিতে ধ্বনিত হবে।
সম্ভবত ১৯৪৮ সালের শীতকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হলে এক জনাকীর্ণ সমাবেশে পাকিস্তানের তৎকালীন গভর্নর জেনারেল মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ দীপ্তকণ্ঠে ঘোষণা করলেন, পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা হবে উর্দু। সাথে সাথে সমাবেশের একটি কোণ থেকে কয়েকজন বীরসিংহ বীরাচারী বীর দীপ্তকণ্ঠে প্রতিবাদ করলেন না না না। পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হবে বাংলা। দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের মাতৃভাষা বাংলা। এরপর থেকে ধীরে ধীরে শুরু হলো সারা দেশে ঐতিহাসিক ভাষা আন্দোলন। একসময় দেশের সব শ্রেণীর মানুষ আবালবৃদ্ধবনিতা, শিক্ষক-কর্মচারী ছাত্র আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ল। বর্তমান বাংলাদেশ তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের রাজধানী, শহর, গ্রাম, বন্দরসহ সারা দেশে আন্দোলন অগ্নিকুণ্ডের মতো ছড়িয়ে পড়ল; যার ফলশ্রুতিতে ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে গুলিবর্ষণে শহীদ হলেন সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার আরো অনেকে তাদের স্মৃতির প্রতি আমি শ্রদ্ধা নিবেদন না করে পারছি না। এই ঐতিহাসিক ভাষা আন্দোলন হচ্ছে বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের সূত্রপাত।
১৯৫২ সালে আমি বাগেরহাট জেলার সদর থানার কারাপারা গ্রামের শরৎচন্দ্র উচ্চবিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণীর ছাত্র। স্কুল থেকে মিছিল করে তৎকালীন মহকুমা শহরে বর্তমানে জেলা শহরে সিসি ব্যাংকের সামনে ভাষা আন্দোলনের জনসভায় যোগদান করতাম। এ সভায় বক্তৃতা করতেন মরহুম মীর মোশারেদ আলী, মীর মুনসুর আলী, মুনসুর সাহেব, আমজাদ আলী গোরাই, সৈয়দ রওনক আলী, শেখ আশরাফ হোসেন ও এ জেড এম দেলোয়ার হোসেন। বাগেরহাটে ঐতিহাসিক ভাষা আন্দোলনে যে ব্যক্তিটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতেন তিনি হলেন নেতা শেখ আব্দুল আজিজ। শেখ আব্দুল আজিজ এখনো বেঁচে আছেন। গুলশানে তার বাসভবনে জীবনের শেষ প্রান্তে নিভৃত নীরব জীবনযাপন করছেন। কার্জন হলে মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর সভায় যে প্রতিবাদ করেন তার উল্লেখযোগ্য হলেন ভাষাসৈনিক আবদুল মতিন। আব্দুল মতিনসহ বেশ কয়েকজন মৃত্যুঞ্জয়ী বীর সে দিন বাংলা ভাষার পক্ষে বাংলা ভাষার মর্যাদার স্বার্থে ও মাতৃভাষার সম্মানে বিরোচিত কণ্ঠে আওয়াজ না তুলতেন তবে হয়তো ইতিহাস অন্য রকম হতে পারত। কাজেই এ মৃত্যুঞ্জয়ী বীরদের স্থান জাতির ইতিহাসে সবার ঊর্ধ্বে। আমার সাংবাদিকতার পেশাগত জীবনে ভাষা মতিনের সাথে বহু সভা সেমিনারে বক্তৃতা করেছি। তাকে সবসময় শ্রদ্ধাভরে সম্মান করতাম। আমি তার রূহের মাগফিরাত কামনা করছি। তিনি চিরঞ্জীব, চির অমর ও চির অক্ষয়।
ইতিহাসের খ্যাতনামা সাহিত্যিক সৈয়দ মুজতবা আলীর ময়ূরকণ্ঠী গ্রন্থে লিখিত কয়েকটি বাক্য ভাষাসৈনিক মতিনের মৃত্যুতে আমার স্মৃতির কোণে ভেসে উঠছে। মুজতবা আলী একজন জাপানি কবির একটি কবিতার কয়েকটি লাইন অনূদিত করেছিলেন ওই গ্রন্থে...
‘কমলের দলে শিশিরের মতো মোদের জীবন হায়Ñ ঝড়ের সময় লাগে যে কম্পন সেই তো জীবন।’
অর্থাৎ যে জীবনপ্রবাহ বর্ণাঢ্য জীবন পৃথিবী থেকে বিদায় নেয়ার প্রাক্কালে কম্পন দিয়ে যায় অর্থাৎ ঝাঁকুনি দিয়ে যায়। শত শত, হাজার হাজার, লাখ লাখ ও কোটি কোটি মানুষের হৃদয়ে ব্যথা বেদনার তাণ্ডব সৃষ্টি করে সেই জীবন বেশি সার্থক, বেশি সফল। ভাষা মতিন ইতিহাসে এমনই একজন খ্যাতিমান ইতিহাস সৃষ্টিকারী ব্যক্তিত্ব যিনি পৃথিবী থেকে প্রায় শতাব্দীর বর্ণাঢ্য জীবন যাপনের পর চলে গেছেন; কিন্তু তিনি অমর, অক্ষয়, ভাস্বর। বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের চির অগ্রগতির ছন্দে ছন্দে তার নামটি সুমধুর সঙ্গীতের লহরিতে ধ্বনিত হবে।
সম্ভবত ১৯৪৮ সালের শীতকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হলে এক জনাকীর্ণ সমাবেশে পাকিস্তানের তৎকালীন গভর্নর জেনারেল মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ দীপ্তকণ্ঠে ঘোষণা করলেন, পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা হবে উর্দু। সাথে সাথে সমাবেশের একটি কোণ থেকে কয়েকজন বীরসিংহ বীরাচারী বীর দীপ্তকণ্ঠে প্রতিবাদ করলেন না না না। পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হবে বাংলা। দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের মাতৃভাষা বাংলা। এরপর থেকে ধীরে ধীরে শুরু হলো সারা দেশে ঐতিহাসিক ভাষা আন্দোলন। একসময় দেশের সব শ্রেণীর মানুষ আবালবৃদ্ধবনিতা, শিক্ষক-কর্মচারী ছাত্র আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ল। বর্তমান বাংলাদেশ তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের রাজধানী, শহর, গ্রাম, বন্দরসহ সারা দেশে আন্দোলন অগ্নিকুণ্ডের মতো ছড়িয়ে পড়ল; যার ফলশ্রুতিতে ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে গুলিবর্ষণে শহীদ হলেন সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার আরো অনেকে তাদের স্মৃতির প্রতি আমি শ্রদ্ধা নিবেদন না করে পারছি না। এই ঐতিহাসিক ভাষা আন্দোলন হচ্ছে বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের সূত্রপাত।
১৯৫২ সালে আমি বাগেরহাট জেলার সদর থানার কারাপারা গ্রামের শরৎচন্দ্র উচ্চবিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণীর ছাত্র। স্কুল থেকে মিছিল করে তৎকালীন মহকুমা শহরে বর্তমানে জেলা শহরে সিসি ব্যাংকের সামনে ভাষা আন্দোলনের জনসভায় যোগদান করতাম। এ সভায় বক্তৃতা করতেন মরহুম মীর মোশারেদ আলী, মীর মুনসুর আলী, মুনসুর সাহেব, আমজাদ আলী গোরাই, সৈয়দ রওনক আলী, শেখ আশরাফ হোসেন ও এ জেড এম দেলোয়ার হোসেন। বাগেরহাটে ঐতিহাসিক ভাষা আন্দোলনে যে ব্যক্তিটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতেন তিনি হলেন নেতা শেখ আব্দুল আজিজ। শেখ আব্দুল আজিজ এখনো বেঁচে আছেন। গুলশানে তার বাসভবনে জীবনের শেষ প্রান্তে নিভৃত নীরব জীবনযাপন করছেন। কার্জন হলে মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর সভায় যে প্রতিবাদ করেন তার উল্লেখযোগ্য হলেন ভাষাসৈনিক আবদুল মতিন। আব্দুল মতিনসহ বেশ কয়েকজন মৃত্যুঞ্জয়ী বীর সে দিন বাংলা ভাষার পক্ষে বাংলা ভাষার মর্যাদার স্বার্থে ও মাতৃভাষার সম্মানে বিরোচিত কণ্ঠে আওয়াজ না তুলতেন তবে হয়তো ইতিহাস অন্য রকম হতে পারত। কাজেই এ মৃত্যুঞ্জয়ী বীরদের স্থান জাতির ইতিহাসে সবার ঊর্ধ্বে। আমার সাংবাদিকতার পেশাগত জীবনে ভাষা মতিনের সাথে বহু সভা সেমিনারে বক্তৃতা করেছি। তাকে সবসময় শ্রদ্ধাভরে সম্মান করতাম। আমি তার রূহের মাগফিরাত কামনা করছি। তিনি চিরঞ্জীব, চির অমর ও চির অক্ষয়।
No comments