গ্রেপ্তার হয়নি রিপার ঘাতক ছিনতাইকারীরা- কান্না থামেনি রাইসার
রাজধানীর মিরপুর সড়কের সোবহানবাগ মসজিদের
সামনে ছিনতাইকারীর কবলে পড়ে আয়েশা আক্তার রিপা নামে এক গৃহবধূর মর্মান্তিক
মৃত্যুর ঘটনায় কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। ঘটনার তিন দিন পেরিয়ে
গেলেও পুলিশ ছিনতাইকারীদের কাউকে শনাক্ত করতে পারেনি। শনাক্ত হয়নি ছিনতাই
কাজে ব্যবহৃত মাইক্রোবাসটিও। পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, তারা ছিনতাইকারীদের
শনাক্ত করতে আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছেন। এদিকে মাকে হারিয়ে এখনও কেঁদেই
চলছে সাত বছর বয়সী আফরোজা মাধবী রাইসা। পিতা শিমুল কিংবা অন্য স্বজনদের কেউ
তার কান্না থামাতে পারছেন না।
গত মঙ্গলবার ভোরে বান্দরবান থেকে ঢাকার পান্থপথের শ্যামলী কাউন্টারে নামেন রিপা ও তার বন্ধু ইব্রাহীম। ভোর সাড়ে ৬টার দিকে রিকশাযোগে লালমাটিয়ার বাসায় ফেরার পথে ছিনতাইকারীর কবলে পড়েন তারা। সোবহানবাগ মসজিদের সামনে পেছন থেকে আসা একটি সাদা মাইক্রোবাস থেকে এক যুবক তার ব্যাগ ধরে টান দেয়। এতে রিকশা থেকে রাস্তায় ছিটকে পড়েন রিপা। রিকশা থেকে রাস্তায় ছিটকে পড়ার পরেও রিপার ব্যাগের ফিতা হাতে পেঁচানো থাকায় ছিনতাইকারীরা তাকেসহ ব্যাগ টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যেতে থাকে। এতে মর্মান্তিকভাবে মৃত্যু হয় রিপার। এ ঘটনায় অজ্ঞাত আসামিদের বিরুদ্ধে ধানমন্ডি থানায় একটি মামলা করেছেন নিহত রিপার ভাই রাইয়ানজাদা। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ধানমন্ডি থানার এসআই নুরুল ইসলাম জানান, রিপার মৃত্যুর সঙ্গে জড়িত দুর্বৃত্ত পেশাদার ছিনতাইকারী বলে ধারণা করা হচ্ছে। তাদের এখনও শনাক্ত করা যায়নি। তাদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তার করার জন্য বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালানো হচ্ছে।
এদিকে গতকাল সকালে নিহতের বড় বোনের বাড়ি মোহাম্মদপুর থানাধীন লালমাটিয়ার এ ব্লকের ৫/৬ নম্বর বাড়ির দ্বিতীয় তলায় গিয়ে দেখা যায়, রিপার মৃত্যুতে পরিবারের সদস্যরা শোকে বাকরুদ্ধ। তারা এমন মর্মান্তিক মৃত্যুকে কোনভাবেই মেনে নিতে পারছেন না। রিপার মৃত্যুর সঙ্গে জড়িত ছিনতাইকারীদের এখনও পুলিশ শনাক্ত করতে না পারাই তারা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। মেয়ে রাইসাকে নিয়ে নিহত স্ত্রীর বোনের বাসায় এসেছেন শিমুল। মাকে হারিয়ে রাইসা অঝরে কেঁদেই চলেছে। গতকাল সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত সে কোন খাবার খায়নি। শিমুল দাবি করেন, তাদের সংসারে কোন পারিবারিক কলহ ছিল না। ৭ বছর আগে তাদের বিয়ে হয়। তিনি বলেন, আমার স্ত্রী অনেক স্বামী ভক্ত ও বিশ্বস্ত ছিল। পাশাপাশি ভদ্র ও শান্ত ছিল। গত ২৩ তারিখে রিপা আমাকে জানিয়েই বান্দরবানে বেড়াতে গিয়েছিল। ওই ভ্রমণে তাদের সঙ্গে আরও প্রায় ১০ জন ছিল। পুলিশের তদন্তে রিপার বিষয়ে অনেক কথা উঠে আসার বিষয়টি তার কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, ‘পুলিশ তার তদন্তের স্বার্থে অনেক কথাই বলতে পারে।’ তবে ওই বাড়ির একজন নিরাপত্তারক্ষী জানান, আমি এই বাড়িতে প্রায় ৭ মাস ধরে নিরাপত্তারক্ষী হিসাবে দায়িত্ব পালন করছি। দ্বিতীয় তলার এ/১ ফ্লাটের গৃহকর্ত্রীর ছোট বোন নিহত রিপা এখানেই থাকতেন। ছিনতাইকারীদের কবলে পড়ার সময় রিপার সঙ্গে যে যুবক ছিলেন ওই যুবক প্রায় ওই ফ্ল্যাটে আসতেন। তাকে আমরা চিনি। তিনি এলেই বাড়ির প্রধান গেট আমরা খুলে দিতাম।
এদিকে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ধানমণ্ডি থানার এসআই নুরুল ইসলাম জানান, ‘নিহত রিপার বন্ধু বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল নাইনের সাউন্ড প্রকৌশলী খান ইব্রাহিমকে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ। তিনি জানিয়েছেন, রিপার সঙ্গে এক বছর আগে মোবাইলে তার পরিচয় হয়। পরিচয় থেকে পরিণয়। ইব্রাহীমও বিবাহিত। বাঁশবাড়ি এলাকায় স্ত্রীকে নিয়ে থাকেন। তার পরিবারে এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। স্ত্রী ছেলে-মেয়েদের রেখে রিপাকে নিয়ে সে মাঝে মধ্যে বাইরে ঘুরতে যেতো। এসময় তারা স্বামী ও স্ত্রীর পরিচয়ও দিতো। বিষয়টি রিপার স্বামী জানায় তাদের মধ্যে কলহ সৃষ্টি হয়। এই কলহের জের ধরেই রিপা তার বড় বোনের বাড়ি লালমাটিয়ায় চলে আসেন। রিপা ও ইব্রাহিম বিয়ে করারও সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। পুলিশের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, গত ২৪ তারিখে ইব্রাহিম ও রিপা দু’জন বান্দরবানে গিয়ে একটি হোটেলে ওঠেন। তাদের সঙ্গে আর কেউ ছিল না। তারা বান্দরবানের বিভিন্ন স্থানে ঘুরে বেড়িয়েছেন। তিন দিন তারা একসঙ্গে থেকে ঢাকায় ফেরেন। রিপার পরকীয়ার বিষয়টি পরিবারের পক্ষ থেকে অস্বীকার করা হচ্ছে- এ বিষয়টি ওই কর্মকর্তার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, রিপার মৃত্যুর পর পরিবারের কয়েকজন সদস্যই আমাকে জানিয়েছিলেন যে, শিমুল ও রিপার পারিবারিক কলহ ছিল। এখন হয়তো মানসম্মানের ভয়ে বিষয়টি লুকানোর চেষ্টা করছে।
No comments