বাবুইয়ের দোতলা বাস ভ্রমণ by ফারুখ আহমেদ
বাবুই অনেক দিন কোথাও যায় না। যাবে কী
করে! বাবার একদম সময় নেই। এ জন্য টিপটিপ আপু আর টাপুরেরও মন খারাপ। বাবাটা
কী বোঝে এসব! ভাবে বাবুই। মাঝেমধ্যে মন চায় বাবাটাকে বলে আমাদের বেড়াতে
নিয়ে চলো।
কোথায় কী, বাবা এত্ত ব্যস্ততা দেখায় যে আর বলা
হয় না। আর মামণি, সেও ব্যস্ত খুব। স্কুল থেকে বাসায় ফিরে একদঙ্গল ছাত্র
পড়াবে। তারপর বাবার সঙ্গে ফোনে কথা বলবে। নানু কেমন আছে, এসব করে মামণিরও
সময় নেই। অথচ তার স্কুল ফ্রেন্ড টিপাই চিড়িয়াখানার গল্প বলে, জাদুঘর,
মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, শিশু একাডেমীসহ কত কী। এর কোনোটাতেই বাবুইয়ের যাওয়া
হয়নি। কত দিন ভেবেছে বাবাটাকে বলবে। কিন্তু বাবুইয়ের কথা শোনারও কোনো সময়
বাবার নেই!
একদিন খুব মন খারাপ। বিছানায় শুয়েছিল বাবুই। টাপুর এসে বলল, দেখে যা বাসায় মেহমান এসেছে। অনিচ্ছা সত্ত্বেও বাবুই বসার ঘরে আসে। দেখে সুন্দরমতো একজন তাদের সোফায় বসে আছেন। বাবুই আগে কখনো তাকে দেখেনি। বাবুইকে দেখে সেই সুন্দর মেয়েটি মাকে বলেন, ‘ও মা! এই বুঝি আপু আপনার বাবুই!’ এরপর বাবুইয়ের দিকে তাকিয়ে বলেন, ‘কত্ত বড় হয়ে গেছ তুমি’ বলে বাবুইকে কাছে টেনে নেন।
মায়ের খালাতো বোন, যশোর বাড়ি। কী এক পরীক্ষা দিতে ঢাকা এসেছেন। শুভমিতা তাঁর নাম। বাবুইয়ের সঙ্গে ভাব জমতে বেশি সময় লাগে না। তারপর কত কথা শয়নে, জাগরণে। স্কুলে এখন টিপাইসহ সব বন্ধুকে বাবুই তার নতুন খালামণির গল্প শোনায়। প্রতিদিন নতুন নতুন গল্প। খালা একদিন মিরপুর যাবেন। মাকে বললেন, আপু, বাবুই আর টিপটিপ-টাপুরকে সঙ্গে নিয়ে যাই। বাবুই মনে মনে তা-ই চাইছিল। কিন্তু ভয় ছিল, মা যদি ‘না’ বলে দেন। কিন্তু মা ‘না’ বললেন না!
বাহাদুর শাহ পার্কের সামনে অনেক বাস। তবু খালা জানতে চাইলেন, তোমরা দোতলা বাসে চড়েছ কোনো দিন? বাবুই ‘না’ বলতেই তিনি সেখানকার কোনো বাসে না উঠে রিকশায় চেপে বাবুইদের নিয়ে গুলিস্তান চলে আসেন। গুলিস্তান এসে কিছু সময় অপেক্ষার পর ইয়া বড় এক দোতলা বাস আসতেই খালা বাবুইদের নিয়ে চড়ে বসেন। যাক, স্কুলে টিপাই দোতলা বাসের গল্প এখনো বলেনি। কাল জম্পেশ এক গল্প করা যাবে, দোতলা বাসের গল্প। ভাবতেই দোতলা বাস ছেড়ে দেয়। খালা বাবুইদের নিয়ে দোতলা বাসের দোতলার একেবারে সামনের সিটে গিয়ে বসেন। একটু পর এক লোক এসে খালাকে বলেন, কোথায় যাবেন আপনারা? খালা বলেন, মিরপুর ১০। তারপর লোকটা খালাকে চারটা টিকিট দিয়ে টাকা নিয়ে চলে যান। এবার খালা বাবুইর দিকে তাকান। তারপর হাত ইশারায় বলেন, ওই যে ঢাকা স্টেডিয়াম, এখানে সব খেলাধুলা হয়। ওইটা জিপিও। এই যে দেখো প্রেসক্লাব। বলতে বলতে বাস চলে আসে হাইকোর্টের সামনে। টিপটিপ আপু খালাকে প্রশ্ন করে যাচ্ছে, কিন্তু টাপুর চুপচাপ দেখে যাচ্ছে। বাবুই এসব বোঝে না। বাবুইয়ের কৌতূহল বেশি কিন্তু প্রকাশ কম। একসময় রমনা পার্কের সামনে পৌঁছে যায় তাদের দোতলা বাস। কত মানুষ উঠছে-নামছে। বাসের লোকজন আগ্রহ নিয়ে তাদের দেখছে। একজন বুড়ো দাদু বাসের এক কোনায় পান খেয়ে পিক ফেলতেই টিপটিপ আপু সেই দাদুকে ধমক দিয়ে বসে। বাসের অন্য সব লোক তখন আপুর সঙ্গে সরব হয়। হইচই শুরু হতেই শুভ খালা সবাইকে শান্ত করেন।
এবার তাদের দোতলা বাস হোটেল রূপসী বাংলার ট্রাফিক সিগন্যালে এসে দাঁড়ায়। বাসের ওপর থেকে অন্য সব গাড়ি, মানুষজন দেখে বাবুই খুব মজা পাচ্ছিল। কিছুক্ষণ পর বাবুইদের দোতলা বাস চলে আসে সোনারগাঁও হোটেল, তারপর প্রথম আলো অফিস হয়ে বঙ্গবন্ধু নভোথিয়েটার। বাবুই খালার কাছে আবদার করে বসে, একদিন সবাইকে নিয়ে এখানে আসতে হবে। খালা তাকে আশ্বস্ত করেন। এভাবেই শুক্রবার ছুটির দিনে দোতলা বাস ঠিক উড়াল দিয়ে চলে আসে মিরপুর ১০। বাবুই বাস থেকে নামতে নামতে খালাকে বলে ফেলে, ‘ও খালা, আমরা কিন্তু দোতলা বাসেই বাড়ি ফিরব!’
একদিন খুব মন খারাপ। বিছানায় শুয়েছিল বাবুই। টাপুর এসে বলল, দেখে যা বাসায় মেহমান এসেছে। অনিচ্ছা সত্ত্বেও বাবুই বসার ঘরে আসে। দেখে সুন্দরমতো একজন তাদের সোফায় বসে আছেন। বাবুই আগে কখনো তাকে দেখেনি। বাবুইকে দেখে সেই সুন্দর মেয়েটি মাকে বলেন, ‘ও মা! এই বুঝি আপু আপনার বাবুই!’ এরপর বাবুইয়ের দিকে তাকিয়ে বলেন, ‘কত্ত বড় হয়ে গেছ তুমি’ বলে বাবুইকে কাছে টেনে নেন।
মায়ের খালাতো বোন, যশোর বাড়ি। কী এক পরীক্ষা দিতে ঢাকা এসেছেন। শুভমিতা তাঁর নাম। বাবুইয়ের সঙ্গে ভাব জমতে বেশি সময় লাগে না। তারপর কত কথা শয়নে, জাগরণে। স্কুলে এখন টিপাইসহ সব বন্ধুকে বাবুই তার নতুন খালামণির গল্প শোনায়। প্রতিদিন নতুন নতুন গল্প। খালা একদিন মিরপুর যাবেন। মাকে বললেন, আপু, বাবুই আর টিপটিপ-টাপুরকে সঙ্গে নিয়ে যাই। বাবুই মনে মনে তা-ই চাইছিল। কিন্তু ভয় ছিল, মা যদি ‘না’ বলে দেন। কিন্তু মা ‘না’ বললেন না!
বাহাদুর শাহ পার্কের সামনে অনেক বাস। তবু খালা জানতে চাইলেন, তোমরা দোতলা বাসে চড়েছ কোনো দিন? বাবুই ‘না’ বলতেই তিনি সেখানকার কোনো বাসে না উঠে রিকশায় চেপে বাবুইদের নিয়ে গুলিস্তান চলে আসেন। গুলিস্তান এসে কিছু সময় অপেক্ষার পর ইয়া বড় এক দোতলা বাস আসতেই খালা বাবুইদের নিয়ে চড়ে বসেন। যাক, স্কুলে টিপাই দোতলা বাসের গল্প এখনো বলেনি। কাল জম্পেশ এক গল্প করা যাবে, দোতলা বাসের গল্প। ভাবতেই দোতলা বাস ছেড়ে দেয়। খালা বাবুইদের নিয়ে দোতলা বাসের দোতলার একেবারে সামনের সিটে গিয়ে বসেন। একটু পর এক লোক এসে খালাকে বলেন, কোথায় যাবেন আপনারা? খালা বলেন, মিরপুর ১০। তারপর লোকটা খালাকে চারটা টিকিট দিয়ে টাকা নিয়ে চলে যান। এবার খালা বাবুইর দিকে তাকান। তারপর হাত ইশারায় বলেন, ওই যে ঢাকা স্টেডিয়াম, এখানে সব খেলাধুলা হয়। ওইটা জিপিও। এই যে দেখো প্রেসক্লাব। বলতে বলতে বাস চলে আসে হাইকোর্টের সামনে। টিপটিপ আপু খালাকে প্রশ্ন করে যাচ্ছে, কিন্তু টাপুর চুপচাপ দেখে যাচ্ছে। বাবুই এসব বোঝে না। বাবুইয়ের কৌতূহল বেশি কিন্তু প্রকাশ কম। একসময় রমনা পার্কের সামনে পৌঁছে যায় তাদের দোতলা বাস। কত মানুষ উঠছে-নামছে। বাসের লোকজন আগ্রহ নিয়ে তাদের দেখছে। একজন বুড়ো দাদু বাসের এক কোনায় পান খেয়ে পিক ফেলতেই টিপটিপ আপু সেই দাদুকে ধমক দিয়ে বসে। বাসের অন্য সব লোক তখন আপুর সঙ্গে সরব হয়। হইচই শুরু হতেই শুভ খালা সবাইকে শান্ত করেন।
এবার তাদের দোতলা বাস হোটেল রূপসী বাংলার ট্রাফিক সিগন্যালে এসে দাঁড়ায়। বাসের ওপর থেকে অন্য সব গাড়ি, মানুষজন দেখে বাবুই খুব মজা পাচ্ছিল। কিছুক্ষণ পর বাবুইদের দোতলা বাস চলে আসে সোনারগাঁও হোটেল, তারপর প্রথম আলো অফিস হয়ে বঙ্গবন্ধু নভোথিয়েটার। বাবুই খালার কাছে আবদার করে বসে, একদিন সবাইকে নিয়ে এখানে আসতে হবে। খালা তাকে আশ্বস্ত করেন। এভাবেই শুক্রবার ছুটির দিনে দোতলা বাস ঠিক উড়াল দিয়ে চলে আসে মিরপুর ১০। বাবুই বাস থেকে নামতে নামতে খালাকে বলে ফেলে, ‘ও খালা, আমরা কিন্তু দোতলা বাসেই বাড়ি ফিরব!’
No comments