কলকাতার চিঠি লাল আতঙ্ক তাড়া করছে মমতাকে by অমর সাহা
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী ও তৃণমূল
কংগ্রেসের নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এখন লাল আতঙ্কে ভুগছেন। তাড়া করছে
লাল আতঙ্ক। যেখানেই যান সেখানেই তিনি দেখতে পান সিপিএম আর মাওবাদীদের লাল
ঝান্ডা।
ফলে লাল আতঙ্ক তাঁকে দারুণভাবে গ্রাস করেছে।
সিপিএমের দলীয় পতাকার রং লাল আর মাওবাদীদেরও দলীয় পতাকার রং লাল। তাই এখন মমতার চোখে শুধু ভাসছে লাল। আর মনে লাল আতঙ্ক। এই লাল আতঙ্কের জেরে মমতা এখন বিভিন্ন সভা-সমিতিতে হারিয়ে ফেলছেন ধৈর্য। কথা বলছেন অশালীনভাবে। ঘটছে ধৈর্যচ্যুতি। কেউ তাঁর পছন্দের বাইরের প্রশ্ন করলেই চটে যান তিনি। সঙ্গে সঙ্গে প্রশ্নদাতাকে লাগিয়ে দেন সিপিএম বা মাওবাদীদের তকমা। ক্ষমতায় আসার পর এভাবেই চলছেন মমতা।
২০১১ সালের ২০ মে মমতা সিপিএমের ৩৪ বছরের শাসনের অবসান ঘটিয়ে ক্ষমতায় আসেন। কিন্তু ক্ষমতায় আসার পরপরই সম্পূর্ণ পাল্টে যান তিনি। দিনে দিনে হারাতে থাকেন ধৈর্য। তাই তিনি এখন সর্বত্রই পান সিপিএম বা মাওবাদীদের গন্ধ। মোট কথা, এখন লাল আতঙ্ক আঁকড়ে ধরেছে মমতাকে। সর্বত্রই তাঁর চোখে ভাসে সেই লাল আতঙ্কের নানা ছবি।
মমতা এখন নিজের খাসতালুক নানা গ্রামে গিয়েও গন্ধ পান সিপিএম আর লাল ঝান্ডার। তাই বাম ফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসু বলেছেন, লাল আতঙ্ক আর সিপিএম ফোবিয়াতে এখন ভুগছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সবকিছুতেই সিপিএম দেখছেন তিনি। দেখছেন চারদিকে লাল ঝান্ডা।
গত ৭ জুন উত্তর ২৪ পরগনা জেলার বারাসাতের অদূরে কামদুনি গ্রামে স্নাতক অধ্যয়নরত শিপ্রা ঘোষ নামের এক কলেজছাত্রীকে দিনদুপুরে অপহরণ করে নয়জন দুষ্কৃতকারী মিলে গণধর্ষণ করে হত্যা করে। তারপর একটি কারখানার দেয়াল টপকে মৃতদেহ ফেলে রেখে যায়। এই ঘটনার পর গর্জে ওঠে কামদুনি। দলমত-নির্বিশেষে রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ জানায় গ্রামবাসী। অবরোধ করে সড়ক। এরপর ১৭ জুন মমতা আসেন ওই গ্রামে। তখনই গ্রামের দুই প্রতিবাদী গৃহবধূ টুম্পা কয়াল ও মৌসুমী কয়াল মমতার সামনে এই গণধর্ষণের ঘটনার প্রতিবাদ করে দোষী ব্যক্তিদের শাস্তির দাবি করেন। এতেই খেপে যান মমতা। সঙ্গে সঙ্গে ওই দুই গৃহবধূকে সিপিএম আর মাওবাদী তকমা লাগিয়ে দেন। বলেই ফেলেন, ওরা সিপিএম ও মাওবাদী। এতে ক্ষুব্ধ হয় কামদুনির সাধারণ মানুষ।
এর আগের আরেকটি ঘটনা। পশ্চিম মেদিনীপুরের কৃষক শিলাদিত্য চৌধুরী গত বছরের ৮ এপ্রিল বেলপাহাড়ির এক জনসভায় উপস্থিত হয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতাকে প্রশ্ন করেন, সারের মূল্যবৃদ্ধিতে আপনি কী ব্যবস্থা নিয়েছেন? জনসভার মাঝখান থেকে এই প্রশ্ন শুনে খেপে যান মমতা। সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ দিয়ে গ্রেপ্তার করান শিলাদিত্যকে। বলেন, শিলাদিত্য মাওবাদী। এরপর জেলে পুরে দেওয়া হয় শিলাদিত্যকে।
এর পরের ঘটনাটি গত বছরের ১৯ মের। ওই দিন টেলিভিশন চ্যানেল সিএনএন-আইবিএন কলকাতার টাউন হলে মুখ্যমন্ত্রীর এক বছরের শাসনের ওপর একটি লাইভ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। ওই অনুষ্ঠানে কলকাতার প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত ছাত্রী তানিয়া ভরদ্বাজ মুখ্যমন্ত্রীকে কলকাতার পার্ক স্ট্রিটের ধর্ষণকাণ্ড এবং তৃণমূলের নেতা আরাবুল ইসলামের হাতে এক অধ্যাপিকা নিগৃহীত হওয়ার কথা তুলতে গিয়ে মমতার রোষানলে পড়ে যান। মমতা সঙ্গে সঙ্গে তানিয়া ভরদ্বাজকে বলে ওঠেন, ‘তুমি সিপিএম ক্যাডার। তোমার প্রশ্ন সিপিএম-ঘরানার প্রশ্ন।’ এর পরই মমতা প্রচণ্ড চটে টেলিভিশনের লাইভ অনুষ্ঠান থেকে বেরিয়ে যান। আর মমতার এই দৃশ্য সেদিন দেখেন টেলিভিশনের বহু দর্শক।
তাই বলা চলে, এখন মমতাকে যেন সিপিএম-ভূতে পেয়ে বসেছে। তাঁর মনঃপূত প্রশ্ন না হলেই প্রশ্নকর্তার ঘাড়ে এঁটে দেন সিপিএম বা মাওবাদীর তকমা। অথচ এমনটা আশা করছিল না রাজ্যবাসী।
মমতার ক্ষমতায় আসার মূল চাবিকাঠি ছিল পশ্চিমবঙ্গের দুটি আন্দোলন। একটি সিঙ্গুরের টাটার ন্যানো কারখানা গড়ার জন্য রাজ্য সরকারের অধিগৃহীত জমির বিরুদ্ধে আন্দোলন। অন্যটি নন্দীগ্রামে জমি অধিগ্রহণের উদ্যোগের বিরুদ্ধে আন্দোলন। এই দুটি আন্দোলনে কিন্তু মমতার পাশে দাঁড়িয়েছিলেন মাওবাদীরা। মাওবাদী নেতা ছত্রধর মাহাতোর সঙ্গে বৈঠকও করেছেন মমতা। ছত্রধরকে গ্রেপ্তারও করেছিল রাজ্য সরকার। এখনো ছত্রধর মাহাতো কারাগারে রয়েছেন। মুক্তি পাননি।
এসব ঘটনার পর মাওবাদীদের আশ্বস্ত করে মমতা বলেছিলেন, তাঁর দল ক্ষমতায় এলে মাওবাদীদের সমস্যার সমাধান করে দেবেন তিনি। মাওবাদীরাও আশ্বস্ত হয়ে মমতাকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, তারা বিধানসভা নির্বাচনে মমতার পাশেই থাকবে। নির্বাচনের আগে মাওবাদীরা প্রকাশ্য বিবৃতি দিয়ে মমতাকে সমর্থনের কথাও ঘোষণা করেছিল। কিন্তু মমতা ক্ষমতায় আসার পর ২০১১ সালের ২৪ নভেম্বর মাওবাদীদের শীর্ষ নেতা কিষেনজিকে হত্যা করা হয়। হত্যা করা হয় আরও কয়েকজনকে। ফলে আবার মাওবাদীরা ক্ষুব্ধ হয় মমতার বিরুদ্ধে। আর মমতাও এখন কড়া অবস্থান নিয়েছেন মাওবাদীদের বিরুদ্ধে। তাই এত দিনে মমতার প্রধান শত্রু হিসেবে সিপিএমের নাম থাকলেও এখন আরেকটি নাম যুক্ত হয়েছে, সেটি মাওবাদী। সিপিএম এবং মাওবাদী—এই দুই আতঙ্কে এখন জেরবার হচ্ছেন মমতা।
তাই চারদিকে দেখতে পাচ্ছেন লাল ঝান্ডা। মনজুড়ে লাল আতঙ্ক। কারণ, এই দুই দলের পতাকার রং লাল।
অমর সাহা: প্রথম আলোর কলকাতা প্রতিনিধি।
সিপিএমের দলীয় পতাকার রং লাল আর মাওবাদীদেরও দলীয় পতাকার রং লাল। তাই এখন মমতার চোখে শুধু ভাসছে লাল। আর মনে লাল আতঙ্ক। এই লাল আতঙ্কের জেরে মমতা এখন বিভিন্ন সভা-সমিতিতে হারিয়ে ফেলছেন ধৈর্য। কথা বলছেন অশালীনভাবে। ঘটছে ধৈর্যচ্যুতি। কেউ তাঁর পছন্দের বাইরের প্রশ্ন করলেই চটে যান তিনি। সঙ্গে সঙ্গে প্রশ্নদাতাকে লাগিয়ে দেন সিপিএম বা মাওবাদীদের তকমা। ক্ষমতায় আসার পর এভাবেই চলছেন মমতা।
২০১১ সালের ২০ মে মমতা সিপিএমের ৩৪ বছরের শাসনের অবসান ঘটিয়ে ক্ষমতায় আসেন। কিন্তু ক্ষমতায় আসার পরপরই সম্পূর্ণ পাল্টে যান তিনি। দিনে দিনে হারাতে থাকেন ধৈর্য। তাই তিনি এখন সর্বত্রই পান সিপিএম বা মাওবাদীদের গন্ধ। মোট কথা, এখন লাল আতঙ্ক আঁকড়ে ধরেছে মমতাকে। সর্বত্রই তাঁর চোখে ভাসে সেই লাল আতঙ্কের নানা ছবি।
মমতা এখন নিজের খাসতালুক নানা গ্রামে গিয়েও গন্ধ পান সিপিএম আর লাল ঝান্ডার। তাই বাম ফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসু বলেছেন, লাল আতঙ্ক আর সিপিএম ফোবিয়াতে এখন ভুগছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সবকিছুতেই সিপিএম দেখছেন তিনি। দেখছেন চারদিকে লাল ঝান্ডা।
গত ৭ জুন উত্তর ২৪ পরগনা জেলার বারাসাতের অদূরে কামদুনি গ্রামে স্নাতক অধ্যয়নরত শিপ্রা ঘোষ নামের এক কলেজছাত্রীকে দিনদুপুরে অপহরণ করে নয়জন দুষ্কৃতকারী মিলে গণধর্ষণ করে হত্যা করে। তারপর একটি কারখানার দেয়াল টপকে মৃতদেহ ফেলে রেখে যায়। এই ঘটনার পর গর্জে ওঠে কামদুনি। দলমত-নির্বিশেষে রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ জানায় গ্রামবাসী। অবরোধ করে সড়ক। এরপর ১৭ জুন মমতা আসেন ওই গ্রামে। তখনই গ্রামের দুই প্রতিবাদী গৃহবধূ টুম্পা কয়াল ও মৌসুমী কয়াল মমতার সামনে এই গণধর্ষণের ঘটনার প্রতিবাদ করে দোষী ব্যক্তিদের শাস্তির দাবি করেন। এতেই খেপে যান মমতা। সঙ্গে সঙ্গে ওই দুই গৃহবধূকে সিপিএম আর মাওবাদী তকমা লাগিয়ে দেন। বলেই ফেলেন, ওরা সিপিএম ও মাওবাদী। এতে ক্ষুব্ধ হয় কামদুনির সাধারণ মানুষ।
এর আগের আরেকটি ঘটনা। পশ্চিম মেদিনীপুরের কৃষক শিলাদিত্য চৌধুরী গত বছরের ৮ এপ্রিল বেলপাহাড়ির এক জনসভায় উপস্থিত হয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতাকে প্রশ্ন করেন, সারের মূল্যবৃদ্ধিতে আপনি কী ব্যবস্থা নিয়েছেন? জনসভার মাঝখান থেকে এই প্রশ্ন শুনে খেপে যান মমতা। সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ দিয়ে গ্রেপ্তার করান শিলাদিত্যকে। বলেন, শিলাদিত্য মাওবাদী। এরপর জেলে পুরে দেওয়া হয় শিলাদিত্যকে।
এর পরের ঘটনাটি গত বছরের ১৯ মের। ওই দিন টেলিভিশন চ্যানেল সিএনএন-আইবিএন কলকাতার টাউন হলে মুখ্যমন্ত্রীর এক বছরের শাসনের ওপর একটি লাইভ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। ওই অনুষ্ঠানে কলকাতার প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত ছাত্রী তানিয়া ভরদ্বাজ মুখ্যমন্ত্রীকে কলকাতার পার্ক স্ট্রিটের ধর্ষণকাণ্ড এবং তৃণমূলের নেতা আরাবুল ইসলামের হাতে এক অধ্যাপিকা নিগৃহীত হওয়ার কথা তুলতে গিয়ে মমতার রোষানলে পড়ে যান। মমতা সঙ্গে সঙ্গে তানিয়া ভরদ্বাজকে বলে ওঠেন, ‘তুমি সিপিএম ক্যাডার। তোমার প্রশ্ন সিপিএম-ঘরানার প্রশ্ন।’ এর পরই মমতা প্রচণ্ড চটে টেলিভিশনের লাইভ অনুষ্ঠান থেকে বেরিয়ে যান। আর মমতার এই দৃশ্য সেদিন দেখেন টেলিভিশনের বহু দর্শক।
তাই বলা চলে, এখন মমতাকে যেন সিপিএম-ভূতে পেয়ে বসেছে। তাঁর মনঃপূত প্রশ্ন না হলেই প্রশ্নকর্তার ঘাড়ে এঁটে দেন সিপিএম বা মাওবাদীর তকমা। অথচ এমনটা আশা করছিল না রাজ্যবাসী।
মমতার ক্ষমতায় আসার মূল চাবিকাঠি ছিল পশ্চিমবঙ্গের দুটি আন্দোলন। একটি সিঙ্গুরের টাটার ন্যানো কারখানা গড়ার জন্য রাজ্য সরকারের অধিগৃহীত জমির বিরুদ্ধে আন্দোলন। অন্যটি নন্দীগ্রামে জমি অধিগ্রহণের উদ্যোগের বিরুদ্ধে আন্দোলন। এই দুটি আন্দোলনে কিন্তু মমতার পাশে দাঁড়িয়েছিলেন মাওবাদীরা। মাওবাদী নেতা ছত্রধর মাহাতোর সঙ্গে বৈঠকও করেছেন মমতা। ছত্রধরকে গ্রেপ্তারও করেছিল রাজ্য সরকার। এখনো ছত্রধর মাহাতো কারাগারে রয়েছেন। মুক্তি পাননি।
এসব ঘটনার পর মাওবাদীদের আশ্বস্ত করে মমতা বলেছিলেন, তাঁর দল ক্ষমতায় এলে মাওবাদীদের সমস্যার সমাধান করে দেবেন তিনি। মাওবাদীরাও আশ্বস্ত হয়ে মমতাকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, তারা বিধানসভা নির্বাচনে মমতার পাশেই থাকবে। নির্বাচনের আগে মাওবাদীরা প্রকাশ্য বিবৃতি দিয়ে মমতাকে সমর্থনের কথাও ঘোষণা করেছিল। কিন্তু মমতা ক্ষমতায় আসার পর ২০১১ সালের ২৪ নভেম্বর মাওবাদীদের শীর্ষ নেতা কিষেনজিকে হত্যা করা হয়। হত্যা করা হয় আরও কয়েকজনকে। ফলে আবার মাওবাদীরা ক্ষুব্ধ হয় মমতার বিরুদ্ধে। আর মমতাও এখন কড়া অবস্থান নিয়েছেন মাওবাদীদের বিরুদ্ধে। তাই এত দিনে মমতার প্রধান শত্রু হিসেবে সিপিএমের নাম থাকলেও এখন আরেকটি নাম যুক্ত হয়েছে, সেটি মাওবাদী। সিপিএম এবং মাওবাদী—এই দুই আতঙ্কে এখন জেরবার হচ্ছেন মমতা।
তাই চারদিকে দেখতে পাচ্ছেন লাল ঝান্ডা। মনজুড়ে লাল আতঙ্ক। কারণ, এই দুই দলের পতাকার রং লাল।
অমর সাহা: প্রথম আলোর কলকাতা প্রতিনিধি।
No comments