নাটকের মূল চরিত্ররা নতুন ঘূর্ণাবর্তে মিসর by শরিফুল ইসলাম ভূঁইয়া
আবার রাজনৈতিক ডামাডোলের মধ্যে পড়ল মিসর।
অশান্তির নতুন ঘূর্ণাবর্তে খাবি খাচ্ছে শান্তিকামী সাধারণ মানুষ। তারা জানে
না, স্থিতিশীলতার সেই সোনার হরিণ কত দূর। কীভাবেই বা ফিরবে বিধ্বস্ত
অর্থনীতির সুদিন।
৩ জুলাই সেনা অভ্যুত্থানে প্রভাবশালী
ইসলামপন্থী সংগঠন মুসলিম ব্রাদারহুড-সমর্থিত প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুরসির
পতনের পর থেকে দেশটির পরিস্থিতি আবার টালমাটাল। মুরসির বিরুদ্ধে বিক্ষোভ
করে কায়রো কাঁপিয়ে তোলা বিরোধীরাও কিছুটা হকচকিত। কারণ, মুরসি বিদায় নেওয়ার
পর ক্ষমতার পালাবদলে আবার কলকাঠি নাড়ছেন মূলত আগ্রাসী সেনা কর্মকর্তারাই।
মুরসিবিরোধীরাই এখন অভিযোগ করছে, সেনারা তাদের বন্ধু সেজে মুরসিকে সরালেও
কদিন না যেতেই তাদের দিকেই আগ্নেয়াস্ত্র তাক করছে।
মিসরের প্রথম গণতান্ত্রিক নির্বাচনে জয়ী হয়ে ক্ষমতায় আসা মোহাম্মদ মুরসির বিরুদ্ধে অভিযোগের শেষ নেই। দুর্নীতি, ক্ষমতা কুক্ষিগত করা, ধর্মের কর্তৃত্ব বাড়ানো ও প্রশাসনে চরম অব্যবস্থাপনা তার মধ্যে কয়েকটি। তা ছাড়া ক্ষমতা গ্রহণের এক বছরে অর্থনীতির উন্নয়নে চোখে পড়ার মতো কিছু করতে পারেননি মুরসি।
গত মঙ্গলবার আনুষ্ঠানিকভাবে শপথ নেওয়া অন্তর্বর্তী সরকারের সামনে যে চারটি গুরুদায়িত্ব তা হচ্ছে—সংবিধান পর্যালোচনার জন্য একটি প্যানেল গঠন, সাংবিধানিক সংশোধনী চূড়ান্ত করে চার মাসের মধ্যে গণভোটের আয়োজন, ২০১৪ সালের শুরুতে পার্লামেন্ট নির্বাচনের আয়োজন ও সবশেষে আবার প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করা।
অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য এ দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করা খুব সহজ হবে না। কারণ, এ সরকারের পুরোটা মেয়াদই সম্ভবত থাকবে মুরসি-সমর্থকদের সহিংস আন্দোলনে ভরা। এর ইঙ্গিত প্রতিদিনই মিলছে। মুরসির পতনের পর এমন কোনো দিন যায়নি, যে দিন রাজপথ বিক্ষোভ-সংঘর্ষে কমবেশি উত্তপ্ত হয়নি। ব্রাদারহুড বা তাদের রাজনৈতিক শাখা ফ্রিডম অ্যান্ড জাস্টিস পার্টি সরকারে যোগ তো দেয়ইনি, বরং প্রেসিডেন্ট আদলি মানসুরের নেতৃত্বে নতুন সরকারকে ‘অবৈধ’ বলে প্রত্যাখ্যান করেছে। মুরসিকে ক্ষমতায় ফিরিয়ে আনাই তাদের একমাত্র দাবি। তারা সহজে মাঠ ছাড়বে না। কাজেই মিসরীয়দের নিঃসন্দেহে আরও রক্তপাত দেখার জন্য তৈরি হতে হবে।
উদ্বেগের একটা বড় কারণ হচ্ছে, অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে মুরসিবিরোধী ও দলনিরপেক্ষ সাধারণ মানুষ প্রত্যাশিত ভূমিকা না পেলে ক্ষেপে উঠতে পারে। গত এক বছরের পরিস্থিতি দেখে দেখে তাদের ধৈর্য এমনিতেই কমে গেছে। আর গণতন্ত্র ও স্বাধীনতার জন্য উন্মুখ মিসরীয়রা এখন যে ক্ষমতার দুর্ভেদ্য দুর্গও ভাঙার ক্ষমতা রাখে, তা এর মধ্যে একাধিকবার প্রমাণিত হয়েছে।
কিন্তু এ রকম অস্থিরতা চলতে থাকলে দেশে গণতন্ত্র শক্ত ভিতের ওপর দাঁড়াবে কীভাবে? জনজীবনে স্বস্তিই বা আসবে কোত্থেকে? সে জন্য চাই সবার পছন্দ হবে, এমন দীর্ঘমেয়াদি সরকার। কিন্তু মিসরীয় সমাজে যে গভীর রাজনৈতিক মেরুকরণ ঘটেছে, তাতে জাতীয় ঐকমত্য যেন মরীচিকায় পরিণত হয়েছে।
এখন মিসরের পরিস্থিতি কোন দিকে যাবে, তা অনেকটাই নির্ভর করছে আন্তর্জাতিক মহলের ওপর। বিশেষ করে মিসরের মিত্র পরাশক্তি যুক্তরাষ্ট্রের একটি বড় ভূমিকা থাকবে। মুরসিকে হটাতে সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপ যুক্তরাষ্ট্রকে উভয়সংকটে ফেলেছে। গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত প্রেসিডেন্টকে হটিয়ে সেনা-সমর্থিত নতুন সরকার প্রতিষ্ঠার বিষয়টি মন থেকে মেনে নেয়নি তারা। আবার মধ্যপ্রাচ্যে অন্যতম প্রধান কৌশলগত মিত্র দেশটির চালকের আসনে ইসলামপন্থীদের (তা তুলনামূলক মধ্যপন্থী হলেও) দেখা যুক্তরাষ্ট্রের জন্য অস্বস্তিকর। এ কারণেই মিসরে আসলে সেনা অভ্যুত্থান না কী হয়েছে, সে কথা মুখ ফুটে বলতেও সতর্ক ওবামা প্রশাসন। সামরিক অভ্যুত্থান বলা হলে মিসরকে বরাবর দিয়ে আসা বিপুল অঙ্কের আর্থিক ও সামরিক সহায়তা প্রভাবিত হতে বাধ্য। আবার সাহায্য না পেলে বিগড়ে যেতে পারে মিসরের সেনাবাহিনী। নিজের স্বার্থেই মিসরে একাধারে স্থিতিশীল ও বন্ধু সরকার চাই যুক্তরাষ্ট্রের।
এসব দিক বিবেচনা করে পর্যবেক্ষকেরা মনে করছেন, মিসরের বেলায় দুই রকমের নীতি অনুসরণ করবে ওবামা প্রশাসন। প্রেসিডেন্টের ক্ষেত্রে হবে এক নীতি, সেনা প্রশাসনের বেলায় হবে আরেক।
আরব বিশ্বেও সবচেয়ে জনবহুল দেশ মিসরের সেনা প্রশাসন দেশটির অন্যান্য রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান থেকে স্বতন্ত্র। সেখানে সেনা কর্তৃপক্ষ প্রশাসনিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে ব্যাপক প্রভাব খাটিয়ে থাকে। সংবিধান অনুযায়ীই সেনাবাহিনী থেকে প্রতিরক্ষামন্ত্রী নিয়োগ করা হয়। সেনাবাহিনীর বাজেটে বেসামরিক সরকার বা পার্লামেন্টের কোনো ভূমিকা নেই। তা দেখাশোনা করে জাতীয় প্রতিরক্ষা পরিষদ যার হর্তাকর্তারা সব সেনাবাহিনীর। দেশটির অর্থনীতির এক-তৃতীয়াংশজুড়ে রয়েছে সামরিক বাজেট। এই বাজেট সচল রাখতে বিদেশি সহায়তা একটি বড় ভূমিকা রাখছে। আর এ সহায়তার ক্ষেত্রে একমাত্র জোগানদাতা হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। ইতিহাস বিশ্লেষণ করলে স্পষ্টই দেখা যায়, মিসরে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের যত না মাথাব্যথা, তার চেয়ে কৌশলগত সম্পর্ক বজায় রাখার ব্যাপারে তাদের আগ্রহ বেশি। মিসরের সঙ্গে সুসম্পর্ক থাকলে যুক্তরাষ্ট্রের লাভ অনেক। মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন সামরিক স্থাপনায় সেনা ও সামরিক অস্ত্র-সরঞ্জাম সরবরাহে গুরুত্বপূর্ণ সুয়েজ খাল ব্যবহার করতে পারবে তারা। প্রয়োজনে মিসরের বিমানঘাঁটিও ব্যবহার করা যাবে। মধ্যপ্রাচ্যের পরীক্ষিত মিত্র ইসরায়েলের নিরাপত্তার বিষয়েও দুশ্চিন্তা কমে যায়। এসব কারণে যুক্তরাষ্ট্র চাইবে মিসরের সঙ্গে সব সময় তার সম্পর্ক ভালো থাকুক। আর দেশটির সঙ্গে সুসম্পর্ক রক্ষার ক্ষেত্রে তাদের সেনাবাহিনী মার্কিন প্রশাসনের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। তবে মোবারক-উত্তর মিসরে সেনাবাহিনীর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের খুব বেশি দহরম-মহরম কোনো বেসামরিক সরকারই ভালো চোখে দেখবে না। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে মিসরের সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রকে এ বিষয়টিকেও গুরুত্ব দিতে হবে।
আদলি মানসুরের সরকারের সামনে একটি বড় চ্যালেঞ্জ হবে অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলা করা। মিসর নিয়ে সবচেয়ে আশাবাদী যারা, তারাও এখন বলছেন, দেশটিতে অর্থনৈতিক সংকট দিন দিন বাড়ছে। মুরসির মতো আদলি মানসুরের সরকারও এ সংকট কাটাতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে আর্থিক সহায়তা চাইবে। আশার কথা, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল এর মধ্যে তাদের সাহায্যে এগিয়ে এসেছে। আইএমএর ঋণে মিসর অর্থনৈতিক ময়দানে ঘুরে দাঁড়ানোর একটা সুযোগ পাবে। কিন্তু আবার ফিরে যেতে হয় রাজনীতির কথায়। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা না এলে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা এগিয়ে আসবে না। অভ্যন্তরীণ উদ্যোগ এবং উৎপাদনশীলতাও ব্যাহত হবে। যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো এ ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে। মিসরের সেনাবাহিনী ও তাদের সমর্থনপুষ্ট সরকার দেশের জনগণ ও আন্তর্জাতিক রাজনীতির খেলুড়েদের মধ্যে কতটা ভারসাম্য রেখে চলতে পারে, তার ওপরই নির্ভর করবে মিসরের পরিস্থিতি।
মিসরের প্রথম গণতান্ত্রিক নির্বাচনে জয়ী হয়ে ক্ষমতায় আসা মোহাম্মদ মুরসির বিরুদ্ধে অভিযোগের শেষ নেই। দুর্নীতি, ক্ষমতা কুক্ষিগত করা, ধর্মের কর্তৃত্ব বাড়ানো ও প্রশাসনে চরম অব্যবস্থাপনা তার মধ্যে কয়েকটি। তা ছাড়া ক্ষমতা গ্রহণের এক বছরে অর্থনীতির উন্নয়নে চোখে পড়ার মতো কিছু করতে পারেননি মুরসি।
গত মঙ্গলবার আনুষ্ঠানিকভাবে শপথ নেওয়া অন্তর্বর্তী সরকারের সামনে যে চারটি গুরুদায়িত্ব তা হচ্ছে—সংবিধান পর্যালোচনার জন্য একটি প্যানেল গঠন, সাংবিধানিক সংশোধনী চূড়ান্ত করে চার মাসের মধ্যে গণভোটের আয়োজন, ২০১৪ সালের শুরুতে পার্লামেন্ট নির্বাচনের আয়োজন ও সবশেষে আবার প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করা।
অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য এ দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করা খুব সহজ হবে না। কারণ, এ সরকারের পুরোটা মেয়াদই সম্ভবত থাকবে মুরসি-সমর্থকদের সহিংস আন্দোলনে ভরা। এর ইঙ্গিত প্রতিদিনই মিলছে। মুরসির পতনের পর এমন কোনো দিন যায়নি, যে দিন রাজপথ বিক্ষোভ-সংঘর্ষে কমবেশি উত্তপ্ত হয়নি। ব্রাদারহুড বা তাদের রাজনৈতিক শাখা ফ্রিডম অ্যান্ড জাস্টিস পার্টি সরকারে যোগ তো দেয়ইনি, বরং প্রেসিডেন্ট আদলি মানসুরের নেতৃত্বে নতুন সরকারকে ‘অবৈধ’ বলে প্রত্যাখ্যান করেছে। মুরসিকে ক্ষমতায় ফিরিয়ে আনাই তাদের একমাত্র দাবি। তারা সহজে মাঠ ছাড়বে না। কাজেই মিসরীয়দের নিঃসন্দেহে আরও রক্তপাত দেখার জন্য তৈরি হতে হবে।
উদ্বেগের একটা বড় কারণ হচ্ছে, অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে মুরসিবিরোধী ও দলনিরপেক্ষ সাধারণ মানুষ প্রত্যাশিত ভূমিকা না পেলে ক্ষেপে উঠতে পারে। গত এক বছরের পরিস্থিতি দেখে দেখে তাদের ধৈর্য এমনিতেই কমে গেছে। আর গণতন্ত্র ও স্বাধীনতার জন্য উন্মুখ মিসরীয়রা এখন যে ক্ষমতার দুর্ভেদ্য দুর্গও ভাঙার ক্ষমতা রাখে, তা এর মধ্যে একাধিকবার প্রমাণিত হয়েছে।
কিন্তু এ রকম অস্থিরতা চলতে থাকলে দেশে গণতন্ত্র শক্ত ভিতের ওপর দাঁড়াবে কীভাবে? জনজীবনে স্বস্তিই বা আসবে কোত্থেকে? সে জন্য চাই সবার পছন্দ হবে, এমন দীর্ঘমেয়াদি সরকার। কিন্তু মিসরীয় সমাজে যে গভীর রাজনৈতিক মেরুকরণ ঘটেছে, তাতে জাতীয় ঐকমত্য যেন মরীচিকায় পরিণত হয়েছে।
এখন মিসরের পরিস্থিতি কোন দিকে যাবে, তা অনেকটাই নির্ভর করছে আন্তর্জাতিক মহলের ওপর। বিশেষ করে মিসরের মিত্র পরাশক্তি যুক্তরাষ্ট্রের একটি বড় ভূমিকা থাকবে। মুরসিকে হটাতে সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপ যুক্তরাষ্ট্রকে উভয়সংকটে ফেলেছে। গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত প্রেসিডেন্টকে হটিয়ে সেনা-সমর্থিত নতুন সরকার প্রতিষ্ঠার বিষয়টি মন থেকে মেনে নেয়নি তারা। আবার মধ্যপ্রাচ্যে অন্যতম প্রধান কৌশলগত মিত্র দেশটির চালকের আসনে ইসলামপন্থীদের (তা তুলনামূলক মধ্যপন্থী হলেও) দেখা যুক্তরাষ্ট্রের জন্য অস্বস্তিকর। এ কারণেই মিসরে আসলে সেনা অভ্যুত্থান না কী হয়েছে, সে কথা মুখ ফুটে বলতেও সতর্ক ওবামা প্রশাসন। সামরিক অভ্যুত্থান বলা হলে মিসরকে বরাবর দিয়ে আসা বিপুল অঙ্কের আর্থিক ও সামরিক সহায়তা প্রভাবিত হতে বাধ্য। আবার সাহায্য না পেলে বিগড়ে যেতে পারে মিসরের সেনাবাহিনী। নিজের স্বার্থেই মিসরে একাধারে স্থিতিশীল ও বন্ধু সরকার চাই যুক্তরাষ্ট্রের।
এসব দিক বিবেচনা করে পর্যবেক্ষকেরা মনে করছেন, মিসরের বেলায় দুই রকমের নীতি অনুসরণ করবে ওবামা প্রশাসন। প্রেসিডেন্টের ক্ষেত্রে হবে এক নীতি, সেনা প্রশাসনের বেলায় হবে আরেক।
আরব বিশ্বেও সবচেয়ে জনবহুল দেশ মিসরের সেনা প্রশাসন দেশটির অন্যান্য রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান থেকে স্বতন্ত্র। সেখানে সেনা কর্তৃপক্ষ প্রশাসনিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে ব্যাপক প্রভাব খাটিয়ে থাকে। সংবিধান অনুযায়ীই সেনাবাহিনী থেকে প্রতিরক্ষামন্ত্রী নিয়োগ করা হয়। সেনাবাহিনীর বাজেটে বেসামরিক সরকার বা পার্লামেন্টের কোনো ভূমিকা নেই। তা দেখাশোনা করে জাতীয় প্রতিরক্ষা পরিষদ যার হর্তাকর্তারা সব সেনাবাহিনীর। দেশটির অর্থনীতির এক-তৃতীয়াংশজুড়ে রয়েছে সামরিক বাজেট। এই বাজেট সচল রাখতে বিদেশি সহায়তা একটি বড় ভূমিকা রাখছে। আর এ সহায়তার ক্ষেত্রে একমাত্র জোগানদাতা হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। ইতিহাস বিশ্লেষণ করলে স্পষ্টই দেখা যায়, মিসরে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের যত না মাথাব্যথা, তার চেয়ে কৌশলগত সম্পর্ক বজায় রাখার ব্যাপারে তাদের আগ্রহ বেশি। মিসরের সঙ্গে সুসম্পর্ক থাকলে যুক্তরাষ্ট্রের লাভ অনেক। মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন সামরিক স্থাপনায় সেনা ও সামরিক অস্ত্র-সরঞ্জাম সরবরাহে গুরুত্বপূর্ণ সুয়েজ খাল ব্যবহার করতে পারবে তারা। প্রয়োজনে মিসরের বিমানঘাঁটিও ব্যবহার করা যাবে। মধ্যপ্রাচ্যের পরীক্ষিত মিত্র ইসরায়েলের নিরাপত্তার বিষয়েও দুশ্চিন্তা কমে যায়। এসব কারণে যুক্তরাষ্ট্র চাইবে মিসরের সঙ্গে সব সময় তার সম্পর্ক ভালো থাকুক। আর দেশটির সঙ্গে সুসম্পর্ক রক্ষার ক্ষেত্রে তাদের সেনাবাহিনী মার্কিন প্রশাসনের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। তবে মোবারক-উত্তর মিসরে সেনাবাহিনীর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের খুব বেশি দহরম-মহরম কোনো বেসামরিক সরকারই ভালো চোখে দেখবে না। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে মিসরের সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রকে এ বিষয়টিকেও গুরুত্ব দিতে হবে।
আদলি মানসুরের সরকারের সামনে একটি বড় চ্যালেঞ্জ হবে অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলা করা। মিসর নিয়ে সবচেয়ে আশাবাদী যারা, তারাও এখন বলছেন, দেশটিতে অর্থনৈতিক সংকট দিন দিন বাড়ছে। মুরসির মতো আদলি মানসুরের সরকারও এ সংকট কাটাতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে আর্থিক সহায়তা চাইবে। আশার কথা, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল এর মধ্যে তাদের সাহায্যে এগিয়ে এসেছে। আইএমএর ঋণে মিসর অর্থনৈতিক ময়দানে ঘুরে দাঁড়ানোর একটা সুযোগ পাবে। কিন্তু আবার ফিরে যেতে হয় রাজনীতির কথায়। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা না এলে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা এগিয়ে আসবে না। অভ্যন্তরীণ উদ্যোগ এবং উৎপাদনশীলতাও ব্যাহত হবে। যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো এ ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে। মিসরের সেনাবাহিনী ও তাদের সমর্থনপুষ্ট সরকার দেশের জনগণ ও আন্তর্জাতিক রাজনীতির খেলুড়েদের মধ্যে কতটা ভারসাম্য রেখে চলতে পারে, তার ওপরই নির্ভর করবে মিসরের পরিস্থিতি।
No comments