১০০০ জনপ্রতিক্রিয়াঃ ‘সম্ভাবনার চেয়ে সঙ্কটই বেশি’
সম্ভাবনার চেয়ে সঙ্কটই বেশি দেখছেন সাধারণ মানুষ। সরকারের শেষ বছরে রাজনীতিতে সংঘাত বাড়বে এমনটাই আশঙ্কা। আগামী জাতীয় নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই হওয়া উচিত বলে বেশির ভাগ মানুষের মত। শিক্ষা ও তথ্য প্রযুক্তি খাতে অগ্রগতি প্রশংসনীয়।
ঘরে ঘরে চাকরি দেয়ার কথা থাকলেও সুসংবাদ নেই চাকরির বাজারে। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে অব্যাহত মূল্য বৃদ্ধিতে পণ্যমূল্য বেড়েছে। বোঝা চেপেছে গরিবের ওপর। সরকার রাজনৈতিক উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে ব্যস্ত থাকায় জনগণের ভাগ্য পরিবর্তনে মনোযোগ দিতে পারেনি। যুদ্ধাপরাধ বিচারের উদ্যোগকে স্বাগত জানালেও নানা অনিশ্চয়তার কথা জানালেন বেশির ভাগ উত্তরদাতাই। দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা বছরজুড়েই ছিল টালমাটাল। বিশেষত, পুঁজিবাজারে শৃঙ্খলা রক্ষায় ব্যর্থতা ছিল উল্লেখ করার মতো। পদ্মা দুর্নীতি, হলমার্ক ও রেলওয়েগেট কেলেঙ্কারি সরকারের অর্জনকে ম্লান করেছে। সকল ক্ষেত্রে দলীয়করণ আর টেন্ডারবাজিতে অস্থির ছিল প্রশাসন ও শিক্ষাঙ্গন। নোবেলজয়ী ড. ইউনূসের সঙ্গে দূরত্ব সৃষ্টি করে সরকার অদূরদর্শিতার পরিচয় দিয়েছেন। গুম, খুন, আর অপহরণের আতঙ্ক ছিল দেশজুড়ে। ইলিয়াস আলীর মতো রাজনৈতিক নেতার নিখোঁজ হয়ে যাওয়া, সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচন না হওয়া ছিল আইন-শৃঙ্খলার নজিরবিহীন ব্যর্থতা। দুর্নীতিতে জেরবার সরকারের প্রতিশ্রুত স্বপ্নের পদ্মা সেতু স্বপ্নই থেকে গেছে। মাঝ পথে ফোর লেন, উড়াল সড়ক, মেট্রো রেল আর বিআরটিএ নিয়ে ব্যস্ত থেকেছে সরকার। বছর শেষে বিএনপিসহ ১৮ দলের ডাকা অবরোধে রাজধানীতে নির্বিচারে বিশ্বজিৎকে পিটিয়ে হত্যা আর ২০১১ সালে বরিশালে লিমনকে র্যাবের গুলি করে পঙ্গু করে দেয়া ছিল মানবাধিকার লঙ্ঘনের চরম দৃষ্টান্ত। সরকারের চার বছর পূর্তির প্রাক্কালে জ্বালানির মূল্য অস্বাভাবিক বৃদ্ধি জনজীবনে যে দুর্ভোগ সৃষ্টি করবে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
দিন বদলের সনদ ও ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে চার বছর আগে মহাজোট সরকার ক্ষমতায় এসেছিল। সরকারের ৪ বছর নিয়ে টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়ায় নানা প্রান্তের এক হাজার মানুষের মুখোমুখি হয়েছিল মানবজমিন। তাদের সঙ্গে কথা বলেছিলেন মানবজমিনের ছয় প্রতিবেদক হাসান শাফিঈ, কাজী সোহাগ, সিরাজুল ইসলাম, সালমান ফরিদ, সোলায়মান তুষার ও ফরিদউদ্দিন আহমদ। প্রশ্ন ছিল- সরকারের অর্জন কি? ব্যর্থতা কোথায়? আর ভবিষ্যৎ কোন পথে? তিন প্রশ্নের জবাবে সাধারণ মানুষ অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যতের হিসাব মিলিয়েছেন, বলেছেন আগামী রাজনীতির গতি-প্রকৃতি নিয়ে।
সহিংসতার আশঙ্কা নতুন বছরে: মহাজোট সরকারের বাকি মেয়াদে রাজনৈতিক সহিংসতার আশঙ্কা করছেন অধিকাংশ মানুষ। তারা সরকার ও বিরোধী পক্ষের অনড় অবস্থানে ভীত, সন্ত্রস্ত। বেসরকারি ব্যাংক কর্মকর্তা হাসান আহমেদ বলেছেন হরতাল, অবরোধ আর সহিংসতা ঘটবেই। তারপরও এর মধ্যেই খুঁজে নিতে হবে যৌক্তিক সমাধান। ব্র্যাক ব্যাংকের গুলশান শাখার ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, এ পর্যন্ত যে কয়টি সরকার দেখেছি তাদের সবার আমলেই শেষ বছরে দেশ থাকে উত্তপ্ত। আন্দোলনমুখর। এক দল চায় ক্ষমতায় থাকতে। আরেক দলের ইচ্ছা ক্ষমতাশালীদের মসনদ থেকে টেনে নামাতে। হাসানের মুখের কথা কেড়ে নিলেন তারই সহকর্মী মাসুদ। তিনি বললেন, এখানে ক্ষমতাই বড় কথা। জনগণের কথা কেউ ভাবে না। বাড্ডা শাহজাদপুরের মুদি ব্যবসায়ী কঠোর সমালোচনা করলেন সরকারের। তার ভাষায়, পদ্মা সেতু নিয়ে কি করা হলো? এটা কি মেনে নেয়ার মতো কোন ঘটনা? পদ্মা তো হলোই না- উল্টো দেশের মানসম্মানও গেলো। তার প্রশ্ন, আবুল হোসেন কি প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনার চেয়েও ক্ষমতাধর? রাজধানীর খিলক্ষেতের বাসিন্দা সিএনজিচালক আতাহার বললেন, এই সরকার অনেক খারাপ কাজ করেছে। তারা দেশ চালাতে ব্যর্থ হয়েছে। তারপরও এরাই আবার ক্ষমতায় আসবে। যুক্তি তুলে ধরে তিনি বলেন, আমাদের দেশে কি সত্যিকার অর্থে বিরোধী দল বলে কিছু আছে? এত ইস্যু সরকার তাদের হাতে তুলে দিলো- কিছু করতে পেরেছে তারা? বাংলাবাজারের কামরুল বুক হাউজের স্বত্বাধিকারী কামরুল ইসলাম বলেন, ৪ বছরে সরকারের অনেক ব্যর্থতা রয়েছে। এটা কাটিয়ে ওঠা কঠিন। তবে বিরোধী দলের নেতৃত্ব নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। তারা যথেষ্ট দুর্বল। সরকারে ব্যর্থতা ছাপিয়ে তারা ভোটারদের পক্ষে আনতে পারবেন কি না এটাই দেখার বিষয়। সিএনজি চালক মুকুল আলীর প্রতিক্রিয়া একেবারেই ভিন্ন। মালিকরা সিএনজির জমার টাকা বাড়িয়েছে। আমরা যাত্রীদের কাছ থেকে বেশি টাকা নিতে গেলে গালমন্দ শুনতে হয়। এসব আবার মালিককে শুনতে হয় না। তিনি বলেন, সামনে আমাদের একটি কর্মসূচি রয়েছে। তাতে যদি কোন সমাধান না হয় তাহলে লাখ লাখ সিএনজি ড্রাইভারের ভোট হারাবে সরকারি দল। ৪ বছরে সরকার যা করেছে তাতে ভোটারদের কাছে যাওয়ার সাহস নেই বলে মন্তব্য করলেন আরবি টেকের স্বত্বাধিকারী রিমন রহমান। তার বক্তব্য- পদ্মা সেতু, সোনালী ব্যাংক-হলমার্ক, শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারি, সাগর-রুনির হত্যাকাণ্ডের কূলকিনারা করতে না পারা, রাজধানী ঢাকাকে বসবাসের অনুপযোগী করে তোলা, সীমান্তে পাখির মতো বাংলাদেশীদের হত্যা, বিরোধী দলের নেতাদের বিরুদ্ধে একের পর এক মামলা, ইলিয়াছ আলী গুম এরকম শতাধিক ইস্যু বর্তমান সরকারকে বেকায়দায় ফেলেছে। এতে কি জনমত বেড়েছে না কমেছে। নিশ্চয় সরকারি দল এরই মধ্যে টের পেয়েছে। স্বচ্ছ ও শান্তিপূর্ণ ভোট হলে ব্যালটের মাধ্যমে জনগণ তাদের সিদ্ধান্ত জানাবে।
ব্যর্থতার পাল্লা ভারি: সরকারের সাফল্য কোথায়? এমন প্রশ্নে ফার্মগেটের বাসিন্দা মাহবুবুর রহমন বলেন, এই সরকারের কোনই ভাল কাজ নেই। কল্যাণপুরের গোলাম রাব্বানী বলেন, ভাল কাজ তো খুঁজে পাচ্ছি না। এভাবে সরকারের চার বছরের মূল্যায়নে প্রতিক্রিয়া জানানো বেশির ভাগ উত্তরদাতাই চটজলদি তুলে ধরেছেন ব্যর্থতার ক্ষেত্রগুলো। তারা পদ্মা সেতুর অর্থায়ন নিয়ে দুর্নীতি, শেয়ারবাজার, দলীয়করণ, বিরোধী দলের উপর দমননীতি, বাজার নিয়ন্ত্রণ, টেন্ডারবাজি, ছাত্রলীগের সন্ত্রাস, তেল-গ্যাসের দাম বাড়ানো, ঘরে ঘরে চাকরি দিতে না পারার নানা উদাহরণ তুলে ধরেন। সংখ্যায় কম হলেও যারা সরকারের সাফল্যের তালিকাটি জানিয়েছেন, তারা শিক্ষা, তথ্য-প্রযুক্তি, কৃষি, বিদ্যুৎ, হাতিরঝিল প্রকল্প, বনানীর ওভারপাস আর মার্চে উদ্বোধন হতে যাওয়া যাত্রাবাড়ী ফ্লাইওভারের উদাহরণ টেনেছেন। তবে সৃজনশীল শিক্ষার গুণগত মান নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন অনেকে। এছাড়া, প্রবাসীদের রেমিট্যান্স বেশি আসাকেও অনেকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন। কিছু সংখ্যক উত্তরদাতা যুদ্ধাপরাধীর বিচার সম্পন্ন হলে একেও তারা সফল হিসেবে দেখাতে চান। অনেকেই বলেছেন, সরকারের উদ্যোগ বেশি, তবে বাস্তবায়ন খুবই কম। সরকারের নেতিবাচক দিক নিয়ে প্রতিক্রিয়ায় জনগণ মনে করছেন নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি অসহনীয় পর্যায়ে এসেছে। সরকার নির্বাচনী ইশতেহারে ঘোষিত পণ্যমূল্য সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে রাখার প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে পারেনি। দফায় দফায় বিদ্যুৎ, সব ধরনের জ্বালানি তেল ও সিএনজি’র দাম বেড়েছে। ফলে যাত্রী ও পণ্য পরিবহনের ভাড়া বেড়েছে। সব চাপ পড়ছে সাধারণ মানুষের ওপর। যাতায়াত, বিদ্যুৎ ও দ্রব্যমূল্যের মাঝে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে শহর-নগরের বাসা-বাড়ির ভাড়া। মোটা দাগে সাধারণ জনগণ বলেন, দেশে দুর্নীতি বেড়েছে। শেয়ার বাজার, হলমার্ক কেলেঙ্কারি ও পদ্মা সেতু দুর্নীতি, রেলওয়ের সুরঞ্জিতের ঘুষের কেলেঙ্কারি, শিক্ষাঙ্গনে সন্ত্রাস বিশেষ করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশ্বজিতের হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি তাদের বেশি নাড়া দিয়েছে। ওই ঘটনায় ৪ থেকে ৫ জনকে বাঁচাতে গিয়ে সরকার নিজের লাখ লাখ ভোট নষ্ট করেছে বলে মিন্টু নামের একজন ব্যবসায়ী মনে করেন। বলছেন, সরকার বিএনপির দুর্নীতির জন্য ক্ষমতায় এসেছে। আওয়ামী লীগ ভাল করে দেখাতে পারতো। কিন্তু পারেনি। গভর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজের সামনে ফারুকসহ বেশ কয়েকজন অভিভাবক বলেন, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হলে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার সম্ভাবনা কম দেখছেন। পলাশী বাজারে কামরুল ও নাজমাসহ একাধিক উত্তরদাতা বলেছেন, প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী সরকার ১০ টাকায় চাল খাওয়াতে পারেনি। দিতে পারেনি ঘরে ঘরে চাকরি। জনপ্রতিক্রিয়ায় অংশ নেয়া ২৩ থেকে ৩৩ বছর বয়সী একাধিক উত্তর দাতা মনে করেন এমনি দেশে বেকার সংখ্যা বেশি। তারপরও সরকার চাকরিতে অবসরের মেয়াদ বাড়িয়ে আরও বেকার তৈরি করছে। বহির্বিশ্বের সঙ্গে দেশের ভাল সম্পর্ক তৈরি করতে না পারাকে এই সরকারের ব্যর্থ হিসেবে দেখছেন তরুণ প্রজন্ম। তারা বলছেন, দেশে ধনী-দরিদ্রের আয়ের বৈষম্য বেড়েই চলেছে। নোবেল জয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে নিয়ে সরকারের ঊর্ধ্বতনদের কাদা ছোঁড়াছুঁড়ি আর যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনাকে অনেকেই ভাল চোখে দেখেনি। আজিমপুর বাস স্ট্যান্ডে শিক্ষিকা ফারজানা বলেন, নারীদের আরও শিক্ষিত করার জন্য বেশি করে বৃত্তি দিতে হবে। ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর মনে করেন, চার বছরে কৃষি পণ্যের দাম বাড়ায় কৃষির উৎপাদন খরচ বেড়েছে। বিশেষ করে কৃষি পণ্যে। পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকা সত্ত্বেও এসব পণ্যের দাম আশানুরূপ কমেনি। নিউ মার্কেটে সেলিম নামের ব্যবসায়ী বলেন, সরকার সব কিছুতেই দলীয়করণ করেছে। কোন জায়গায় টেন্ডার আহ্বান করলে অন্য দলের লোক হলে পাবে না। নীলক্ষেতে বিশ্ববিদ্যালয় পডুয়া কয়েজন ছাত্র-ছাত্রী বলেন, সরকার শিক্ষায়, তথ্য-প্রযুক্তিতে ভাল করছে। এই সেক্টর ভাল এগুচ্ছে বলে উল্লেখ করে তারা বলেন, বড় বড় রাষ্ট্রের সঙ্গে কূটনৈতিক ক্ষেত্রে ব্যর্থ হচ্ছে বলে তারা মনে করেন। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ঘুরতে আসা নাজমা, বীথিসহ কয়েকজন স্নাতক পর্যায়ের ছাত্রী বলেন, সরকার তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিতে ভাল করছে। শিক্ষাঙ্গনে দলীয় সন্ত্রাস রয়েছে। বিশ্বজিতকে সরকারদলীয় সন্ত্রাসীরা যেভাবে হত্যা করলো তা ভুলার মতো নয়। ২০১৩ সালে দেশের রাজনীতি কোনদিকে যাবে এমন প্রশ্নের উত্তরে বেশির ভাগের জবাব ছিল বিশৃঙ্খলা ও সঙ্কটপূর্ণ হবে। জনগণের উপর নিম্ন চাপ আসার আশঙ্ক করছেন তারা। কেরানীগঞ্জ থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজে রোগী নিয়ে আসা বিল্লাল নামের একজন ব্যবসায়ী বলেন, সরকার তত্ত্বাবধায়ক না মানলে বিরোধী দলতো আন্দোলন করবেই। এতে জনগণের ব্যাপক ক্ষতি হবে। আর তত্ত্বাবধায়ক ছাড়া নির্বাচন হলে তা গ্রহণযোগ্য হবে না। মাহমুদা নামের এক জন উন্নয়নকর্মী সরকার চলতি বছর শুধু যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিয়ে বেশি ব্যস্ত থাকবে। ফলে উন্নয়নমূলক অন্য উদ্যোগগুলো গৌণ হয়ে যাবে।
গুম-গুপ্তহত্যা, চাঁদাবাজি, নিয়োগ বাণিজ্য, বিদ্যুৎ-গ্যাস-পানি সঙ্কট, সার ও জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধি, সন্ত্রাস-রাহাজানি-খুন, পরিবহন নৈরাজ্য ছাড়াও জাতীয় সংসদকে কার্যকর, দারিদ্র্য বিমোচন ও বৈষম্য কমানো এবং সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে না পারাকেও সরকারের ব্যর্থতা বলেছেন অনেকে। আয় কমে যাওয়া ও আয়ের সুযোগ সীমিত হয়ে পড়ায় মাথায় হাত ঠেকেছে গরিবের। খাদ্যের স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনে এগিয়ে যাওয়া, উপজেলা নির্বাচন সম্পন্ন স্বাস্থ্য সেবা বাড়ানোর প্রচেষ্টা, সারের মূল্য অর্ধেকে নামিয়ে আনা, দুস্থ মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা বৃদ্ধি, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতনভাতা বাড়ানোর জন্য পে-স্কেল প্রদান, ক্রীড়াঙ্গনে নৈপুণ্য, আইটি ইত্যাদি ক্ষেত্রে সরকার সফলতা দেখিয়েছে। প্রকৌশলী শফিকুল আলম বলেন, আমার বাসা খিলগাঁও রেল গেটের পাশে। সেখানে বস্তি নিয়ে নাভিশ্বাস দশা। বস্তি সরানোর চেয়ে সরকারের লোকজন পুনর্বাসনে বেশি মনোযোগী। আইটি ব্যবসায়ী আশরাফুর রহমান বলেন, সরকারের সফলতা-ব্যর্থতা দুটিই আছে। দুর্নীতি হয়েছে সব খাতে। নিয়োগ বাণিজ্যে ছিল ওপেন সিক্রেট। স্বাস্থ্য খাতে বাণিজ্য নিয়ে যেমন সমালোচনা ছিল তেনমি রেল কেলেঙ্কারির কথাও আমরা শুনেছি। পদ্মা সেতুর কথাও সবাই জানেন। এসব কিছু সরকারের সফলতাকে চাপা দিয়েছে। পরিবহন শ্রমিক কায়সার আহমদ বলেন এ সরকারের আমলে নৈরাজ্য বেড়েছে বেশি। পুলিশের বেপরোয়া চাঁদাবাজির কারণে যানবাহন বিশেষ করে ট্রাক, ভ্যান ও রিকশা শ্রমিকদের মধ্যে অসন্তোষ বেড়েছে। প্রতিটি পয়েন্টেই ট্রাকগুলোকে চাঁদা দিতে হয়। চালকদের পুলিশি চাঁদাবাজি রোধে সরকার কার্যকর কোন পদক্ষেপ নিয়েছে বলে শুনিনি। জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির কারণে ভাড়া বেড়েছে। যেহেতু পণ্য পরিবহনে যানবাহন ব্যবহার হয় তাই ভাড়া বেড়ে যাওয়ার কারণে এর প্রত্যক্ষ প্রভাব পড়েছে বাজারে। এখন সব পণ্যেরই দাম বেশি, চাল-কেরোসিনের দামের কারণে গরিব মানুষই বেশি দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। তার মতে, বিএনপি ও আওয়ামী লীগের সরকারগুলোর চেয়ে এরশাদের শাসনামলে জীবনমান যথেষ্ট ভাল ছিল। কাওরান বাজারের ব্যবসায়ী মো. শাহজাহান বলেন, চালের দাম কিছুটা বেশি হলেও বাজার যে একেবারে অনুকূলের বাইরে তা না। ওএমএস চালু করে চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে সক্ষম হয়েছে সরকার। ভাসমান ব্যবসায়ী জুয়েল মিয়া বলেন, ব্যবসা বাণিজ্য ভাল না। মূলধনই টিকিয়ে রাখা দায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। রাজধানীর মধুবাগের বাসিন্দা সৌদি ফেরত আবদুর রহিম (৬০) বিদেশে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি এখন আর আগের মতো নেই। মধ্যপ্রাচ্য থেকে প্রতিদিনই হাজার হাজার মানুষ শূন্য হাতে দেশে ফিরছে। উত্তরার বাসিন্দা প্রকৌশলী জাকারিয়া মজিদের মতে অপরাধ আর দুনীতি সরকারের সব সফলতাকে ম্লান করে দিয়েছে। সরকারের সফলতা যে একেবারেই নেই তা নয়। তবে ব্যর্থতার পাল্লা ভারি। সম্ভাবনার চেয়ে রাষ্ট্রে এখন সংকটই বেশি। বিদ্যুতের দাম এক বছরে বাড়ানো প্রমাণ করছে এ সেক্টর নিয়ে সরকারের মাঝেই অস্থিরতা বিরাজ করছে। গ্যাস সঙ্কটের কারণে নতুন সংযোগ তো দিতে পারছে না, উল্টো রাজধানীবাসীর চুলোয় গ্যাস জ্বলছে না। সরকার রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নিয়েই ব্যস্ত থাকায় মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন হচ্ছে না। মগবাজারের বাজারগলির বাসিন্দা রুস্তম আলী (৬৫) বলেন, মানুষের চাহিদা পূরণে কেউই আন্তরিক নয়। আমরা শুধু ভোটের অধিকারী। আর কোন অধিকারই আমাদের নেই।
শিক্ষা, কৃষি, তথ্যপ্রযুক্তি ও যোগাযোগ খাত এবং যুদ্ধাপরাধের বিচার নিয়ে ইতিবাচক মন্তব্য করেছেন অনেকে। তবে সবারই আশঙ্কা- সরকারের শেষ বছরের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে। বেশির ভাগ সাধারণ মানুষই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পক্ষে মত দিয়েছেন। বিদ্যুৎ এবং দ্রব্যমূল্য নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে তারা। জ্বালানি তেলের মূল বৃদ্ধিতে উদ্বেগ ছিল সকলের। সরকারের ৪ মন্ত্রীকে দোষারূপ করেছে অনেকে। টিকাটুলি স্বামীবাগের জাহিদ হোসেন বিপ্লব বলেন, ৪ বছরে সরকারের জনপ্রিয়তা যত দ্রুত পশ্চাদমুখী হয়েছে অতীতে কোন সরকারে সময় তা হয়নি। এ সরকার কেবল নাম পরিবর্তন ও প্রতিহিংসার রাজনীতি নিয়ে ব্যস্ত। ২০১৩ সালকে তিনি রাজনীতির জন্যে কুয়াশাচ্ছন্ন বলে উল্লেখ করেন। মিরপুর ২ নম্বর এলাকার বাসিন্দা বিনয় সরকার বলেন, সরকার সফলতার চেয়ে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে বেশি। সাধারণ মানুষের ভোটে নির্বাচিত হয়ে তারা নিজেদের স্বার্থকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। কল্যাণপুর মিজান টাওয়ারের বাসিন্দা গৃহবধূ সামসুন নাহার জানান, শিক্ষাখাত ছাড়া সরকার সব ক্ষেত্রেই ব্যর্থ। সরকার সন্ত্রাস দমন ও দুর্নীতি দমনের কথা বলে ক্ষমতায় আসলেও এক্ষেত্রে তারা সফলতা দেখাতে পারেনি। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহাল না করলে দেশে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি বিরাজ করবে আশঙ্কা করে তিনি বলেন, দুই দল মিলে সমস্যার সমাধান করতে পারবে কি-না তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। উত্তরা ৪ নম্বর সেক্টরের বাসিন্দা সিদ্দিকুর রহমান বলেন, সব মিলিয়ে সরকার খারাপ কিছু করেনি। এখন পদ্মা সেতু হলেই হয়। কল্যাণপুর সানমুন হোটেলের ম্যানেজার জাহিদ হাবিব বলেন, সরকারের সফলতার মধ্যে রয়েছে- কৃষি ও শিক্ষা ক্ষেত্রে উন্নয়ন এবং বনানী ফ্লাইওভার ও হাতিরঝিল প্রকল্প উদ্বোধন। ব্যর্থতার মধ্যে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা খুবই নাজুক। শেয়ারবাজারে ধস, প্রবৃদ্ধি খুবই কম, পদ্মা সেতু হয়নি। জাহিদ হাবিবের বন্ধু মোশাররফ হোসেন বলেন, পরাষ্ট্র ও স্বরাষ্ট্র খাতে সরকার পুরোপুরি ব্যর্থ। শিক্ষায় উন্নতি হয়েছে। চা-বিক্রেতা জহির জানান, এ সরকারের কাছে কোন প্রত্যাশা নেই। প্রত্যাশা করছি নতুন সরকার এসে ভাল কিছু করুক। গাবতলী বাস টার্মিনালে দাঁড়িয়ে ঢাকা-সাতক্ষীরা বলাকা পরিবহনের বাসচালক আবদুল কুদ্দুস জানান, সরকারের সফলতা-ব্যর্থতার কথা কিছু বলতে পারব না। তবে অন্য আমলের চেয়ে এ আমলে হরতাল, ধর্মঘট কম ছিল। পরিবহন ব্যবসা ভাল হয়েছে। দারুস সালামের ১৬৭ উত্তর বাগবাড়ীর রাহাত হোসেন বলেন, ভাল-মন্দ মিলিয়েই সরকার চলেছে। আইনশৃঙ্খলা মোটামুটি ভাল থাকলেও হলমার্ক কেলেঙ্কারি, পদ্মা সেতু দুর্নীতি, রেলওয়ের কেলেঙ্কারি সরকারকে ডুবিয়েছে। বাগবাড়ি উত্তর পাড়ার মামুনুর রশিদ জানান, বাজার অনেকটা স্থিতিশীল থাকলেও ব্যক্তি স্বার্থে পদ্মা সেতুকে বিসর্জন দেয়া হয়েছে। মন্ত্রী, উপদেষ্টাদের যোগসাজশে হয়েছে হলমার্ক কেলেঙ্কারি। পরিবহন সেক্টরে বিরাজ করছে ব্যাপক চাঁদাবাজি বিরাজ করছে। সর্বক্ষেত্রে চলছে দলীয়করণ। মাদারীপুরের কলিকিনি থেকে ইবনে সিনা হাসপাতালে রোগী নিয়ে আসা তৌফিকুল ইসলাম জানান, পুরো মাদারীপুরে নৌমন্ত্রীর কথাই এখন আইন। তার কথার বাইরে কেউ যেতে পারে না। তিনি দাবি করেন সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যার সুষ্ঠু বিচার চাই। মিডিয়ার ওপর সরকারের হস্তক্ষেপে বন্ধ হোক। প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগী হয়ে দুর্নীতিপরায়ণ মন্ত্রী-এমপিদের তালিকা প্রণয়ন করে তাদের সতর্ক করে দিক। গাবতলী বাস টার্মিনালের ইজারাদার জসিম উদ্দিন জানান, বড় দাগে সামনের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যেন অনাকাঙিক্ষত ঘটনা না ঘটে সে বিষয়ে দু’টি বড় দলকে সমঝোতায় আসতে হবে। সাভারের নগনকুণ্ডা গ্রামের মোস্তাক আহমেদ বলেন, এ সরকার নতুন গ্যাস সংযোগ বন্ধ করে রেখেছে। তবে অবৈধ উপায়ে অসাধু কর্মকর্তারা গ্যাস সংযোগ দিচ্ছে। মুন্সীগঞ্জের বিক্রমপুরের মো. নাজির জানান, এরশাদের আমলেই ভাল ছিলাম। ২ দলের প্রতি আমার কোন আস্থা নেই। সদরঘাটের পানি ব্যবসায়ী মাহবুবও একই ধরনের কথা বলেন। তিনি জানান, এ সরকার সব ক্ষেত্রেই ব্যর্থ। টাকা ছাড়া কিছু হয় না। অনেকে টাকা দিয়েও চাকরি পাচ্ছে না। ঢাকা কলেজের ইংরেজি বিভাগের ছাত্র কাজী ফয়সাল আহমেদ জানান, এ সরকারের আমলে বিদেশী সাহায্য কমে গেছে। গুম-খুন বেড়েছে। মিরপর বাঙলা কলেজের ফাইনাল ইয়ারের ছাত্র রাফি মাহমুদ জানান, শিক্ষা ক্ষেত্রে সফলতা থাকলেও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গত ৪ বছর ধরে সহিংসতা লেগেই ছিল। বেইলি রোডের হুমায়ুন কবির বলেন- সাংবাদিকরা আজ যেখানে নিরাপদ নয় সেখানে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা কোথায়? মিরপুর মধ্য শাহ আলীর রাকিব বলেন, সরকার ভাল কিছু করতে না পারলেও বিরোধী দলের নেতাদের নামে একের পর এক হাস্যকর মামলা দিচ্ছে। সামনে দেশের পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে বলে মনে হচ্ছে। কাজীপাড়া ওয়াশা পাম্পের পাশের বাড়ির জাবেদ আহসান বলেন, এ সরকারের আমলে গুম এবং হত্যা বেশি হচ্ছে। একই ধরনের তথ্য দিয়ে তার বন্ধু আরিফুল হক বলেন, সন্ত্রাস ভয়াবহ হারে বেড়েছে। মিরপুর ‘এ’ ব্লকের ৬ নম্বর সেকশনের ৩ নম্বর লেনের মেহেদী হাসান চৌধুরী বলেন, আমি নিজে ছাত্রলীগের সঙ্গে জড়িত থাকলেও আইনের শাসন পাচ্ছি না। দেশ চলছে ‘জোর যার মুল্লুক তার’ নীতিতে। রূপনগর আবাসিক এলাকার ২৭ নম্বর রোডের মোস্তফা কামাল বাবর বলেন- ছাত্রলীগ, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে সরকারের সব সফলতা ম্লান হয়ে গেছে। দুদক ও মানবাধিকার কমিশনকে সরকারের অধীনস্থ করে রাখা হয়েছে। সরকারের মদতেই শীর্ষ সন্ত্রাসী বিকাশকে কারামুক্তি দেয়া হয়েছে। কুইক রেন্টালের নামে বিদেশে অর্থ পাচার করা হচ্ছে। একই ধরনের তথ্য দিয়ে শফিকুল আজমের স্ত্রী আফরোজা খানম লিপি বলেন, প্রশাসনের চেইন অব কমান্ডে ভেঙে গেছে। কোটা প্রথার মাধ্যমে প্রশাসনকে মেধাশূন্য করা হচ্ছে। দিনাজপুর সদরে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত মনিরুজ্জমান সোহেল রোগী নিয়ে এসেছেন ঢাকায়। শ্যামলী বাসস্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে সোহেল বলেন, সরকার কথা দিয়ে কথা রাখেনি। কাঁঠালবাগান ক্রিসেন্ট রোডের শুব্রত রায় বলেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রীর যোগ্যতা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। ড. ইউনূসের সঙ্গে দূরত্ব সৃষ্টি করে সরকার অদূরদর্শিতার পরিচয় দিয়েছে। অযোগ্য লোকদের পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দিয়ে ব্যাংকিং সেক্টরকে মেরুদণ্ডহীন করে দেয়া হয়েছে। তিতুমীর কলেজের ৩য় বর্ষের ছাত্র সাইফুল ইসলাম বলেন, অতীতের কোন সরকারই শতভাগ সফল বা ব্যর্থ ছিল না। এ সরকারও আগের সরকাগুলোর ধারাবাহিকতা ধরে রেখেছে।
আশাবাদী লোকের সংখ্যা কম: বর্তমান সরকারের ৪ বছর ও আগামী ১ বছর কিভাবে যাবে তা নিয়ে বেশিরভাগ মানুষই বলেছে, সরকার পণ্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ। হলমার্ক কেলেঙ্কারি, শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারি হয়েছে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায়। সরকারের মন্ত্রী-এমপিরা দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত। পদ্মা সেতুর কারণে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে। আগামী বছর দেশে সংঘাত-সংঘর্ষ বাড়বে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনর্বহাল না করলে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না। হবিগঞ্জ জেলার সন্তান মুজিবুর রহমান রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে সিগারেট বিক্রি করেন। বর্তমান সরকারের সাফল্য ও ব্যর্থতা সম্পর্কে মুজিবুর রহমান বলেন, যেসব কাজ করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে সরকার ক্ষমতায় এসেছিল তার বেশিরভাগই করতে পারেনি। সরকার নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দান নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখতে পারেনি। বরিশালের বেবিচালক নুরুল ইসলাম বলেন, সরকার বারবার ডিজেলের দাম বাড়াচ্ছে। আমাদের রাস্তায় বসতে হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এমফিল গবেষক আমেনা খাতুন বলেন, সরকার তেমন কোন উন্নয়নমূলক কাজ করেনি। সবক্ষেত্রে দুর্নীতি হচ্ছে। চুয়াডাঙ্গার কৃষক জালাল উদ্দিন বলেন, এ সরকারের কর্মকাণ্ডে কৃষকরা হতাশ। আমাদের বেশি দাম দিয়ে সার কিনতে হয়। কিন্তু ধান বিক্রি করতে গেলে আসল উঠে না। কিশোরগঞ্জের আবদুল কাদির ব্যবসা করেন কাওরান বাজারে। তিনি বলেন, ক্ষমতার বদল নিয়ে দেশে সংঘাত হবে। একই এলাকার মিদু হোসেন বলেন, ভাল কাজ করতে পারেনি সরকার। দেশে রাস্তাঘাটের উন্নয়ন হয়নি। মানিকগঞ্জের কৃষক আইনুদ্দিন কাওরান বাজারে মুদির দোকান করেন। তিনি বলেন, সার, তেল, ডিজেলের দাম বেশি। সরকার গরিব মানুষের সর্বনাশ করেছে। মানিকগঞ্জের মোক্তার হোসেন বলেন, সরকার ভাল কোন কাজই করেনি। দেশের কোন উন্নয়ন হয়নি। আগামী ১ বছর কি হবে তা একমাত্র আল্লাহই জানেন। মানিকগঞ্জের কৃষক নবীর উদ্দিন বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। আগামী বছর হবে রাজনৈতিক সংঘর্ষের বছর। চাঁদপুরের দুলাল ব্যবসা করেন কাওরান বাজারে। তিনি বলেন, জিনিসপত্রের দাম বেশি। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভেঙে পড়েছে। চাঁদপুরের রিপন ভ্যান চালান রাজধানীতে। তিনি বলেন, আগামী বছর হবে রাজনৈতক সংঘর্ষের বছর। কুমিল্লার বাবুল চৌধুরী চাকরি করেন একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে। তিনি বলেন, সরকার কোন ভাল কাজই করেনি। সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস উঠছে। চাঁদপুরের খোকন কাঁচামালের ব্যবসা করেন রাজধানীতে। তিনি বলেন, সব ক্ষেত্রে দুর্নীতি হচ্ছে। ভাগ-বাটোয়ারা নিয়ে সবাই ব্যস্ত। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র খোরশেদ আলম বলেন, সরকার কিছু ভাল উদ্যোগ নিলেও সফল হতে পারেনি। দাঙ্গা-হাঙ্গামা ছিল। আগামীতেও দাঙ্গা-হাঙ্গামা ও সংঘর্ষ হবে। ঢাবির ছাত্র ইমরান হোসাইন বলেন, ৪ বছরের কর্মকাণ্ড দেখে মনে হচ্ছে আগামী ১ বছরও সরকার তেমন কিছু করতে পারবে না। কবির হোসেন বলেন, সরকারের সাফল্যের ধারা আগামী ১ বছরও অব্যাহত থাকবে। ঢাবির ছাত্র সবুজ বলেন, সাফল্যের তুলনায় ব্যর্থতার পাল্লা ভারি। নোয়াখালীর চাকরিজীবী জুনায়েদ বলেন, বর্তমান সরকারের সবচেয়ে বেশি সাফল্য হচ্ছে সমুদ্র বিজয়। বিডিআর বিদ্রোহ নিয়ন্ত্রণ করাটাও সরকারের সাফল্যের মধ্যে পড়ে। আগামী ১ বছর দ্বন্দ্ব সংঘর্ষ বাড়বে বলে মন্তব্য করেন তিনি। নেত্রকোনার আশরাফুল ইসলাম বলেন, সরকার নাম পরিবর্তন নিয়ে ব্যস্ত। জিয়া বিমানবন্দরের নাম বদল করেছে। আরও অনেক স্থাপনার নাম বদল করে কোটি কোটি টাকা ব্যয় করেছে। ঢাবির ছাত্র আতাউর বলেন, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় সরকার তেমন কোন কাজ করেনি। ঢাবি’র ছাত্র নাজমুল বলেন, সরকার পররাষ্ট্রনীতিতে ব্যর্থ। সন্ত্রাস দমন করতে পারেনি। আগামীতেও দ্বন্দ্ব-সংঘাত বাড়বে। লন্ডন ইউনিভার্সিটির ছাত্র দারাজ বলেন, সরকার কয়েকটি ফ্লাইওভার তৈরি করেছে। যার ফলে যানজট কিছুটা কমেছে। গাজীপুরের চাকরিজীবী খোকন বলেন, সরকার দুর্নীতিবাজদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিচ্ছে। চাকরিজীবী ফরিদ উদ্দিন বলেন, সরকার বলেছিল ঘরে ঘরে চাকরি দেবে। কিন্তু তার কিছুই হয়নি। লন্ডন ইউনিভার্সিটির ছাত্র ফরিদ বলেন, স্বজনপ্রীতি ও দুর্নীতি বেশি হয়েছে। একই ইউনিভার্সিটির ছাত্র বায়েজিদ হোসেন বলেন, ছাত্র সংগঠনগুলোর দৈরাত্ম্য বেড়েছে। বিশ্বজিতের মতো একজন নিরীহ মানুষকে প্রাণ দিতে হয়েছে ছাত্রলীগ ক্যাডারদের হাতে। দেশে হত্যা, খুন, ধর্ষণ বেড়েছে।
No comments