ঢাবি শিক্ষার্থীর মৃত্যু-হঠকারিতা নয়, নিয়মতান্ত্রিকতা কাম্য
শ নিবার বাস শ্রমিকদের সঙ্গে সংঘর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রেদওয়ানের যেভাবে মৃত্যু হয়েছে, তা কেবল বেদনা নয় ক্ষোভেরও জন্ম দেয়। কিন্তু ওই ঘটনার জের ধরে রোববার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় নির্বিচারে গাড়ি ভাংচুরও ক্ষোভের স্বাভাবিক বহিঃপ্রকাশ হতে পারে না।
দুই ক্ষেত্রেই চূড়ান্ত বাড়াবাড়ি হয়েছে বলে আমরা মনে করি। মতিঝিল এলাকায় বাস শ্রমিকরা যেভাবে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের ওপর সংঘবদ্ধ হামলা চালিয়েছে তা নিছক দুর্বৃত্তপনা। দুই পক্ষের মধ্যে সৃষ্ট বিবাদ মেটানোর নিয়মতান্ত্রিক অনেক পন্থাই খোলা ছিল; কিন্তু এর বদলে শ্রমিকরা সংঘাতের পথ বেছে নিয়েছে। রেদোয়ানকে পিটিয়ে রক্তাক্ত করে ট্রাকের নিচে ফেলে দেওয়া হয়েছে বলে যে অভিযোগ তার সতীর্থরা করছে, তা গুরুত্ব সহকারে খতিয়ে দেখার আহ্বান জানাই। এমন হিংস্রতা অনুকম্পার অযোগ্য। ওই দিনের সংঘাতের সঙ্গে একটি পরিবহন কোম্পানির কারা জড়িত ছিল, প্রশাসনের পক্ষে তা খুঁজে বের করা কঠিন নয়। এ ক্ষেত্রে সামান্যতম অবহেলাও দেখতে চাই না আমরা। এর আগেও বিভিন্ন সময়ে পরিবহন শ্রমিকরা এমন বাড়াবাড়ি করেছে। সেগুলোর উপযুক্ত প্রতিকার হলে শনি ও রোববারের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটত না বলে যে অভিযোগ ঢাবি শিক্ষার্থীরা সমকালের কাছে করেছে, তা যথার্থ। এর পুনরাবৃত্তি কাম্য নয়। একটি মেধাবী প্রাণ অকালে ঝরে পড়ার জন্য যারা দায়ী তাদের শাস্তি পেতেই হবে। এতে করে ভবিষ্যতে এমন ঘটনা এড়ানো যাবে। শিক্ষার্থীদের কাছ থেকেও সংযম ও নিয়মতান্ত্রিকতা প্রত্যাশিত। সন্দেহ নেই, প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহ্য। কিন্তু কেবল ব্যক্তি কিংবা গোষ্ঠীস্বার্থে গর্জে ওঠা গৌরবের হতে পারে না। রোববার বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন এলাকায় যেভাবে নির্বিচারে গাড়ি ভাংচুর করা হয়েছে, তা প্রতিবাদের ভাষা হতে পারে না। মনে রাখা জরুরি, হঠকারিতা সহানুভূতির বদলে পাল্টা ক্ষোভেরই জন্ম দেয়। দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠের শিক্ষার্থীরা সামষ্টিক সম্পদের প্রতি যত্নশীল হবে, সেটাও প্রত্যাশিত। ভাংচুর-অগি্নসংযোগ নয়, নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে রেদোয়ানের মৃত্যুর প্রতিকার আদায় করাই হবে তার প্রতি দায়বোধের প্রমাণ এবং অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধের কার্যকর উপায়।
No comments