পবিত্র কোরআনের আলো-কয়েকজন সাহাবির মহৎ কর্ম ও বিতর্কিত জিজ্ঞাসা প্রসঙ্গ

২০৭. ওয়ামিনান্নাসি মাইঁয়াশরি নাফসাহুব্তিগা-আ মারদ্বাতিল্লাহ; ওয়াল্লাহু রাঊফুম্ বিলই'বাদ।
২০৮. ইয়া আইয়ূ্যহাল্লাযিনা আ-মানুদ্খুলূ ফিস্সিলমি কাফ্ফাতান ওয়ালা তাত্তাবিঊ' খুতুওয়াতিশ্ শাইত্বান; ইন্নাহূ লাকুম আ'দুয়্যুম্ মুবিন।


২০৯. ফাইন যালালতুম্ মিমবা'দি মাজা-আতকুমুল বায়্যিনাতু ফা'লামূ আন্নাল্লাহা আ'যিযুন হাকিম। [সুরা বাকারা, আয়াত : ২০৭-২০৯]

অনুবাদ
২০৭. এসব লোকের ভেতর এমন কিছু লোকও রয়ে গেছে, যাঁরা আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টিলাভের জন্য নিজের জীবন পর্যন্ত ক্রয় করে, আল্লাহ এসব বান্দার প্রতি সত্যিই অনুগ্রহশীল।
২০৮. হে ইমানদার লোকেরা! তোমরা পুরোপুরি ইসলামে প্রবেশ করো এবং কোনো অবস্থায়ই শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ কোরো না, অবশ্যই সে তোমাদের সরাসরি দুশমন।
২০৯. আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে এসব সুস্পষ্ট নিদর্শন তোমাদের কাছে আসার পরও যদি তোমরা বিপথগামী হও তবে নিশ্চিত জেনে রেখো, আল্লাহ তায়ালা মহাবিজ্ঞ ও পরাক্রমশালী।

ব্যাখ্যা
২০৭ নম্বর আয়াতটির শানেনুজুল এ রকম_হজরত ছোহাইব (রা.) হিজরত করে মদিনায় যাত্রাকালে মক্কার একদল কাফির পথে তাঁকে ঘেরাও করল। হজরত ছোহাইব (রা.) যোদ্ধা ছিলেন। তিনি তাদের বললেন, তোমরা জানো, আমি তীরন্দাজ এবং তলোয়ার চালনায় পারদর্শী। সুতরাং তোমরা আমার কাছে আসতে পারবে না, বরং নিজেরাই মারা পড়বে। তবে হ্যাঁ, আমি তোমাদের সঙ্গে একটা ফয়সালা করতে পারি। যদি তোমরা আমাকে নিরাপদে যেতে দাও, তবে আমার সব ধনসম্পদ এখন থেকে তোমাদের। ওই ফয়সালায় তারা রাজি হয়ে মক্কায় ফিরে গেল।
তিনি মদিনায় পৌঁছলে নবী করিম (সা.) তাঁকে ডেকে বললেন, 'হে আবু ইয়াহ্ইয়া, তোমার ব্যবসা লাভজনক হয়েছে। আল্লাহ তোমার সম্পর্কে এ আয়াত নাজিল করেছেন।' এখানে আল্লাহ তায়ালা তাঁর সন্তুষ্টিলাভ অর্থাৎ আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠায় কাজ করার জন্য একজনের নিজের জীবন ক্রয় করার উদাহরণ তুলে ধরেছেন। আল্লাহর পথে জীবন উৎসর্গ করাই শুধু মহৎ কাজ নয়, আল্লাহর পথে নিজের জীবন ক্রয় করাও মহৎ কাজ।
২০৮ নম্বর আয়াতের শানেনুজুল অনুরূপ : আবদুল্লাহ ইবনে সালাম প্রমুখ নওমুসলিম, যাঁরা ইহুদি ধর্মের আলেম ছিলেন, তাঁরা একবার রাসুল (সা.)-এর খেদমতে আরজ করলেন, 'হে নবী, শনিবার দিনটি আমাদের কাছে সম্মানিত এবং তাওরাত আল্লাহর কিতাব। আমাদের শনিবারের সম্মান করার এবং উটের মাংস না খাওয়ার অনুমতি দিন।' উল্লেখ করা প্রয়োজন, তাওরাতে উটের মাংস খাওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা ছিল এবং ইহুদিরা তা আহার করত না। তাদের ওই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এ আয়াত নাজিল হয়। উটের মাংস খাওয়া ইসলামের বিধান বা করণীয় নয়। শনিবারকে সম্মান করাও নিষেধ নয়। কেউ ইচ্ছা করলে উটের মাংস বা যেকোনো হালাল খাবার না খেতে পারে। কিন্তু ভ্রান্ত ধর্মের ধারাবাহিকতায় ইসলামে নতুন কিছু যোগ-বিয়োগ করার অনুমতি নেই। এ আয়াতে ইসলামকে পুরোপুরি ও নিঃশর্তভাবে গ্রহণ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
গ্রন্থনা : মাওলানা হোসেন আলী

No comments

Powered by Blogger.