৫০০০ কোটি ডলার ক্ষতির আশঙ্কা
ঘূর্ণিঝড় স্যান্ডির প্রলয়লীলা শেষ। নতুন করে জেগে উঠছে আক্রান্ত রাজ্যগুলো। কিন্তু স্যান্ডি নিয়ে গেছে কমপক্ষে ৫০টি জীবন। ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৫০০০ কোটি ডলারের। সম্পদ, বাড়িঘরের ক্ষতি হয়েছে ২০০০ কোটি ডলারের।
বাণিজ্যে ক্ষতি হয়েছে ২০০০ থেকে ৩০০০ কোটি ডলারের। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে নিউ ইয়র্কে। সেখানে বাড়িঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে শুধু ধ্বংসলীলার চিহ্ন। এখানে তিনটি পারমাণবিক স্থাপনা বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। একটিতে সতর্কতা জারি করা হয়েছে। কয়েক বছর আগে নিউ অরলিয়ন্সে ঘূর্ণিঝড় ক্যাটরিনা আঘাত হানার পর সেখানে যে অবস্থা হয়েছিল এবার নিউ ইয়র্কের অবস্থা অনেকটা সে রকম। এখনও বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন হয়ে আছে লাখ লাখ মানুষ। অক্টোবর-ডিসেম্বর সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতে যে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হওয়ার কথা ছিল এই ঘূর্ণিঝড়ের কারণে তা শতকরা ০.৬ ভাগ কম হতে পারে। খুচরা বিক্রেতা, বিমান সংস্থা ও বাড়িঘর মেরামতে অর্থনৈতিক অনেক লোকসান হবে। এই ঘূর্ণিঝড়ের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ব উপকূলের রাজ্যগুলোতে প্রায় ৭০ লাখ বাড়িতে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। শতকরা ৭০ ভাগ তেল শোধনাগার বন্ধ করা হয়েছে। নিউ ইয়র্ক মেট্রো এলাকায় যে ক্ষতির পূর্বাভাস দেয়া হয়েছিল, প্রকৃত ক্ষতি তার চেয়ে অনেক বেশি হবে। নিউ ইয়র্কের এই এলাকাটি যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির শতকরা ১০ ভাগ সরবরাহ করে থাকে। গতকালও নিউ ইয়র্কে গাড়ি, রেল ও বিমান বন্ধ ছিল। ঘূর্ণিঝড় এ শহরের ওয়াটারফ্রন্টের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। এতে পানি উপচে বন্যার সৃষ্টি হয়েছে। ডুবে গেছে পাতালপথ। লাখ খানেক মানুষ রয়েছে অন্ধকারে। তবে মানহাটন ও ব্রুকলিনে ৪ দিনের মধ্যে বিদ্যুৎ সংযোগ পুনঃস্থাপন করা যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। দু’দিন বন্ধ থাকার পর গতকাল নিউ ইয়র্ক স্টক এক্সচেঞ্জ চালু হওয়ার কথা। দু’দিন বন্ধ রাখায় তাতে অর্থনীতির ওপর কোন প্রভাব ফেলবে কিনা তা আগাম বলা যাচ্ছে না। তবে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে কলকারখানায় উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে। এতে সাময়িক সময়ের জন্য হলেও প্রভাব পড়বে। ক্রেতাদের এরই মধ্যে হাতে নগদ অর্থ না থাকায় চাহিদায় ভাটা পড়েছে। ফলে কিছু সময়ের জন্য কারখানা বন্ধ থাকতে পারে অথবা তারা সীমিত আকারে উৎপাদনে যেতে পারে। এসব ক্ষতি সহজে পূরণ করা যাবে না। উত্তর-পূর্বাঞ্চলে অনেক রাস্তায় ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এর ফলে রাস্তায় সহজে গাড়ি চলাচল করতে পারবে না। ফলে গ্যাসোলিনের চাহিদা পড়ে যাবে। তেলের পাম্পগুলোতে ক্রেতাদের ভিড় কমে যাবে। মঙ্গলবার গ্যাসোলিনের জাতীয় চাহিদা পড়ে যায়। ফলে এক গ্যালন তেলের দাম এক পেনি কমে দাঁড়ায় ৩ দশমিক ৫৩ ডলার। উত্তর-পূর্ব যুক্তরাষ্ট্রের রাজ্যগুলোতে শিপিং ও ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ রয়েছে। ১৫ হাজারের বেশি ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে। ফলে অনেক যাত্রী আটকা পড়ে আছেন। তাদের গন্তব্যে যেতে হলে এখন থেকে আরও কয়েক দিন অপেক্ষা করতে হবে। ফ্লাইট এওয়ার-এর মতে, মঙ্গলবার ৬ হাজারের বেশি ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে। গতকাল উড্ডয়নের কথা ছিল ৫০০ ফ্লাইট। কিন্তু তা-ও বাতিল করা হয়েছে। মঙ্গলবার নিউ ইয়র্কের বড় তিনটি বিমানবন্দর বন্ধ ছিল। যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সবচেয়ে ব্যস্ত বিমান পথ নিউ ইয়র্কে। সেখানে যখন একের পর এক ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে তাতে অন্যান্য শহরের সঙ্গে যোগাযোগে মারাত্মক প্রভাব ফেলছে। ওদিকে নিউ ইয়র্ক টাইমস বলেছে, সব মিলে ৮০ লাখের মতো মানুষ বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন হয়ে রয়েছে স্যান্ডির প্রভাবে। বাতিল করা হয়েছে ১৮ হাজারের বেশি ফ্লাইট। নিউ হ্যাম্পশায়ারের এ ঘূর্ণিঝড়ের গতি রেকর্ড করা হয়েছে ১৩৯ মাইল প্রতি ঘণ্টায়। নিউ ইয়র্ক সিটিতে মারা গেছে কমপক্ষে ২২ জন। মঙ্গলবার রাতে জরুরি আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই নিয়েছেন ৬৪০০ মানুষ। এ সময়ে ল্যাঙ্গ মেডিকেল থেকে সরিয়ে নেয়া হয় ৩০০ রোগীকে। সব স্থানে বিদ্যুৎ সরবরাহ ঠিক করতে এখনও সময় লাগবে ৩ থেকে ৪ দিন। নিউ জার্সিতে মঙ্গলবার সকালে ২৬ লাখ বাড়ি ছিল বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন। এ রাজ্যে ২৪টি ছোট রেলগাড়ি জলোচ্ছ্বাসে ভেসে এসেছে রাস্তার উপর।
No comments