ঢাকার বাইরে কাজ করবে না ডিজিটাল নম্বরপ্লেট by মনোয়ারুল ইসলাম
ডিজিটাল নম্বরপ্লেট বা রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি আইডেনটিফিকেশন (আরএফআইডি) ট্যাগসহ রেট্রো-রিফ্লেকটিভ নম্বরের অনেক সুবিধা থাকলেও সীমাবদ্ধতা রয়েছে। ডিজিটাল নম্বরপ্লেটের প্রধান সীমাবদ্ধতা হলো— এটি ঢাকার বাইরে অকার্যকর।
ঢাকার বাইরে আরএফআইডি ট্যাগ সনাক্তকরণের যন্ত্র বসানো হয়নি। ফলে অপরাধী গাড়ি নিয়ে ঢাকার বাইরে পালিয়ে গেলে এই প্রযুক্তি আর কাজ করবে না।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) পরিচালক (প্রকৌশল) মো. সাইফুল হক বাংলানিউজকে বলেন, ‘‘রাজধানীর ১২টি প্রবেশ বা বাইরের পথে ১২টি পুলিশ চেকপোস্ট থাকবে। পুলিশ সদস্যদের কাছে হ্যাণ্ডেল রিডার থাকবে। এই ১২টি পয়েন্টে আরএফআইডি ট্যাগ সনাক্তকরণের যন্ত্র বসানো হয়েছে। কোন গাড়ি ঢাকার বাইরে গেলে বা এলে তা চিহ্নিত করা যাবে। ঢাকা থেকে পালিয়ে গেলেও তা রেকর্ড হয়ে থাকবে।’’
তিনি আরও বলেন, ‘‘তবে এই যন্ত্র ব্যয়বহুল হওয়ার ফলে এখনি সারাদেশে বসানো সম্ভব হচ্ছে না। তবে আমরা পর্যায়ক্রমে সারাদেশে এই সুবিধা দিতে চেষ্টা করবো।’’
ডিজিটাল নম্বরপ্লেট পেতে কত টাকা লাগবে এ প্রসঙ্গে সাইফুল হক বাংলানিউজকে বলেন, ‘‘প্রাথমিকভাবে চলতি বছরের অক্টোবরের ২০ তারিখের আগে রেজিস্ট্রেশন হয়ে থাকলে সব গাড়ির জন্য ৩ হাজার ৬৫২ টাকা দিতে হবে। আর অক্টোবরের ২০ তারিখের পর হলে ৪ হাজার ৬৫০ টাকা ধার্য করা হয়েছে। মোটরসাইকেলের জন্য চলতি বছরের অক্টোবরের ২০ তারিখের আগে রেজিস্ট্রেশন হয়ে থাকলে ১৮০৫ টাকা এবং অক্টোবরের ২০ তারিখের পরে হলে ২ হাজার ২০০ টাকা ধার্য করা হয়েছে।’’
নম্বরপ্লেট খোলা হলে এ পদ্ধতি কিভাবে কাজ করবে এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘নম্বরপ্লেট অনেক নিরাপদ। এ নম্বরপ্লেট গাড়িতে সংযোজনকালে একমুখী স্ক্রু ব্যবহার করা হবে যা একবার খুললে পুনরায় লাগানো যাবে না। শুধু তাই নয়, এ নম্বরপ্লেট না ভেঙে খোলা সম্ভব নয়। ফলে এক গাড়ির নম্বরপ্লেট অন্য গাড়িতে ব্যবহারের কোনো সুযোগ নেই।’’
বিআরটিএ অফিস সূত্রে জানা গেছে, ভাড়ায় চালিত বাস, মিনিবাস, ট্রাক, ট্যাংকলরিসহ ভারী মোটরযানের আরআইএফডিসহ একজোড়া নম্বরপ্লেট টাইপ-১ক হিসেবে চিহ্নিত হবে। ভাড়ায় চালিত নয় এমন বাস, মিনিবাস, ট্রাক, ট্যাংকলরিসহ ভারী মোটরযানের আরআইএফডিসহ একজোড়া নম্বরপ্লেট টাইপ-১খ হিসেবে চিহ্নিত হবে।
ভাড়ায় চালিত নয় এমন কার, ট্যাক্সিক্যাব, জিপ, মাইক্রোবাস, পিকআপের আরআইএফডিসহ একজোড়া নম্বরপ্লেট টাইপ-২ক হিসেবে চিহ্নিত হবে। ভাড়ায় চালিত কার, জিপ, মাইক্রোবাস, পিকআপের আরআইএফডিসহ একজোড়া নম্বরপ্লেট টাইপ-২খ হিসেবে চিহ্নিত হবে।
মোটরসাইকেলের নম্বরপ্লেট আরআইএফডিসহ একটি নম্বরপ্লেট টাইপ-৩ক হিসেবে চিহ্নিত হবে।
ভাড়ায় চালিত ত্রি-চক্রযানের আরআইএফডিসহ একজোড়া নম্বরপ্লেট টাইপ-৩খ হিসেবে চিহ্নিত হবে। ভাড়ায় চালিত নয় এমন ত্রি-চক্রযানের আরআইএফডিসহ একজোড়া নম্বরপ্লেট টাইপ-৩গ হিসেবে চিহ্নিত হবে।
এছাড়া প্রতিটি মোটরযানের মালিককে ইলেক্ট্রনিক চিপবেইজড এবং বিভিন্ন দৃশ্যমান ও অদৃশ্যমান নিরাপত্তা ফিচারসমৃদ্ধ ডিজিটাল রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট দেয়া হবে।
বিআরটিএ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ডিজিটাল নম্বরপ্লেট বা রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি আইডেনটিফিকেশন (আরএফআইডি) ট্যাগসহ রেট্রো-রিফ্লেকটিভ নম্বর ব্যবস্থায় প্রত্যেক যানবাহনের জন্য রেজিস্ট্রেশন নম্বরসহ এক ধরণের নম্বরপ্লেট বাধ্যতামূলক করা হয়েছে, যা দিন ও রাত উভয় সময়ে দেখা যাবে। এসব মোটরযান সহজে চিহ্নিত করতে এতে রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি থাকবে। কোনো মোটরযান দুর্ঘটনার পর ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে গেলেও ডিজিটাল প্লেট সেটি শনাক্তে সাহায্য করবে।
এই ব্যবস্থা ভুয়া নম্বরপ্লেট ও একই নম্বর বিভিন্ন যানবাহনে ব্যবহারও শনাক্ত করবে। যানবাহনে ডিজিটাল নম্বরপ্লেট ব্যবহার নিশ্চিত করা গেলে যানবাহনের সিকিউরিটি এবং সেফটি নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। এতে গাড়িতে ভূয়া নম্বরপ্লেটের ব্যবহার, একই নম্বর একাধিক গাড়িতে লাগানোর প্রবণতাও রোধ করা সম্ভব হবে।
ডিজিটাল নম্বরপ্লেট বা রেট্রোরিফ্লেক্টিং ভেহিকেল নম্বরপ্লেটে ট্র্যাকিং ডিভাইস সংযুক্ত থাকায় যানবাহনের সিকিউরিটিজ অ্যান্ড সেফটি নিশ্চিত হবে এবং যানবাহনের গতিবিধি জানা যাবে।
গাজীপুর সদর উপজেলার বিএডিসি মোড় এলাকায় অবস্থিত বাংলাদেশ মেশিনটুলস ফ্যাক্টরিতে সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে রেট্রোরিফ্লেক্টিং ভেহিকেল নম্বরপ্লেট (ডিজিটাল নম্বর প্লেট) তৈরি করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে বিআরটিএ চেয়ারম্যান আইয়ুবুর রহমান বাংলানিউজকে জানান, দেশে আনফিট গাড়িতেও ভুয়া নম্বরপ্লেট ব্যবহার করা হচ্ছে। ফলে দুর্ঘটনায় দায়ী ব্যক্তি পালিয়ে যেতে সক্ষম হচ্ছে। রেট্রোরিফ্লেক্টিং ভেহিকেল নম্বরপ্লেট বা ডিজিটাল নম্বরপ্লেটে ট্র্যাকিং ডিভাইস সংযুক্ত থাকায় যানবাহনের সিকিউরিটিজ অ্যান্ড সেফটি নিশ্চিত হবে। নম্বরপ্লেটের মাধ্যমে যানবাহনের গতিবিধি জানা যাবে। এ পদ্ধতিতে দায়ী ব্যক্তি পালিয়ে যেতে পারবে না।
তিনি বলেন, ‘‘বিআরটিএ যানবাহন ব্যবস্থার সার্বিক উন্নয়নে ক্রমান্বয়ে হাই সিকিউরিটি স্মার্ট কার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রদান, মহাসড়কের গাড়িচালকদের অ্যালকোহল ডিটেক্টর দিয়ে পরীক্ষা করা, স্পিড গানের মাধ্যমে গাড়ির গতি মেপে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া ও আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার বাড়ানো হবে। পর্যায়ক্রমে দেশের সব মোটরযানকে ডিজিটাইজড নম্বরপ্লেট, স্মার্ট রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট বা স্মার্ট কার্ড ও রেডিও আইডেন্টিফিকেশন ট্যাগ দেবে সরকার।’’
মেশিনটুলস ফ্যাক্টরির কর্মকর্তারা জানান, মেশিনটুলস ফ্যাক্টরিতে এ প্রকল্পের মাধ্যমে প্রতি মাসে ২ লাখ নম্বরপ্লেট তৈরি করা সম্ভব হবে। ফলে ৯ থেকে ১০ মাসের মধ্যে দেশের সকল যানবাহন এমনকি মটরসাইকেলেও ডিজিটাল নম্বরপ্লেট দেওয়া যাবে।
যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, সিকিউরিটি ও সেফটির কথা বিবেচনা করে এ প্রকল্পের কাজটি বাংলাদেশ মেশিনটুলস ফ্যাক্টরিকে দেয়া হয়েছে। তারা দ্রুত ও মানসম্পন্নভাবে এ কাজটি করছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে সড়ক দুর্ঘটনা অনেকাংশে কমে আসবে।
ডিজিটাল নম্বরপ্লেট চালুর যৌক্তিকতা তুলে ধরতে গিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘‘ডিজিটাল নম্বরপ্লেট চালু হলে সব গাড়ির নম্বরপ্লেট এক মাপের হবে। ভুয়া ও আনফিট গাড়িতে নম্বরপ্লেট ব্যবহারের প্রবণতাও কমে যাবে।’’
বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরির হেড অব মার্কেটিং লেফটেন্যান্ট কর্নেল মেহেদী হাসান বাংলানিউজকে জানান, প্রতি মাসে দুই লাখ রেট্রো-রিফ্লেক্টিভ নম্বরপ্লেট ও আরএফআইডি ট্যাগ সরবরাহ করা সম্ভব হবে। এই কাজে আমরা আমেরিকা, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, দুবাই ও কুয়েতের মোটরযান ব্যবস্থাপনার মডেল দেখেছি। তবে আমেরিকার মডেলটিই আমরা চূড়ান্তভাবে গ্রহণ করেছি। আমাদের বাস্তবায়নাধীন এ প্রকল্পটি মূলত আমেরিকান মডেলের অনুসরণেই হচ্ছে।’’
আরএফআইডি ট্যাগের ব্যবহার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘এ ট্যাগ থাকলে সেতুর টোল দেওয়ার জন্যও থামতে হবে না। স্বয়ংক্রিয়ভাবে টোল প্লাজায় স্থাপিত যন্ত্রের মাধ্যমে ক্রেডিট কার্ডের মতো টোল কেটে নেবে। ফলে যানজট অনেক কমবে। ফিটনেস পরীক্ষা ও ট্যাক্স টোকেন দেওয়ার সময়ও আরএফআইডি ট্যাগই যথেষ্ট হবে।
বিআরটিএর পরিচালক (প্রকৌশল) মো. সাইফুল হক বলেন, ‘‘আমেরিকা, ইন্দোনেশিয়া, ভারত, সিংগাপুর, মালয়েশিয়া, দুবাই এই ধরনের প্রযুক্তি ব্যবহার করে। আমরা সবকিছু দেখে নিজেদের মতো করে প্রযুক্তিটিকে কাজে লাগিয়েছি। এটার ব্যবহার শুরুর পর কোনো ধরণের সমস্যা দেখা দিলে আমরা সেসব সমস্যা সমাধানে প্রস্তত।”
প্রসঙ্গত, গত বুধবার প্রধানমন্ত্রী তার দপ্তরে রেট্রো-রিফ্লেকটিভ নম্বর উদ্বোধন করেন।
ডিজিটাল নম্বরপ্লেটের উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‘মোটরযানের মালিক, চালক, নিয়ন্ত্রক ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারীসহ সবার সুবিধা নিশ্চিত করতে এই ডিজিটাল পদ্ধতি চালু করা হয়েছে। এতে গাড়ির মালিক ও যাত্রীরা উপদ্রবমুক্ত হবেন । বিআরটিএর স্বচ্ছতা ও জবাবদিহীতা বৃদ্ধি পাবে।’’
মোটরযানের মালিক, চালক, নিয়ন্ত্রক ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারীসহ সবার সুবিধা নিশ্চিত করতে এই ডিজিটাল পদ্ধতি চালু করা হয়েছে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “এর মধ্য দিয়ে দেশের পরিবহন খাত নতুন যুগে প্রবেশ করলো।”
তিনি আরও বলেন, ‘‘তবে এই যন্ত্র ব্যয়বহুল হওয়ার ফলে এখনি সারাদেশে বসানো সম্ভব হচ্ছে না। তবে আমরা পর্যায়ক্রমে সারাদেশে এই সুবিধা দিতে চেষ্টা করবো।’’
ডিজিটাল নম্বরপ্লেট পেতে কত টাকা লাগবে এ প্রসঙ্গে সাইফুল হক বাংলানিউজকে বলেন, ‘‘প্রাথমিকভাবে চলতি বছরের অক্টোবরের ২০ তারিখের আগে রেজিস্ট্রেশন হয়ে থাকলে সব গাড়ির জন্য ৩ হাজার ৬৫২ টাকা দিতে হবে। আর অক্টোবরের ২০ তারিখের পর হলে ৪ হাজার ৬৫০ টাকা ধার্য করা হয়েছে। মোটরসাইকেলের জন্য চলতি বছরের অক্টোবরের ২০ তারিখের আগে রেজিস্ট্রেশন হয়ে থাকলে ১৮০৫ টাকা এবং অক্টোবরের ২০ তারিখের পরে হলে ২ হাজার ২০০ টাকা ধার্য করা হয়েছে।’’
নম্বরপ্লেট খোলা হলে এ পদ্ধতি কিভাবে কাজ করবে এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘নম্বরপ্লেট অনেক নিরাপদ। এ নম্বরপ্লেট গাড়িতে সংযোজনকালে একমুখী স্ক্রু ব্যবহার করা হবে যা একবার খুললে পুনরায় লাগানো যাবে না। শুধু তাই নয়, এ নম্বরপ্লেট না ভেঙে খোলা সম্ভব নয়। ফলে এক গাড়ির নম্বরপ্লেট অন্য গাড়িতে ব্যবহারের কোনো সুযোগ নেই।’’
বিআরটিএ অফিস সূত্রে জানা গেছে, ভাড়ায় চালিত বাস, মিনিবাস, ট্রাক, ট্যাংকলরিসহ ভারী মোটরযানের আরআইএফডিসহ একজোড়া নম্বরপ্লেট টাইপ-১ক হিসেবে চিহ্নিত হবে। ভাড়ায় চালিত নয় এমন বাস, মিনিবাস, ট্রাক, ট্যাংকলরিসহ ভারী মোটরযানের আরআইএফডিসহ একজোড়া নম্বরপ্লেট টাইপ-১খ হিসেবে চিহ্নিত হবে।
ভাড়ায় চালিত নয় এমন কার, ট্যাক্সিক্যাব, জিপ, মাইক্রোবাস, পিকআপের আরআইএফডিসহ একজোড়া নম্বরপ্লেট টাইপ-২ক হিসেবে চিহ্নিত হবে। ভাড়ায় চালিত কার, জিপ, মাইক্রোবাস, পিকআপের আরআইএফডিসহ একজোড়া নম্বরপ্লেট টাইপ-২খ হিসেবে চিহ্নিত হবে।
মোটরসাইকেলের নম্বরপ্লেট আরআইএফডিসহ একটি নম্বরপ্লেট টাইপ-৩ক হিসেবে চিহ্নিত হবে।
ভাড়ায় চালিত ত্রি-চক্রযানের আরআইএফডিসহ একজোড়া নম্বরপ্লেট টাইপ-৩খ হিসেবে চিহ্নিত হবে। ভাড়ায় চালিত নয় এমন ত্রি-চক্রযানের আরআইএফডিসহ একজোড়া নম্বরপ্লেট টাইপ-৩গ হিসেবে চিহ্নিত হবে।
এছাড়া প্রতিটি মোটরযানের মালিককে ইলেক্ট্রনিক চিপবেইজড এবং বিভিন্ন দৃশ্যমান ও অদৃশ্যমান নিরাপত্তা ফিচারসমৃদ্ধ ডিজিটাল রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট দেয়া হবে।
বিআরটিএ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ডিজিটাল নম্বরপ্লেট বা রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি আইডেনটিফিকেশন (আরএফআইডি) ট্যাগসহ রেট্রো-রিফ্লেকটিভ নম্বর ব্যবস্থায় প্রত্যেক যানবাহনের জন্য রেজিস্ট্রেশন নম্বরসহ এক ধরণের নম্বরপ্লেট বাধ্যতামূলক করা হয়েছে, যা দিন ও রাত উভয় সময়ে দেখা যাবে। এসব মোটরযান সহজে চিহ্নিত করতে এতে রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি থাকবে। কোনো মোটরযান দুর্ঘটনার পর ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে গেলেও ডিজিটাল প্লেট সেটি শনাক্তে সাহায্য করবে।
এই ব্যবস্থা ভুয়া নম্বরপ্লেট ও একই নম্বর বিভিন্ন যানবাহনে ব্যবহারও শনাক্ত করবে। যানবাহনে ডিজিটাল নম্বরপ্লেট ব্যবহার নিশ্চিত করা গেলে যানবাহনের সিকিউরিটি এবং সেফটি নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। এতে গাড়িতে ভূয়া নম্বরপ্লেটের ব্যবহার, একই নম্বর একাধিক গাড়িতে লাগানোর প্রবণতাও রোধ করা সম্ভব হবে।
ডিজিটাল নম্বরপ্লেট বা রেট্রোরিফ্লেক্টিং ভেহিকেল নম্বরপ্লেটে ট্র্যাকিং ডিভাইস সংযুক্ত থাকায় যানবাহনের সিকিউরিটিজ অ্যান্ড সেফটি নিশ্চিত হবে এবং যানবাহনের গতিবিধি জানা যাবে।
গাজীপুর সদর উপজেলার বিএডিসি মোড় এলাকায় অবস্থিত বাংলাদেশ মেশিনটুলস ফ্যাক্টরিতে সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে রেট্রোরিফ্লেক্টিং ভেহিকেল নম্বরপ্লেট (ডিজিটাল নম্বর প্লেট) তৈরি করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে বিআরটিএ চেয়ারম্যান আইয়ুবুর রহমান বাংলানিউজকে জানান, দেশে আনফিট গাড়িতেও ভুয়া নম্বরপ্লেট ব্যবহার করা হচ্ছে। ফলে দুর্ঘটনায় দায়ী ব্যক্তি পালিয়ে যেতে সক্ষম হচ্ছে। রেট্রোরিফ্লেক্টিং ভেহিকেল নম্বরপ্লেট বা ডিজিটাল নম্বরপ্লেটে ট্র্যাকিং ডিভাইস সংযুক্ত থাকায় যানবাহনের সিকিউরিটিজ অ্যান্ড সেফটি নিশ্চিত হবে। নম্বরপ্লেটের মাধ্যমে যানবাহনের গতিবিধি জানা যাবে। এ পদ্ধতিতে দায়ী ব্যক্তি পালিয়ে যেতে পারবে না।
তিনি বলেন, ‘‘বিআরটিএ যানবাহন ব্যবস্থার সার্বিক উন্নয়নে ক্রমান্বয়ে হাই সিকিউরিটি স্মার্ট কার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রদান, মহাসড়কের গাড়িচালকদের অ্যালকোহল ডিটেক্টর দিয়ে পরীক্ষা করা, স্পিড গানের মাধ্যমে গাড়ির গতি মেপে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া ও আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার বাড়ানো হবে। পর্যায়ক্রমে দেশের সব মোটরযানকে ডিজিটাইজড নম্বরপ্লেট, স্মার্ট রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট বা স্মার্ট কার্ড ও রেডিও আইডেন্টিফিকেশন ট্যাগ দেবে সরকার।’’
মেশিনটুলস ফ্যাক্টরির কর্মকর্তারা জানান, মেশিনটুলস ফ্যাক্টরিতে এ প্রকল্পের মাধ্যমে প্রতি মাসে ২ লাখ নম্বরপ্লেট তৈরি করা সম্ভব হবে। ফলে ৯ থেকে ১০ মাসের মধ্যে দেশের সকল যানবাহন এমনকি মটরসাইকেলেও ডিজিটাল নম্বরপ্লেট দেওয়া যাবে।
যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, সিকিউরিটি ও সেফটির কথা বিবেচনা করে এ প্রকল্পের কাজটি বাংলাদেশ মেশিনটুলস ফ্যাক্টরিকে দেয়া হয়েছে। তারা দ্রুত ও মানসম্পন্নভাবে এ কাজটি করছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে সড়ক দুর্ঘটনা অনেকাংশে কমে আসবে।
ডিজিটাল নম্বরপ্লেট চালুর যৌক্তিকতা তুলে ধরতে গিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘‘ডিজিটাল নম্বরপ্লেট চালু হলে সব গাড়ির নম্বরপ্লেট এক মাপের হবে। ভুয়া ও আনফিট গাড়িতে নম্বরপ্লেট ব্যবহারের প্রবণতাও কমে যাবে।’’
বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরির হেড অব মার্কেটিং লেফটেন্যান্ট কর্নেল মেহেদী হাসান বাংলানিউজকে জানান, প্রতি মাসে দুই লাখ রেট্রো-রিফ্লেক্টিভ নম্বরপ্লেট ও আরএফআইডি ট্যাগ সরবরাহ করা সম্ভব হবে। এই কাজে আমরা আমেরিকা, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, দুবাই ও কুয়েতের মোটরযান ব্যবস্থাপনার মডেল দেখেছি। তবে আমেরিকার মডেলটিই আমরা চূড়ান্তভাবে গ্রহণ করেছি। আমাদের বাস্তবায়নাধীন এ প্রকল্পটি মূলত আমেরিকান মডেলের অনুসরণেই হচ্ছে।’’
আরএফআইডি ট্যাগের ব্যবহার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘এ ট্যাগ থাকলে সেতুর টোল দেওয়ার জন্যও থামতে হবে না। স্বয়ংক্রিয়ভাবে টোল প্লাজায় স্থাপিত যন্ত্রের মাধ্যমে ক্রেডিট কার্ডের মতো টোল কেটে নেবে। ফলে যানজট অনেক কমবে। ফিটনেস পরীক্ষা ও ট্যাক্স টোকেন দেওয়ার সময়ও আরএফআইডি ট্যাগই যথেষ্ট হবে।
বিআরটিএর পরিচালক (প্রকৌশল) মো. সাইফুল হক বলেন, ‘‘আমেরিকা, ইন্দোনেশিয়া, ভারত, সিংগাপুর, মালয়েশিয়া, দুবাই এই ধরনের প্রযুক্তি ব্যবহার করে। আমরা সবকিছু দেখে নিজেদের মতো করে প্রযুক্তিটিকে কাজে লাগিয়েছি। এটার ব্যবহার শুরুর পর কোনো ধরণের সমস্যা দেখা দিলে আমরা সেসব সমস্যা সমাধানে প্রস্তত।”
প্রসঙ্গত, গত বুধবার প্রধানমন্ত্রী তার দপ্তরে রেট্রো-রিফ্লেকটিভ নম্বর উদ্বোধন করেন।
ডিজিটাল নম্বরপ্লেটের উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‘মোটরযানের মালিক, চালক, নিয়ন্ত্রক ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারীসহ সবার সুবিধা নিশ্চিত করতে এই ডিজিটাল পদ্ধতি চালু করা হয়েছে। এতে গাড়ির মালিক ও যাত্রীরা উপদ্রবমুক্ত হবেন । বিআরটিএর স্বচ্ছতা ও জবাবদিহীতা বৃদ্ধি পাবে।’’
মোটরযানের মালিক, চালক, নিয়ন্ত্রক ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারীসহ সবার সুবিধা নিশ্চিত করতে এই ডিজিটাল পদ্ধতি চালু করা হয়েছে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “এর মধ্য দিয়ে দেশের পরিবহন খাত নতুন যুগে প্রবেশ করলো।”
No comments