র্যাব দপ্তরে খেলায় মেতে ওঠে মেঘ
নিহত সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনির খুনি শনাক্ত করার জন্য নিহত দম্পতির একমাত্র অবুঝ সন্তানকে র্যাব সদর দপ্তরে ডেকে নেয়া হয়েছে। গতকাল দুপুরে নানা কৌশলে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে গ্রেপ্তারকৃতদের ছবি দেখিয়ে মেঘকে শনাক্ত করতে বলা হয়েছে।
র্যাব ও নিহত দম্পতির পারিবারিক সূত্র জানায়, গতকাল দুপুর দেড়টার দিকে মামা নওশের আলম রোমানের সঙ্গে মেঘকে র্যাবের সদর দপ্তরে নেয়া হয়। প্রায় তিন ঘণ্টা ধরে মেঘ র্যাব সদর দপ্তরে অবস্থান করে। এসময় তার জন্য নানা ধরনের খেলনা সরবরাহ করে র্যাব। একটি কক্ষে ট্রেন, উড়োজাহাজ, ফুটবল, মাছ ও গাড়ি সাজিয়ে রাখা হয়।
এছাড়া ছিল বিদেশী কয়েকটি চকোলেট গিফট বক্স। মেঘ এসব খেলনা দিয়ে খেলবে, হাসবে, কথা বলবে-এমন কৌশল অবলম্বন করেই নিবিড়ভাবে খুনি শনাক্তের জন্য পর্যবেক্ষণ করেছে। র্যাব কর্মকর্তারা জানান, মেঘ মিডিয়া উইংয়ের পরিচালকের চেয়ারে বসে এদিক-ওদিক তাকাতে থাকে। একপর্যায়ে সে র্যাবের কর্মকর্তাদের বিভিন্ন প্রশ্ন করে। কক্ষের দেয়ালে টাঙানো হেলিকপ্টারের ছবি দেখে বিমান দেখার বায়না করে। শেষ পর্যন্ত বিমান দেখানোর জন্য মেঘকে হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরে নেয়া হয়। একপর্যায়ে সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে গ্রেপ্তারকৃতদের ছবি দেখানো হয় মেঘকে। এছাড়া, গল্পের ছলে মেঘের কাছে নানা বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়। এ বিষয়ে জানতে চাইলে র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার এম সোহায়েল বলেন, মেঘকে কোন কিছু জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়নি। কারও ছবি দেখানো হয়নি। খেলাধুলা করে ঘুরে গেছে। অন্য যে কোনদিন তাকে আবার ডাকা হবে। গত ১০ই ফেব্রুয়ারি রাতে সাংবাদিক দম্পতি মাছরাঙা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক সাগর সারোয়ার ও এটিএন বাংলার সিনিয়র রিপোর্টার মেহেরুন রুনি নির্মম ভাবে খুন হয়। পরদিন সকালে তাদের ক্ষতবিক্ষত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় শেরেবাংলা নগর থানায় একটি হত্যা মামলা করেন রুনির ভাই নওশের আলম নোমান। পরে মামলাটি ডিবিতে স্থানান্তর করা হয়। তদন্তে ডিবি’র ব্যর্থতা স্বীকারের পর ১৮ই এপ্রিল আদালতের নির্দেশে মামলাটির তদন্ত র্যাবের হাতে ন্যস্ত হয়। হত্যাকাণ্ডের রাতে তাদের একমাত্র শিশুপুত্র মেঘ বাসায় ছিল। তাই খুনিদের শনাক্ত করতেই মেঘকে গ্রেপ্তারকৃতদের ছবি দেখানোর সিদ্ধান্ত নেয় র্যাব। এদিকে হত্যাকাণ্ডের পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী থেকে শুরু করে পুলিশের মহাপরিদর্শক পর্যন্ত খুনিদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। কিন্তু মাসের পর মাস পেরুলেও হত্যাকাণ্ডের মূল কারণ উদঘাটন হয়নি। হত্যাকাণ্ডের পর থেকেই সাংবাদিক সমাজ খুনিদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তার করতে আন্দোলন অব্যাহত রেখেছেন। এদিকে নতুন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর গত ৯ই অক্টোবর এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত আটজনকে শনাক্ত করা হয়েছে। হত্যাকাণ্ডে জড়িত একজনকে ধরিয়ে দিতে ১০ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করেন তিনি। র্যাব কর্মকর্তারা জানান, মামলার তদন্তের জন্যই মেঘকে র্যাব সদর দপ্তরে আনা হয়েছে। তবে যেহেতু শিশু এ কারণে তাকে জিজ্ঞাসাবাদের পর্যায়ে বলা যাবে না। এর আগে এ হত্যা মামলার তদন্তভার র্যাবের কাছে দেয়ার পর মেঘের ব্যাপারে দুই মাস অপেক্ষা করা হয়। পরে দেশী ও বিদেশী শিশু বিশেষজ্ঞদের দ্বারা মেঘকে ৩ মাস কাউন্সেলিং করা হয়। মেঘ এখন আগের চেয়ে অনেকটা স্বাভাবিক ও সুস্থ। র্যাব আরও জানায়, মেঘের সঙ্গে গল্পের ছলে কথা বলেন মামলার তদন্তকারী টিমের তিন সদস্য। তারা কৌশলে ওই দিনের হত্যাকাণ্ডের সময় মেঘ কি দেখছে সে ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করেন। বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে মেঘ বিমানবন্দর থেকে বিমান দেখে এসে র্যাব সদর দপ্তরে আসে। বিকাল ৫টার দিকে মেঘ তার মামার সঙ্গে করে র্যাব সদর দপ্তর থেকে চলে যায়।
No comments