মালয়েশিয়ায় শ্রমিক পাচার-জনশক্তির বাজার রক্ষায় শক্ত ভূমিকা নিতে হবে

অবৈধভাবে মালয়েশিয়া যাওয়ার পথে আবারও ট্রলারডুবির ঘটনা ঘটেছে। ১৩৫ জন যাত্রীর মধ্যে মাত্র পাঁচজনকে উদ্ধার করা গেছে, বাকি ১৩০ জনই এখনো নিখোঁজ। প্রাণহানির মতো শোকাবহ ঘটনার পাশাপাশি অবৈধভাবে


মালয়েশিয়ায় পাড়ি দেওয়ার চেষ্টাও সে দেশে বন্ধ থাকা বাংলাদেশের শ্রমবাজার খোলার উদ্যোগকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। কাজের আশায় অবৈধ অথচ ঝুঁকিপূর্ণ যাত্রায় শুধু বাংলাদেশিই নয়, রোহিঙ্গাদের উপস্থিতিও লক্ষ করা গেছে। কয়েক দিন আগে বিজিবি সদস্যদের হাতে ধরা পড়া অবৈধ বিদেশিগামীদের পরিচয় থেকে তা নিশ্চিত হওয়া গেছে। এ পরিস্থিতি আমাদের জনশক্তির বাজারকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। অবৈধভাবে জনশক্তি পাঠানোর কারণে মালয়েশিয়া একাধিকবার বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক আমদানি বন্ধ করে দেয়। অনেক চেষ্টার পর বন্ধ হওয়া সেই বাজার পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছে। সরকারি পর্যায়ে শ্রমিক পাঠানোর সিদ্ধান্তের পর এভাবে যদি অবৈধ পথে বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক যাওয়া অব্যাহত থাকে, তাহলে মালয়েশিয়ার বাজারটি আবার বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থেকে যায়। আর এমন পাচারে অনেক প্রাণহানির ঘটনাও ঘটে। এমন পরিস্থিতিতে অত্যন্ত কঠোরভাবে এ প্রবণতা রোধ করা প্রয়োজন।
রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশি পাসপোর্ট ব্যবহারের কারণে আগেও আমাদের জনশক্তি রপ্তানিতে জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। মধ্যপ্রাচ্য ও মালয়েশিয়ার মতো বাজারে তাদের অবৈধ প্রবেশের দায় পড়েছে বাংলাদেশের ওপর। শুধু তাই নয়, তাদের নানা অপকর্মের দায় বাংলাদেশের শ্রমিকদের ওপর বর্তাচ্ছে।
এর আগে যারা এ ধরনের অবৈধ জনশক্তি পাঠানোর সঙ্গে জড়িত ছিল, তাদের উপযুক্ত শাস্তি দেওয়া হয়নি বলেই মানব পাচারকারী চক্র সক্রিয় রয়েছে। ডুবন্ত ট্রলারের কিছু যাত্রীকে উদ্ধার সম্ভব হওয়ায় তাদের কাছ থেকে তথ্য নিয়ে পুলিশ ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থা চাইলে হোতাদের ধরা কঠিন হবে না। বৃহত্তর জাতীয় স্বার্থে পাচারকারীদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে। সমুদ্র উপকূলে কোস্টগার্ড ও নৌবাহিনী এবং সীমান্তে বিজিবিকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে। না হলে এদের অপতৎপরতা রোধ করা সম্ভব হবে না। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগও খতিয়ে দেখতে হবে। মনে রাখা প্রয়োজন, একটি দুর্ঘটনা ঘটেছে বলেই অবৈধ বিদেশযাত্রীদের কথা জানা গেছে। দুর্ঘটনা এড়িয়ে যে অনেকেই এভাবে পাড়ি জমাচ্ছে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। সমুদ্র উপকূলে রোহিঙ্গাদের উপস্থিতি প্রমাণ করে, সেখানেও নিরাপত্তাব্যবস্থা যথার্থ নয়। রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের কারণেও নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করতে হবে। আর তখনই সম্ভব হবে অবৈধ বিদেশগামীদের পথ রোধ করা। মালয়েশিয়ায় আমাদের পুনরুদ্ধারকৃত জনশক্তির বাজারকে ধরে রাখতে হলে বিষয়টি গুরুত্বসহ বিবেচনার দাবি রাখে।

No comments

Powered by Blogger.