নাম না ল্যাহেন তয় সব কমু by সেরাজুল ইসলাম সিরাজ
“নাম না ল্যাহেন তয় সব কমু। নাম ল্যাখলে ওরা মারপিট করবে। ৭ মাস ধরে ওভারটাইমের বিল দেয় না। এখনও বেতন-বোনাস দেয় নাই। কইছে শনিবার দিব। বেতন-বোনাস পাইলে ঈদের দিনে হলেও বাড়ি যামু। মায়ের সঙ্গে ঈদ করমু।”
ঈদের প্রস্তুতি বিষয়ে জানতে চাইলে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে এমন কথা বলছিলেন এক গার্মেন্টস কর্মী।
বৃহস্পতিবার সকালে আমেরিকান দূতাবাসের পাশ দিয়ে হেঁটে কাজে যাওয়ার সময় কথা হয় এ নারী গার্মেন্টস কর্মীর সঙ্গে। তার সঙ্গে একই কারখানার নারী শ্রমিক ছিলেন আরও কয়েকজন।
তার মতোই সবার অবস্থা জানিয়ে ওই গার্মেন্টস কর্মী বলেন, “কতোদিন বাড়ি যাই না। মায়েরে দেখার জন্য মনটা ছটফট করছে। কতোক্ষণে বাড়ি যামু, এই আশায় আছি। কিন্তু সেই আশা পূরণ হবে কি না জানি না। টেহা দিলে মায়ের জন্য শাড়ি কিনমু। ছোট বোনের জন্য একটি জামা কিনমু। তারপর যদি টেহা বাঁচে নিজের জন্য একটা থ্রি-পিস কিনমু।”
তার মতো সবাই বাংলানিউজ প্রতিবেদককে একই আকুতি জানিয়ে বলেন, “ভাই নাম লেখেন না। নাম লেখলে পিএম (প্রডাক্শন ম্যানেজার) খোকন সাহেব আমাদের মারপিট করবেন। তার ( খোকন) রুমে বেতের লাঠি আছে। যখন তখন গায়ে হাত তোলেন। তাদের কথার বিরুদ্ধে কিছু বললে জোর করে নাইট করান।”
সবারই বয়স ১৩ থেকে ১৭ বছরের মধ্যে। যে সময়ে তাদের হাতে বই থাকার কথা, সংসারের অনটনের কারণে সে বয়সেই গার্মেন্টস কর্মী হিসেবে নাম লিখিয়েছেন তারা।
“এখানে চাকরি ছেড়ে দিয়ে অন্য কারখানায় গেলেই তো পারেন।” এমন মন্তব্যের জবাবে তারা বলেন, “সব সময় টাকা বেতন আটকে রাখেন। তাই বাধ্য হয়ে কাজ ছাড়তে পারি না।”
বনানীর চেয়ারম্যানবাড়ি এলাকায় অ্যাসলিপ প্রিন্টিং ফ্যাক্টরিতে ৩ বছর ধরে চাকরি করে আসছেন তারা। ছোট আকারের এই কারখানাটিতে তারা ৩৮ জন নারী কাজ করেন।
ওই গার্মেন্টস কর্মীর গ্রামের বাড়ি কুমিল্লা। এখানে ভাড়া থাকেন মধ্যবাড্ডা এলাকায়। ঈদের প্রস্তুতির কথা জানতে চাইলে বলেন, “৭ মাস ধরে ওভারটাইমের বিল দেন না মালিক। সাড়ে তিন হাজার টাকা বেতন পান তিনি। মাসে থাকা খাওয়া বাবদ চলে যায় ২৪শ’ টাকা।”
প্রতিদিন বাড্ডা থেকে লেকের পাড় দিয়ে হেঁটে আমেরিকান দূতাবাসের পেছনে যান। সেখান থেকে লেগুনায় উঠে অফিসে যান তিনি। এতে তার যাওয়া আসা ১০ টাকা হিসেবে মাসে প্রায় ২৬০ টাকা খরচ হয় (ছুটির দিন ছাড়া)।
কসমেটিকস সামগ্রী ও অন্যান্য খরচ শেষে ২ থেকে ৪শ’ টাকাও জমা করা যায় না। চাকরি ছেড়ে দেওয়ার কথা ভাবছেন। কিন্তু ওভারটাইমের বিল সাড়ে তিন হাজার টাকা ছেড়ে যেতে পারছেন না বলেও জানান এই কর্মী।
ওই কারখানার মালিক যশোরের সুলতান মিয়া। তিনিও বদমেজাজি ও খারাপ চরিত্রের লোক বলে অভিযোগ করেন ওই কর্মীরা। বলতে বলতে আবেগ কাতর হয়ে পড়েন তারা। চোখের পানি লুকাতে গিয়ে ব্যর্থ হয়ে ওড়না নিয়ে চোখ-মুখে নিয়ে বলেন, “কষ্টের কথা বলে কি হবে।কপাল পোড়া হতভাগী আমরা।”
প্রথম মেয়েটিকে তার পড়ালেখা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “বাবা মারা যাওয়ায় সংসারে অভাব লেগেই ছিলো। ক্লাস থ্রি পর্যন্ত স্কুলে পড়েছি। যে বছর ফোরে উঠবো, সেই বছর অভাবে কারণে অন্যের বাড়িতে কাজ করার জন্য পাঠান মা। সেখানেও মারপিট সইতে হতো। পরে গ্রামের এক গার্মেন্টস কর্মীর পরামর্শে ঢাকায় আসি।”
গার্মেন্টস সেক্টরের ফুলে-ফেঁপে ওঠার পেছনে এসব কর্মীর অবদান কোনোভাবেই ছোট করে দেখার সুযোগ নেই। মালিকরাও সে কথা স্বীকার করেন অকপটে। কিন্তু মালিকের ছেলে-মেয়েরা যখন নতুন নতুন ডিজাইনের পোশাকের খোঁজে মার্কেটে হানা দিচ্ছেন, ঠিক সেই সময়ে একই বয়সী এসব মেয়ের কাছে ঈদের আনন্দ বিষাদের পথে।
মায়ের সঙ্গে ঈদ করার করুণ আর্তি পূরণ হবে কি না জানা নেই তাদের। অথচ মালিকরা একটু আন্তরিক হলে এসব মেয়ের জীবনেও ঈদ আনন্দ বয়ে আনতে পারে।
আবার কিছু ক্ষেত্রে ভিন্নতাও রয়েছে। তেজগাঁও এলাকার শেফাল গ্রুপের ৪টি কারখানায় ১৫ আগস্টের মধ্যেই বেসিকের সমান বোনাস দেওয়া হয়েছে বলে বাংলানিউজকে জানান প্রতিষ্ঠানটির কর্মী শিউলি বেগম।
বৃহস্পতিবার সকালে আমেরিকান দূতাবাসের পাশ দিয়ে হেঁটে কাজে যাওয়ার সময় কথা হয় এ নারী গার্মেন্টস কর্মীর সঙ্গে। তার সঙ্গে একই কারখানার নারী শ্রমিক ছিলেন আরও কয়েকজন।
তার মতোই সবার অবস্থা জানিয়ে ওই গার্মেন্টস কর্মী বলেন, “কতোদিন বাড়ি যাই না। মায়েরে দেখার জন্য মনটা ছটফট করছে। কতোক্ষণে বাড়ি যামু, এই আশায় আছি। কিন্তু সেই আশা পূরণ হবে কি না জানি না। টেহা দিলে মায়ের জন্য শাড়ি কিনমু। ছোট বোনের জন্য একটি জামা কিনমু। তারপর যদি টেহা বাঁচে নিজের জন্য একটা থ্রি-পিস কিনমু।”
তার মতো সবাই বাংলানিউজ প্রতিবেদককে একই আকুতি জানিয়ে বলেন, “ভাই নাম লেখেন না। নাম লেখলে পিএম (প্রডাক্শন ম্যানেজার) খোকন সাহেব আমাদের মারপিট করবেন। তার ( খোকন) রুমে বেতের লাঠি আছে। যখন তখন গায়ে হাত তোলেন। তাদের কথার বিরুদ্ধে কিছু বললে জোর করে নাইট করান।”
সবারই বয়স ১৩ থেকে ১৭ বছরের মধ্যে। যে সময়ে তাদের হাতে বই থাকার কথা, সংসারের অনটনের কারণে সে বয়সেই গার্মেন্টস কর্মী হিসেবে নাম লিখিয়েছেন তারা।
“এখানে চাকরি ছেড়ে দিয়ে অন্য কারখানায় গেলেই তো পারেন।” এমন মন্তব্যের জবাবে তারা বলেন, “সব সময় টাকা বেতন আটকে রাখেন। তাই বাধ্য হয়ে কাজ ছাড়তে পারি না।”
বনানীর চেয়ারম্যানবাড়ি এলাকায় অ্যাসলিপ প্রিন্টিং ফ্যাক্টরিতে ৩ বছর ধরে চাকরি করে আসছেন তারা। ছোট আকারের এই কারখানাটিতে তারা ৩৮ জন নারী কাজ করেন।
ওই গার্মেন্টস কর্মীর গ্রামের বাড়ি কুমিল্লা। এখানে ভাড়া থাকেন মধ্যবাড্ডা এলাকায়। ঈদের প্রস্তুতির কথা জানতে চাইলে বলেন, “৭ মাস ধরে ওভারটাইমের বিল দেন না মালিক। সাড়ে তিন হাজার টাকা বেতন পান তিনি। মাসে থাকা খাওয়া বাবদ চলে যায় ২৪শ’ টাকা।”
প্রতিদিন বাড্ডা থেকে লেকের পাড় দিয়ে হেঁটে আমেরিকান দূতাবাসের পেছনে যান। সেখান থেকে লেগুনায় উঠে অফিসে যান তিনি। এতে তার যাওয়া আসা ১০ টাকা হিসেবে মাসে প্রায় ২৬০ টাকা খরচ হয় (ছুটির দিন ছাড়া)।
কসমেটিকস সামগ্রী ও অন্যান্য খরচ শেষে ২ থেকে ৪শ’ টাকাও জমা করা যায় না। চাকরি ছেড়ে দেওয়ার কথা ভাবছেন। কিন্তু ওভারটাইমের বিল সাড়ে তিন হাজার টাকা ছেড়ে যেতে পারছেন না বলেও জানান এই কর্মী।
ওই কারখানার মালিক যশোরের সুলতান মিয়া। তিনিও বদমেজাজি ও খারাপ চরিত্রের লোক বলে অভিযোগ করেন ওই কর্মীরা। বলতে বলতে আবেগ কাতর হয়ে পড়েন তারা। চোখের পানি লুকাতে গিয়ে ব্যর্থ হয়ে ওড়না নিয়ে চোখ-মুখে নিয়ে বলেন, “কষ্টের কথা বলে কি হবে।কপাল পোড়া হতভাগী আমরা।”
প্রথম মেয়েটিকে তার পড়ালেখা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “বাবা মারা যাওয়ায় সংসারে অভাব লেগেই ছিলো। ক্লাস থ্রি পর্যন্ত স্কুলে পড়েছি। যে বছর ফোরে উঠবো, সেই বছর অভাবে কারণে অন্যের বাড়িতে কাজ করার জন্য পাঠান মা। সেখানেও মারপিট সইতে হতো। পরে গ্রামের এক গার্মেন্টস কর্মীর পরামর্শে ঢাকায় আসি।”
গার্মেন্টস সেক্টরের ফুলে-ফেঁপে ওঠার পেছনে এসব কর্মীর অবদান কোনোভাবেই ছোট করে দেখার সুযোগ নেই। মালিকরাও সে কথা স্বীকার করেন অকপটে। কিন্তু মালিকের ছেলে-মেয়েরা যখন নতুন নতুন ডিজাইনের পোশাকের খোঁজে মার্কেটে হানা দিচ্ছেন, ঠিক সেই সময়ে একই বয়সী এসব মেয়ের কাছে ঈদের আনন্দ বিষাদের পথে।
মায়ের সঙ্গে ঈদ করার করুণ আর্তি পূরণ হবে কি না জানা নেই তাদের। অথচ মালিকরা একটু আন্তরিক হলে এসব মেয়ের জীবনেও ঈদ আনন্দ বয়ে আনতে পারে।
আবার কিছু ক্ষেত্রে ভিন্নতাও রয়েছে। তেজগাঁও এলাকার শেফাল গ্রুপের ৪টি কারখানায় ১৫ আগস্টের মধ্যেই বেসিকের সমান বোনাস দেওয়া হয়েছে বলে বাংলানিউজকে জানান প্রতিষ্ঠানটির কর্মী শিউলি বেগম।
No comments