ধর্ম- মাহে রমজানে নারীদের ইবাদত by আবদুস সবুর খান
ইসলামের প্রতিটি বিধানই নারী-পুরুষের জন্য সমানভাবে প্রযোজ্য এবং সমান গুরুত্বপূর্ণ। সওয়াবের ক্ষেত্রেও নারী-পুরুষের ক্ষেত্রে কোনো রকমের ভেদাভেদ করা হবে না। এ প্রসঙ্গে পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেছেন ‘বিশ্বাসী হয়ে পুরুষ ও নারীর মধ্যে যে কেউ সৎকর্ম করবে তাকে আমি নিশ্চয়ই আনন্দপূর্ণ জীবন দান করব।
আর তাদের কর্মের শ্রেষ্ঠ পুরস্কার তাদেরকে দান করব।’(সুরা নাহল, আয়াত ৯৭) অন্যত্র তিনি এরশাদ করেন, ‘আমি তোমাদের কোনো কর্মনিষ্ঠ পুরুষ বা নারীর কর্ম বিফল করি না। তোমরা পরস্পর সমান।’ ( সুরা আল ইমরান, আয়াত ১৯৫)
মাহে রমজানের সিয়াম সাধনার পাশাপাশি অন্যান্য ইবাদতের ক্ষেত্রেও নারী-পুরুষের সমান গুরুত্ব এবং সমান মর্যাদা। এ বিষয়টি আমাদের গুরুত্বের সঙ্গে লক্ষ রাখতে হবে। বিশেষ করে মাহে রমজানের অন্যতম অনুষঙ্গ খতমে তারাবিহ্র জামাতেও নারীরা অংশগ্রহণ করতে পারেন। খতমে তারাবিহ্র জামাতে তাঁদের অংশগ্রহণের জন্য মসজিদগুলোতে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত। জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমসহ ঢাকা শহরের বেশ কিছু মসজিদে এই ব্যবস্থা রয়েছে। যেসব এলাকার মসজিদে এ রকম ব্যবস্থা নেই অথবা নারীরা যদি রাতের বেলা মসজিদে গিয়ে খতমে তারাবিহ্র জামাতে অংশগ্রহণ করতে নিরাপদ ও স্বস্তি বোধ না করেন, সে ক্ষেত্রে তাঁরা নিজেরা মিলে মহল্লায় বা পাড়ায় পৃথক খতমে তারাবিহ্র জামাতের ব্যবস্থা নিতে পারেন। এ ক্ষেত্রে এই জামাতে যদি কোনো পুরুষ ইমামতি করেন তবে তাঁকে অবশ্যই পর্দার আড়াল থেকে নামাজ পরিচালনা করতে হবে। সাম্প্রতিককালে ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় দেখা যায়, বাড়ি বাড়ি অথবা মহল্লায় মহল্লায় রমজান মাসে নারীদের জন্য খতমে তারাবিহ্র জামাতের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় এবং এসব জামাতে নারীরাই ইমামতি করছেন। তবে এটি শুধু রমজান মাসের তারবিহ্র জামাতের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য হবে এবং এই জামাতে নারীদের ইমামতিতে কোনো পুরুষের এক্তেদা করা বৈধ হবে না।
রোজাদার ব্যক্তিদের মাহে রমজানের শেষ ১০ দিনে একটি বিশেষ ইবাদত এতেকাফের প্রতি রাসুল (সা.) বিশেষভাবে উৎসাহিত করেছেন। এতেকাফের নিয়ম হচ্ছে, রমজান মাসের শেষ ১০ দিন দুনিয়ার সব রকমের কাজকর্ম পরিত্যাগ করে ইবাদতের নিয়তে মসজিদে অবস্থান করা। এটি প্রতিটি মুসলমানের জন্য সুন্নতে মুয়াক্কাদায়ে কেফায়া। রাসুল (সা.) এতেকাফের গুরুত্ব উল্লেখ করতে গিয়ে বলেছেন ‘যে ব্যক্তি মাহে রমজানের শেষ ১০ দিন সওয়াবের প্রত্যাশায় ইবাদতের নিয়তে এতেকাফ করল, সে যেন ওই দিনের ন্যায় নিষ্পাপ হয়ে গেল, যেদিন সে প্রথম পৃথিবীতে ভূমিষ্ঠ হয়েছিল।’
মাহে রমজানের এই ফজিলতপূর্ণ ইবাদত থেকে নারীরাও যাতে বঞ্চিত না হন, সে লক্ষ্যে তাঁদের জন্য বাড়িতেই এতেকাফের বিশেষ ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। কোনো নারী এতেকাফে অংশগ্রহণ করতে চাইলে তাঁরা ঘরের নিরিবিলি এক কোণে চাদর বা কাপড় টাঙিয়ে শেষ ১০ দিন এতেকাফ করতে পারেন। এতে তাঁরা পুরুষদের মতো মসজিদে গিয়ে এতেকাফের সমান সওয়াবের অধিকারী হবেন। যাঁদের ১০ দিন এতেকাফ করার মতো অবসর নেই, তাঁরা তিন দিন অথবা অন্তত এক দিনও এতেকাফ করতে পারেন।
নারী-পুরুষ মর্যাদার দিক দিয়ে পরস্পর সমান হলেও নারীদের কিছু দৈহিক স্বাতন্ত্র্য রয়েছে। বিশেষ করে প্রাপ্তবয়স্ক নারীর ক্ষেত্রে মাসের নির্দিষ্ট একটা সময় এমন অবস্থার সম্মুখীন হতে হয়, যেটিকে বলা হয় ঋতুকাল বা পিরিয়ড—যা পুরুষের ক্ষেত্রে ঘটে না। এই সময়কালে নারীর জন্য পৃথক বিধান প্রযোজ্য। এ সময় তাঁদের জন্য নামাজ মাফ করা হয়েছে। তবে মাহে রমজানের ঋতুকালে নারীরা রোজা রাখতে পারবেন না, তাঁরা রোজার মাসের পর অন্য যেকোনো সময় এই রোজাগুলোর কাজা (একটি রোজার পরিবর্তে একটি রোজা) আদায় করে নেবেন।
অনেক নারীই রোজার মাসে গর্ভবতী থাকেন, মা হন অথবা রোজার মাসে তাঁদের সন্তানদের বুকের দুধ পান করাতে হয়। এ ক্ষেত্রে সেই নারীর জন্যও রোজার বিধান শিথিলযোগ্য। রোজা রেখে সন্তানকে বুকের দুধ পান করালে রোজার কোনো ক্ষতি হবে না। তবে রোজা রেখে সন্তানকে বুকের দুধ পান করালে যদি নারীর এমন কোনো স্বাস্থ্যহানি ঘটে, যার ফলে সন্তান দুধ কম পাওয়ার আশঙ্কা থাকে, অথবা গর্ভবতী মায়েদের গর্ভের সন্তানের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে, সে ক্ষেত্রে তাঁর জন্য রমজান মাসে রোজা না রেখে পরবর্তী সময়ে এর কাজা আদায় করে নেওয়ার বিধান রয়েছে।
রমজান মাসে আমরা অনেকেই আমাদের বাড়িতে মা-বোনদের ইবাদতের প্রতি তেমন গুরুত্ব দিই না। রমজান মাসে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই বাড়ির গৃহকর্ত্রীকে নানা পদের ইফতারি ও সেহিরর খাবার প্রস্তুতের জন্য অধিকাংশ সময়ই রান্নাঘরে ব্যস্ত থাকতে দেখা যায়। আমাদের সবার খাবার জোগাড় করতে গিয়ে তাঁর বাড়তি ইবাদত করার অবসরই হয়ে ওঠে না। বিষয়টি আমাদের গুরুত্বের সঙ্গে লক্ষ করা উচিত। আমাদের উচিত অন্য মাসের চেয়ে রমজান মাসে খাবারের পদ কমিয়ে দেওয়া এবং রান্না ও অন্যান্য গৃহস্থালি কাজে তাঁদের সাহায্য করা। যাতে এই বরকতপূর্ণ মাসে আমাদের মা-বোনেরাও ইবাদতের জন্য একটু অবসর বের করে নিতে পারেন। রাব্বুল আলামিন পবিত্র কোরআনে এরশাদ করেছেন, ‘আত্মসমর্পণকারী পুরুষ ও নারী, বিশ্বসী পুরুষ ও নারী, অনুগত পুরুষ ও নারী, সত্যবাদী পুরুষ ও নারী, ধৈর্যশীল পুরুষ ও নারী, নম্র পুরুষ ও নারী, দানশীল পুরুষ ও নারী, রোজা পালনকারী পুরুষ ও নারী, যৌনাঙ্গ হেফাজতকারী পুরুষ ও নারী, আল্লাহকে অধিক স্মরণকারী পুরুষ ও নারী এদের জন্য তো আল্লাহ ক্ষমা ও মহাপ্রতিদান রেখেছেন।’ (সুরা আহজাব, আয়াত ৩৫) এই মহাপ্রতিদান থেকে নারীদের বঞ্চিত রাখা কোনোক্রমেই উচিত নয়।
ড. আবদুস সবুর খান: সহযোগী অধ্যাপক, ফার্সি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
মাহে রমজানের সিয়াম সাধনার পাশাপাশি অন্যান্য ইবাদতের ক্ষেত্রেও নারী-পুরুষের সমান গুরুত্ব এবং সমান মর্যাদা। এ বিষয়টি আমাদের গুরুত্বের সঙ্গে লক্ষ রাখতে হবে। বিশেষ করে মাহে রমজানের অন্যতম অনুষঙ্গ খতমে তারাবিহ্র জামাতেও নারীরা অংশগ্রহণ করতে পারেন। খতমে তারাবিহ্র জামাতে তাঁদের অংশগ্রহণের জন্য মসজিদগুলোতে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত। জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমসহ ঢাকা শহরের বেশ কিছু মসজিদে এই ব্যবস্থা রয়েছে। যেসব এলাকার মসজিদে এ রকম ব্যবস্থা নেই অথবা নারীরা যদি রাতের বেলা মসজিদে গিয়ে খতমে তারাবিহ্র জামাতে অংশগ্রহণ করতে নিরাপদ ও স্বস্তি বোধ না করেন, সে ক্ষেত্রে তাঁরা নিজেরা মিলে মহল্লায় বা পাড়ায় পৃথক খতমে তারাবিহ্র জামাতের ব্যবস্থা নিতে পারেন। এ ক্ষেত্রে এই জামাতে যদি কোনো পুরুষ ইমামতি করেন তবে তাঁকে অবশ্যই পর্দার আড়াল থেকে নামাজ পরিচালনা করতে হবে। সাম্প্রতিককালে ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় দেখা যায়, বাড়ি বাড়ি অথবা মহল্লায় মহল্লায় রমজান মাসে নারীদের জন্য খতমে তারাবিহ্র জামাতের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় এবং এসব জামাতে নারীরাই ইমামতি করছেন। তবে এটি শুধু রমজান মাসের তারবিহ্র জামাতের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য হবে এবং এই জামাতে নারীদের ইমামতিতে কোনো পুরুষের এক্তেদা করা বৈধ হবে না।
রোজাদার ব্যক্তিদের মাহে রমজানের শেষ ১০ দিনে একটি বিশেষ ইবাদত এতেকাফের প্রতি রাসুল (সা.) বিশেষভাবে উৎসাহিত করেছেন। এতেকাফের নিয়ম হচ্ছে, রমজান মাসের শেষ ১০ দিন দুনিয়ার সব রকমের কাজকর্ম পরিত্যাগ করে ইবাদতের নিয়তে মসজিদে অবস্থান করা। এটি প্রতিটি মুসলমানের জন্য সুন্নতে মুয়াক্কাদায়ে কেফায়া। রাসুল (সা.) এতেকাফের গুরুত্ব উল্লেখ করতে গিয়ে বলেছেন ‘যে ব্যক্তি মাহে রমজানের শেষ ১০ দিন সওয়াবের প্রত্যাশায় ইবাদতের নিয়তে এতেকাফ করল, সে যেন ওই দিনের ন্যায় নিষ্পাপ হয়ে গেল, যেদিন সে প্রথম পৃথিবীতে ভূমিষ্ঠ হয়েছিল।’
মাহে রমজানের এই ফজিলতপূর্ণ ইবাদত থেকে নারীরাও যাতে বঞ্চিত না হন, সে লক্ষ্যে তাঁদের জন্য বাড়িতেই এতেকাফের বিশেষ ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। কোনো নারী এতেকাফে অংশগ্রহণ করতে চাইলে তাঁরা ঘরের নিরিবিলি এক কোণে চাদর বা কাপড় টাঙিয়ে শেষ ১০ দিন এতেকাফ করতে পারেন। এতে তাঁরা পুরুষদের মতো মসজিদে গিয়ে এতেকাফের সমান সওয়াবের অধিকারী হবেন। যাঁদের ১০ দিন এতেকাফ করার মতো অবসর নেই, তাঁরা তিন দিন অথবা অন্তত এক দিনও এতেকাফ করতে পারেন।
নারী-পুরুষ মর্যাদার দিক দিয়ে পরস্পর সমান হলেও নারীদের কিছু দৈহিক স্বাতন্ত্র্য রয়েছে। বিশেষ করে প্রাপ্তবয়স্ক নারীর ক্ষেত্রে মাসের নির্দিষ্ট একটা সময় এমন অবস্থার সম্মুখীন হতে হয়, যেটিকে বলা হয় ঋতুকাল বা পিরিয়ড—যা পুরুষের ক্ষেত্রে ঘটে না। এই সময়কালে নারীর জন্য পৃথক বিধান প্রযোজ্য। এ সময় তাঁদের জন্য নামাজ মাফ করা হয়েছে। তবে মাহে রমজানের ঋতুকালে নারীরা রোজা রাখতে পারবেন না, তাঁরা রোজার মাসের পর অন্য যেকোনো সময় এই রোজাগুলোর কাজা (একটি রোজার পরিবর্তে একটি রোজা) আদায় করে নেবেন।
অনেক নারীই রোজার মাসে গর্ভবতী থাকেন, মা হন অথবা রোজার মাসে তাঁদের সন্তানদের বুকের দুধ পান করাতে হয়। এ ক্ষেত্রে সেই নারীর জন্যও রোজার বিধান শিথিলযোগ্য। রোজা রেখে সন্তানকে বুকের দুধ পান করালে রোজার কোনো ক্ষতি হবে না। তবে রোজা রেখে সন্তানকে বুকের দুধ পান করালে যদি নারীর এমন কোনো স্বাস্থ্যহানি ঘটে, যার ফলে সন্তান দুধ কম পাওয়ার আশঙ্কা থাকে, অথবা গর্ভবতী মায়েদের গর্ভের সন্তানের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে, সে ক্ষেত্রে তাঁর জন্য রমজান মাসে রোজা না রেখে পরবর্তী সময়ে এর কাজা আদায় করে নেওয়ার বিধান রয়েছে।
রমজান মাসে আমরা অনেকেই আমাদের বাড়িতে মা-বোনদের ইবাদতের প্রতি তেমন গুরুত্ব দিই না। রমজান মাসে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই বাড়ির গৃহকর্ত্রীকে নানা পদের ইফতারি ও সেহিরর খাবার প্রস্তুতের জন্য অধিকাংশ সময়ই রান্নাঘরে ব্যস্ত থাকতে দেখা যায়। আমাদের সবার খাবার জোগাড় করতে গিয়ে তাঁর বাড়তি ইবাদত করার অবসরই হয়ে ওঠে না। বিষয়টি আমাদের গুরুত্বের সঙ্গে লক্ষ করা উচিত। আমাদের উচিত অন্য মাসের চেয়ে রমজান মাসে খাবারের পদ কমিয়ে দেওয়া এবং রান্না ও অন্যান্য গৃহস্থালি কাজে তাঁদের সাহায্য করা। যাতে এই বরকতপূর্ণ মাসে আমাদের মা-বোনেরাও ইবাদতের জন্য একটু অবসর বের করে নিতে পারেন। রাব্বুল আলামিন পবিত্র কোরআনে এরশাদ করেছেন, ‘আত্মসমর্পণকারী পুরুষ ও নারী, বিশ্বসী পুরুষ ও নারী, অনুগত পুরুষ ও নারী, সত্যবাদী পুরুষ ও নারী, ধৈর্যশীল পুরুষ ও নারী, নম্র পুরুষ ও নারী, দানশীল পুরুষ ও নারী, রোজা পালনকারী পুরুষ ও নারী, যৌনাঙ্গ হেফাজতকারী পুরুষ ও নারী, আল্লাহকে অধিক স্মরণকারী পুরুষ ও নারী এদের জন্য তো আল্লাহ ক্ষমা ও মহাপ্রতিদান রেখেছেন।’ (সুরা আহজাব, আয়াত ৩৫) এই মহাপ্রতিদান থেকে নারীদের বঞ্চিত রাখা কোনোক্রমেই উচিত নয়।
ড. আবদুস সবুর খান: সহযোগী অধ্যাপক, ফার্সি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
No comments